নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......
'আমরা জন্মে গল্প কে করি সত্য...'
(গান থেকে )
মানুষ দৌঁড়াতে পারে হরিণের মতো , মাটি আঁকড়ে যেতে পারে সাপের মতো , মাছের মতো ভেসে যেতে পারে। শুধু পাখির মতো উড়তে পারে না। আকাশে উড্ডয়ন পাখিদের দেখে যুগের পর যুগ লোকে এই ভেবে হিংসে করেছে। ভেবেছে আর স্বপ্ন দেখেছে : 'নিঝুম বনের ওপর দিয়ে মেঘগুলোকে ছাড়িয়ে উড়ে যাব উড়ন্ত গালিচায় চেপে ! .... নাকি পালক দিয়ে পাখা বানিয়ে আকাশে উঠব!’ তবে পাখাওয়ালা মানুষ কি উড়ন্ত গালিচা বহুদিন ছিল কেবল গল্প।
শোনা যায় অবিশ্যি অনেক কাল আগে মস্কোয় এক চাষী পাখা বানিয়েছিল চামড়া দিয়ে। ময়দানে লোকজন ডেকে সে ঘোষণা করলে যে উড়ে যেতে পারে নাকি বলাকার মতো। কৌতূহলীরা জুটল সবাই, দেখতে চায় কি ঘটবে। চাষী তার কাফতান খুলে ফেলে কাঁধে বেঁধে নিলে দুই পাখা -- 'ওড় এমেলকা !' ‘ চেঁচায় লোকেরা।
কিন্তু যতই সে ছোটাছুটি করুক , যতই ডানা নাড়ুক , মাটি ছেড়ে ওঠা তার আর হলো না।
তা দেখে একদল হাসাহাসি করলে , টিটকারি দিলে , অন্যেরা গম্ভীরভাবে মাথা মাথা নাড়ল : ‘ বোঝা যাচ্ছে , মাটি ছেড়ে যাবার কপাল নেই মানুষের। '
কিন্তু ঘটলো অন্যরকম।
আর এই অন্য রকম ঘটনা নিয়েই আমার আরো একটি রাশিয়ান শৈশব : মানুষ উঠল আকাশে।
মানুষ উঠল আকাশে
অনেকদিনআগে দক্ষিণ ফ্রান্সের ছোট্ট এক শহরে থাকতো দুই ভাই --- জোসেফ আর এতে’ মঙ্গোলফিয়ের।
জানবার ইচ্ছে এদের ছিল প্রবল , বুদ্ধিমত্তাও প্রখর।
চিমনি থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখে দু’ভাই বহুবার ই নিজেদের জিজ্ঞেস করেছে – কেন ওঠে?
ঠিক করলে , গরম বাতাস ঠান্ডার চেয়ে হালকা , তাই ওপরে ভেসে উঠছে।
ভায়েরা তখন কাগজ দিয়ে মস্তো এক বেলুন বানালে , বেলুন ভরে তুলল অগ্নিকুন্ডের ধোঁয়ায়।
সঙ্গে সঙ্গে উঠে গেল আকাশে , দ্রুত বাড়তে থাকলো তার গতি ...
কাটল কয়েক মাস। মঙ্গোলফিয়ারদের বেলুনে প্রথম উঠলো মানুষ। নাম তার পিলাতর দ্যা রোজিএ।
শত শত কৌতূহলী প্যারিসবাসিতে ভরে গেল প্রশস্ত স্কয়ার , লোকে উঠলো বাড়ির চালে , চিমটিতে।
শোনা গেল উৎক্ষেপের সংকেত। ধোঁয়ায় ভরে বেলুন ধীরে ধীরে উঠতে লাগল স্কয়ারের ওপরে।
জনতা সোল্লাসে চিৎকার করে উঠল : ‘মানুষ উঠেছে আকাশে ! … সাবাস পিলাতর !
-- বাতাসের আচমকা ঝাপটায় বেলুন ভেসে গেল গাছে।
আর এক সেকেন্ড .. ডালের খোঁচায় বেলুনের খোল এই ছিঁড়ল বলে।
কিন্তু পিলাতর ঘাবড়াল না , বেলুনেই যে অগ্নিপাত্র বসানো ছিল , তাতে সে একমুঠো খড় ছুড়ে দিলে।
তপ্ত বাতাস ছুটল খোলের দিকে , বেলুন বাধ্যের মতো ওপরে উঠে ভেসে গাছের ওপর দিয়ে।
‘ কী , কেমন লাগল ?’ বেলুন মাটিতে নামলে জিজ্ঞেস করা হলো পিলাতর কে।
‘চমৎকার !’ উচ্ছাসিত হয়ে চেঁচিয়ে উঠল নির্ভিক বায়ুচর , ‘ একেবারে স্বপ্ন !’
