নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংক্রান্তির সলতে। লেখক সম্পাদক ওয়েব প্রকাশক

শ্রীশুভ্র

ফ্রীল্যান্স লেখক

শ্রীশুভ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে না

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩৯

বাংলাদেশ রক্ত দেখে
মৌলবাদের ভক্ত দেখে
চাপাতির কোপানো দেখে
আইনের ভেলকি দেখে
বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে না


বাংলাদেশ ২০১৫! অভিজিৎ ওয়াশিকুর অনন্তবিজয় নীলয়নীল দীপন টুটুল তারেক রণদীপন…... মিছিল চলছে, পা মেলাচ্ছে একের পর এক ডেডবডি! মিছিলের কলেবর বাড়ছে। ডেডবডি কথা বলছে। বাংলাদেশ কথা বলছে কি? প্রশ্ন কি নাস্তিকতা নিয়ে? প্রশ্ন কি ইসলাম নিয়ে? প্রশ্ন কি সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে? প্রশ্ন কি দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে? না প্রশ্ন মৌলবাদ নিয়ে। প্রশ্ন মানুষের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার নিয়ে। প্রশ্ন গণতন্ত্র নিয়ে। প্রশ্ন ধর্মবোধ নিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশ! কি বলছে বাংলাদেশ? নাস্তিক তকমা দিয়ে যে কোনো সময় যে কোন স্থানে যে কোন মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া যায়? এটাই ধর্ম? এটাই ইসলাম? এটাই শরিয়তী আইন? এটাই একবিংশ শতকের সোনার বাংলা? এরই জন্যে তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তে রাঙানো জাতীয় পতাকা? এরই জন্যে নয় মাসের মুক্তি যুদ্ধ? এরই জন্যে ’৭১?

বাংলাদেশের বুকে চাপাতির কোপ পড়ছে একের পর এক। বাংলাদেশের রক্তে ধুয়ে যাচ্ছে সভ্যতার রঙ! বাংলাদেশের আকাশে শকুনের উল্লাস ‘ফেলা যাক দিনে দিনে নোঙর এবার….’ পর্দার আড়ালে কাদের অট্টহাসি? দেশবাসি কি ক্রমশ বধির হয়ে যাচ্ছে? দৃষ্টিশক্তি নাস্তিকতার বৈধতা অবৈধতার কূটতর্কে ঝাপসা হচ্ছে ক্রমশ? বিবেকে কি চরা পড়ছে ধর্মীয় গোঁড়ামীর? এ কোন বাংলাদেশ? আমাদের চেনা বাংলাদেশ তো? এই কি সেই নয় মাস কাঁপানো একাত্তরেরে বাংলা? এই কি সেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ সামরিক শাসক এরশাদকে ফসিল করে দেওয়া তরুণ বাংলাদেশ? এই যাকে সেদিনও কাঁপাতে দেখেছিলাম শাহবাগ চত্বর! সেই লক্ষ লক্ষ চেতনার পদধ্বনি আজ কোথায়?

নাকি সেই পদধ্বনির টঙ্কারেই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছিল চাপাতি ব্যবসায়ি দেশি-বিদেশী মূলধনী কারবারিরা? যাদের মূলধ্বনের দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগে বাধা পড়ার আশঙ্কা জাগিয়ে দিয়েছিল শাহবাগের পদধ্বনি!! তাই এই পাল্টা চাল? মানুষকে ঘরে সেঁধিয়ে দেওয়ার শকথেরাপি ব্লগার খুন? এ কোন রাজনীতি? রাজনীতি যদিও চিরকাল নীতিহীন ক্ষমতায়নেরই কথা বলে, কিন্তু বাংলাদেশের হৃদয় হতে উঠে আসা জনগণ তো আর ক্ষমতায়নের কেন্দ্রে বিরাজ করে না যে নীতিহীনতাকেই করতে হবে ধর্ম। সেই জনগণ আজ কোথায়? কোথায় তাদের কন্ঠস্বর? কোথায় তাদের প্রতিবাদ? কোথায় তাদের প্রতিরোধ?

