নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি \'স্মৃতিকাতরতা \' নামক ভীষণ এক রোগগ্রস্ত, সেই সাথে বিষাদগ্রস্থ মানুষ। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন।

স্বপ্নবাজ সৌরভ

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......

স্বপ্নবাজ সৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঝরা ফসলের গান

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:১০

এই লেখাটি অদ্ভুত আঁধার এবং কোথায় খুঁজিবো আমারে এর পরের কোন অংশ হিসেবে পড়তে পারেন। যারা আগের দুটো পড়েননি , তারা অনেক কিছুই বুঝতে পারবেন না। তাই পড়ে আসলে ভালো হবে।

(ছবিঃ সংগ্রহ )

''ওগো পাখি, ওগো নদী,
এতোকাল ধরে দেখেছ আমারে- মোরে চিনে থাকো যদি,
আমারে হারায়ে তোমাদের বুকে ব্যথা যদি জাগে ভাই,-
যেন আমি এক দুখ-জাগানিয়া, -বেদনা জাগাতে চাই!
পাই নাই কিছু, ঝরা ফসলের বিদায়ের গান তাই
গেয়ে যাই আমি,- মরণেরে ঘিরে এ মোর সপ্তপদী।।''

১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৪। গুনগুন করতে করতে কোলকাতা শহরের বালিগঞ্জের ব্যস্ত রাস্তা ধরে কবি হেঁটে যাচ্ছেন। এই ব্যস্ত লোকারণ্য শহরে কবি সম্ভবত একা। তিনি একা বলেই পাখি , নদী , প্রকৃতিকে সাথী করেন। কথা বলেন , গল্প করেন। নদীর স্রোত ঢেউ খেলে , কবিও সেই ঢেউয়ে ভাসেন। নির্জন দুপুরে পাখির কলতান কবিকে ঘুম পাড়ায়। এই নিঃসঙ্গ জাগতিকতায় এরাই কবির আপনজন , কাছের মানুষ।
রাস্তার পাশের ডাব বিক্রেতার কাছে থমকে দাঁড়ালেন কবি। ডাব কেনা কি খুব জরুরি ? এই অক্টোবর ডাবের পিপাসায় কবি কি তৃষিত ? নাকি অন্য কিছু ?
দুই হাতে ডাব নিয়ে কবি রাস্তা ধরলেন। ঠিক করলেন ট্রাম লাইন পার হবেন।

''ওগো পাখি, ওগো নদী,
গেয়ে যাই আমি,- মরণেরে ঘিরে এ মোর সপ্তপদী।।''


ট্রামের ক্যাচারে আটকে যায় কবির শরীর , ভেঙ্গে যায় ঊরু ,পাঁজরের হাড়। দলিত শরীর নিয়ে কবি পড়ে থাকেন কোলকাতার রাস্তায়। পরজন্মে শঙখচিল , হাঁস হয়ে কলমীর গন্ধভরা জলে ভাসার তীব্র আকাঙ্খায়, কবি এই জাগতিক নিঃসহায়তাকে বিদায় জানান -- ২২শে অক্টোবর, ১৯৫৪। কোলকাতা ইতিহাস বলে , গত একশ বছরে ট্রাম দুর্ঘটনায় কোলকাতায় মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র একটি এবং তিনি হচ্ছেন কবি জীবনানন্দ দাশ।

আমরা যাকে 'রূপসী বাংলার কবি ' বলে আমার কাছে তিনি 'বিষণ্ণতার কবি'। আমি বিশ্বাস করি তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁর কল্পনার জগৎ সম্ভবত আরো সুন্দর ছিল। জাগতিক নিঃসঙ্গতা তার বেঁচে থাকার ইচ্ছাকে শূন্য করে দিয়েছিল। তিনি কি যেতে চেয়েছিলেন অন্য কোনো জগতে , তিনি কি অন্যকিছু কল্পনা করতেন ?

আমি জানি না। তবে কল্পনা , বিষন্নতা , নির্জনতা , একাকিত্ব আমাকে তাড়া করে। খুব। রাতে ঘুম হয় না, একা লাগে , ভয় হয় । এই গুলো কারো সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছে হয় না আর। এই বিষয়ে সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ আসগরের গিয়েছিলাম একবার। তিনি কয়েকটা ওষুধ দিয়েছিলেন। দুয়েকদিন খেয়েই ছেড়ে দিয়েছি।তবে ডাক্তার কে আমি অনেক কথা বলতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত বলা হয়ে ওঠেনি। ডাক্তার জানেনা আমি কবিতা লিখি। যে কবিতা গুলো বিষাদমাখা। ডাক্তার কে আমি একটা কবিতার কয়েক লাইন শোনাতে চেয়েছিলাম। শোনাতে আর ইচ্ছা হয়নি। ডাক্তার আমার একটা সুন্দর স্মৃতির কথা শুনতে চেয়েছিলেন। আমি বলিনি। কিছু কথা আমি আটকে রাখবো কাউকে আর বলবো না।

ইদানিং আমার রাস্তা পার হতে ভয় হয়। যদিও আমি ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার করি। ভয় হয় এ কারণে , মাঝে মাঝে আমি আনমনে গুনগুন করি। ছাপার অক্ষরের কবিতা গুলো মাথায় ঠাঁই নিয়েছে , দখল করে নিচ্ছে ক্রমশ। আমি যখন আনমনে হাঁটি তখন আমার পাশে কেউ থাকে না। মনে হয় ইরেজার দিয়ে আশেপাশের সব কিছু মুছে দেয়া হয়েছে। এটাই সম্ভবত প্রকৃত জগৎ । মানুষ আজন্ম একা , আশেপাশের মানুষ গুলো শুধু মায়া -- বিভ্রম।

