নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইচ্ছে থাকিলে উপায় হয়, আমার কেবল উপায় থাকিলেই ইচ্ছে হয়

শিস্‌তালি

Stay Hungry, Stay Foolish!Stay Sexy, Stay Virgin!!!

শিস্‌তালি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেলুদার কাহিনী

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:২১

ফ্রম নার্সারি টু এক্সিকিউটিভ এমবিএ, আমি আমার স্টুডেন্ট লাইফে সর্বমোট চারবার চারটা ভিন্ন সাবজেক্টে ফেল করেছিলাম! আল্লাহ্'র রহমতে স্কুললাইফ ও দুই আইবিএ (জাবি&ঢাবি) লাইফে আমার কোন ফেল নাই, চারটা ফেলের তিনটাই ছিল এইচএসসিতে চট্টগ্রাম কলেজ লাইফে আর সবচেয়ে বেশী ইন্টেরেস্টিং ফেল ছিল সর্বশেষ ফেলটি- ঢাবির বিজনেস ফ্যাকাল্টির ইভিনিং এমবিএতে মার্কেটিংয়ের একটা কোর্সে! আমার শ্বশুরের দেওয়া বিয়ের একমাত্র পূর্বশর্ত (আমাদের দুজনকেই এমবিএতে ভর্তি হতে হবে কেননা তাঁর ধারণা ছিল অল্প বয়সে বিয়ে করে সংসারের ঝামেলায় আমাদের আর এমবিএ করা হবেনা) হিসেবে আমি ও আমার হবু বউ দুইজনই বিয়ে করবার জন্য ঢাবির ইভিনিং এমবিএতে ভর্তি হয়েছিলাম, যুহায়েরের মা যুহায়েরকে পেটে নিয়ে সেই এমবিএ শেষ করলেও আমি দুই সেমিস্টার করে আর কন্টিনিউ করিনাই, সে অন্য গল্প আপাতত আমার ফেল্টুস কাহিনীগুলো শেয়ার করি একটু ব্যাকগ্রাউন্ড হিস্টোরিসহ...
ক্লাস এইটে আল্লাহ্‌র অশেষ মেহেরবানীতে দুইটা বৃত্তি (সরকারী বৃত্তি ও বেসরকারী নজরুল স্মৃতি বৃত্তি) পাবার পর লিটারেলি আমি ক্লাস নাইন ও টেনে কোনরকম পড়াশোনাই করি নাই, ফলাফল ক্লাস নাইনে রোল নং চার থেকে ক্লাস টেনে এক লাফে রোল নং ষোল এবং টেস্টেও খুব এভারেজ রেজাল্ট! আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে মহাচিন্তিত আব্বু আম্মু চুয়েটের এক ভাইয়াকে টেস্টের পর বাসায় ফিজিক্স, ম্যাথ, কেমিস্ট্রি পড়ানোর জন্য রেখেছিল। অবশ্য ক্লাস টেনে রেজাল্ট খারাপ করার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে ব্রেকআপ! লাইফের প্রথম প্রেম, প্রথম ব্রেকআপ স্বাভাবিকভাবেই আমার তখন 'মন বসেনা পড়ার টেবিলে' অবস্থা কিন্তু চুয়েটের সেই স্যার আসবার পর আমি 'ইমোশনাল হলে চলবেনা, প্রেম জীবনে বারবার আসবে' এই মর্মে দীক্ষিত হয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করবার সিদ্ধান্ত নিলাম আর সেই চুয়েটের স্যার এত সুন্দর করে আমাকে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি বোঝাতেন আমার মনে হচ্ছিল এই দুইটা সাবজেক্টের মত সহজ সাবজেক্ট দুনিয়াতে আর নাই! টেস্টের পর সেই স্বল্প কয়দিনের প্রস্তুতিতে এসএসসিতে মোটামুটি ভালো রেজাল্ট করে ভর্তিপরীক্ষার জন্য তেমন কোন প্রস্তুতি ছাড়াই চট্টগ্রাম কলেজে চান্স পেয়ে গেলে আমার মনে হল, পড়াশোনার মত ফালতু জিনিস পৃথিবীতে আর নেই, পোলাপাইন হুদাই সারাবছর পড়াশোনা করে, টেস্টের পর তিন মাস দিনরাত স্টাডি করলেইতো এনাফ! এসএসসি আর এইচএসসি যে এক নয়- আকাশ পাতাল পার্থক্য এবং আমি যে কত বড় রামছাগল ছিলাম সেসময় সেটা টের পেয়েছিলাম পরবর্তীতে এইচএসসিতে রামধরা খাবার পর। তাছাড়া এত ছোট বয়সে 'পড়াশোনা খারাপ' এরকম বড় বড় চিন্তা আসাটা ঠিক নয়, ফলাফল ফার্স্ট ইয়ারের হাফ ইয়ারলি এক্সামেই লাইফের প্রথম ফেল স্ট্যাটিসটিকস এ, মজার ব্যাপার হচ্ছে এইচএসসিতে আমার একমাত্র 'এ প্লাস' ছিল লাইফের প্রথম ফেল করা সাবজেক্টেই! এরপর কিভাবে কিভাবে যেন ফার্স্ট ইয়ার ফাইনালে সব সাবজেক্টে পাশ করে সেকেন্ড ইয়ারে উঠে গেলাম এবং সেকেন্ড ইয়ারে সর্বসাকুল্যে আমার দশটা ক্লাসও করা হয়নি! অদ্ভুত হলেও সত্য, কোন কোর্স কোন টীচার পড়াতেন সেটাই আমি জানতাম না যদিও প্রতিদিনই কলেজে যেতাম এবং সারাদিন কমনরুমে দাবা খেলতাম! চট্টগ্রাম কলেজ চেস ক্লাবের ফাউন্ডার মেম্বার হিসেবে তখন আবার আমার দায়িত্বের শেষ নেই!