** এরপর , জানুয়ারী ১৯ , ১৭৮৪ - মঙ্গোলফিয়ের এর বিশাল এক বেলুন সাতজন যাত্রী নিয়ে লিয়নস শহর জুড়ে ৩০০০ ফুট উচ্চতায় উড্ডয়ন করে । (সূত্র: ফুটনোট)
আকাশে ভাসে মাছ
বেলুনে প্রথম ওরা হয় প্রায় দুশ বছর আগে। তারপর থেকে লোকে অনেকবার আকাশে উঠেছে বেলুনে , যাকে বলা হয় এয়ারস্ট্যাট। শুধু তা ভর্তি করা হত ধোঁয়ায় নয় , হালকা গ্যাসে। পরে এয়ারস্ট্যাটে বসানো হল প্রপেলার সমেত ইঞ্জিন --- দাঁড়াল **ডিরিজাবল – যা চলবে হুকুম মেনে। বাতাসে ভাসলে তাকে দেখায় প্রকাণ্ড এক মাছের মতো। পেছনে লেজ , পেটের ভেতর ঝুলন্ত গন্ডোলা , যেন পাখনা। গন্ডোলা চেপে ইঞ্জিন চালিয়ে দিয়ে যাও না যেখানে খুশি। এটা বেলুনের মতো নয়। তাতে সবকিছু নির্ভর করত বাতাসের ওপর। সেদিকে বাতাস বইবে সেইদিকেই যাবে বেলুন।
আকাশে ভাসছে ডিরিজাবল, আর তার ওপরে ডানা মেলা প্রতিযোগী রুপোলি পাখি – বিমান , আগে যাকে বলা হত এরোপ্লেন।
তবে তার কাহিনিটা ভিন্ন।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------
পিলাতর দ্যা রোজিএ আর পিয়ের রোমেন নতুন হাইব্রিড বেলুন উড্ডয়ন করেছিলেন ইংলিশ চ্যানেলটি অতিক্রম করার প্রবল ইচ্ছে নিয়ে। কিন্তু উড্ডয়নের কিছুক্ষন পরেই বেলুনটি মাটিতে আছড়ে পড়ে। ১৭৮৫ সালের ১৫ জুন পিলাতর দ্যা রোজিএ আর পিয়ের রোমেন এই বেলুন ক্রাশে মারা যান। তবে গল্প এখানেই থেমে যায়নি.....কারণ মানুষের জন্ম তো গল্প কে সত্যি করার জন্যই। ওই গানটার মত... 'আমরা জন্মে গল্প কে করি সত্য...'
সেই দুর্ঘটনায় পিলাতর দ্যা রোজিএ মারা যাওয়ার পর অনেক গবেষণা হয়েছে। অনেক আবিষ্কার হয়েছে। মানুষ বেলুন কে নিয়ে গেছে আবিষ্কারের অন্য মাত্রায়। সেই গল্প ধীরে ধীরে হবে।
**ফুটনোট : আরো জেনে নিন
এয়ারশিপ এবং বেলুনের ইতিহাস
ডিরিজাবল
মঙ্গোলফিয়ের ভ্রাতৃদ্বয়
রাশিয়ান শৈশবে আমার কোন কৃতিত্ব নেই। আমি শুধু টাইপ করি আর ছবি সম্পাদনা করি। তবে এখানে একটু ব্যতিক্রম রাখার ইচ্ছা আছে ।
এই লেখাটা আমি একটু ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলাম। লেখা আর হয় না। বন্ধ হয়ে আছে। মুল গল্পের পাশাপাশি নিজের বক্তব্য আর তথ্য দিয়ে ভিন্ন অন্য মাত্রা দিতে চেয়েছিলাম যেটা নিজের মনেই গেঁথে থাকে।
পরের পর্বের জন্য খাটাখাটনি চলেছে। ভালো থাকবেন।
-------------------------------------------------------
বইঃ মানুষ উঠল আকাশে
লেখকঃ কার্ল অরোন
ছবিঃ এরিক বেনিয়ামিনসন আর বরিস কিশতিমভ
ছোট্ট শিশুদের জন্য অনুবাদ করেছেনঃ ননী ভৌমিক
রাদুগা প্রকাশন। মস্কো। ১৯৮৪ ।
০৬ ই জুন, ২০২২ দুপুর ২:৩৯
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আরো আছে। ধীরে ধীরে আসবে। ছোটবেলায় বইটা পড়তে পড়তে কখন যে বিমানের ককপিটে চেপে বসে দিলাম টেরই পাইনি।
ভালো থাকবেন।
২| ০৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৩:০৪
মিরোরডডল বলেছেন:
আমিতো প্রতিনিয়ত কল্পনার আকাশে উড়ি ।
আগামী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম ।
০৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:৪৩
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: উড়তে থাকুন।
আরো ওড়ার গল্প বাঁকি আছে !
