![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অভিন্ন আকশের ভিন্ন বর্ণঃ বিক্ষেপনীয় ব্যাখ্যা
কোন বোটানিস্ট কে যদি প্রশ্ন করা হয়, গাছের পাতার রঙ সবুজ কেন? সহজ উত্তর আসবে “ক্লোরোফিল” এর কারনে । আসলে সবকিছুরই উত্তর এক বা দুই শব্দেই দেয়া যায়। এতে হয়ত পরীক্ষায় পুরো মার্কসও পাওয়া যায়, কিন্তু এতে কি আসলে সম্পূর্ন উত্তরটা পাওয়া যায়?
যেমন ধরা যাক, যদি বলা হয় আকশের রঙ নীল কেন? তবে সহজ উত্তর হতে পারে “ আলোর বিক্ষেপনের” কারনে। কিন্তু যদি বলা হয় সূর্যের আলোর সাতটা রঙের মধ্যে শুধু নীলটাই কেন আকশে দেখায়_ _?
অথবা সূর্যের আলোই যদি আকাশ নীলের একমাত্র কারন হয় এবং চাঁদের আলো যদি সেই ধার করা সুর্যের আলোই হয়, তবে রাতের আকাশ কেন কালো হল ? তখন কিন্তু একটু বেশী বলতেই হবে।
স্বাভাবিক আকাশের নীল রঙঃ
র্যালীর বিক্ষেপনঃ
ইংরেজ পদির্থবিজ্ঞানী লর্ড র্যালী (জন উইলিয়াম স্ট্রাট) সর্বপ্রথম এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তাঁর মতে, গ্যাসে আলোক বিক্ষিপ্ত হওয়ার কারন হল তড়িৎ পোলারাইজেশন। কারণ দোদুল্যমান তড়িৎ ক্ষেত্র , আধান হিসেবে কাজ করে যা কিনা তার মাধ্যমের বস্তুকে সমান তালে কম্পায়িত করে। তখন ক্ষুদ্র বস্তুগুলো এক একটি নিঃসরী দ্বিপোল এ পরিনত হয় , এবং এই নিঃসরণই আমরা বিক্ষিপ্ত আলোক রূপে দেখি।
এখানে এই ক্ষুদ্র বস্তুগুলো হল বায়ুতে বিদ্যমান গ্যাসের অনু ( অধিকাংশই O_(2 ) ও N_2 ) ।
র্যালী, আলোকের তীব্রতার সাথে প্রতিটি স্বতন্ত্র গ্যাস অণুর পোলারাইজ হওয়ার ক্ষমতার সম্পর্ক দেখান।
সমীকরনঃ I=I_(0 ) (8π^4 α^2)/(λ^4 R^2 ) (1+ 〖cos〗^2∅ )
সমীকরণ থেকে দেখা যায়, অণুর পোলারাইজাশন ক্ষমতা α আলোকের তড়িৎ ক্ষেত্রের ডাইপোল মোমেন্টের সমানুপাতিক।এখানে N বিক্ষেপনের সংখ্যা, α পোলারিত হওয়ার ক্ষমতা এবং R বিক্ষেপন থেকে দুরত্ব। এবং I ∞ 1/λ^4 এটি দেখায় যে ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈঘের আলোকই নীল বর্ণের জন্য দায়ী।
এর উদাহরণ পাওয়া যায় র্যালীর বীক্ষেপনের ক্রস-সেকসন (Ϭ_s) থেকে।
সমীকরনঃ Ϭ_s=(2π^5 d^6)/(3λ^4 ) 〖( (n^2-1)/(n^2+2) )〗^2
এখান থেকে দেখা যায়, আলোক বীক্ষেপণের পার্থক্য ঘটে ঐ n সংখ্যক ক্রস সেকসন এর প্রতি একক আয়তনের বস্তুর সংখ্যার উপর।
যেমন বাতাসের নাইট্রজেন এর ক্রস সেকসন ভ্যালু 〖5.1×10〗^(-31) sq.m সবুজ আলোর জন্য (532nm) । অর্থাৎ প্রতি ঘন মিটার আয়তনের 〖2×10〗^25 টি অনুর জন্য প্রতি মিটার ভ্রমনে আলো 〖10〗^(-5) ভিন্নতায় আলো বিক্ষিপ্ত হবে।
আর আলোর তরংগদৈঘের সাথে বিক্ষেপনের সম্পর্ক ( ∞ λ^(-4) ) মানে ক্ষুদ্র তরংগদৈঘ্যের নীল আলো দীর্ঘ তরংগদৈঘ্যের লাল আলোর তুলনায় অধিক্তর তীব্রতায় বিক্ষিপ্ত হবে।।
চিত্র থেকে দেখা যায়, নীল আলো বিক্ষেপনের হার কিভাবে বেশি হয়।
তাহলে, খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, সমীকরণ মতে তো আকাশ বেগুনি দেখাবার কথা। কিন্তু কেন তা হয় না ?
