![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।
১৯ রমজান আজ, মন্টু মিয়ার অনেক টাকা দরকার। এই ঈদে ছেলে মেয়ে দুইটির জন্য দুটো নতুন জামা দিতেই হবে। ওরা দুজনেই এস এস সি পরীক্ষাতে নাকি খুব ভালো ফলাফল করেছে। শিক্ষকগণ মন্টু মিয়ার কাছে খুব করে বলে দিয়েছে যেন ওদের পড়াশুনা চালিয়ে যায়। নতুন জামা দিয়ে অন্তত ওদের বুঝাতে হবে বাবা হিসেবে সে অনেক খুশি হয়েছে সন্তানদের এত বড় একটি অর্জনের জন্য! জামা কাপড়ের সাথে অন্য আরেকটি বড় খরচ অপেক্ষা করছে তার জন্য, কলেজে ভর্তির টাকা। একথা মনে হতেই মন্টু মিয়া এক লাফে উঠে বসে, আজ সকাল সকাল বেড় হতে হবে। নামাজ পরে প্রতিদিন একটু ঘুমালেও আজ থেকে এই ঘুম টুকুন হারাম না করলে সন্তানদের জন্য ঈদের খুশি এবং সন্তানদের এমন কষ্টের জীবন থেকে মুক্ত করতে পারবেন না। সকালে নামাযে সে আল্লাহ্র কাছে বলেছে যেন এই ১০ দিনে খুব ভালো আয় হয়। অন্তত সন্তানদের মুখে তিনি একটু আনন্দের আভা দেখেতে পান।
সকাল সকাল রিক্সা নিয়ে বের হলেও মন্টু মিয়ার আজকের আয়ের পরিমানে সে শঙ্কিত, হয়ত কলেজের ভর্তির টাকা টা যোগার করতে গেলে নতুন জামাকাপড়ের টাকা যোগার করা হবে না। মনে মনে আল্লাহ্কে ডাকতে থাকে মন্টু মিয়া, ইয়া আল্লাহ্ অন্তত এবার নুন আনতে পান্তা ফুরানোর পরিস্থিতিতে ফেল না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, মন্টু মিয়া নিজের বস্তির দিকের একটা খ্যাপের আশা করে বসে আছে। বাসাতে যাবার সময় একটু ছোলা মুড়ি নিয়ে যেতে হবে। সন্তান গুলো নিয়ে ইফতার করবে সে, হয়ত ধনীদের মত অনেক পদ দিতে পারছে না, অন্তত ইফতার শব্দটাতো ওদের সেখাতে পারছে। বড় হয়ে যখন সন্তান গুলো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে তখন ওদের সন্তানদের বলতে পারবে বাবার সাথে বসে আমরা ইফতার করতাম! রেহানা, মন্টু মিয়ার বউ, যদিও রহিম মিয়ার এমন কাণ্ডকে কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ বলতেই পছন্দ করে। রেহানার মতে ইফতার আলাদা করে এই ২০/৩০ টাকা নষ্ট না করে ভাত দিয়ে ইফতার সারলে মাসে ৯০০ টাকা বাচে! সেই টাকা দিয়ে ভালো কিছু করা যেত। কিন্তু মন্টু মিয়া সন্তানদের উচ্চাকাঙ্খি করার চেয়ে ভালো কোন বিনিয়োগ খুঁজতে চায় না।
সাতপাচ ভাবতে ভাবতে কখন যে দুই যুবক তার রিক্সার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে সে তা টেরও পায় নি। ছেলে গুলোর হাতে অনেক খাবার আর কিসের যেন প্যাকেট।
১ম যুবকঃ চাচা যাবেন নাকি?
মন্টু মিয়াঃ মামা খিলগাঁও বস্তির দিকে হলে যাব, না হলে কষ্ট করে অন্য রিক্সা দেখেন।
২য় যুবকঃ না না চাচা আমরা ঐ দিকেই যাব চলেন।
মন্টু মিয়া আলহামদুলিল্লাহ্ বলে ছেলেদের নিয়ে রিক্সার প্যাডেলে চাপ দিল। পথের মধ্যে কথোপকথনে জানল ছেলে দুটো উচ্চশিক্ষিত এবং খুব ভালো চাকুরি করে। মন্টু মিয়া ভয়ে ভয়ে বলল, বাবারা আমার একটা বিষয় জানার ছিল আপনাদের কাছে, যদি কিছু মনে না করেন তবে বলি? ছেলেরা অভয় দিলে উনি জানালেন যে তার জমজ সন্তানেরা এবার স্বর্ণ ৫ পেয়ে এস এস সি পরীক্ষাতে পাশ করেছে। ওরা কি চাইলে আপনাদের মত মস্ত বড় অফিসার হইতে পারবে? শুনে ছেলে দুটো সমস্বরে, বলে উঠল কি বলেন চাচা, চাইলে ওরা আমাদের চেয়েও বড় কিছু হতে পারবে! এই বলে দুজনে নিজেদের মধ্যে বলতে শুরু করল তাহলে আজকে চাচার বাসাতেই কি বলিস? অন্য ছেলেটি বলল হুম এটাই হবে একটি ভালো ঘর আজকের জন্য। মন্টু মিয়া ওদের কথাতে কান না দিয়ে নিজের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আল্লাহ্র দরবারে লাখ কোটি শুকরিয়া আদায় করতে লাগলেন।
নিজের বস্তির কাছা কাছি আসতেই মন্টু মিয়া ছোলা মুড়ি কেনার জন্য রিক্সা থামালেন।
১ম যুবকঃ চাচা থামলেন কেন?
