![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
_এই যে শুনছেন ?
_আমি ?
_আর তো কেউ নেই !
_জ্বি
_এখানে কি আপনার ?
_আপনিই তো ডাকলেন !
_ডাকলেই আসতে হবে ?
_আচ্ছা
_কি আচ্ছা ?
_যাই তাহলে
_যাই কি ? বলেন আসি
_না না আর আসতে চাচ্ছিনা
_কেন ?
_এমনি
_এমনি কেন ?
_আচ্ছা আমি আসি...
বলেই রুদ্র এক দৌড় দিয়ে চলে যায় । পেছন ফিরে একবারও তাকায় না । মনে মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে যেন এই মেয়ের সামনে আর না পরে ।
_এই যে শুনছেন ?
(পেছন ফিরে তাকাতেই রুদ্র যেন হাজার ভোল্টের শক খেল ।)
_আপনি !
_কেন ! অন্য কেউ আসার কথা ছিল ?
_না মানে..
_না মানে কি? বলেন..
_কিছু না,কি বলবেন বলেন
_আপনার তো সাহস কম না !
_জ্বি !
_সাহস । বাংলা কথা বোঝেন না ?
_জ্বি
_আপনি আমাকে ফলো করছেন কেন ?
_জ্বি ?
_আপনি আমাকে ফলো করছেন ! ফলো । বুঝতে পারছেন না ? আপনি এই এলাকায় কেন ?
_জ্বি...
_কি জ্বি জ্বি করছেন ! কথা বলতে পারেন না ?
_না মানে...
_ধুর...এই আপনি যান তো । বিরক্তিকর ।
_আচ্ছা ।
_কি আচ্ছা ?
_যাই তাহলে
_যাই কি ? আসি বলতে বলছি না ?
_ওহ আসছি
_আর আসতে হবে না এক্ষুনি যান ।
_জ্বি
(বলেই রুদ্র এবারো উর্ধ্বশ্বাসে দৌড় দিল)
বিকেলের খোলাকাশে রুদ্র ছাদে পায়েচারি করছে আর তার গাছ গুলোকে পানি দিচ্ছে । তার রজনীগন্ধা গাছে কয়েকটা কলি এসেছে । আর পাথরকুচি গাছটা ওর শাখা প্রশাখা অনেকটা ছড়িয়েছে । ছাদের কর্ণারে ভাঙ্গা এনটিনাটায় একটা লাল ঘুড়ি এসে আটকে আছে । প্রাণ পণ উড়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা থাকতেও ঘুড়িটা কিছুই করতে পারছেনা । বাতাসের প্রতিকুল ব্যবহারে ঘুড়িটার বুক ছেদ করে আটকে আছে এনটিনায় ।
ঘুড়িটাকে রোজ দেখে রুদ্র । খুব ইচ্ছে ওর ঘুড়িটাকে মুক্ত করেদিতে নীল আকাশে । রুদ্র ঘুড়িটাএ খুব মন দিয়ে দেখছিল । হঠাত্ একটা পরিচিত ডাক. . .
_এই যে শুনছেন ?
_জ্বি আমি !
_আপনার সমস্যা কি ?
_জ্বি মানে...
_আপনি আমার পাশের বাসার ছাদে কেন ? আবার ফলো করছেন !
_জ্বি আসলে...
_আসলে কি ! পছন্দ হয়েছে ? প্রেম করতে চান ?
_না মানে...
_আপনার সাহস দেখে অবাক না হয়ে পরছি না । জানেন এই এলাকায় কত ছেলে আমার পিছনে ঘুড়ে । ওদের কাউকে বললে আপনাকে সোজা হসপিটালের বেডে সেটেল করে দিবে ।
_জ্বি...
_আপনি কি কথা বলতে জানেন না নাকি পারেন না ! এত জ্বি জ্বি করেন কেন !
