নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

শাওন আহমাদ

এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।

শাওন আহমাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মামী-মা

১৮ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:৫০


ছেলেবেলায় আমাদের বইয়ে একটা ছড়া ছিল, "তাই তাই তাই মামা বাড়ি যাই। মামা দিল দুধভাত, পেট ভরে খাই। মামী এলো লাঠি নিয়ে পালাই পালাই..."

সেইসময় ছড়াটা যতবারই পড়তাম কিন্তু এর সঠিক মানেটা ঠিক বুঝতে পারতাম না। কারণ আমাদের মামী কখনোই খাবার খেয়ে ফেলার কারণে আমাদের লাঠি নিয়ে তাড়া করতেন না বরং তিনি আমারা খাবার না খাওয়ার কারণে চিৎকার চেঁচামেচি করে বাসা মাথায় তুলে নিতেন এবং এখনো নেন।

মায়ের অসুস্থতার কারণে বছরের অনেকটা সময় আমারা মামা বাড়ি থাকতাম। কিন্তু কখনো একটি বারের জন্যেও মনে হয়নি আমাদের প্রতি মামীর ভালোবাসা কমে গেছে। বরং আমাদের মামী আমাদের প্রত্যেকদিন বিভিন্ন কায়দায় ভালোবাসার থেরাপি দিতেন আর আমরা তার ভালোবাসা পেয়ে বিড়াল ছানার মতো তার আশেপাশে লুটোপুটি খেতাম।

আমাদের প্রত্যেকটা কাজিনকে মামী কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন। অথচ এই দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়নি।তিনি নিজেই সমস্ত দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। আমাদের মায়েরা আমাদের জন্ম দেবার পর বাকি কাজ গুলো আপন হাতে তিনি সামলে নিয়েছেন। শুধু আমাদেরই না তিনি তার নিজের ভাই-বোনদের বাচ্চাদেরও কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন। উনি কখনো তার সন্তান আর আমাদের মাঝে বিভেদ করেননি।

এই মানুষটা যে শুধু আমাদের মানুষ করার দায়িত্ব পালন করেছেন তা কিন্তু না। তিনি সমস্ত রকমের কাজ কে তার দায়িত্ব হিসেবে হাতে তুলে নিতেন আর নিপুণ হাতে তা যথাযথভাবে পালন করতেন। শয্যাশায়ী মা-বাবা আর শ্বশুর-শ্বাশুড়ির মধ্যে ভেদাভেদ না করে দিনরাত তাদের সেবা করেছেন। প্রত্যেক টা মানুষ শয্যাশায়ী অবস্থায় থেকে তার সেবা পেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।

ছেলেবেলায় আমি ভালোবাসা আর নির্ভরতার আশ্রয় বলতে বুঝতাম আমার মামী কে। তার ছত্রছায়ায় দিনদিন যত বড় হচ্ছিলাম ততো তার আচরণ দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। কি করে একটা মানুষ এতোটা নির্ভেজাল আর আত্মত্যাগী হতে পারে! কি করে একটা মানুষ সমস্ত মানুষ গুলোকে বুকে জড়িয়ে ভালো থাকতে পারে!

এই মানুষটার মূল উদ্দেশ্যেই হচ্ছে সবাইকে জড়িয়ে ভালো থাকা এবং প্রতিবেশীরাও এর বাইরে নয়। আশেপাশের প্রত্যেকটা মানুষ আমার মামীর ভালোবাসায় মুগ্ধ। সারাক্ষণ বাসায় প্রতিবেশীদের পদচারণা লেগেই থাকে শুধু মামীর সংস্পর্শ পাবার আশায়। এই মানুষ গুলোর অধিকাংশ মানুষই স্বল্প আয়ের লোক। মামী কে দেখতাম সবমসময় চেষ্টা করতেন স্বল্প আয়ের লোকেদের সাথে চলাফেরা করার। তাদের দান করে বা খাবার দিয়ে উনি যে কি ভীষণ তৃপ্তি পেতেন তা উনার মুখ দেখলে যেকেউ অনুমান করতে পারতেন।

ছেলেবেলায় দেখতাম মামী তার টুকটাক কজে হেল্প করার জন্য একটা ছেলেকে বাসায় রেখেছিলেন। কাজের কাজ কি হতো জানিনা কিন্তু ছেলেটা মামীর সংস্পর্শ থেকে লেখাপড়া থেকে শুরু করে অনেক কিছু শিখেছিলো যা তার ব্যক্তিগত জীবনকে সাফল্য মন্ডিত করেছে। এই ছেলেটা আর আমাদের মধ্যে মামী কোনো ভেদাভেদ করতেন না। আমরা একসাথে বেড়াতে যেতাম, খেলতাম, খেতাম এবং ঘুমাতাম।