মন্টু মিয়াঃ বাবা ইফতারের জন্য একটু ছোলা মুড়ি কিনব।
২য় যুবকঃ চাচা আজকে আমরা আপনাকে ইফতারি করাব চলেন।
মন্টু মিয়াঃ না রে বাবারা, আমি অনেক খুশি কিন্তু আমি প্রতিদিন আমার সন্তানদের সাথে ইফতারি করি।
১ম যুবকঃ হুম, আজকেও করবেন সাথে আমরাও করব। এবার চলেন।
মন্টু মিয়াঃ কি যে বলেন, তাইলে তো আমার পানির বোতল কিনতেই হইব, আমাদের বস্তির পানি খাইলে আপনাদের দাস্ত হবে নিশ্চিত।
২য় যুবকঃ চাচা পানি সহ যাবতীয় সব আমরা ক্রয় করেই আপনার রিক্সাতে উঠেছি। আপনি চলেন তো।
মন্টু মিয়া কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না, বার বার তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। মনের অজান্তেই বহুবার বলে উঠছে আল-হামদুলিল্লাহ।
সবাই মিলে ইফতার করার পরে ছেলে গুলো ১০০০ টাকার চারটে নোট বের করে রহিম মিয়ার দুই সন্তানের হাতে দিল। বলল মনে কর তোমাদের বড় ভাইয়ের পক্ষ থেকে তোমাদের ফলাফলের জন্য মিষ্টি খাওয়ার জন্য এই টাকা। মন্টু মিয়া বাঁধা দিতে আসল, কিন্তু যুবকরা বলল চাচা আপনাকে তো আমরা ভাড়ার বেশি একটি টাকাও দিচ্ছি না। এটা তো ওদের দুজনের জন্য পুরস্কার এটা নিতে আপনি বাঁধা দেয়া কি ঠিক হবে? মন্টু মিয়া কিছু বলল না। তার চিবুক গড়িয়ে শুধু পানি পরতে থাকল।
গল্পটি কাল্পনিক, কিন্তু আমরা চাইলে এই রমজানে এমন অনেক বন্ধুরা মিলে বাকি ১৫ রমজানে অন্তত ১৫ জন মন্টু মিয়ার সংসারে এমন দেবদূত হয়ে হাজির হতে পারি। অন্তত একদিন ঐ বস্তিতে বসে থ্রি-স্টার রেস্টুরেন্টের ইফতারের স্বাদ নিতে কি আমরা পারি না? শেয়ারের উদ্দেশ্য আমরা যারা দেশের বাইরে আছি তাঁরা হয়ত চাইলেও পারব না কিন্তু তোমারা যারা দেশে আছ তোমরা দুজনেও চাইলে একজনের সংসারে এমন আনন্দ অশ্রু আনয়নের বন্দবস্ত করতে পার।
ভেবে দেখ আমার প্রস্তাব খানা। ভালো থেকো এবং আলো আসবেই ইন শা আল্লাহ্। আমরাই আলো ছিনিয়ে আনব।
#SMU
২| ২৯ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:০৪
ক্স বলেছেন: এরকম মন্টু মিয়া পাবো কোথায়? চারিদিকে তো শুধু চোর বাটপারে ভর্তি।
২৯ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:৪৪
শেখ এম উদ্দীন বলেছেন: একটু মনোযোগ দিয়ে খুজলে আপনার বাসার কাছেই খুঁজে পাবেন অনেক মন্টু মিয়াকে।
৩| ২৯ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: রমজানে প্রায় প্রতিদিনই একাধিক জায়গায় ইফতারের দাওয়াত থাকে। দল-মত নির্বিশেষে সবাই আন্তরিকতার সঙ্গেই দাওয়াত দেন। অশেষ কৃতজ্ঞতা তাদের প্রতি। কিন্তু বিকালে অফিস থাকায় বেশির ভাগ দাওয়াতই গ্রহণ করার সুযোগ থাকে না। এজন্য প্রায়ই বিব্রত হতে হচ্ছে। যারা আন্তরিকতা দেখিয়ে ‘আশাহত’ হচ্ছেন আশা করি এই অপারগতাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। জীবনযুদ্ধের এই নগরীতে সাধ-আহ্লাদ অনেক কিছুই পূরণ করা সম্ভব হয় না। কঠিন এই বাস্তবতা মেনে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
৪| ২৯ শে মে, ২০১৮ সকাল ১১:৪৬
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: জীবন বড় কষ্টের। সবার জীবন সুন্দর হোক।
২৯ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:৪৫
শেখ এম উদ্দীন বলেছেন: হুম, আমরা চাইলেই হয়ত সামান্য ত্যগের বিনিময়ে অন্যের জীবনকে সুন্দর করে তুলতে পারি।
৫| ২৯ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৯
বিজন রয় বলেছেন: সবার সব স্বপ্ন পূরণ হয় না।
২৯ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:৪৮
শেখ এম উদ্দীন বলেছেন: আশা রাখিতে হবে, চেষ্টা করতে হবে। হয়তবা সবার না হোক কারও না কারও তো স্বপন পূরণ হবেই
৬| ৩০ শে মে, ২০১৮ রাত ২:০৮
আলআমিন১২৩ বলেছেন: সহানুভূতি রমজান মাস ও পরের মাস ভরে চলুক। আমাদের সবার হৃদয় প্রসারিত হোক। গল্পটি আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাস হয়ে উঠুক এ কামনা করি।
০১ লা জুন, ২০১৮ সকাল ৮:৫৬
শেখ এম উদ্দীন বলেছেন: ধন্যবাদ
আমীন
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:০১
হাঙ্গামা বলেছেন:
আহা !! মন ভালো করার মত একটা গল্প।