নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নের খোঁজে দেখি তোমায় /বাঁধি সীমাহীন ভালোবাসায়/দাও কিছু সুখের বৃষ্টি / ভিজি আমি /উড়াই দিগন্তের নীলিমায় তোমার নামে / স্বপ্নের এক বিশাল ঘুড়ি।

স্প্যানকড

আমি হারিয়ে ফেলি নিজেকে ফিরে ফিরে পাই এক চিলতে হাসিতে।

স্প্যানকড › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঐ তো আইছে সুরুজ !

১৩ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:৩৯

ছবি নেট ।

মন তো যেতে চায় বহুদূর।কতদুর আর মোল্লার দৌড় যতদূর এতদূর হতে পারে বা এর একটু বেশী।এসব হাবিজাবি মগজে দৌড়াতে দৌড়াতে ঘুম ভেংগে গেল নীলের।

নীল অগোছালো বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেস হয়।লকডাউন থাকাতে বাইরেও তেমন যায় না। বাসায় বসে অফিস করা লাগে।বহুদিন ভোর দেখেনা।বহুদিন সুর্য উঠা। যান্ত্রিক জীবনে অনেক কিছু মিস হয়ে যায় এতদিনে ধীরে ধীরে কিছুটা টের পাচ্ছে।

আস্তে আস্তে পা টেনে হাঁটে যাতে মায়ের ঘুম না ভেংগে যায় এই আশংকায়।ডাইনিং রুমে আসে।যথারীতি এক গেলাস জল পান করে। উঁকি দেয় মায়ের রুমে।দেখে ওর মা সেই কবে থেকে উঠে গেছে। নামাজ শেষ করে দোয়া দরুদ পড়ছে আর নানু বয়সের ভারে শুয়ে আছে মানে বিশ্রাম করছে।ছাদে যাবে ভাবছে।
ঢাকা শহর এর এই পাঁচ তালা বাড়িটার তিন তলার বাসিন্দা নীল। দীর্ঘদিন ধরে একই এলাকায় আছে। এলাকার মুচি, টং দোকান থেকে শুরু করে দুই চারজন রিক্সা চালক ওরে চিনে।

এছাড়া এলাকার নেতা, পাতি নেতা।যদিও রাজনীতির সাথে কখনো জড়িয়ে ফেলেনি নিজেকে। হয়তো ভালো ছাত্র।ভালো ক্রিকেট প্লেয়ার ছিল বলে এমন সবাই চিনে।
অবশ্য এ সত্য ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পরবর্তীতে ক্রিকেটার হতে পারেনি। ভাগ্য বলে একটা জিনিস আছে তা যে মানতে হবে।

এখন একটা প্রাইভেট কোম্পানি তে জব করছে মার্কেটিং অফিসার হিসেবে।
বিয়ে টিয়ে করেনি।ওর মা অবশ্য পাত্রী দু একটা দেখেছেন কিন্তু মন মতন না।
তাছাড়া আজকালকার মেয়ে ছেলে কারো প্রতি তেমন ভরসা নেই।কে কোথায় কার সাথে পেট বাজিয়ে বসে আছে পরে প্রাইভেট ক্লিনিক বা বাচ্চা ডাস্টবিনে ফেলে সতী বা সাধুবাবা হয়ে আছে কে জানে !এ অবশ্য ওর মায়ের একান্ত গোপন চিন্তা ভাবনা যা সে নীলকে কখনো বলেনি।

নীল, যেই ছিটকিনি খুলতে যাবে অমনি মায়ের ডাক
নীল, কোথাও যাচ্ছিস বাবা?
-এই তো ছাদে।
-ঠিক আছে তবে নামাজ টা পড়ে যা।ওয়াক্ত আছে এখনো।
নীল কিছু একটা বলতে যাবে শেষমেশ ওকে আচ্ছা বলে ফিরে এলো।ওজু নামাজ পড়ল। যদিও নীল অত নামাজ পড়ে না মাঝেসাঝে ধর্মকর্ম করে।

এ নিয়ে মায়ের শাসন চলে। নীল বরাবর বলে, হয়েছে তো!আচ্ছা দেখা যাবে। মায়ের একই কথা
" সময় থাকতে হুশে আয় মইরা গেলে কাঁদতে কাঁদতে আগুনে যেন দেহ না যায় "!

