নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

শাওন আহমাদ

এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।

শাওন আহমাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘরে ফেরার দিনগুলো

১০ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:১৩




ঈদের ছুটি ঘনিয়ে এলে আমি বেশ চনমনে হয়ে যাই। টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে নিজের মধ্যে। বাঁধনহারা পাখির মতো উড়াউড়ি করতে থাকি এদিক-ওদিক। সবার খবর নিই। কবে ছুটি হচ্ছে? কবে বাড়ি যাবে? কীভাবে যাবে? ইত্যাদি ইত্যাদি। যে আমি সারা বছর তেমন কারোর খবর নিই না, সে আমি এই সময় হয়ে উঠি সেরা যোগাযোগকারী। কিন্তু এবার ঈদের আগের দিনগুলো আমার খুব বিষণ্নতায় কেটেছে। বিষাদের এক চাদর মুড়িয়ে রেখেছিল পুরোটা সময়জুড়ে। অফিস, আহার, ঘুম কোনো কিছুতেই মন লাগাতে পারিনি। বুকের মধ্যে ঝেঁকে বসে থাকা বিষাদগুলো দীর্ঘশ্বাস হয়ে বাতাসে মিশে গেছে শুধু।


ছুটির দিন যত ঘনিয়ে আসছিল, বিষাদের মাত্রা তত গভীর হচ্ছিল। এত দিন যাদের খবর নিয়ে এসেছি, তারা নিজ থেকে খবর নিচ্ছিল; ছুটি কবে? বাড়ি কবে যাব? কিন্তু আমার ঠিকভাবে উত্তর করতেও ইচ্ছে করছিল না। আসলে সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। বিপত্তি বাধল, যখন ছোট ভাই কল করে করুণ কণ্ঠে বলল, এই ঈদে ওর ছুটি হবে না। এটা শুনেই আমার সকল আনন্দ-আহ্লাদ বিষদের চাদরে ঢেকে যায়। ও শুধু আমার ছোট ভাই-ই না, আমার বাচ্চার মতো। অল্প বয়সেই মা-বাবা হারিয়েছে। আমি ওকে এক প্রকার কোলেপিঠে করে বড় করেছি। কয়েক বছর আগেও ও আমার বুকের সাথে লেপ্টে ঘুমিয়েছে। ওর ভালো-মন্দ, আনন্দ-বেদনার সমস্ত খবর আমার জানা। যে ছেলেটা ঈদের ছুটিতে প্রজাপতির মতো নেচে বেড়ায়, সেই ছেলেটা ঈদে ছুটি পাবে না, এমনকি ঈদের দিনও তাকে কাজের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এটা মেনে নেওয়া তো দূরের কথা, ভাবনাতেও আনতে পারিনি।


বিষাদে বুঁদ হয়ে দিন কেটে যাচ্ছে। ছোট ভাইয়ের জন্য কিছু করতে পারাছি না ভেবে নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল। অজানা এক ভয়ে ওকে মেসেজ কিংবা কল করার সাহসও পাছিলাম না। কল দিয়ে কী বলল? কী বলে সান্ত্বনা দেব? আমার ভেতরে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, এর কিছুই ওকে আঁচ করতে দিচ্ছিলাম না। জানি, এসব আঁচ করতে পারলে ওর কষ্ট আরও বেড়ে যাবে। আমি শুধু আকাশের দিকে মুখ করে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকছিলাম। বলছিলাম, আপনি নিশ্চয় আমার ভেতরের খবর জানেন। কী ঝড় ভেতরে বয়ে যাচ্ছে, তা আপনার অজানা নয়। আপনি যা সহজ করেন, তা-ই আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। আপনি চাইলে, কঠিনতর বিষয়কেও করে দিতে পারেন অতি সহজ। আমি কোনোভাবেই আমার ভাইকে ছাড়া, না ঈদের আনন্দ গায়ে মাখতে পারব না, কোনো খাবার খেতে পারব। আপনি তো জানেন, ও সারাক্ষণ আমার সাথেই লেপ্টে থাকে। ওকে রেখে বাড়িতে গিয়ে কীভাবে মন বসাব? আপনি আমাদের ঈদ আনন্দে রঙ ছড়িয়ে দিন। দিনরাত শুধু এই প্রার্থনা করে গেছি।


দুই সপ্তাহে ওর সাথে আমার দুই থেকে তিন দিন কথা হয়েছে। এর মধ্যে একদিন ও জানাল, ১২ তারিখ বুধবার চূড়ান্ত হবে ছুটির বিষয়। আমি বুধবার সারা দিন প্রার্থনায় ডুবে রইলাম, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতে ওর কল পেলাম। প্রবল হৃদস্পন্দন নিয়ে কল রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে খবর এল ওর ছুটি হয়েছে। ১৩ তারিখ অফিস করেই ছুটি! আমার চোখে আনন্দ অশ্রু। শেষ কবে এরকম আনন্দমাখা খবর পেয়েছি মনে নেই। অশ্রুসিক্ত নয়নে মুখ থেকে রবের শুকরিয়ার বেড়িয়ে এলো আলহামদুলিল্লাহ্‌!


