নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁখি মেলে চেয়ে আছি তোমার নাহি পাই দেখা

আমি স্বর্নলতা

যা আছে আমার সকলি কবেনিজ হাতে তুমি তুলিয়া লবে।সব ছেড়ে সব পাব তোমায়মনে মনে মন তোমারে চায়।

আমি স্বর্নলতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ মায়াভরা মুখখানি মনে পড়ে

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৯



ছবি-গুগুল



আমি সবসময় বৃষ্টি ঘৃনা করি। তবে বৃষ্টি যে আমাকে টানে না তা নয়। মাঝে মাঝে বৃষ্টি যে ঘৃনা করি তা ভুলে যাই। বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দের তালে মন যখন নাচতে থাকে তখনি আমার মনে পড়ে সেই দৃশ্য। চিৎকার করে আমি বলি “আমি বৃষ্টি ঘৃনা করি, ঘৃনা করি আমি বৃষ্টি” ।



গোয়ালঘর আর আমাদের শোবার ঘর একি ছিল। গরুর গন্ধে সারাক্ষনই ঘর ভরে থাকত। ভাবতেই অবাক লাগে , কি অদ্ভুত ছিল আমাদের জীবন। দু’বেলা খাবার জুটত না আমাদের । বাবা সারাক্ষন মদ খেয়ে মাতাল হয়ে থাকত। আর মাকে ইচ্ছেমত পিটাত, টাকা চেয়ে। মা’র বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলত। মা টাকা আনতে পারতনা তাই সহ্য করেতে হত বাবার দেয়া সব যন্ত্রনা। মাকে দেখতাম এ বাড়ি ও বাড়ি কাজ করে আমাদের মুখে খাবার তুলে দিতেন। জীর্ন , মলিন কাপড় পড়ে থাকতাম আমরা তিন ভাই বোন। মাকে দেখতাম প্রায়শই কাঁদতে।



আমার বাবার কারনেই মা নিজের সম্মান হয়ত বিসর্জন দিয়েছিলেন। অত্যাচার সহ্য করতে করতে মা’র সহ্য ক্ষমতা হয়ত হারিয়ে গিয়েছিল। হারিয়ে ফেলেছিল তার বিবেক বুদ্ধি, হারিয়ে ফেলেছিল আমাদের। আমাদের হারিয়ে ফেলেনি হতে পারে ত্যাগ করেছেন।



সেদিন খুব বর্ষনমূখর দিন ছিল। মা’কে খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করেছিলাম মা অন্য কোন পুরুষের বাহুডোরে ছিল। সহ্য করতে না পেরে আমি লোকটার হাতে কামড় বসিয়ে দিয়েছিলাম। আর মা আমাকে জোরে চড় মেরেছিল। কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। সেইদিন থেকেই মা আর বাড়ী ফিরে আসেনি। খুঁজে পাইনি আর মাকে কোথাও।এরপর থেকে আমিও বৃষ্টি ঘৃনা করা শুরু করি । সবকিছু কেমন যেন খুব দ্রুতই পরিবর্তন হয়ে গেল।



গীর্জার এক ফাদার আমাকে নিয়ে গেল লন্ডনে। তারপর ছবির মত পাল্টে গেল আমার জীবন। এখানে লেখাপড়া করলাম, নতুন কালচারে বড় হলাম। কিন্তু আমিত আমার ফেলে আসা স্মৃতি ভুলে যেতে পারিনি। পারিনি নিজের গা থেকে সেই লেগে থাকা মাটির গন্ধ ভুলে যেতে।



বৃষ্টি আমার ভালোলাগেনা। আমার কেন জানি মাকে মনে পড়ে। মা তুমি কোথায়? বুকের ভেতর চাপা একটা কষ্ট পুষে রেখেছি। আমার মা আর ছোট দুই ভাই বোন বেঁচে আছে না মরে গেছে কিছুই জানিনা। আমি মাকে ভুলতে পারিনা। শত কষ্টের মাঝেও মা আমাদের অনেক ভালোবেসেছেন। মাকে ঘৃনা করেছি অনেক। এখন বড় হয়ে যাওয়ার পর মনে হচ্ছে মা ঠিক কাজটিই করেছিলেন। ক্ষুধার যন্ত্রনা শুধু সেই বুঝে যার পেটে ক্ষুধা থাকে। ঘৃনা করি এখন শুধু আমার সেই বাবাকে যে বাবা নামের কলঙ্ক। যে আমাকে আমার ভাই বোনের কাছ থেকে আলাদা করেছে।



