নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Born with an insatiable thirst for exploration and a passion for pushing boundary, I\'m trying to leave an indelible mark on the world as a swimmer, trainer, adventurer, mountaineer, traveler, writer, and photographer.

সবুজ সায়াহ্নে

ঘুরে বেড়ানো, ছবি তোলা, সাইকেল চালানো আরো আনেক কিছু

সবুজ সায়াহ্নে › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্যাংকের দায় ও গ্রাহকের করণীয়

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪০

৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করি। উত্তরা দিয়া বাড়ি লেকে সকাল বেলা সাঁতার কাটতে, উত্তরাকেন্দ্রিক একটি ফিটনেস গ্রুপের সাথে গিয়েছিলাম। সবার সাথে আমিও ব্যাগ রেখে পানিতে নেমেছি। ব্যাগে মানিব্যাগ এবং মোবাইল ছিল। পানি থেকে উঠে দেখি দুটো জিনিসই গায়েব করে দিয়েছে বুদ্ধিমান চোর। বাকি কারো ব্যাগে হাত দেয়নি। ফোনটা বেশ দাম দিয়ে কেনা ১০ মাস আগে। ফোনের শোকে স্তব্ধ হওয়ার পর টের পেলাম মানিব্যাগে সিটি ব্যাংকের ভিসা কার্ড ছিল, তাতে তিলে তিলে কিছু টাকা জমা করা হয়েছিল।

গ্রুপের একজন ভাইয়ের ফোন থেকে সিটি ব্যাংকের কল সেন্টারে ফোন করে জানালাম আমার ফোন কার্ড চুরি হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করুন। অপরপ্রান্ত থেকে নিশ্চিত করলো আমার কার্ড এবং সিটি টাচ বন্ধ হয়েছে। সময় সকাল ১০.১৪ মিনিট। পরদিন নিকুঞ্জ শাখায় ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়ে জানতে পারি আমার বেশিরভাগ টাকাই মার্চেন্ট বিকাশ এড মানি করে তুলে নেওয়া হয়েছে।


প্রশ্ন হলো কার্ড বন্ধ করার পরেও কীভাবে টাকা ট্রানজেকশন হয়? আবার, একজনের কার্ড কেউ হাতে পেলেই এত সহজে কীভাবে নিজের বিকাশ একাউন্টে টাকা ট্র্যান্সফার করে ফেলে?

বিকাশ এবং ব্যাংক কোনভাবেই এ দায় এড়াতে পারে না যে তাদের সিস্টেম নড়বড়ে। আদতে দেখা যাচ্ছে, কেউ চাইলেই যে কারো টাকা সহজে হাতিয়ে নিতে পারে! ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করার পরে তারা ইনভেস্টিগেশন করে জানাল, কার্ড বন্ধ করার সাথে সাথে সমসাময়িক সময়ে আমার হারিয়ে যাওয়া নাম্বারে টাকা লেনদেন হচ্ছে দেখতে পেয়ে রেজিস্টার্ড নাম্বারে কল দিলে চোর কলটি ধরে জানায়, তিনি কার্ডের মালিক এবং লেনদেন করছেন, আরো কিছু লেনদেন করবেন। সিটি ব্যাংক বিনা বাধায় আর কোনো বাক্য বিনিময় না করে কার্ডের গেটওয়ে খুলে দেয়।

এখানে প্রশ্ন হলো কার্ড বন্ধ করতে যেভাবে ভেরিফিকেশন করে ব্যাংক, ঠিক সেভাবে ভেরিফিকেশন করে কি কার্ড আবার পুনরায় চালু করা হয়েছিল? নাকি কার্ডটি বন্ধই করা হয়নি?


সিটি বাংক ব্যপারটি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছে। গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ রেখেছে এবং পরবর্তীতে কার্ড বন্ধের পরের লেনদেনগুলো ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে।

গ্রাহকের টাকা ব্যাংকের কাছে আমানত হিসেবে থাকে তাই গ্রাহকরাও ব্যাংকের প্রতি বিশ্বাস রাখে, যে তাদের টাকা নিরাপদে আছে। ব্যাংক ব্যবসা করে গ্রাহকদের টাকা দিয়ে। সুতরাং গ্রাহকদের অধিকার বিষয়ে আইন কি বলে একটু জেনে নেই।
ব্যাংকের গ্রাহকদের অধিকার হলো নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা, তথ্য জানার অধিকার, ন্যায্য আচরণ, অভিযোগ করার অধিকার এবং ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ।