আসলে বিক্ষেপন বেগুনী আলোরই সবচেয়ে বেশি হয়। কিন্তু পৃথিবীর বায়ূমন্ডলে অবস্থিত “অক্সিজেন” আল্ট্রা-ভায়োলেট তরঙ্গ( UV-ray) প্রশমিত করে ।
বাস্তবে, র্যালীর বিক্ষেপন বায়ূমন্ডলে আরো অনিয়তভাবে ঘটে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে সূর্যের আলোক রশ্মিগুলোর পারষ্পারিক মিথষ্ক্রিয়া ঘটে, যা আকাশের প্রকৃত নীল বর্ণকে আরো উজ্জ্বল ও হাল্কা, প্রকৃতপক্ষে “আসমানী” করে তোলে।
তবে র্যালীর বিক্ষেপনের মূল সীমাবধ্যতা হল এটি ক্ষুদ্র তরংগদৈঘ্যের ও ক্ষুদ্র বস্তুর জন্য, এবং স্থিতিস্থাপক বস্তুকণিকার ( Elastic particles) জন্য প্রযোজ্য । কিন্তু বায়ুমন্ডলে তো অস্থিতিস্থাপক কণিকাও রয়েছে (বাষ্প, মেঘ) । তাই তাদের জন্য একটু আলাদা ত্বত্তের প্রয়োজন পড়ে, যা মী-এর (Mie scattering) ও রমন-এর (Raman Scattering ) বিক্ষপনের সাহায্যে ব্যাখা করা যায়।
মী-এর বিক্ষেপনঃ
জার্মান পদার্থবিদ গুস্তভ মী ( Gustav Mie ) এর নামে এই বিক্ষপনের নামকরণ করা হয় । র্যালীর বীক্ষেপন x=2πr/λ সূত্রানুসারে, (যেখানে x বস্তুকণিকার আকার, r ব্যাসার্ধ এবং λ তরংগদৈঘ্য) x ≪ 1 এবং তরংগদৈঘ্যের 1/10 এর ছোট বস্তুকণিকার বেলায় খাটে। কিন্তু মী-এর বিক্ষেপন কনিকার আকার ও তরংদৈঘের উপর নির্ভর করে না ।
তাই এ থেকে বঝা যায় বায়ুমন্ডলের জলের কনিকাও এরুপ কারনের কোন বিরধিতা করে না ।
সূর্যাস্ত ও সূর্যদয়ের লাল আভাঃ
প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক, সুর্য তো উদয় থেকে অস্ত পর্যন্ত আকাশেই থাকে তবে অন্য সময় নীল আর এই বিশেষ দুটি সময় লাল আভা দেখা যায় কেন? উত্তরটা একই... সেই বীক্ষেপন । সূর্যের সাতটি রঙের (দীর্ঘ তরংগের ক্রমে) প্রথম তিনটির কম্পাংক পরের চারটি থেকে কম। সূর্যাস্ত ও সূর্যদয়ের সময় সুর্যালোক্কে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়, তাই আলো আসার আগেই ক্ষুদ্র তরংগের নীল আলো বিক্ষিপ্ত হয় এবং আমরা দেখি পরে বিক্ষিপ্ত হওয়া লাল হলুদের আভা।
পুর্বে বিক্ষিপ্ত নীল আলো যেতে পারে পশ্চিমের কোন দিগন্তে আর পূর্বে থাকে লাল আলো ( সূর্যদয়ে )।
আর দিকটা ঠিক পাল্টে যায় সুর্যাস্তে।
মঙ্গলের লাল-গোলাপী আকাশঃ