আঠারো বছর পর আমি দেশে ফিরে এসেছি। ছুটে যাচ্ছি আমার সেই ছোট্ট গ্রামে। আবছা আবছা যতটুকু মনে পড়ে তাই আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যাচ্ছি আমি। মনে পড়ে গায়ে কত ধূলাবালি লেগে থাকত। খালি পায়েই বিছানায় সবাই একসাথে ঘুমাতাম। গরু আর আমাদের ঘুমানোর ঘর একটাই ছিল। এই দুটি গরুই ছিল শেষ সম্বল। কতদিন গরু নিয়ে মাঠে গিয়েছি। কত ছুটে বেড়িয়েছি। এত দুঃখের মাঝেও মনে হত শান্তিতে ছিলাম। অন্তত আমার মা ছিল আমার পাশে।



আমি রিয়েলাইজ করেছি মা ভুল ছিল না। মায়ের জায়গায় যদি আমি হতাম আমি কি করতাম তাই ভেবেছি। মার জন্য কিছু শাড়ি এনেছি। মাকে ছেঁড়া কাপড়ে কত দেখেছি । একটা ভাল শাড়িও পড়তে পারেনি কখনো। তবুও তার মুখে হাসি লেগে থাকত। মা'র মায়া ভরা মুখখানি মনে পড়ে খুব বেশি। আমিত ভুলতে পারিনি মাকে। কি সুন্দর দেখতে ছিল মা। এত কষ্টের মাঝেও দুঃখ করতে দেখিনি কখনো। মাকে আমি খুঁজে বের করবই।



আমি জানি মা সামাজিক মর্যাদা, ভয়, লজ্জা সব ভুলে গিয়েছিল। পালিয়ে গিয়ে সে বাঁচতে চেয়েছিল। বাঁচতে চেয়েছিল পাষণ্ড স্বামীর অত্যাচারের হাত থেকে।



কোন কোন পরাজয় জয়ের থেকে বেশি বিজয়োল্লাসের কারন হয়। মা পরাজিত হয়েও জয়ী হয়েছিল হয়ত।



গ্রীষ্মের দুপুরে গাড়ি ছুটে চলছে আমার গ্রামের পথে। আকাশটা ক্রমেই মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। বুকের ভেতরটা অজানা সুখে নেচে উঠছে। আজ যদি বৃষ্টি হয় তবে আমি সত্যিই ভিজব ইচ্ছেমত। মনের যত দুঃখ আছে বৃষ্টির জলে ভাসিয়ে দিব।



আর চিৎকার করে বলব " মা'গো অনেক ভালোবাসি তোমায়, অনেক ভালোবাসি"।



মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: বিশাল ক্যানভাসে তুলির আঁচড়টা একটু কমই মনে হলো।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:২৫

আমি স্বর্নলতা বলেছেন: :P :P


পরের বার আবার চেষ্টা করব।


ধন্যবাদ।

২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৫

আরমিন বলেছেন: মন খারাপ করা ভালোলাগা!

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:২৫

আমি স্বর্নলতা বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ।


শুভকামনা রইল।

৩| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৬

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:



মাকে না হারানো পর্যন্ত মায়ের প্রকৃত মূল্যায়ন হয় না।
গল্পটি আরও বিস্তৃত হলেও বিরক্তকর হতো না।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:২৬

আমি স্বর্নলতা বলেছেন: ঠিক বলেছেন।


ইচ্ছে করেই বিস্তৃত করিনি।


আন্তরিক ধন্যবাদ মইনুল ভাই।

৪| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:২৯

ইখতামিন বলেছেন:
অসাধারণ লেগেছে..

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৩

আমি স্বর্নলতা বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ।


শুভেচ্ছা জানবেন।

৫| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৩৪

মাহবু১৫৪ বলেছেন: দারূণ লেগেছে

৪ নং ভাল লাগা

আর একটু লেখাটা বড় হলে গভীরতাটা বাড়তো আরো!

++++++

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৪

আমি স্বর্নলতা বলেছেন: পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।

ভাল থাকবেন।

৬| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৪

তুষার কাব্য বলেছেন: দারূণ লেগেছে ! ভাল থাকবেন।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৫৬

আমি স্বর্নলতা বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ।

আপনিও ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইল।

৭| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭

এহসান সাবির বলেছেন: শুভ বসন্ত!

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৪৮

আমি স্বর্নলতা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।


বসন্তের শুভেচ্ছা আপনাকেও।



আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.