![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।
এই লেখার কিছু অংশ নিম্নের লিঙ্কে সমকাল পত্রিকাতে প্রকাশিত। চাকুরীতে প্রবেশের বয়স ও কোটা
গুরুগম্ভীর আলোচনার বদলে একটি সহজ সমীকরণ বিবেচনা করি। আমাদের দেশে সাধারণত একজন শিক্ষার্থী ১৬ বছর বয়সে এস এস সি পরীক্ষাতে অংশগ্রহণ করে। যে শিক্ষার্থী ২০০১ সালে এস এস সি পরীক্ষাতে উক্তীর্ন হল তার এইচ এস সি তে উক্তীর্ন হতে সময় লাগে ২.৫ বছরের মত। একই শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে এবং ক্লাস শুরু হতে ৬-৭ মাস সময় ব্যয় হয়। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী তার স্নাতক পড়াশুনা শুরু করার প্রাক্কালে তার বয়স হয় ১৯ বা ২০ বছর। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাবির কথা বিবেচনা করলে যে সকল শিক্ষার্থী ২০০৩-০৪ সেশনে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল তাঁরা তাঁদের স্নাতকোত্তর সহ শিক্ষা ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও তাঁদের সম্পন্ন হয় ২০১১ সালে। অর্থাৎ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়াশুনা শেষ করতে একজন ঢাবি গ্র্যাজুয়েটের বয়স হয়ে গেল ২৬ বা ২৭ বছর। যদি কেউ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করনে তাহলে এর সাথে আরও ১-১.৫ বছর মিনিমাম যোগ করতেই হবে। আরেকটা ব্যাপার হল কেউ যদি এক বছর কোন অনাকাঙ্ক্ষিত কারনে ড্রপ দেয় তাহলে এই পড়াশুনা শেষ করতে করতে তার বয়স হয়ে যাবে ২৮.৫ বা ২৯। এর পরে তার চাকুরী নামক সোনার হরিণ এর খোজে মাঠে নামা এবং এই সোনার হরিণ খোঁজ করে বশে আনার জন্য তার হাতে ১-৩ বছর সময় থাকল।
এদের মধ্যে অনেকেই ভাগ্যবান যে বাংলাদেশ পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে সরকারী চাকুরীতে ৫৫% কোটার মাধ্যমে নিয়োগ হয় এবং তাঁদের এই কোটা থাকে। যাঁদের কোটা নেই তাঁদের বাকি ৪৫% চাকুরীর জন্য মেধার যুদ্ধে নামতে হয়। যদিও চাকুরী প্রত্যাশীদের সিংহভাগই এই শ্রেণীতে পরেন। এখানেও কিছু ভাগ্যবান রয়েছেন যাদের জন্য স্বজন প্রীতি, দলীয় করণ, দুর্নীতি কিংবা প্রশ্ন ফাঁসের মত সুবিধার কারনে এই সোনার হরিণ তাঁদের বেড রুমে পোষা বিড়ালের মত চলে আসে। এই সকল ভাগ্যবান দের উদর পূর্তির পরে যা অবশিষ্ট থাকে তার তুলনাতে চাকুরী প্রত্যাশীর সংখ্যা মানুষের তুলনাতে অণু জীবের সংখ্যার চেয়ে নেহায়েত কম নয়। মাতৃ গর্ভের সকল সম শক্তির শুক্রাণুকে হারিয়ে সেখানে সদম্ভে যায়গা করে নেয়া পরিশ্রমী মানুষটি এক্ষেত্রে বরাবর হার মানতে থাকে। এস এস সি হতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পর্যন্ত এত প্রতিযোগিতাতে পরিশ্রম করে টিকে থাকার পরে যখন একজন শিক্ষার্থী দেখেন যে আসলে এই কোটা ভুক্ত বা পরবর্তীতে সুবিধা যুক্ত হলে এত কঠোর পরিশ্রম না করেই তিনি সোনার হরিণ কে বিড়ালের মত নিজের শোবার ঘরে পেয়ে যেতে পারতেন তখন অনেকেই অভিমান করে আত্মহনন ও করে বসেন। এ অভিমান যেন নিজের পিতার উপর কিংবা নিজের উপরেই। কারন একে তো বোকা পিতা সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন নি উপরন্তু সেই বোকা পিতার বোকামি দেখেও কেন আমি নিজেই নিজেকে সুবিধাযুক্ত করে নিলাম না। যাই হোক বোকা দের কথা চালাক চতুর সমাজে না আনাই ভালো তবে সক্রেটিস বলেছিলেন এই পৃথিবীতে বোকা মানুষরা না থাকলে নাকি চতুর লোকেরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার প্রতিযোগিতাতে পৃথিবী টিকে ধ্বংস করে দিত। কত সাংঘাতিক কথা অবলীলাতে বলে গেল এই বোকা সক্রেটিস যাকে এমন সব কথা বলার অপরাধে তৎকালীন চালাক গণ হেমলক এর বিষে পান করিয়ে মেরে ফেরেছিল কিন্তু তার মেধা আজো তাকে সম্মানিত করে রেখেছে।
এবার কোটার মাধ্যমে নিয়োগে কি সমস্যা হয়েছে তা বুঝার চেষ্টা করি। সরকারী সবচেয়ে বড় নিয়োগ বি সি এস এ মুক্তিযোদ্ধার পোষ্য ৩০, মহিলা ১০, জেলা ১০, উপজাতি (এ নামেই কোটাটি সংরক্ষিত আছে) ৫ এবং প্রতিবন্ধী ১ সর্বমোট ৫৬ শতাংশ কোটার মাধ্যমে নিয়োগ হয়। প্রতিবন্ধী ১ শতাংশের উপযুক্ত প্রার্থী না থাকলে মেধা কোটা হতে নিয়োগ দেয়া যায় বলে প্রচলিত ভাবে ৫৫% কোটার কথা শুনা যায়। কোটার মাধ্যমে যত পদের সৃষ্টি হয় তত সংখ্যক চাকুরী প্রত্যাশী পাওয়া মুশকিল। এই জন্য অনেক সময় শুধু কোটার জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় এবং এর ফলে সর্বনিম্ন মাণ বিবেচনা করে নিয়োগ দেয়ার পরেও অনেক পোষ্ট খালি থাকে। উদাহরণ স্বরূপ ৩১তম বিসিএসের নিয়োগ চলাকালীন পি এস সি এর চেয়ারম্যান মহোদয় গন মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন প্রাধিকার কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ৭৭৩টি পদ শূন্য রাখা হয়েছে (কালের কণ্ঠ, ৯ জুলাই)। এত মহা ঝামেলা এই সমস্যার সমাধান কি? সারা রাজ্য কার্পেটে না মুড়িয়ে রাজার পা দুখানাকে ঢেকে দিয়েই রবীন্দ্রনাথের জুতা আবিষ্কারের গল্পের সমাপ্তি হয়েছিল কিন্তু আমাদের নীতি নির্ধারক গণ এই সকল সেকেলে ধ্যান ধারণাতে বিশ্বাসী নন। উনারা চিন্তা করে দৌহিত্র কোটা বের করলেন। বিধি বাম এই দৌহিত্র কোটাও সকল সংরক্ষিত আসনে নিয়োগ দেওয়ার জন্য অপ্রতুল হয়ে গেল। কারন এই সকল সুবিধা বঞ্চিত (চাকুরীর ক্ষেত্র বাদে) পিছিয়ে পরা জনগন বিসিএস বা অন্যান্য পরীক্ষাতে প্রিলিতেই পাশ করতে পারছেন না। আবারও এক মহা সমস্যা উদিত হল, কি করা যায়? কেউ একজন আবার সেই রবীন্দ্রনাথের জুতা আবিষ্কারের কথা স্মরণ করাতেই তাকে সকলেই তিরস্কার করে নতুন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন আর তা হল প্রিলি থেকেই কোটার মাধ্যমে উক্তীর্ন করিয়ে নেয়া। কিন্তু এতে বাদ সাধল ঐ কাঙ্গালি মেধাবী গুলো, এমন কি এই নিয়ে ওরা রীতিমত আন্দোলন করল। অনেকে বিরক্ত হয়ে বলে ফেলল এত চাকুরী চাকুরী করার কি আছে তোদের মেধা আছে বিদেশ চলে যা না, আমাদের দেশ আমাদের মত করে চলবে। হোক না ৩১৩ শব্দের একটি চিঠিতে ৪৮ টি বানান ভুল এই ভুলই কি প্রমাণ করে কোটার বা সুবিধার কারনে এমন হয়েছে। যত সব বখাইট্যা যুক্তি। সনদের জোড় না থাকলে কি আর কাউকে এত গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো যায়? এক কাঙ্গালি মেধাবী টিপ্পনী কেটে বলল সনদ কি আর মেধার পরিচয়? যদিও এই সমস্যার কারনে প্রতি বছর হাজার হাজার মেধা বিদেশে পাচার হচ্ছে তাঁরা তাঁদের মেধা দিয়ে অন্য জাতিকে উন্নত করছে আর আমরা সেই জাতির লোকদের সেবার জন্য আমাদের জনগণকে সেবা দাস হিসেবে পাঠিয়ে বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভের কাহিনী শুনাচ্ছি।
