নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......
ছোটবেলায় ঘুম থেকে উঠেই মনে হত, স্কুলে যেতে হবে! পরক্ষনেই চোখটা আচমকা ভিজে যেত, কেঁপে উঠতো ঠোট।
ছোটবেলার ভাবতাম, বড় হওয়ায় ভালো। স্কুলে যেতে হবে না। নিয়ম করে ঘুম থেকে উঠতে হবে না, থাকবে না দাঁত ব্রাশ আর টয়লেটের তাড়া। জুতোর ফিতে ফুল করে না বাঁধলেও চলবে।ব্যাগের বোঝা পিঠে চাপিয়ে সোজা স্কুল আর ওদিকে সবাই কত আনন্দ করবে, পুকুরে ছিপ ফেলে মাছ ধরবে... নারিকেল পড়লে কুড়তে যাবে, পাটকাঠির মাথায় আঠা লাগিয়ে ফড়িংয়ের পিছে ছুটবে, বৃষ্টি হলে ভিজবে, কাঠবিড়ালীর লেজ নাড়ানো দেখবে... আকাশে টেনিস বল ছুঁড়ে দিয়ে লুফে নেয়া শিখবে.....দুপুরে শুয়ে শুয়ে রাশিয়ান গল্পের বই পড়া হবে না.... নদীর ওপারে ছোপ ছোপ সবুজের গাছপালা ঘরবাড়ি পাহাড় আঁকা হবে না...
বড় হয়েছি। আমার হিসেবে ভুল ছিল। ছোটদের বড় হতে নেই।
২.
ফের ফিরে দেখা ফেলে আসে শৈশব
ওয়েস্ট বাস্কেটে মোচড়ানো কাগজের মত পড়ে থাকা স্মৃতি।
ভেবেছিলাম পাখি হব অথবা আকাশ, পাখির জন্য আকাশ;
সুবিশাল নীল!
অতপর আকাশ খুঁজিনি,
খোঁজা হয়নি পাখির হলদে ডানায়
ঝলমলো রৌদ।
আকাশের নীল সুবিশালতার সীমানা পেড়িয়ে হন্যে হয়নি।
একসময় শখ ছিলো ছোট্ট ডানার সবজে ঘাস ফড়িং, কাশবন, কুমড়ো ডগায় তিড়িং বিড়িং।
সবুজ খোঁজা হয়নি
ফড়িংয়ের সাথে তেপান্তর
দেখা হয়নি।
বড় হয়েছি আর শুধু বুড়ো হয়েছি।
৩.
তখন থাকতাম মাটির ঘরে, বাঁশের খুঁটি আর মাথার উপর খড়ের চাল। বৃষ্টি হলে চাল বেয়ে পানি পড়তো। লাল চায়ের মত রং। যেন চা ভেবে খেয়ে ফেলা যায়। আমি বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতাম। বাসায় একটা টেপরেকর্ডার ছিল।আব্বা অনেক রাত পর্যন্ত রেডিও শুনতেন। অনেক রাতে বিদেশী কাহিনী নিয়ে বাংলা নাটক প্রচারিত হত। আমার খুব ভালো মত বোঝার ক্ষমতা ছিলনা। আমি চুপ করে ঘুমের ভান করে পরে থাকতাম... নাটক শুনতে ভালোই লাগতো। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের নাটক, রাশিয়ান ইভানের নাটক, ওডিসি, । কিজিল কাঠের ছড়ি নামে একটা নাটক শুনেছিলাম যদি ঐ বইটা আব্বা আমাকে আগেই কিনে দিয়েছিলেন। বইটার নাম 'রুপেরডালি খেলা।' ঐ নাটকটা শোনার পর থেকে আমি চুপ করে নাটক শুনতে লাগলাম।নেশা হয়ে গেল। এক দিন নাটক শুনছি-
এক ভয়ানক খুনীর রোমহর্ষক নাটক। একের পর এক খুন করছে, টুকরো টুকরো করছে। পুলিশ কিছুই করতে পারছে না।মায়েরা বাচ্চাদের ঘুম পাড়ায় ঐ ভয়াংকর খুনীর নাম বলে।
আমি নাটক শুনছি আর ভয়ে উশখুশ করছি। খুন গুলো যেন আমি নিজে দেখতে পারছি.... কথা বলতে পারছিনা, আব্বা যদি জেনে যায় আমি জেগে আছি!
হঠাত্ কৌতুহল নিয়ে বললাম, আব্বা 'রিভার' কি ঐ খুনিটার নাম?
আব্বা বললেন, রিভার না রিপার। খুন করে শরীর বিচ্ছিন্ন করে ফেলতো বলে তাকে 'রিপার' নামে ডাকা হত। ওর আসল নাম হলো জ্যাক।সবাই বলতো 'জ্যাক দ্যা রিপার!'
আমি কল্পনায় শরীর বিচ্ছিন্ন করা খুনীটার কথা ভাবছি আর আব্বা পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আমি রাত জেগে ঘুমের ভান করে নাটক শুনি এটা আব্বা জানতেন এবং জানার পরেও তিনি কিছু বলতেন না! কেন বলতেন না, সেই কথাটা আমার একবারো মনে হলো না। আমি কল্পনায় রিপার কে দেখছি আর আব্বা পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছেন..... আমার শৈশব ভালো থেকো। শুভ রাত্রি।
ছবিঃ ফড়িং চলচ্চিত্র
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ২:২৩
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ স্যার। ফেলে আসা দিনের জন্য মনটা কাঁদে।
২| ২৯ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:৫৪
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
স্মৃতির গভীরে ডুব সাতার।+++
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ২:২৪
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ । আমি ভীষণ স্মৃতিকাতর। ভালো থাকবেন।
৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৪:৫০
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
আপনার শৈশব বেশ ভালো মনে আছে। রেডিওতে প্রচুর প্রচুর নাটক শোনেছি। একটা সময় ছিলো কোনো পরিবারে রেডিও থাকা রিতিমতো একটা ব্যাপার স্যাপার ছিলো।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ২:৩০
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আমার অনেক ছোটবেলার কথা মনে আছে। আমি তখন স্কুলেই ভর্তি হয়নি। আব্বা স্কুলের কাজে যশোর গেছিলেন। আমি অপেক্ষা করতে করতে রাতে ঘুমিয়ে গেছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার বালিশের কাছে একটা রাশিয়ান বই আর অনেক গুলো অরেঞ্জ লজেন্স (ছোট ছোট কমলার কোয়ার মত, পঁচিশ পয়সা করে নিতো মনে হয়। ঐ ভোর টা আমার জীবনের একটা সেরা ভোর।
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ১০:০৯
হাবিব বলেছেন: স্মৃতিচারণমূলক পোস্টে ++