ব্লগারদের রক্তে রাঙানো ডেডবডির মিছিল তাদের কি ভীত সন্ত্রস্ত করে ঘরবন্দী করে ফেল্ল? দুরাচারী পাক হার্মাদ বাহিনীও মার্কিণ ও চৈনিক অস্ত্রে বলীয়ান হয়েও যা পারেনি একাত্তরে! তাই সম্ভব করে দেখাচ্ছে দেশি চাপাতি? জোরটা চাপাতির না কি দূর্বলতাটা বাঙালির গত সাড়ে চার দশকের ধর্ম ও রাজনীতির ককটেল চেখে দেখার থটপয়জেন জাত? মূল প্রশ্নটা বোধহয় এখানেই। আজকের ব্লগার হত্যা তাই তলায় তলায় সমর্থন পেয়ে যাচ্ছে জাতির এক বৃহত্তর অংশেরই। আর সেখানেই আকাশ বিদীর্ণ করে শকুনের উল্লাস শোনা যাচ্ছে নোঙর ফেলার।

কিন্তু কিভাবে এই হত্যালীলা সমর্থন পেয়ে যাচ্ছে জাতির এক বৃহত্তর অংশের? কেন অনেকেই মনে করছেন ধর্ম সংস্কারের যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা শুরু করলেই, ধর্মের বিধানগুলিকে বিজ্ঞানচেতনার আলোতে বুঝে নিতে চাইলেই, সমাজসংস্কারের চেতনায় ধর্মবোধকে যুগোপযগী করে নিতে গেলেই চাপাতির কোপই আল্লাহর অমোঘ বিধান? কোন ধর্মের উপাস্য দেবতা কি এইভাবে হত্যাযজ্ঞের বিধান দিতে পারেন? নাকি ধর্মব্যবসায়ীরাই সুকৌশলে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগকে মূলধন করেই তাদের ব্যবসার দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের স্বার্থেই এই অপকর্মগুলি সংঘটিত করে আল্লাহর নামে চালিয়ে দিয়ে সমর্থন পেয়ে যাচ্ছে দেশবাসীর এক বৃহত্তর অংশেরই? ভাবতে অবাক লাগে একজন মুসলিম হয়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ভক্ত হয়ে দেশবাসীর এক বৃহত্তর অংশ কি করে তাদেরই পরম আরাধ্য আল্লাহর বিধান বলে চালিয়ে দেওয়া এই হত্যলীলার মতো অপকর্মকেও সমর্থন করতে পারে। এতে তো ইসলাম ও আল্লাহ কারুরই গরীমা বৃদ্ধি হয় না!

ভাবতে আশ্চর্য লাগে মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার বহনকারী একটি দেশের জনমানসের একটি বড়ো অংশের চেতনায় এই সরল হিসেবটিও আজ আর ধরা পড়ছে না! আর ভয়টা এইখানেই। সেই কারণেই চলমান এই হত্যালীলার সাক্ষী থেকেও জাতির অভ্যন্তর থেকে প্রতিবাদের কোন ঝড় উঠছে না কোন ভাবেই। একটি জাতি যখন জেগে ঘুমায় তখন তার ঘরে আগুন লাগলেও নেভানোর কোন উপায় থাকে না। জাতির পক্ষে সেইটিই বড়ো দুর্দিন।