০৬ ই জুন, ২০২২ রাত ৮:০৬
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অর্থহীন আমার পছন্দের ব্যান্ড।
চমৎকার একটা গানের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
৩| ০৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৩:১২
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
মানুষ পাখি দেখে উড়তে চাইলেও,ডানা কখনো গায়ে লাগাতে পারেনি ;বেলুন থেকে বিমানে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।
পর্ব আসুক, অপেক্ষারত।
০৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:৪১
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: কে জানে ভবিষ্যতে হয়তো পাখির মত উড়বে।
পরের পর্ব নিয়ে ভাবছি। ভালো থাকবেন।
৪| ০৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৩:৪৭
সোনাগাজী বলেছেন:
আপনার লেখায় এত বেশীবার "রাশিয়া"র কথা আসে যে, আমি ভেবেছিলাম, আপনি রাশিয়ায় বড় হয়েছেন।
০৬ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৪:২০
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: হা হা হা। আসলে সোভিয়েত / রাশিয়ার কথা বেশিই বলা হয়েছে।
ছোটবেলায় সোভিয়েত বই গুলোই বেশি পড়া হয়েছে অন্য বইয়ের তুলনায়। আচ্ছন্ন ছিলাম।
তাই ফিরে ফিরে আসে।
৫| ০৬ ই জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৬
আহমেদ জী এস বলেছেন: স্বপ্নবাজ সৌরভ,
অন্যরকম লেখা ।
নিজে নিজে ওড়ার তো সাধ যায় কিন্তু উড়তে পারি কই !!!!!!!!!!
আপনার লেখার সাথে সাথে যদি ওড়া যায় সে অপেক্ষায়....................
০৬ ই জুন, ২০২২ রাত ৮:৪১
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়।
আমি সময় নিয়ে চেষ্টা করবো।
ছোটবেলায় যদি লিখতে পারতাম তাহলে ভালো হতো।
তখনকার কল্পনা শক্তি আরো সতেজ ছিল।
৬| ০৬ ই জুন, ২০২২ রাত ৮:০১
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: কল্পনাপ্রবণ শৈশবে আপনি দারুণভাবে সোভিয়েত গাঁথা উপভোগ করেছেন বলতেই হবে। জানিনা অনুমান কতটা সত্য, ব্লগের নিক নেওয়ার পিছনে শৈশবে সোভিয়েতের স্বপ্নাচ্ছন্ন হওয়ার ঘটনায় কী স্বপ্নবাজ সৌরভ হিসেবে নিক গ্রহণে কাজ করেছে?
০৬ ই জুন, ২০২২ রাত ৮:৫৭
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ভালো বলেছেন।
এটা সত্যি শৈশব কল্পনা অনেক প্রখর ছিল। সোভিয়েত বইয়ের লেখা গুলো ভাবনায় নিয়ে আসতাম। দৃশ্যপট যেন বাস্তবের মত। পেনসিল আর সর্বকর্মা পড়ে যেন রাস্তাঘাট চিনে ফেলেছিলাম। শৈশবে ছিলাম সোভিয়েতে আচ্ছন্ন আর এখন সোভিয়েত শৈশবে আচ্ছন্ন।
কখনো ভাবিনি শৈশবের সেই সোভিয়েত বই গুলো নিয়ে এভাবে লিখবো একদিন।
৭| ০৬ ই জুন, ২০২২ রাত ৮:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: আমি এখনও স্বপ্ন দেখি আকাশে উড়ছি। এটা আমার খুবই প্রিয় স্বপ্ন।
০৬ ই জুন, ২০২২ রাত ৯:২০
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: কল্পনা থেকেই তো সত্যিকারের ওড়া।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই জুন, ২০২২ দুপুর ২:৩১
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: কতই না কসরত করতে হয়ে মানুষকে আকাশে উড়ার জন্য।