একটু ভাবুন আজ যাকে এই সকল সুবিধা দিয়ে নিয়োগ দিচ্ছেন সে একদিন একটি সেক্টরের কর্ণধার হবে। যে ব্যক্তি সাধারণ প্রতিযোগিতাতে কোটা নিয়ে পুরস্কার পেল অথবা সুবিধা (স্বজন প্রীতি, দলীয় করন, প্রশ্ন ফাঁস বা উৎকোচ) নেয়ার মত নীচ মন-মানসিকতা নিয়ে এই পদে অধিষ্ঠিত হল তিনি একটি সেক্টরকে কত টুকুন নেতৃত্ব দিতে পারবেন? হ্যাঁ নেতৃত্ব মানে যদি চেয়ারে বসে সাইন করা হয় তাহলে যে কেউ ই পারবেন। কিন্তু যে নেতৃত্ব জাতিকে ক্রান্তি লগ্ন হতে বাঁচাতে চাইবে সে নেতৃত্ব এমন ব্যক্তির নিকট হতে আশা করা আর ১৮ সৈন্যের ভয়ে বাংলাকে অরক্ষিত রেখে পলায়ন করা লক্ষন সেনের দ্বারা ভারতবর্ষ জয় করার স্বপ্ন দেখার মধ্যে কোন গুন গত বা পরিমাণ গত পার্থক্য করা অসম্ভব বলেই প্রতীয়মান হয়।
পরিশেষে বলব যা হওয়ার তা হয়ে গেছে পিছনে না তাকিয়ে সামনে তাকিয়ে এই সমস্যা দুটির সমাধান করুন। প্রথমত, চাকুরীর বয়স নুণ্যতম ৩৫ করুন যাতে একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে নিজেকে প্রতিযোগিতার জন্য যোগ্য করে নিজের যোগ্যতাতে (কোটা বা সুবিধার ব্যতিরেকে) নিজের পছন্দ মত চাকুরী নামক সোনার হরিণের গলাতে রশি বাঁধতে পারে। নিজের পছন্দ মত চাকুরী না পেলে ঐ শিক্ষার্থী কখনোই তার চেষ্টার ১০০% নিজ দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করতে পারবে না। উন্নত বিশ্বে কোঁথাও চাকুরী শুরু করার জন্য বয়সের বাধা এত কম নেই। অনেক দেশে তো যোগ্যতা থাকলে যে কেউ যে কোন বয়সে চাকুরীতে যোগদান করতে পারে। দ্বিতীয়ত, অবিলম্বে কোটা সিস্টেম এর পুনর্বিন্যাস করুন। গুরুত্বপূর্ণ চাকুরীতে কোন কোটা থাকাই উচিৎ নয়, আর থাকলেও তা ১৫% (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ৫, মহিলা ৩, জেলা ৩, উপজাতি (এ নামেই কোটাটি সংরক্ষিত আছে) ২ এবং প্রতিবন্ধী ২) এর বেশি হওয়া অযৌক্তিক। এই সকল কোটাতে উপযুক্ত প্রার্থী না থাকলে মেধা কোটা হতে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম থাকতে হবে। একই সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের দৌহিত্র দের জন্য কোন কোটা রাখার প্রয়োজনীয়তা বা বাস্তবতার নিরিখে তা কত টুকুন গ্রহণযোগ্য তা ভেবে দেখতে হবে। একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন যদি আপনাদের থাকে তাহলে এই স্বপ্নের পরিচালকদের মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়াই যৌক্তিক। সুবিধা বঞ্চিত দের অন্যান্য দিকে সুবিধা দিন চাকুরী প্রবেশের ক্ষেত্রে তাঁদের অযৌক্তিক সুবিধা দেয়া আর রাজার চরণকে ধুলা হতে বাঁচাতে সারা রাজ্যে কার্পেট বিছানোর মধ্যে গুন গত কোন পার্থক্য নেই।
©somewhere in net ltd.