শুরু হলো আমার ব্যস্ততা; নিজের জন্য কেনাকাটা, পার্লারে লম্বা সিরিয়ালে থেকে চুল ঠিক করা, ফেসিয়াল করা, ব্যাগ গোছানো ইত্যাদি। ভাইয়া পূর্বেই গাড়ি ঠিক করে রেখেছিলেন। ১৪ তারিখ শুক্রবার বাদ ফজর বাড়ির উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যাব। যথারীতি ফজরের নামাজ শেষ করে তৈরি হয়ে বসে আছি। কিন্তু গাড়ির দেখা মিলছে না। সকাল ৮টায় ভাইয়া কল করে জানাল, পথিমধ্যে গাড়ির টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেছে। আশেপাশে কোনো গ্যারেজ খোলা নেই। গাড়ি ঠিক হতে দুপুর হয়ে যাবে। তাই আমরা জুমআর পর রওনা করব। কল কেটে ঘুমিয়ে গেলাম।


দুপুর গড়িয়ে বিকেল, গাড়ির দেখা নেই। ভাইয়াকে কল দিলাম। ভাইয়া বলল, গ্যারেজ না খোলায় গাড়ি ঠিক করা যায়নি। নতুন গাড়ির খোঁজ করছি। গাড়ির ব্যবস্থা হলে বাদ মাগরিব বের হব। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে একটি গাড়ির ব্যবস্থা হলো। রাত ৮টায় শুরু হলো আমাদের যাত্রা। রাস্তার জ্যাম ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছি বাড়ির পথে। খানিক বাদে বাদে সজীব কল করে খবর নিচ্ছে। ওহ হ্যাঁ, এই সজীবই আমার ছোট ভাই। দীর্ঘ জার্নি শেষে রাত ৩টায় গন্তব্যে পৌঁছালাম।


বাড়িতে আমার দুই ভাতিজা সুফিয়ান, সাফওয়ান আর ওদের মা থাকে। এত বড় বাড়ির প্রায় পুরোটাই ফাঁকা পড়ে থাকে। আমরা অন্য সদস্যরা রুটিরুজির তাগিদে পড়ে থাকি জাদুর শহরে। সুফিয়ানের জন্ম থেকে শুরু করে বেড়ে ওঠার অনেকটা সময় আমি সাথে ছিলাম। ও আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। বাড়িতে গেলে সারাক্ষণ আঠার মতো লেগে থাকে। চলে আসার সময় কেঁদেকেটে বুক ভাসায়। সাফওয়ানের জন্মের বেশ আগেই আমি বাড়ি ছেড়েছি। ও আমকে বছরে ৪-৫ দিনের বেশি কাছে পায়নি। ভাবতাম, আমার প্রতি ওর মায়া জন্মাবে না। কিন্তু আমার ধারণা একদম ভুল। এই ছুটির দিনগুলোতে সে আমাকে এক মুহূর্তের জন্যেও চোখের আড়াল করতে চায়নি। ওয়াশরুমে গেলেও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছে। বাবাই, বাবাই ডেকে মনের দখলদারিত্ব নিয়েছে।


আমি, সজীব, সুফিয়ান আর সাফওয়ান ঈদের ছুটিগুলো বেশ উপভোগ করেছি, আলহামদুলিল্লাহ। এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়িয়েছি, একসাথে কার্টুন দেখেছি, পরিবারের সবাই মিলে একসাথে খাবার খেয়েছি, গল্প-আড্ডায় মেতে উঠেছি। মনে মনে চাইছিলাম, যদি এই অবসরের সময়গুলো আর একটু দীর্ঘ হতো, তাহলে আরও কিছু সময় মায়ায় জড়িয়ে পার করা যেত। কিন্তু অবসর ফুরিয়ে প্রাণের মেলা ভাঙল। অনিচ্ছায় পেছন থেকে টেনে ধরা মায়ার বাঁধন আলগোছে আলগা করে ফিরতে হলো জাদুর শহরে।

ছবিঃ গুগল

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৩:১২

নয়া পাঠক বলেছেন: ঘরে ফেরার ইচ্ছে এবার ঈদে ছিল, কিন্তু একটা কোম্পানীর খামখেয়ালীর জন্য যাওয়া হয়নি। খুবই মন খারাপ ছিল তাই।

১০ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০

শাওন আহমাদ বলেছেন: বিশেষ দিনে পরিবারের সাথে থাকতে না পারা, সত্যিই অনেক কষ্টের।

২| ১০ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৪:২৫

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: পরিবারের বন্ধন গুলো অটুট থাকুক।

১০ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১

শাওন আহমাদ বলেছেন: আমিন, নতুন প্রোফাইল পিকচার সুন্দর হয়েছে।

৩| ১১ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:৫৩

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: যারা বাইরে কাজ করেন ঈদে বাড়ি না যেতে পারলে সত্যি ভিষন মন খারাপ হয়।

১১ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ২:১১

শাওন আহমাদ বলেছেন: বিশেষ দিনে পরিবারের সাথে থাকতে না পারা, সত্যিই অনেক কষ্টের। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.