নীল শান্ত স্বরে বলে, মা, তুমি কিন্তু কবিতা লিখতে পারতে!এবার মা, ছেলে দুজন একসাথে হাসে।মায়ের কপালে ছোট একটা চুমু খেয়ে ছাদে চলে গেল।যাবার বেলায় মায়ের চোখে জল !

নীল দাঁড়িয়ে আছে পুব দিকের কার্নিশ ঘেঁষে।এ পাশটা একটু ফাঁকা মানে অত বড় বড় বিল্ডিং এখনো হয়নি তবে দূরে বিশাল কামাল উদ্দিন টাওয়ার!এ কামাল উদ্দিন সাহেব যিনি রাজনীতি করেন সামনে মেয়র পদে লড়বেন বলে কথা চালাচালি হচ্ছে।সে যাই হোক এ কোণে একটু আকটু বাতাস পাওয়া যায়।যদিও বাতাস তেমন নেই কেমন জানি সব কিছু থম মেরে আছে।
নীল দেখছে আশপাশে কত দালান কোঠা!অথচ ও যখন ছোট ছিল তখন এত দালান কোঠা ছিল না এ পাড়ায়। এর মানে মানুষের কাছে টাকা এসে গেছে বৈধ হোক বা অবৈধ!

নীল ছাদ থেকে দেখছে মসজিদ থেকে খুব সামান্য বলতে গেলে সংখ্যায় নগন্য এমন মুসল্লী বের হচ্ছে।

অথচ রাজনীতি নেতাদের ডাকে লাখ লাখ মানুষ হাজির হয়।আল্লাহর ডাকে তেমন কেউ আসে না। আজব!

তবে কি মানুষ নগদ পেতে চায়?ঐ পরকালে জান্নাত, হুর, মাগনা খাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে বা ওসব নিয়ে অত মাথা ঘামায় না?

এখনই সব পেতে চায়?এই অসুখে অবশ্য দেশের জনতার একটা বিশাল অংশ ভুগছে আজকাল।তাই তো নগদ কিছু পেতে এই সকল ডাকাত নেতাদের দলে ঢুকে পড়ছে।ভীড় করছে। খামাখা দাড়ি টুপি লাগাইয়া একটা ভাব লইয়া চলে আর কি!

এসব ভাবছে আর সুর্য উঠার জন্য অপেক্ষা করছে।ওর এখনো মনে আছে টানা তিন বছর ওদের এক সময় নানু বাড়িতে থাকতে হয়েছিল কারণ ওর বাবাকে বান্দরবান বদলি করা হয়েছিল জোরপূর্বক।

বড়কর্তার শালা ঘুষ খেয়েছিল।ওর বাবা এ নিয়ে তাকে শাসিয়েছিল একটু আকটু হইচই করেছিল তাই পেল এমন সাজা !

আসলে এ দেশে শালা বা ভাগিনাদের জোর একটু বেশী হয় যদি দুলাভাই, মামা, চাচা সেইরকম পজিশনে থাকে আর রাজনীতিবিদ হলে তো কথাই নাই পুরা দেশ তার!
সে সময় মাঝেমধ্যে ও দেখতো নানু, মা মোরগ ডাকা ভোরে উঠে গেছে। নানা সেই ভোরে গরম ভাত, আলু ভর্তা, ডাল দিয়ে কোনমতে খেয়ে জমিন দেখতে বেরিয়ে যেতো। সাথে থাকতো রংপুর থেকে আসা কয়েকজন। যাদের নানার জমিনে কাজ করতে হতো সেই বিকাল পর্যন্ত।

নীল,সাতটা বাজে শীতের সকালে হাত পকেটে ভরে দৌড়ে দৌড়ে গ্রামের ছেলেমেয়েদের সাথে দল বেঁধে মসজিদে যেতো নিয়মিত।সে সময় ওর মনে আছে ঝোলা খেঁজুরে গুড় সংগে মুড়ি।টাটকা খেঁজুরের রস আর প্রায় প্রতি ঘরে ভাঁপা পিঠা আরও কত কি!ঢাকা শহরে এ কালচার নেই বললেই চলে।উঠে গেছে।গলির মোড়ে মোড়ে পিঠার দোকান।
দুপুরে নুরু নামের ছেলেটি ওদের জন্য ভাত নিয়ে যেতো। স্কুল বন্ধ থাকলে নীল সাথে যেতো। গাছ পাকা টমেটো পানি দিয়ে ধুঁয়ে খেয়ে ফেলতো গোটা দশেক।
ওর ফর্সা গাল রোদে পুড়ে লাল হয়ে যেতো। এ দেখে একজন নেতা গোছের লোক বলতো " যাও ঐ গাছের ছায়ায় যাইয়া বইসা থাক বলে দূরের একটা গাছের প্রতি ইংগিত করতো আরো বলত জলদি যাও।তোমার নানা দেখলে আমাদেরকে গাইল দিব! "

