নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মহাকালের বিষাদ তরঙ্গ…

চিরন্তন মহাশূন্য

আমি মহাকাশ যাত্রী, পৃথিবীর সীমানাকে পায়ে চাপা দিয়ে যেতে চাই চিরন্তন মহাশূন্যে…

চিরন্তন মহাশূন্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

দাদীর আদুরে হাত গুলো আর মাথায় এসে পরে না

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:০০

অ্যাঁ… আইছে…… রাবণের পাল গুলা। এখন কাছে আসবে মিষ্টি মিষ্টি দুইডা কথা বলবে তারপর আবার কিছু নেওয়ার আবদার করবে। প্রয়োজন ছাড়া এদের ছায়াও দেখা যায়না। উহঃ যত্তসব জ্বালা হইছে আমার!
পাশের ঘর থেকে ভেসে আসা বৃদ্ধা দাদীর এই অভিমানী কথা গুলো কখনো পুরানো শোনায় না। যদিও সেই ছোট থেকেই কথা গুলোর সাথে পরিচিত হয়েছি। আজ দীর্ঘ ১২ বছর পর এ বাড়ীতে পা রাখলাম। ব্যস্ততা কখনো আমাকে একাকীত্ব করেনি। সেই ছোট বেলায় গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে দলবেঁধে দাদী বাড়ী আসতাম হৈ হুল্লো চলতো। দিন সাত আটেক পর আবার সেই কালো ধোয়া, জঞ্জাল আর রাজপথের ব্যস্ত গাড়ীর টো টো হর্ণের নগরীতে ফিরে আসতাম। সঙ্গে থাকত দাদীর হাতে বানানো পিঠা, পায়েস, নাড়ু আরো কত কি যে!
এতদিন পর আসলাম, এখানকার সব কিছুর পরিবর্তন চোখে পরার মত। রাস্তাঘাট আর সেই আগের মত এবড়োখেবড়ো মাটির নেই, পিচ ঢালা হয়েছে। কালো রঙ্গের পিচ ঢালা রাস্তা দূর থেকে দেখলে যেন মনে হয় শহুরে কোন কালো নর্দামা একেবেকে গেছে। দোকানপাটও ছিল তখন নগণ্য। এখন শহরের আবছা ছায়া এখানে লক্ষ্য করা যায়।
যাইহোক, কাকীমার সাথে কুশল বিনিময় শেষে দাদীর ঘরে এলাম। দাদীর চশমা, দাদীর সেই প্রিয় আয়না সেই আগের মতই পরিপাটি সাজানো আছে টেবিলে। বিছানার উপরে দাদীর ব্যবহৃত সেই চাদরটা ভাজ করা। বিছানার কাছে গেলাম, দাদীর পানের বাটিটাও স্বযত্নে রাখা। ভয়ে ভয়ে দাদীর চাদর টা হাতে নিয়ে দেখছিলাম এই বুঝি দাদী হুঙ্কার ছাড়ে। হতছ্যাড়া, আমার অনুমতি না নিয়ে আমার ঘরে ঢুকেছিস কোন সাহসে, বের হ, জলদি বের হ, আমি মরলে তখন আসিস।
আমাদের প্রতি দাদীর এই অভিমান গুলোর যথেষ্ট কারন ছিল, দাদী সব সময় চাইতো আমরা যাতে এখানেই থেকে যাই। বাবার অফিস আর আমাদের পড়াশুনার জন্য শহরেই থাকতে হয়েছে। দাদী যেখানে চাইতো তার এই শেষ বয়সে আমরা তার পাশে থাকি, সেখানে আমরা বছরে ১/২ বার এ বাড়ীর চৌকাঠে পা দিতাম। দাদা গত হবার পর থেকেই দাদী একা মানুষ, একাকীত্বের সঙ্গী হিসেবে খুব করে আমাদের পাশে চাইত। আজ দাদী নেই, দাদীর সেই হুঙ্কারটাও নেই। কাছে আসার কিছু পরেই দাদী সব ভুলে আমাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরতেন। সব নাতী নাতনীদের বুকে নিয়ে দাদী একটাই কথা বলতেন "তোরা আমার চান্দের বাজার" । দাদীর মততাময়ী সেই স্পর্শগুলা কখনোই কোন কিছুর সাথে তুলনা করা যাবেনা। এখন, আমাদের জন্য দাদীর সেই নিষিদ্ধ ঘরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকি। দাদীর বিছানায় গা এলিয়ে দেই যেন দাদীর কোলেই শুয়ে আছি। দাদীর আদুরে হাত গুলো আর মাথায় এসে পরে না।
দাদীর চাদর নাকে নিয়ে শুখে দেখলাম, আজো সেই দাদী দাদী ঘ্রাণ অষ্টেপৃষ্ঠে লেগে আছে…

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৪০

পলাশমিঞা বলেছেন: আহ, আপনি আমাকে আবেগপ্রবণ করেছেন।
"তোরা আমার চান্দের বাজার" এই কথাটা আমার দাদিও বলতেন।

আমার দাদি আমার জন্য জগৎ সুন্দরি আনতে চেয়েছিলেন। অবশেষে এনেছিলেনও। আমি মাঝে মাঝে আমার স্ত্রীর মুখে দিকে তাকিয়ে আমার দাদি এবং নানিকে দেখার চেষ্ট করি।
শেষ বয়সে নানি চোখে দেখতেননা। আমার স্ত্রীর মুখে হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, "তুইতো সত্যি সুন্দরী"

আমি এখন নানা হয়েছি। কয়দিনের জন্য নাতনিরা এসেছিল। ওরা গতরাত চলে গেছে। ঘরটা খালি লাগে।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:০০

চিরন্তন মহাশূন্য বলেছেন: সম্পর্ক চক্রে আপনি নিজেও এখন একজন নানা হয়েছেন। এটা জেনেই অনেক ভাল লাগছে…

পাঠে ও মূল্যবান মন্তব্যে অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।
অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
দোয়া করবেন…

২| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:০৮

পলাশমিঞা বলেছেন: আপনার জন্য দোয়া, নাতি নাতনিরা সবসময় আপনার সাথে থাকুক।

কলিজার টুকরা কলিজা হয়।

মারামারি করে দাদির বগলে কেউ আমাকে খুঁজে পেত না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.