_জ্বি আচ্ছা ।
_এই আপনি যদি আর একবার জ্বি জ্বি করেছেন তাহলে আমি কিন্তু ছাদ থেকে লাফ দেব ।
_আচ্ছা..
_আচ্ছা মানে!!
_জ্বি বলিনি তো...
_ধ্যাত..
বলেই মেয়েটি চলে গেল । শুধু বোঝা গেল অজানা এক অভিমানে মেয়েটি মগ্ন হয়েছে ।
সেদিনের পরদিন মেয়েটি তার ছোট চাচ্চুর বিয়ের জন্য ঢাকার বাহিরে যেতে হয় । সেখানে তার প্রত্যেকটা বন্ধুকে ও তার বড় ভাইকে এই গাধা মার্কা ছেলেটার কথা বলেছে । মেয়েটার মতে ছেলেটি একটা মস্ত বড় গাধা , মদনের মদন আর বলদের বলদ । তবে তার সহজ সরল মনটার কথা ভাবতেই কেমন যেন এক অতৃপ্ত ভালো লাগা মেয়েটার আত্নাকে ছুঁয়ে যায় ।
ক'দিন থেকে রুদ্রকে আর ছাদে দেখা যাচ্ছে না । মেয়েটি পুরো বিকেল জুড়ে ছাদে দাড়িয়ে লাল ঘুড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে । কি যেন এক অজানা টান তাকে ঘুড়িটা থেকে বিচ্যুত করতে পারে না । পশ্চিমের আকাশটা পুরো লাল হয়ে এলে চারিদিকটা একটু একটু করে আধাঁরে ছেয়ে যায় । একঝাঁক পাখির ডানা ঝাপটার শব্দও যেন আজ খুব বিরক্ত লাগে ।
পাশের ছাদের গাছ গুলো দেখে বোঝা যায় অনেক দিন কেউ যত্ন নেয় না । তাহলে কি ছেলেটা আর ছাদে আসে না ! অসুখ করেনি তো ! কেমন আছেন উনি !
এরকম হাজারো প্রশ্নের ভীড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে মেয়েটি ।
হঠাত্ একদিন মেয়েটি সব প্রশ্নের অবসান ঘটিয়ে পাশের বাসায় ছেলেটির খোঁজে যায় । তবে যা জানতে পারে তা শোনার জন্য মেয়েটি মোটেও প্রস্তুত ছিল না ।
ছেলেটির বাবার কাছে সব শুনে মেয়েটি সোজা ছাদে চলেগেল । টবে রজনীগন্ধার কলি গুলো বেশ ভালভাবেই ফুটেছে । আর ঘাসফুল গুলো পানি না পেয়ে সুকিয়ে গেছে । ছাদের কর্ণারে আটকে থাকা লাল ঘুড়িটার সুঁতো প্রায় খুলেই গেছে । প্রাণ পণে মুক্তি পাবার ইচ্ছেটা প্রায় সফল । আর একটু এগিয়ে যেতেই ছাদের কর্ণারে চোখটা যেন স্থির হয়ে গেল । ছোপ ছোপ রক্ত এখনো লেগে আছে ।
হ্যা মেয়েটি সেদিন চলে যাবার পর রুদ্র সেই লাল ঘুড়িটাকে মুক্ত করে দেবার জন্য ছাদের ঐ দিকটা গিয়েছিল । কিন্তু সত্য যে বড় নিষ্ঠুর । রুদ্র ছাদের কর্ণারে গিয়ে এনটিনার দিকে হাত বাড়াতেই পা পিচ্ছলে ছাদ থেকে পরে যায় । ৩দিন আই সি ইউ তে থাকার পর রুদ্র পারি জমিয়েছে না ফেরার দেশে ।
আর এদিকে পরে রইল সেই লাল ঘুড়িটা , যে শুধু মুক্তির জন্য ক্ষত বিক্ষত করেছে তার দেহ । আর পরে রইল সেই নাম না জানা মেয়েটি ।
©somewhere in net ltd.