মামী তার কাজে হেল্প করা মেয়েদের মাথায় বিলি কেটে দেয়, চুলে তেল দিয়ে দেয়, চুল বেঁধে দেয় মাঝে মাঝে একসাথে ঘুমায়ও। আর খাবার দাবার তো আমরা একসাথে এক টেবিলে বসেই খাই। মামীর রাজ্যে উঁচু-নিচু বলে কোনো কথা নেই। তার কাছে সবাই মানুষ, সবাই সমান।

আমার মামা বলেন এই পুরো সংসার জীবনে মামী নাকি নিজের জন্য কোনোদিন কিছুই চায়নি।কি অদ্ভুত না? আসলেই আমি সবসময় মামীর মুখে কার কি নেই, কাকে কি দিতে হবে এসব শুনেই বড় হয়েছি। উনার নিজের কিছু নেই, নিজের কিছু চাই তা কখনোই বলতে শুনিনি।

আমরা কাজিনরা সবাই বড় হয়েছি। অনেকেই বিয়ে করে বাচ্চাকাচ্চার বাবা হয়ে গেছে কিন্তু মামী এখনো আমাদের প্রতি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াননি। আমাদের সেই ছোট্ট মনে করে এখনো দায়িত্ব পালন করেই যাচ্ছেন।

যেখানে মামার সংসারে মামীর চিৎকার চেঁচামেচিতে ভাগিনা ভাগ্নিদের ঘুম ভেঙে যাওয়ার কথা সেখানে ভোরবেলা যাতে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে না যায় সে জন্য মামী আমাদের রুমের আশেপাশে কাউকে কথা বলতে দেন না।

শুনেছি অনেক মামীর সংসারে ভাগিনা ভাগ্নীদের খাবার জুটেনা। অথচ আমার মামী আমরা কি পছন্দ করি না করি এর উপর ভিত্তি করে যুগ যুগ ধরে খাবার রান্না করে যাচ্ছেন যাতে করে আমিরা তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারি।

কিছুদিন আগে শুনলাম আমার এক বন্ধু কে নাকি তার মামী কালো জাদু করেছে। আমার বন্ধুর অপরাধ সে স্টুডেন্ট ভালো এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। এই হিংসায় তার মামী তাকে দমিয়ে দেয়ার জন্য কালো জাদু করেছে। আর এদিকে আমার মামী আমাদের মঙ্গল কামনায় ঘণ্টার পর ঘন্টা জায়নামাজে বসে কাঁদেন।

যখন রবীন্দ্রনাথের ছুটি গল্পটি পড়তাম তখন মামী চরিত্রের ওই মহিলার উপর ভীষণ রাগ হতো। মনে হতো ওই মহিলাকে আমার মামীর সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলি কিভাবে ভাগিনা-ভাগ্নিদের ভালবাসতে হয় তা আমার মামীর কাছ থেকে শিখে নিন। বেচারা ফটিকের জন্যও খারাপ লাগতো। ও যদি আমার মামীর মতো মামী পেতো তাহলে এভাবে ওকে অকালে চলে যেতে হতো না।

আমার মামী আসলে প্রত্যেকটা জায়গায়ই শ্রেষ্ঠ। আমাদের কাছে উনি শ্রেষ্ঠ মামী, আমার মা-খালা আর মামাদের কাছে শ্রেষ্ঠ ভাবি, আমার অন্যান্য মামাদের বাচ্চাদের কাছে শ্রেষ্ঠ কাকি, তার ভাই-বোনদের কাছে শ্রেষ্ঠ বোন আর তাদের বাচ্চাদের কাছে শ্রেষ্ঠ ফুপু-খালা, উনি শ্রেষ্ঠ মেয়ে, শ্রেষ্ঠ বোউ।

হ্যাঁ এই ভালো মানুষটাই আমাদের মামী। সে আগে যেমন ছিলেন এতোগুলা বছর পরেও ঠিক তেমনই আছেন।এই মানুষটা কে নিয়ে লিখে শেষ করা যাবেনা আর আমি সে সাহসও করিনা।কারণ কিছু মানুষ কে নিয়ে সত্যিই লিখে বা বলে শেষ করা যায় না।

আমরা চির-ঋণী এই মানুষটার কাছে। এই ঋণের বোঝা আমাদের সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে কারণ কিছু ঋণের কোনো শোধ হয় না। আমাদের ভাবতেই নিজেদের ভীষণ অহংকারী মনে হয় যে আমাদের তার মতো একটা মামী আছে আর সারাজীবন আমরা তাকে নিয়ে এই অহংকারটা করেই যেতে চাই। আমাদের মামী আমাদের সবার আয়ু নিয়ে বেঁচে থাকুন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ বছর। ❤

ছবি গুগল থেকে নেয়া।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:০৮

রানার ব্লগ বলেছেন: মামা মা মামী এই সম্পর্ক গুলো অসম্ভব রকমের মানবিক কিন্তু পৃথিবীর কিছু অমানবিক মানুষ সম্পর্ক গুলোকে নোংরামির পর্যায় নামিয়ে ছাড়েছে যার যার নিজের স্বার্থে।

১৮ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৫২

শাওন আহমাদ বলেছেন: নির্মম সত্য!