আসলে, মঙ্গলে র্যালীর বিক্ষেপনের প্রভাব এর চেয়ে এর প্রতিবন্ধকতার প্রভাবই বেশি। আর এর কারন হল এটি পৃথিবীর ঠিক বিপরীতে অবস্থিত,তাই এর আলো প্রাপ্তি অনিয়ত। তাই প্রকৃতপক্ষে এর আকাশের বর্ণ মিশ্র ও পরিবর্তনশীল। তবে এর গোলাপী বর্ণের কারণ হল এর বায়ূমন্ডলের বস্তুকণিকার 1% হল ম্যাগনেটাইট।
তবুও সময় দীর্ঘ দুরত্ব অতিক্রমের জন্য এবং বায়ূমন্ডলে প্রচুর ধুলিকনা থাকায় নীল বর্ণ ধারণ করে।
মহাবিশ্বের আকাশ কালো বর্ণেরঃ
বিক্ষেপনের ভিত্তিতে বলতে গেলে, সেখানে কোন বায়ূমন্ডল নেই। তাই তার আকাশ অন্তত নীল নয় কারণ কারন বিক্ষেপন হয় না। তবে কালো হওয়ার কারণ হিসাবে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন মহাবিশ্বের অসীম আয়তন আর ১৫ বিলিয়ন বছরের আদীমতাকে, অর্থাৎ এই সময়ের অধিক আলোক দুরত্বের আলো আমাদের চোখে পৌছায় না।
চাঁদের আলোর বিক্ষেপনঃ
শুরুতেই একটা প্রশ্ন ছিল, চাঁদ যদি সূর্যের কাছ থেকে আলো নেয় তবে তা কেন আকাশ নীল করে না। উত্তরটা সহজে দেওয়া যায় এভাবে, যে নিজেই চালায় ধার করে সে অন্যকে কি দিবে!!বাস্তবিকও তাই, এখানেও র্যালীর পূর্ণ বিক্ষেপনই ঘটে কিন্তু চাঁদ নিজেই আলো পায় 11% আর সুপারমুন হলে 20% যেখানে সুর্য 73% বিক্ষীপ্ত করে। তাই চাঁদের আলো আকাশকে নীল করার জন্য যথেষ্ট নয়।
আমাদের উপমহাদেশের পদার্থবিদ্যার প্রথম নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী সি. ভি. রমন বলেছিলেন “আমাকে বিজ্ঞানের বিষয় বাছাই করতে বললে, আমি এটিই নিতাম ‘Why the sky is blue’. কারণ এর প্রশ্ন করাটা যতটা সহজ উত্তরটা ঠিক ততটাই কঠিন।
এখানে, বর্ণালী আকাশকে বিক্ষেপনের দৃষ্টিতে সরলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তবে মূল বিষয় হল এটাই, বর্ণ বা রঙ এটা কোন ধ্রুবক বিষয় নয়। কিভাবে আপনার চোখে আলো আসছে তার উপর এটা নির্ভরশীল, কখনো দেখার ভিন্নতায় কখনো বা কল্পনার। ঠিক যেমন কারও ভাষায় স্বপ্নের রঙ নীল, আবার কখনো সাদা রঙের স্বপ্ন।
তথ্যসুত্রঃ
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
http://www.sciencemadesimple.com/sky_blue.html
Click This Link
শারফান উপল
URP, KUET
04/06/16
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৬:১৩
সিকদার বাড়ীর পোলা বলেছেন: ভালো লাগা
+++++++++++++++++