স্বাভাবিকভাবেই সেকেন্ড ইয়ারের ফাইনাল তথা এইচএসসির টেস্টে একসাথে ম্যাথ সেকেন্ড পেপার এবং ফিজিক্স সেকেন্ড পেপারে ফেল করে বসলাম। ক্যালকুলাস, বলবিদ্যা এসব জিনিসের সাথে আমার আসল পরিচয় হয়েছিল টেস্টের পর তাই ম্যাথে ফেল করব সেটা অবধারিতই ছিল আর বেশ মজা হয়েছিল ফিজিক্স সেকেন্ড পেপারের এক্সামের দিন! কোশ্চেনের এন্সারতো দূরে থাক কোন প্রশ্ন কোন চ্যাপ্টার থেকে আসছে সেটাই বুঝতে পারছিলাম না! আমার আশেপাশে প্রায় সবাই পরবর্তীতে বুয়েট,চুয়েট,মেডিকেলে চান্স পাওয়া ছাত্রছাত্রী পাগলের মত লিখে যাচ্ছে আর আমি একবার ইধার দেখিতো আরেকবার উধার দেখি আবার কখনও হলরুমে গার্ড দেওয়া স্যার ম্যাডামদের সাথে চোখাচোখি হলেই চোখ সরিয়ে নেই, স্যার আর ম্যাডামকে দেখে মনে হচ্ছিল পুরো হলরুমে সবার বিপরীতে একমাত্র আমার এই চুপচাপ অসহায়ের মত কোনকিছু না লিখে বসে থাকা দেখে তাঁরাও বেশ মজা পাচ্ছিলেন! একবার সাহস করে পাশের একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, দোস্ত ১২ নং প্রশ্নটা কোন চ্যাপ্টার থেকে আসছে? সেই ছেলেটি চরম বিষ্ময় আর মহাবিরক্তি নিয়ে আমার দিকে একবার তাকিয়েই কিছু না বলে আবার পাগলের মত লিখতে শুরু করল। ফিজিক্সে পেয়েছিলাম ১২ (আমার হিসেবে আমি আসলে ১২ পাবারও যোগ্য ছিলাম না আর ম্যাথে সম্ভবত ২৪! এইচএসসিতে এই দুই সাবজেক্টেই 'এ' ছিল (৭০%-৭৯% মার্কস) কিন্তু টেস্টে দুই সাবজেক্টে ফেল করায় আমার এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়াটাই অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল এবং সেই অনিশ্চয়তা দূর করতে আম্মুকে নিয়ে স্যারদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম যেদিন আরো অনেকের মতো আমারও গার্ডিয়ান কল করা হয়েছিল। লাইফের প্রথম গার্ডিয়ান কল এবং আম্মু স্যারদের রুমে গিয়ে শুরুতেই বাংলা সিনেমার শাবানার মতো কেঁদে দিয়ে বলে, স্যার বিশ্বাস করেন আমার ছেলে এরকম ছিলনা, ছোটবেলা থেকে শুধুমাত্র পুরস্কার নিতে ছেলের সাথে আসতাম আর সেই ছেলে আজ বড় হয়ে আমাকে এত বড় অপমান করল! স্যারদের সামনে আম্মুর কান্নাকাটি আমাকে পুরাই বিব্রতকর পরিস্থিতে ফেলে দিয়েছিল! আম্মুর নাকি ধারণা হয়েছিলা দুই সাবজেক্টে ফেল করায় আমাকে হয়তোবা এইচএসসি পরীক্ষাই দিতে দিবেনা কিন্তু স্যাররা এতটা নিষ্ঠুর ছিলেন না, মায়ের এ অবস্থা দেখে আমার যেন সত্যিকারের বোধদয় হয় এরকম দুচারটা কথা শুনিয়ে ভালোরকম প্রস্তুতি নিয়ে এইচএসসি দিতে বলেন!
সেই ফেলের পর এরপর বহুবছর আর ফেল করা হয়নি এবং ভেবেছিলাম লাইফে আর ফেল করব না কিন্তু ঢাবির বিজনেস ফ্যাকাল্টির এক হিংসুটে ম্যাডাম ওনার কোর্সে পনের মার্কসের একটা রিপোর্ট জমা দেইনি বলে ইচ্ছা করে আমাকে ফেল করিয়ে দেন- কথা সেইটা না। আমার ফেল করবার কোন কারণই ছিলনা কেননা আমার স্পষ্ট মনে আছে সেমিস্টার ফাইনালের দিন আমি বিশাল হলরুমের এক কোণায় বসে মোবাইলে গুগল মামার হেল্প নিয়ে খুব ফাটাফাটি লিখেছিলাম পরীক্ষার খাতায়- কথা সেইটাও না। কথা হচ্ছে রেজাল্ট জানতে আমি যুহায়েরের মাকে মার্কেটিং ডিপার্টমেন্ট এর ইভিনিং এমবিএর অফিসে পাঠিয়েছিলাম, অফিসের বেরসিক এক অফিসার সবার সামনে দাঁত বত্রিশটা বের করে হাসতে হাসতে উচ্চস্বরে বলেন, আপনার হাজব্যান্ডতো দুই মার্কস এর জন্য ফেল করেছে! এর আগে টিনএজ লাইফে ফেল করে মাকে বিব্রত করেছিলাম আর এবার বুড়ো বয়সে ফেল করে বউকে বিব্রত করলাম! নাহ্ এ অপমান সহ্য কর যায় না, আমি তাই সেই ঘটনার পর ইভিনিং এমবিএ ডিসকন্টিনিউ করবার সিদ্ধান্ত নিলাম আর তাছাড়া এই এমবিএতে আমি ভর্তি হয়েছিলাম স্রেফ বিয়ে করবার জন্য, বিয়েতো হয়েই গিয়েছে এখন এই বোরিং এমবিএ শেষ করলেই বাহ্ কি আর না করলেই বাহ্ কি এসে যায়!