আচ্ছা , 'বিষণ্ণতার কবি' আমাকে কি সম্মোহন করছে ? শুনেছি বিষণ্ণ মানুষ গুলো অন্য মানুষের বিষণ্নতাকে ভালোবাসে , রপ্ত করে।
নাকি তাঁর আমি ক্যারেক্টার প্লে করতে চাচ্ছি? জীবনানন্দ দাশের 'নির্জনতা ' , 'বিষণ্নতা ' আমাকে কি আড়ষ্ট করে রাখছে ?
ডাক্তারের ' ক্যারেক্টার প্লে ' এর ব্যাখ্যাটা আপনাদের কেমন লেগেছে ?। আমার কিন্তু মাথায় ঢুকে গেছে। পরিচত কিছু ক্যারেক্টার নিয়ে নিজেকে যাচাইয়ের চেষ্টা করি। এই নিয়ে ভাবছিও খুব।

যেমন ধরুন হুমায়ূন আহমেদের ' আমি এবং কয়েকটা প্রজাপতি ' আমার বহু পঠিত একটা বই। অনেক প্রিয় বলতে পারেন। সুযোগ পেলেই পড়ি। লাল , কালো আর সাদা মলাটের একটা বই। পড়েছেন নিশ্চয় ?
এটা কিন্তু প্রথম সারিতে রাখার মত একটা বই। কিন্তু আপনারা তো হিমু হিমু করতে করতে পাগল। বইয়ের নাম শুনে কি প্রেম প্রেম ভাব মনে হচ্ছে ?

গল্পের প্রধান চরিত্র ফখরুদ্দিন চৌধুরী। একদিন বর্ষায় বইয়ের পাতায় চোখ বুলাতে বুলাতে হঠাৎ মেয়ে কন্ঠ শুনতে পান। গল্পরের শুরু সেখান থেকেই। একসময় তারা কথা বলতো। আমিও কিন্তু একরাতে মেয়ে কণ্ঠ শুনেছিলাম। ডাক্তার কে সেদিন সেই গল্প বলিনি। আসলে আমার জীবনে কোন গল্প নাই। ফখরুদ্দিন চৌধুরীর জীবনে যেটা আছে।

একবার জানালার ওপাশ থেকে মেয়ে কণ্ঠ নাম ধরে ডেকে উঠলো। প্রথমে চমকে উঠলাম। বেল গাছতলার ঘুটঘুটে অন্ধকারে কেউ কি দাঁড়িয়ে আছে? দ্বিতীয় বার ডাকার সাথে সাথে জানলার পাল্লা খুলে দিলাম। না কেউ নেই , থাকার কোথাও না। কারণ পরিচিত হলে তো অবশ্যই থাকতো। যে ছিল সে সম্ভবত অপরিচিত , অচেনা কেউ - অদেখা । তবে নিশ্চয় সে আমাকে চেনে , তানাহলে নাম জানবে কিভাবে। আচমকা এক শীতল বাতাস বয়ে গেলো গা জুড়ে , ঘোর অন্ধকারে অদেখাকে দেখার চেষ্টা করলাম।
না আমার সাথে কিন্তু ফখরুদ্দিন চৌধুরীর ঘটনার কোন মিল নেই।

ফখরুদ্দিন দুটো খুন করে ঠান্ডা মাথায়। অবশ্য সেটা ফিজিক্যালি খুন নয় । সাইকোলজিক্যালি খুন এবং সেটা ছিল তার এক্সপেরিমেন্টেরই একটা অংশ।
ফখরুদ্দিন চৌধুরী আর ‘আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি’ বই নিয়ে আমি খুব ভাবি। ফখরুদ্দিন চৌধুরী আমাকে খুব আকৃষ্ট করলেও, আমি কিন্তু ফখরুদ্দিন চৌধুরীর 'ক্যারেক্টার প্লে ' করছি না। ফখরুদ্দিন চৌধুরী একজন সিজোফ্রেনিক


** লেখাটি চলমান আছে। ইচ্ছা আছে ২০ থেকে ২৫ টা চ্যাপ্টারে গিয়ে শেষ করব। আপাতত সাতটি চ্যাপ্টার লেখা হয়েছে। দেখা যাক কতদূর এগোয়। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৯

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর । আমি একা থাকলেও একটা আনন্দের জগৎ সৃষ্টিন র প্রয়াস থাকে। গতকাল বড়শির নতুন ছিপ হু্ইল বড়শি মাছ ধরার খাবার তৈরি করতে করতে কখন যে রাত তিনটা বেজে গেছে তারপর ঘুমিয়ে পড়লাম। ব্যস্ততা উপভোগ্য সঙ্গী হতে পারে।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:১২

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আমার মাছ ধরার খুব শখ ছিল। টিকিট কেটে চাচার সাথে মাছ ধরতে যেতাম। আর সময় পেলেই পদ্মায় হুইল ফেলে বসে যেতাম। তাছাড়া আমাদের পুকুর তো ছিলই। হাত ছিপে পুটি , তেলাপিয়া , টাকি আর হুইলে বড় মাছ। আহা সেই সময়।

২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:২০

ইসিয়াক বলেছেন: খুব ভালো লাগছে ...... চলুক.....
শুভকামনা।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:২৮

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: এত দিন পরে!!!
আগের পোষ্ট ভুলে গেছি। দাঁড়ান আরেকবার পড়ে আসি। তারপর পড়বো।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৫১

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: হা হা হা.... পড়ে আসুন সমস্যা নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.