![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মহাকাশ যাত্রী, পৃথিবীর সীমানাকে পায়ে চাপা দিয়ে যেতে চাই চিরন্তন মহাশূন্যে…
আমি সিএনজি/রিক্সায় একা চড়লে সাধারণত চালকের সাথে গল্প করি... এতে জীবনের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে অনেক অনেক গল্প যোগ হয়। তবে অধিকাংশের গল্পই খানিকটা একটাইপের, কষ্ট-দুর্দশাভরা। আমিও ভেবেছিলাম সবাই-ই বুঝি অসুখী। কিন্তু আজকে আমার সিএনজিওলা আমার ধারণা অনেকটাই বদলে
দিলো...মতিঝিল অফিসপাড়া ছুটির পর অফিসের গাড়ি বা নিজের ব্যক্তিগত বাহন না থাকলে যে মানুষের কি বিপদে পড়তে হয়, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আজকের সন্ধ্যাটাও সেরকমই। অনেকটা দিশেহারা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। দুইজন সিএনজিওলা এসে ৪০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া চাইলো। মনে মনে এসএসসি পরীক্ষার
ডিসেকশান বক্স দিয়ে ওদের ব্যবচ্ছেদ করলাম।
কিন্তু মুখে কিছুই বললাম না। প্রচণ্ড ক্ষুধা ছিলো পেটে... রাস্তার পাশের দোকান থেকে সমুচা কিনে খেলাম। ৫ টাকার ঝালমুড়ি খেলাম। এরপরে এককাপ চা খেয়ে একটা পানির 'বোতল হাতে রাস্তার ওপারে দাঁড়ানো একটা সিএনজি'র কাছে গেলাম। লাস্ট ট্রাই। না হলে আজ ১৬ কিলোমিটার হেঁটেই যাবো বাসায়! অনেক হয়েছে!
ছোটখাটো মানুষটা হাসি দিয়ে বললো, কই যাবেন মামা? কথায় বেশ ভালোরকম সিলেটী টান। বললাম কই যাবো। একবাক্যে রাজি হয়ে গেলেন। ভাড়া কত দিবো? জিজ্ঞেস করতেই বললেন, "দিয়েন মিটার দেখে..." একটু অবাকই হলাম। মাথা ঠিক আছে এই লোকের?চলা শুরু হতেই তার সে কি গল্প! খালি পিছনে ফিরে গল্প করে। এবং অসাধারণ দক্ষতায় সিএনজি চালায়! দুই-একবার ভয়ই লাগলো... কখন জানি সামনের গাড়িটা ভচকে দেয়!অল্প সময়েই তার নাড়ি-নক্ষত্র সব জেনে ফেললাম।নাম তার আব্দুল কাদের। বয়স ৫৭ বছর। সুনামগঞ্জে বাড়ি। তার একটাই ছেলে মালয়েশিয়া থাকে, ২১ বছর বয়স, দেড় বছর বয়সী একটা বাচ্চাও আছে তার(!)। দুইটা যমজ মেয়ে, মাদ্রাসায় পড়ে। তার মা'র বয়স ৯৬ বছর। এখনও শক্ত-সমর্থ। কাদির সাহেব প্রেম করে বিয়ে করে ১৯৮৮ সালে। বাড়ি থেকে পালিয়ে
গিয়েছিলো সে আরও আগে। এরপরে কুমিল্লায় বন্ধুর বিয়ে খেতে গিয়ে প্রেমে পড়ে যায় বন্ধুর এক ক্লাস এইটপড়ুয়া পাড়াতো শালির। কোনোভাবেই মেয়ের বাবাকে বিয়ে দিতে রাজি করাতে না পেরে সে ৩ বছর চট্টগ্রামে কাজ করে টাকা জমিয়ে সেই গ্রামে জমি কিনে ভিটা তৈরি করে। এরপরে অনেক যুদ্ধের পর সেই মেয়েকেই ঘরের বৌ করে নিয়ে আসে।
এখানেই শেষ নয়! বর্তমানে সে সুনামগঞ্জ, সিলেট,কুমিল্লা এবং লাস্ট বাট নট লীস্ট শুধুমাত্র ঢাকাতেই ১৫ কাঠা জায়গার মালিক! সে মাসে বিভিন্ন ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে ভাড়াই তোলে প্রায় ১ লক্ষ টাকারও বেশি করে... (!)
গল্পের এই পর্যায়ে এসে উনাকে হঠাৎ বলতে ইচ্ছা হলো, ওকে, আপনি পিছে আসেন। আমিই বরং সিএনজি চালাই! আমি জিজ্ঞেস করলাম, সিএনজি চালানো ছাড়ো না কেন?