কিন্তু কেন এই হাল আজকের সোনার বাংলার? সেইটি বুঝতে গেলে একটু পিছন ফিরে তাকাতে হবে। তখন আমারা বুঝতে পারবো পরাধীনতার নাগপাশ থেকে দেশকে মুক্ত করার পর পরই যে সমাজবিপ্লবের মধ্যে দিয়ে দেশগঠনের প্রক্রিয়া শুরু করার দরকার ছিল, বাংলাদেশে আদৌ তা হয়নি। সমগ্র জাতি একজন বঙ্গবন্ধুর দিকে বিমুগ্ধ শ্রদ্ধায় তাকিয়ে ছিল যে তিনিই যেন আলাদিনের সেই আশ্চর্য প্রদীপ হাতে রাতারাতি দেশটাকে সোনার বাংলা করে দেবেন। এই যে মানসিক ক্লীবতা এর থেকেই দেশকে জাতিকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজন সমাজবিপ্লবের। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য স্বাধীনতা পেলেও সমাজবিপ্লবের কোন হদিশ খুঁজে পায়নি জাতি আজও। আর সেই দূর্বলতার ছিদ্র দিয়েই ঢুকে পড়ে বৈদেশিক অপশক্তি স্বাধীন দেশের জন্মলগ্ন থেকেই সুযোগ খুঁজেছে জাতির শিঁরদাঁড়াকেই পঙ্গু করে দেওয়ার। যে ষড়যন্ত্রের প্রথম সফল প্রয়োগ জাতি প্রত্যক্ষ করেছিল বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে। একটি জাতিকে মেধাশূন্য করে দিতে পারলেই সমাজবিপ্লবের অঙ্কুরকে বহূকালের জন্যেই নির্মূল করে দেওয়া সম্ভব। আর ঠিক সেটাই হয়েছে বাংলাদেশে। তারপর বঙ্গবন্ধু সহ জাতীয় নেতাদের হত্যা করে গোটা জাতির নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নিয়েছিল সেই অপশক্তিই যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আটকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল নিদারুণ ভাবে। আর তাই ততধিক নিদারুণ ভাবেই নেমে এল তাদের প্রতিশোধের খাঁড়া গোটা জাতির উপরেই।

বিগত সাড়ে চারদশকের বাংলাদেশের ইতিহাস বস্তুত সেই অভিশাপেরই জীবন্ত দলিল। তার ফলে সমাজের যে বিবর্তন সংঘটিত হয়ে চলল তার মোদ্দা কথাই হল, ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’ যে যতটুকু শিক্ষার সুযোগ সুবিধে পেল সে সেই পরিমাণেই গুছিয়ে নিতে থাকল নিজের আখের। জাতির ভালো দেশের উন্নয়ন এই সব কিছুর থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল নিজের সম্পদবৃদ্ধির লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য পূরণের দুটি অমোঘ চাবিকাঠি হয়ে উঠল রাজনীতি ও ধর্ম। দেশবাসী বুঝতে পারলো এইদুটির একটিকে অন্তত ধরে রাখতে পারলে সুখে সম্পদে থাকা যাবে। যার যেমন পরিসর সে তেমনই এই চাবিকাঠি দুটি ধরার লক্ষ্যে শান দিতে থাকল তার যাবতীয় উদ্যোম। ফলে স্বাধীন দেশগঠনের যাবতীয় স্বপ্ন সাধ সাধনা গেল রসাতলে। সেই সুযোগে দেশব্যপি ধর্মের কল টাঙিয়ে সাধারণ মানুষকে ঘরবন্দী করে রাখার সুচতুর পরিকল্পনার সফল রূপায়ন ঘটতে থাকলো একেবারে রাষ্ট্রযন্ত্রের শীর্ষপদ থেকে। আজকের বাংলাদেশ গড়ে উঠছে ঠিক এই পথেই।

তাই দেশবাসীর একটি বৃহৎ অংশকেই ধর্মের কলে আটকিয়ে ধর্মীয় বিধানের নিত্যনতুন আফিম খাইয়ে সম্পূর্ণ মেধাশূন্য নির্জীব জড়পদার্থে পরিণত করা সফল হয়েছে সহজেই। আর সেই জমি থেকেই ধর্মের দোহাই দিয়ে এই ভাবে বৎসর ব্যাপি নির্মম নৃশংস হত্যালীলা সংঘটিত হয়ে চলেছে দিনের পর দিন। নির্বিকার প্রশাসন। নিশ্চেষ্ট বিচার ব্যবস্থা। নিরুপদ্রুপ আততায়ী। নিরঙ্কুশ সন্ত্রাসী মৌলবাদ! এবং নিসঙ্কল্প জনগণ।

শ্রীশুভ্র।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.