![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"বাইরে যে অবস্থা রে তাতো তো আজ না যাওনই ভাল ।
হুম ঠিক কইছো তয় দুই দিন হল দোকান খোলা হয় নাই । আইজ তো খুলতেই হইবো নাইলে ঘর সংসার চলব কেমনে !"
এভাবেই কথা গুলো বলতে বলতে আসছিল সোহেলের চাচা করিম শেখ আর জব্বর । সোহেল দাড়িয়ে তাদের কথা গুলো মন দিয়ে শুনছিল । ছোট্ট মনে হাজারো প্রশ্নের ভীড় জমেছে তার ।
সোহেলের বাবা কে ডাকতে এসেছে তারা , সদরে যাবে আজ । দোকান খুলতে হবে আজ ।
_বউ । ঘরে আতব চাল আছে ? আইজ সন্ধ্যায় আতব চালের পায়েশ রান্না কইর তো । অনেক দিন খাওয়া হয় না ।
_হুম , চাল আছে তয় চিনি নাই ।
_আইচ্ছা বিকেলে সোহেলরে পাঠায় দিও সদরে ওর হাতে চিনি পাঠায় দিমুনে ।
_আইচ্ছা ।
বলেই সোহেলের বাবা জামান সাহেব সদরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন ।
সোহেল ততক্ষণে বন্ধুদের সাথে খেলায় ভীষণ ব্যস্ত ।
_ঐ শুনছিস কাল নাকি মোল্লা গো বাড়ির উত্তর পাশে বড় রাস্তায় ৪টা বোম ফুটছে ।
_হুম শুনছি বাজানের মুখে ।
_শুনলাম দুই জন নাকি হাসপাতালেও গেছে ।
_হুম তয় ওগুলারে বোম কয়না ।
_কী কয় তাইলে ?
_মাষ্টার মসাই কইছে ওটার নাম নাকি ককটেল ।
এভাবেই খেলাচ্ছলে তাদের মনের কথা গুলো আশ্রয় পায় একে অপরের কাছে ।
দুপুর গডিয়ে বিকেল হতে লাগল । মা ভুলেই গেছে যে সোহেল কে সদরে পাঠাতে হবে চিনি আনতে ।
_মা , মা বাজান যে কইলো চিনি আনতে হইব ।কখন যামু মা ?
_হুম ঠিক কথা মনে করছো বাজান । যাও তৈর হয়া লও , সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরতে হইব ।
_আইচ্ছা মা ।
বলেই একছুটে তৈরি হয়ে এল সোহেল ।
_মা বাজানের দেয়া এই নীল শার্ট টা পইড়া গেলাম ।
_আইচ্ছা বাজান , শুনো মোল্লা গো বাড়ির ঐ রাস্তা দিয়া সাবধানে যাইও বাজান । সন্ধ্যার আগে ফিরা আইসো ।
_আইচ্ছা মা অহন যাই ।
বলেই মার দিকে তাকিয়ে একটু হেঁসেই দৌড় দিল সোহেল ।
রাস্তায় সব কিছুই একদম থমথমে ।ঠিক যেন ঝড়ের পূর্বাভাস । চারিদিকে বারুদের পোড়া গন্ধ । বাতাসটা কেমন ভারি হয়ে আছে ।
সোহেল বাবার কাছে পৌছলে বাবা তাকে চিনি , মায়ের জন্য নারিকেলের তেল আর চকলেট কিনে দিল । সোহেল তাদের একমাত্র সন্তান , খুব আদরের ।
_বাজান , সাবধানে যাইও আর রাস্তা ঘাটে একদম দারাইবা না । মারে যাইয়া কইবা ভালো করে যেন রান্না করে , তোমার করিম চাচাও আইব ।
_আইচ্ছা বাজান । অহন যাই । মায়ে কইছে সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে ।
_আইচ্ছা বাজান যাও ।
বলেই জামান সাহেব দোকানে ফিরে আসছিল , হঠাত্ পেছনে ভয়ংকর তিনটা শব্দে কেঁপে উঠল শান্ত পরিবেশ টা ।আশে পাশের মানুষ গুলো দিক বে দিক ছুটতে শুরু করল । বুঝে ওঠার আগেই জামান সাহেব পেছন ফিরে যা দেখতে পেল তা দেখার জন্যে কোন পিতামাতাই প্রস্তুত থাকে না ।
সাদা ধোঁয়ার মাঝে পিচ ঢালা রাজপথে পরে আছে আদরের একমাত্র সন্তান সোহেল । রাজনীতির জঘন্য বিস্ফোরক ককটেলের শীকার তার সন্তান । সোনার মত চেহারা আর কঁচি কঁচি ছোট হাত পা গুলো আজ স্তব্ধ হয়ে পিচ ঢালা উত্ত্বপ্ত রাজপথে লুটিয়ে পড়েছে । শুরু হল রাজনীতির ভয়াবহ ধ্বংসাত্ক যুদ্ধ । মূর্হুতেই ঘটনা গুলো ঘটে গেল একের পর এক ।
যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরছেন জামান সাহেব । বুকে জড়িয়ে রক্তাক্ত শরীরের আদরের একমাত্র সন্তান । জামান সাহেবের চোখ থেকে বিন্দু বিন্দু জল তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পরছে ।
জঘন্য আর ধ্বংসাত্ক রাজনীতি শুধু সাধারণ মানুষ গুলোর প্রাণই নিতে পারে , দেশের জন্য কিছুই নয় । তবে কেন এই ধ্বংসাত্ক রাজনীতি ? তাদের কবলে পরে প্রতি নিয়ত সোহেলের মত শত শত মানুষের প্রাণ দিতে হচ্ছে । লাক্ষ লাক্ষ শহীদের প্রানের বিনিময়ে অর্জত বাংলাদেশ শুধু নামেই স্বাধীন রাষ্ঠ্র । আমরা কী পারিনা ১৫কোটি মানুষের ৩০কোটি হাত কে কাজে লাগিয়ে ধ্বংসাত্ক রাজনীতি থেকে এ দেশ কে মুক্ত করতে ?
বাড়ি ফিরে জামান সাহেব তার স্ত্রীকে কী জবাব দেবে . . . . ?
©somewhere in net ltd.