তার হাস্যোজ্জ্বল উত্তরঃ "ঘরে বসে থাকলে মন খারাপ থাকে। তাই ঘুরি ফিরি, এক্সট্রা টুপাইস কামাই করি, এই আর কি মামা!"
তার যেই জিনিসটা সবচেয়ে ভালো লাগলো, তার. ট্রাফিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা। পুরোটা পথই সে কোনোরকম ঘিরিঙ্গি ছাড়া সুন্দর করে আসলো। এবং তার মধ্যে কমনসেন্স অত্যন্ত প্রখর! একজন প্রকৃত ধনী মনে হলো কাদির সাহেবকে! তার সাথে লম্বা সময় ধরে কথা হলো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে।
৭১ সালে সে একজন বালক ছিলো। তখন সে আর তার বন্ধুরা নাকি কলাগাছের ভেলা ভাসিয়ে তার তলে লুকিয়ে লুকিয়ে সুরমা নদীর ওপারে মুক্তিবাহিনীর কাছে গোলাবারুদ সাপ্লাই করতো। তার কাছেই শুনলাম অসমসাহসী টেংরাটিলার এক বিধবা নারী মুক্তিযোদ্ধার কথা। যিনি কিনা পাকবাহিনির কাছে সম্ভ্রম হারানোর পরেও নিজের দায়িত্ব ভুলে যান নি। খানসেনাদের ডেকে এনে স্টেনগান দিয়ে হত্যা করে অনেক মুক্তিসেনার জীবন বাঁচিয়েছিলেন। তার নাম কাদির সাহেব বলতে পারে নি। আমি জানি না, সেই বোন বা সেই মায়ের কথা কোনো মুক্তিগাথায় আছে কিনা।
কাদির সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট আছে? সে বললো, "না মামা! এইসবের জন্য যুদ্ধ করছি নাকি? এইগুলান দিয়ে কি করবো? আল্লাহ আমারে অনেক ভালো রাখছে। এমন মুক্তিও দেখছি, এখন ভিক্ষা কইরা খায়! এই সার্টিফিকেট কি, তা জানেও না! আমার তো দরকার নাই, বুঝছেন কথাডা???"
আমি অনেক চিন্তা-ভাবনা করে, আস্তে করে বললাম,"হ্যাঁ মামা। হয়তো বুঝছি।"বাসার কাছে এসে আমি তাঁকে বললাম, মামা আসো তোমাকে চা খাওয়াই। উনি আবার আমাকে উলটো অফার দিল, "না না! আমি আপনারে খাওয়াই।" পরে অবশ্য কেউই কাউকে খাওয়াই নি। আসার আগে তাঁকে বললাম, ভালো থাকো মামা।
চলতে চলতে আবার দেখা হবে। অনেকদিন পরে সুখী একজন মানুষ দেখলাম, যে নিজের সুখের কথা স্বীকার করে। হয়তো আবারও কোনো একদিন পথে চলতেই দেখা হবে কাদিরমামার সাথে। হয়তো সে আমাকে চিনবে না, বা আমিও তাঁকে না চিনতে পারি। হয়তো দেখাই হবে না। ছোট দেশ, ছোট শহর। কিন্তু এত্ত এত্ত মানুষ আর এত্ত এত্ত ভজঘট! কাউকে মনে রাখাই দায়!
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৫৮
চিরন্তন মহাশূন্য বলেছেন: তার ভাবাবেগ গুলো এটার ই বহিঃপ্রকাশ ছিল…
পাঠে ও মন্তব্যে ধন্যবাদ স্পর্শিয়া আপু…!!
ভাল থাকবেন
২| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৪৫
প্রামানিক বলেছেন: বহু মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নাই আবার যুদ্ধের পরে জন্ম তাদের বিশাল সার্টিফিকেট ডাটফাটও বেশি। ধন্যবাদ চমৎকার গল্প।
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:২৪
চিরন্তন মহাশূন্য বলেছেন: পাঠে ও মন্তব্যে ধন্যবাদ প্রামাণিক ভাই…!!
ভাল থাকবেন…
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:২৬
স্পর্শিয়া বলেছেন: কাদির সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট আছে? সে বললো, "না মামা! এইসবের জন্য যুদ্ধ করছি নাকি? এইগুলান দিয়ে কি করবো? আল্লাহ আমারে অনেক ভালো রাখছে। এমন মুক্তিও দেখছি, এখন ভিক্ষা কইরা খায়! এই সার্টিফিকেট কি, তা জানেও না! আমার তো দরকার নাই, বুঝছেন কথাডা???"
কোনো কিছুর বিনিময়ে ভালোবাসা হয়না। দেশের প্রতি ভালোবাসা এক জন্মগত দায়িত্ববোধ।