এসব বলে লোকটা একটা অদ্ভুত হাসি দিত। এখনো ওর মনে ভাসে সেই হাসি! নীল হাসতো আর ভাবতো নানা গাইল দেয়? কি কি গাইল? নানারে জিজ্ঞেস করতে হবে ইত্যাদি নানান আজব খেয়াল।

ওর মনে হয় এইতো সেইদিন! কি অদ্ভুত এ জীবন! কত সংক্ষিপ্ত!ওর নানা মারা গেছে আট বছর হতে চলল।

এসব কথা মনে হতে হতে ভেতরে একটা তোলপাড় শুরু হয়ে গেল।স্মৃতির নৌকায় চড়ে মাঝ দরিয়া চলে এসেছে। ভেতরে একটা কেমন জানি হা হুতাশ লাগা শুরু হলো।ভাবতে লাগলো আসলে কি সুন্দর ছবির মতন ছিল দিন গুলি! যদি আবার ফিরে পাওয়া যেতো আরেক বার!

এসব ভাবনার ফাঁকে মনোযোগ নিয়ে নিল  মজিদের টং দোকানের ঝাপি।রিক্সার টুংটাং ধ্বনি।গোটা কয়েক ট্যাক্সি, স্কুটার এর হর্ণ।পাশের দালানের ছাদের এক কোণে ওর মতন সাথী ছাড়া একটা কাক যে কিছুক্ষণ পর পর কর্কশ কন্ঠে ডেকে যাচ্ছে। হয়তো ধারে কাছেই ওর ইয়ার বন্ধু বা সংগিনী!

হ্যাঁ! সেই কাংখিত সুর্য উঠছে কামাল উদ্দিন টাওয়ার এর এক ফাঁকে।অনেক বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডে ঠাসা বিজ্ঞাপন হাজারো পোস্টার উপেক্ষা করে।এক চিলতে লালচে আলো আসছে।যেন কোন দীর্ঘদিনের ক্লান্ত ফেরিওয়ালা।এ শহর ধীরে ধীরে জেগে উঠছে।আবার সেই যন্ত্র হতে শুরু করছে সব।
নীলের গায়ে খেলে যাচ্ছে লালচে চাপা আলো। আস্তে আস্তে গরম হতে শুরু করছে শরীর।আলোর তেজ বাড়ছে ক্রমশ।
নীল পাগলের মতন হাসছে।চোখ বুজে আছে।নদীতে ঢেউ সামলে চলা নৌকার ন্যায় দুলছে পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি শরীর।তবে মাঝি একজন যার মুখ বড্ড অচেনা অথবা খুব চেনা ! এই খেলা মগজে মেঘের মতন জড়ো হচ্ছে.... 

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৮:২৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: নীল অনেক ভালো আছে। চাকরী আছে, বাসায় বসে অফিস করে। শুধু দরকার একটা বউ। ওটাও হয়ে যাবে। তখন ভালো না ও থাকতে পারে নীল। তাই জীবনকে এখনই উপভোগ করে নিক।

১৩ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৩৭

স্প্যানকড বলেছেন: একদম সত্যি ! ঠিক বলেছেন। ভালো থাকবেন এবং সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন। ধন্যবাদ।

২| ১৩ ই আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:৩৩

শেরজা তপন বলেছেন: বান্দ্রবান তয় ভাল জায়গা :) ওরা ইচ্ছে করলেতো সেখানে তিন বছরের বড়সড় একটা ভ্রমন পরিকল্পনা করতে পারত!!!

১৩ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১২:৩৯

স্প্যানকড বলেছেন: পরিকল্পনা করেনি কারণ নীল তখন ছোট তাছাড়া ওর মা যেতে চায়নি। সে যাই হোক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন এবং সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.