২| ১৮ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:১৬

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: এখনকার ছেলেমেয়েরা এমন ছড়া পড়ে না।
বাক্য বদলেছে ---

তাই তাই তাই ,মামা বাড়ি যাই
মামাবাড়ি ভারী মজা , কিল চড় নাই
মামী দিলো দুধভাত ,দুয়ারে বসে খাই !

মামী এলো লাঠি নিয়ে -- এই ছড়া কেন বানানো হয়েছিল ?

১৮ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৫৫

শাওন আহমাদ বলেছেন: এখনকার ছেলেমেয়েরা অনেককিছু থেকেই বঞ্চিত!
হয়তো সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরার জন্যই লিখা হত!

৩| ১৮ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:২১

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি ভাগ্যবান।
আমার মামা নেই মামীও নেই। পোড়া কপাল আমার।

১৮ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:৫৯

শাওন আহমাদ বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ! সত্যিই আমি এবং আমার কাজিনরা ভাগ্যবান।

৪| ১৮ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৫:১১

মোগল সম্রাট বলেছেন: মামি দিলো দুধভাত পেট ভরে খাই,
মামা এলো লাঠি নিয়ে পালাই পালাই পালাই।

আমরাতে মামায় লাঠি নিয়ে আসার কথা শুনছি । আপ্নের মামির লাঠি নিয়ে আসার কথা কইলেন।

আউলায়া যাইতেছি কিন্তু

১৮ ই জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০১

শাওন আহমাদ বলেছেন: কিছুই আউলাইয়া যাইতেছেনা। আপনি একটু কষ্ট করে গুগল মামার সাহায্য নিন আশা করি দুটি ফর্মেট'ই পেয়ে যাবেন।আমি এটাই পড়েছি পরে একটু বড় হবার পর কিছু কিছু আদর্শলিপি বইতে মামার কথা পেয়েছি।

৫| ১৮ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১০:৪২

জ্যাকেল বলেছেন: আমার দু চারজন মামী আছেন, খুব সুন্দর ব্যবহার করেন। আপনার লেখাটা পরিচ্ছন্ন।

১৯ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:২৪

শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ!

৬| ১৮ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১০:৪৫

শায়মা বলেছেন: আসলে মামী না
এই মামী মানুষটাই আসলে ভীষন ভালো একজন মানুষ ছিলো বুঝাই যাচ্ছে।

১৯ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:২৫

শাওন আহমাদ বলেছেন: জ্বী দোয়া করবেন আমার মামীর জন্য।

৭| ১৮ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১১:৩৬

কামাল৮০ বলেছেন: মামার সাথে আছে রক্তের সম্পর্ক,মামির সাথে নাই।ছাড়াকার হয়তো তাই বুঝাতে চেয়েছেন।সব মামিরা এক রকম হয় না।

১৯ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:২৬

শাওন আহমাদ বলেছেন: ঠিক বলেছেন।

৮| ১৯ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:০২

নূর আলম হিরণ বলেছেন: এর পরের লাইন যে মামী এলো লাঠি নিয়ে এটা আমার জানা ছিল না।

১৯ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৩০

শাওন আহমাদ বলেছেন: আমি এটাই পড়েছি পরে একটু বড় হবার পর ছোট ভাইদের পড়াতে গিয়ে কিছু কিছু আদর্শলিপি বইতে মামার কথা পেয়েছি। আপনি গুগল করে দেখুন মামীর ব্যপারটা আবৃত্তি সহ পেয়ে যাবেন।

৯| ১৯ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৪৫

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: সব মামীরাই হয়তো এমন হয়না অথবা সব মামীরাই হয়েতো দুষ্টু হয়না।

১৯ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১১:৩৩

শাওন আহমাদ বলেছেন: ঠিক বলেছেন, তবে কিছু মানুষ অনন্য হয়েই জন্মায়।

১০| ১৯ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:১১

আখেনাটেন বলেছেন: .ভালো মানুষ চারপাশকেও নির্মল রাখে....উনি তাই রেখেছেন....উনার প্রতি শ্রদ্ধা...

১৯ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:১৫

শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ! আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.