ব্যাংক যদি এগুলো লঙ্ঘন করে, তাহলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা (Customer Rights & Responsibilities Guidelines) অনুযায়ী ব্যাংক গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য ও লেনদেনের নিরাপত্তা রক্ষায় বাধ্য। গ্রাহক যে কোনো ব্যাংকিং অনিয়ম বা প্রতারণা বিষয়ে অভিযোগ করতে পারবেন এবং ব্যাংককে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমাধান দিতে হবে।
ব্যাংক পরিচালনা, আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (সংশোধিত) ধারা অনুসারে এই আইন কার্যকর হবে।

ব্যাংকিং সেবা যেহেতু একটি ভোক্তা সেবা, তাই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ আইনের আওতায় গ্রাহকরা অধিকার ভোগ করেন। প্রতারণা, অন্যায্য শর্ত বা ভুল তথ্য দিলে গ্রাহক ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন। ব্যাংকের ভুল বা অবহেলার কারণে ক্ষতি হলে গ্রাহক ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন। প্রতিটি ব্যাংকে Customer Complaint Cell বা গ্রাহক অভিযোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থাকে। ঠিকভাবে সমাধান না পেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের Financial Integrity & Customer Services Department (FICSD)-এ গ্রাহকরা অভিযোগ করতে পারবেন।

গ্রাহক বা ভোক্তাদের আইনি অধিকারের ব্যপারে বেশীরভাগেরই তেমন জানা নেই। গ্রাহকদেরও ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদে রাখার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কার্ড ব্যবহার করার ব্যাপারে খুব সতর্ক হতে হবে, বিশেষ করে বিদেশে ভ্রমণের সময়। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞরা বলেন নির্দিষ্ট ট্র্যাভেল কার্ড ব্যবহার করতে যা ভিসার মেয়াদের সাথে সংযুক্ত থাকে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে ফিরে এসে ব্যবহৃত কার্ডটি পরিবর্তন করে নিতে পারেন পরবর্তী ঝুঁকি এড়াতে। মোবাইল ফোন এখন আমাদের জীবনের অপরিহার্য এক বস্তু সেখানে নটিফিকেশন যেনো অন্য কেউ সহজেই না দেখতে পারে সেই অপশন বন্ধ করে রাখতে হবে।

ফোন হারালে প্রথম যে কাজটা করতে হবে তা হলো সিম বন্ধ করা। কারণ সিম দিয়েই যাবতীয় সকল কাজ করা যায়। ব্যাংকের কার্ড সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যাপারে লিখিতভাবে অর্থাৎ ইমেইলে যোগাযোগ করা শ্রেয়। থানায় জিডি করে রাখতে হবে এবং আইন সংস্থার সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ জানান। সর্বপোরি নিজেকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কেউ আপনাকে অনুসরণ করছে কিনা পর্যবেক্ষণ করুন।

ব্যাংকের পিন নাম্বার কখনো কার্ডের সাথে রাখবেন না বা ওয়ালেটে রাখবেন না। আপনার ব্যাংকের মোবাইল অ্যাপে গিয়ে দৈনিক বা প্রতি ট্রানজাকশনের সীমা কমিয়ে রাখুন। এসএমএস/ইমেইল অ্যালার্ট চালু রাখুন যাতে প্রতিটি লেনদেনের সাথে সাথে জানতে পারেন। একসাথে সব কার্ড বহন করার দরকার নেই, শুধু প্রয়োজনীয় কার্ড রাখুন। কার্ডের ছবি বা কপি কখনো ফোনে রাখবেন না।

ফোন এখন আমাদের জীবনের অংশ, তাই ফোনের ব্যপারেও সতর্ক হওয়া চাই। ফোনে প্যাটার্ন লক বা সহজ পিন না দিয়ে জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। আলাদা পাসওয়ার্ড বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট সুরক্ষা ব্যবহার করুন। মেসেজ, নোট বা গ্যালারিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, কার্ড নম্বর বা পাসওয়ার্ড রাখবেন না। ব্যাংকিং বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল অ্যাপে ‘Remember Password’ বা ‘Auto Login’ ব্যবহার করবেন না।




ফোন চুরি হলে সাথে সাথে মোবাইল সিম ব্লক করে নতুন সিম সংগ্রহ করুন। “Find My Device / Find My iPhone” সক্রিয় রাখুন। মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমগুলো বিকাশ, নগদ, রকেট কাস্টমার কেয়ার এ কল করে ব্লক করুন। ইমেইল ও সোশ্যাল মিডিয়ার পাসওয়ার্ড বদলান চোর যাতে OTP না পায়। সব অ্যাকাউন্টে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) চালু করুন। বড় কোন আয়োজন বা অনুষ্ঠানে যাবার আগে এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করুন। চেনাজানা কেউ হয়ত আপনার ক্ষতি করে বসতে পারে। সচেতন হলেই তবে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।

-হোমায়েদ ইসহাক




মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.