নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

শাওন আহমাদ

এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।

শাওন আহমাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের বড় মা

১৯ শে আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৩:১১



আমরা কাজিনরা আমাদের দাদার মা কে বড় মা বলে ডাকতাম। মানুষ টা মায়ের মতোই ভালো আর মমতাময়ী ছিলেন। তার সারল্য, ভালোবাসা আর বাচ্চাদের মতো মুখ টিপে হাসি আমাদের সবমসময় তার পাশাপাশি থাকতে বাধ্য করতো।

বাসার সবার প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা জমা ছিলো তার বুকের গভীরে। এতো বয়স হয়ে যাবার পরেও তার ভালোবাসার দেয়ালের রঙ বিন্দু পরিমাণও বিবর্ণ হয়েছিলো না। সে রাত জেগে ঠুকঠুক করে লাঠিতে ভর দিয়ে সবার রুমে রুমে গিয়ে খবর নিতেন কে বাসায় এসেছে আর কে এখনো আসেনি। সবার চিন্তায় সবসময় ফ্যাঁকাসে হয়ে থাকতেন। সে যেমন সবাইকে স্নেহ আর ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে রাখতেন, সবাই তেমন তাকেও লতার মতন পেঁচিয়ে থাকতেন। যেভাবে বটের ঝুরি গুলো বটবৃক্ষকে পরম মমতায় পেঁচিয়ে থাকে।

আমার ফুপু আর বাবা-কাকারা বড় হয়ে যাবার পরে পরবর্তী প্রজন্ম মানে আমরা কাজিনরা বড় মা'র সাথে রাতে ঘুমানোর জন্য এক প্রকারে যুদ্ধ লাগিয়ে দিতাম। যে জিতে যেতো সেই বড় মা'র সাথে ঘুমানোর সুযোগ পেতো।অধিকাংশ সময় আমিই তার সাথে ঘুমানোর সুযোগ পেতাম। তার সাথে ঘুমানোর রাত মানেই সারারাত রূপকথার রাত।

তার রূমের এক কোনো টিমটিম আলোয় হ্যারিকেন জ্বালানো থাকতো। সেই সময় মফস্বলে প্রচুর বিদ্যুৎ সমস্যা করতো। যখন তখন বিদ্যুৎ চলে যেতো। তাই বারবার অন্ধকারে দিয়াশলাই হাতড়ে হ্যারিকেন জ্বালানোর ঝামেলা এড়াতেই মূলত টিমটিম করে হ্যারিকেন জ্বালিয়ে রাখা হতো।

হ্যারিকেনের টিমটিম আলো এবং কেরোসিন মেশানো হ্যারিকেনের সলতে পোড়ার অদ্ভুত এক গন্ধ ঘরটিকে সম্মোহনীয় করে তুলতো।সেই সম্মোহনীয় পরিবেশে আমরা বুঁদ হয়ে তার রূপকথার গল্প শুনতাম। উনি গল্প বলার সাথে সাথে এক হাতে আমাদের মাথায় বিলি কেটে দিতেন আর অন্য হাতে ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ করে ঘুরাতে থাকতেন হাতপাখা। আমরা গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে আবার জেগে উঠে দেখতাম উনি নিরলসভাবে এক হাতে আমাদের মাথায় বিলি কেটে যাচ্ছেন আর অন্য হাতে ঘোরাচ্ছেন পাখা। আমরা তখন অবাক হয়ে ভাবতাম আচ্ছা এই মানুষটার হাত ব্যথা করেনা! কিভাবে একাধারে দুই হাতে কাজ করে যান? আবার মনে মনে ভাবতাম বড়দের হয়তো হাত ব্যথা করেনা। কিন্তু এখন বুঝতে পারি মানুষটার ঠিকই হাত ব্যথা করতো কিন্তু আমাদের যাতে গরমে কষ্ট না হয় সে জন্যই তিনি ব্যথা ভুলে পাখা ঘোরাতেন।

