নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাহরিয়ার৮১

শাহরিয়ার৮১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবারো এলোমেলো...

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:২০

নব্বই দশকের গোড়ার দিকের ঘটনা। আমি তখন ৭ম কি ৮ম শ্রেণীতে পড়ি। অামাদের স্কুলসংলগ্ন টিচার্স ট্রেনিং কলেজের বিপরীত পাশে মহনচাঁদ আর যাদব ঘোষের (নাম করা মিষ্টির দোকান) গলির সাথের লাগোয়া পেট্রল পাম্পের কোণার চায়ের দোকানে আমি আর আমার এক সহপাঠী বন্ধু ছুটির পর সদ্য শেখা সিগারেট আর চায়ের কাপ নিয়ে ৩০ মিনিট যাবত বসে অপেক্ষা করছি।
কার/কিসের জন্য?
আইয়ুব বাচ্চু বলে এক ব্যক্তিকে এক নজর স্বচক্ষে দেখার জন্য।
৬/৭ দিন আগে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পাই, বাচ্চু ভাইয়ের শশুর বাড়ি উপরোল্লিখিত গলির শেষ মাথায় অবস্থিত।
সেই দিন থেকেই প্রত্যেকদিন ছুটির পর ঘন্টা দুয়েক উপরোল্লিখিত জায়গায় বসে অপেক্ষা চলছে।
বাচ্চু ভাই সেই সময় তুমুল জনপ্রিয়। মাত্র ৩টি অ্যালবাম (এলআরবি) দিয়েই বাংলার রক মসনদের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছেন। আমি আর সাথের বন্ধুটি ১ম অ্যালবাম থেকে্ই তাঁর গানের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি। অন্য সহপাঠীরা যখন খেলাধুলা বা ভিডিও গেমেসের দোকানে ব্যস্ত, অামাদের সময় কাটতো গান শুনে আর তার সম্পর্কে আলাপ করে।
যাই হোক, অবশেষে আমাদের শিশুতোষ অপেক্ষার পালা শেষ হয়। কোন এক দিন দুপুর দেড়টার দিকে এলিফ্যান্ট রোডের দিক থেকে নীল রঙয়ের হোন্ডা এক্সেল চালিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর অগ্রসর হওয়া দেখতে পাই। তাঁর পেছনে এসআই টুটুল, এলআরবি'র কিবোর্ডবাদক।
কাছে আসতেই কাঁধ পর্যন্ত ঝাঁকরা চুল, কালো ফুলহাতা জামা, হাঁটুর কাছে ছেঁড়া নীল ডেনিম, কালো বুট আর কালো রোদচশমা পরা বাচ্চু ভাইয়ের দিকে দুইজনে হাঁ করে তাকিয়ে ছিলাম, যতক্ষন দেখা যায়।
মনে আছে, বাসায় গিয়েই টিএন্ডটি টেলিফোন থেকে অন্যান্য বন্ধুদের কল করে ঘটনা জানিয়েছিলাম। ওইদিন রাতে অনেক দেরিতে ঘুম এসেছিল।

অথচ ফেসবুকের আগমন সেই অধরা, দেবতাতুল্য মানুষগুলোকে আমাদের মতোই সাধারনদের কাতারে নামিয়ে এনেছিল।

কে যেন সেদিন বলছিল - সাহিত্যে হুমায়ুন আহমেদ আর গানে আইয়ুব বাচ্চু একই উচ্চতায় অবস্থান করেন। কথাটা সত্যি বটে। তবে আমার মতে, জনপ্রিয়তার বিচারে একদিক দিয়ে বাচ্চু ভাই হুমায়ুন স্যার থেকে এগিয়ে। স্যারের পাঠক/দর্শক থেকে বাচ্চু ভাইয়ের শ্রোতা/দর্শকের সংখ্যা বেশি। বাচ্চু ভাই শিক্ষিত-অশিক্ষিত, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা, উচ্চ, নিম্ন, মধ্যবিত্ত - সমাজের সব স্তরে পৌঁছাতে আর জয় করতে পেরেছিলেন; যার কারণে ১ মাসের বেশি পার হওয়ার পরেও বেশিরভাগ মানুষ তাঁর চলে যাওয়া টা এখনো বিশ্বাস করতে বা মেনে নিতে পারছেন না।

সময়ের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সংসদ ভবন, শাপলা চত্বর বা বিডিবিএল ভবনের মতোই আইয়ুব বাচ্চু আমাদের নিত্য জী্বনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটা অংশ ছিলেন।

কাছাকাছি সময়ে মিশুক মুনির, হুমায়ুন ফরিদি, সৈয়দ হক, হুমায়ুন আহমেদ, লাকী আখন্দ আর আইয়ুব বাচ্চুর মতো ক্ষনজন্মাদের হারিয়ে আমরা রীতিমতো টাল-মাটাল!

পারবো কি আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে...?! জানি না...তবে আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া নিম্নোক্ত পংক্তিগুলো নিঃসন্দেহে প্রেরণা জোগাবে...যুগের পর যুগ।

তুমি শীর্ষ অনুভূতির পরে শুন্যতার বোধ, তুমি আলতো স্পর্শে প্রিয়ার চাহনী, গুমরে থাকা ক্রোধ
তুমি ভ্রান্তি নও বাস্তবতার শূন্য ভাতের থালা, তুমি লোভ-ঘৃণার ব্যাকরণে বিবেকের বন্ধ তালা
তুমি উদ্ধত মিছিলের স্রোতে গর্বিত মুখ, তুমি ভুল নায়কের হাতছানিতে মায়ের শূন্য বুক।
তোমার মাঝেই স্বপ্নের শুরু তোমার মাঝেই শেষ
ভালোলাগা, ভালোবাসা তুমি আমার বাংলাদেশ।

অথবা,

তুমি চকচকে শার্টের বোতামে ছিলে, ছিলে পরিশ্রান্তি করে এক ঢোক পানি
তবু কেন তুমি সাঁতার কাটো আবহমান বাংলার নোংরা সুইমিং পুলে
তুমি তো ছিলে সদ্য ফোঁটা গোলাপ, গোলাপের লাল রঙ আজ রক্ত মনে হয়
তুমি তো সাদা রজনীগন্ধায় ছিলে, রজনীগন্ধায় অাজ কাফন-যাত্রা দেখি

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৩৯

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: স্মৃতিময় জীবন আমায় কাঁদায়

২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:১০

রাজীব নুর বলেছেন: আহারে--
অতীত'ই ভালো।

৩| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৪

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: পুরোনো সেই দিনের কথা...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.