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি ভাগ্যবান।

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:১২

শিস্‌তালি বলেছেন: ধন্যবাদ কিন্তু কেন বললেন এই কথা জানতে ইচ্ছে।

২| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট পড়ে এই কথাটাই মনে এলো।

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:১৭

শিস্‌তালি বলেছেন: ওকে ডিয়ার

৩| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:৫১

শেরজা তপন বলেছেন: ফেলের কেচ্ছাটা বেশ রসিয়ে লিখেছেন। আমোদিত হলাম
জুবায়েরের মা কি তেমন করে কান্না করেছিল?

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:১৯

শিস্‌তালি বলেছেন: হাহাহা ধন্যবাদ। যুহায়েরের মা আসলেই প্রায় কেঁদে দেবার মত অবস্থা হয়েছিল, বাসায় এসে খালি বলতেছিল, কেন তুমি আমাকে রেজাল্ট জানতে পাঠিয়েছিলে?

৪| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:৫৭

শোভন শামস বলেছেন: মিশন সাকসেসফুল, সুন্দর লিখেছেন

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:৫৭

শিস্‌তালি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ডিয়ার

৫| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ফেল হতে শিক্ষা হয়।সুন্দর লেখা

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৪

শিস্‌তালি বলেছেন: ইয়েস ভাই ফেইলার ইজ দি পিলার অফ সাক্সেস

৬| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:২১

শেরজা তপন বলেছেন: স্যরি 'যুহায়েরে'র মা হবে নামটা ভুল করেছিলাম।

:)

২২ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:১৩

শিস্‌তালি বলেছেন: জ্বী নো ইস্যু :)

৭| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:৪৭

পদ্মপুকুর বলেছেন: জাহাঙ্গীরনগর আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমার্স ফ্যাকাল্টির এমবিএ.... এতগুলা এমবিএ ডিগ্রি দিয়ে কি করবেন ভাইটু, অন্যদের একটু স্পেস দেন.... :-B

এসএসসির পর আপনার মনে যে 'ভাব' এর উদয় হয়েছিলো, আমারও সেরকম হয়েছিলো এবং ফলাফলও সেইম... :D

২২ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:১২

শিস্‌তালি বলেছেন: ঢাবি এমবিএ শেষ করিনাতো ভাইজান!

২২ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:১৩

শিস্‌তালি বলেছেন: আর জাবি থেকে বিবিএ

৮| ২২ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:৩৯

ডাব্বা বলেছেন: গল্পের নামটি বেশ মজার হয়েছে।

২৩ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:১২

শিস্‌তালি বলেছেন: হাহাহা আপনার নিকটাও বেশ মজার!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.