শুধু আমরা ছোটরাই না বড়দেরও আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু ছিলো বড় মা'র ঘর। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর সবাই একত্র হয়ে মনোমুগ্ধকর এক আড্ডার পসরা সাজিয়ে বসতো বড় মা'র ঘরে। শীতের সময় এই আড্ডায় এক ভিন্নমাত্রা যুক্ত হতো। বড় মা ভীষণ শীতে কাবু ছিলেন সেই সাথে আগুন তাপানোর তীব্র নেশাও ছিলো তার। মাটির চুলোয় রাতের রান্না শেষে গনগনে কাঠের কয়লা গুলো তিনি একটি মাটির গামলায় তুলে ঘরে নিয়ে যেতেন এবং ঘুমানোর আগ পর্যন্ত সেই কয়লার আগুন তাপাতেন। তার সাথে আমরা সবাই সেই গনগনে কাঠের কয়লা ভর্তি মাটির গামলার চারপাশে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে বিভিন্ন গল্পে মেতে উঠতাম। গল্প করতে করতে যখন আগুনের আঁচ কমে আসতো তখন একটা লম্বা কাঠি দিয়ে সেই কাঠের কয়লা গুলোকে উসকে দিয়ে আবার আমরা গল্পে মেতে উঠতাম। অনেক রাত অবধি চলতো এই গল্প আর আড্ডার খেলা।

বড় মা'র রান্নার হাতে আধ্যাত্মিক এক ক্ষমতা ছিলো। খুব ভালো রান্না করতেন মানুষটি। পুরো বাড়িসুদ্ধ মানুষ তার রান্না করা খাবারের জন্য পাগল ছিলো। উনি শাক, লতাপাতা যাই রান্না করতেন আমরা মাছ-মাংস রেখে সেই খাবারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তাম। তিনি যে খুব গুছিয়ে বনেদি আঙ্গিককে রান্না করতেন তা কিন্তু নয়। খুব সাদামাটা ভাবেই তিনি রান্না করতেন। চুলায় তরকারি বসানোর পর থেকে শুরু করে রান্না শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি তরকারি চেখে চেখে দেখতেন আর মশলা যুক্ত করতেন। কখনো লবন, কখনো হলুদ আবার কখনো বা মরিচ। এতো সাদামাটাভাবে রান্না করার পরেও তার রান্না আমাদের কাছে অমৃতের মতো লাগতো।

মানুষ টা শীত ভয় পেতেন, মানুষ টা মৃত্যুও ভয় পেতেন। এতো ভয়ের পরেও পৌষের কোনো এক কনকনে শীতের বিকেলে তিনি আমাদের এবং এই পৃথিবীর মায়া ছিন্ন করে অজানা এক পৃথিবীতে পাড়ি জমালেন। সেই সাথে ভাঙলো আমাদের আড্ডাখানা, শেষ হলো এক অধ্যায়ের।

ছবিঃ গুগল

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৩

ঢাবিয়ান বলেছেন: আপনি কি লেখাটা আগেও ব্লগে দিয়েছিলেন ?আগে পড়েছি মনে হচ্ছে।

১৯ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৮:০৯

শাওন আহমাদ বলেছেন: জি ভাইয়া দিয়েছিলাম, বড় মাকে মহে হল, রিপোস্ট করলাম।

২| ২০ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১:০৪

শায়মা বলেছেন: সব বড় মায়েরাই মনে হয় এমন হয়। অনেক সুন্দর লেখা।

২০ শে আগস্ট, ২০২৩ দুপুর ১২:২৯

শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপু আপনার মন্তব্যের জন্য, কিছু মানুষ আসলেই ভালোবাসার অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়।

৩| ২০ শে আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর।

২০ শে আগস্ট, ২০২৩ বিকাল ৫:২৪

শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

৪| ২০ শে আগস্ট, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১২

করুণাধারা বলেছেন: ভালো লাগলো পড়তে।
বড়মার বয়স কত হয়েছিল?

২০ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ৮:৩৭

শাওন আহমাদ বলেছেন: সঠিক মনে নেই প্রায় ১০০ বছর হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.