নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহাপৃথিবীর এই জীবনে চলার পথে সংসার জীবনের ঘাত প্রতিঘাতে অনেকেই আমরা অনেক সময় রণক্লান্ত হয়ে ভাবি, থাক আর দরকার নাই বেঁচে থাকার। রোজকার দৈন্দিন জীবনের একঘেয়ে আবর্তনে আবদ্ধ মন কখনো সখনো বিদ্রোহও করে ওঠে। বেঁচে থাকার কষ্টকর গ্লানি থেকে পরিত্রাণ পেতে মৃত্যুই একমাত্র সমাধান বলে মনে হয়। কখনো প্রিয়জনের উপর অভিমান বশতঃ ক্ষুব্ধ মনের বাষ্পাকুল আবেগ আমাদের মনে আত্মহননের ইচ্ছাও জাগিয়ে তোলে। কিন্তু তাই বলেই আমরা যে তৎক্ষনাৎ আত্মহত্যার পথে পা বাড়াই, আদৌ তেমন নয় বিষয়টি। সময়ের স্রোতে সেই আবেগও একসময় থিতিয়ে পড়ে জীবনের স্বাভাবিক নিয়মেই। বেঁচে থাকার আনন্দের মধ্যেই আমরা আবার ফিরে পাই যার যার জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। ছন্দপতনের হাত থেকে রক্ষা করে নিই নিজেকেই। নিজেরই স্বাভাবিক যুক্তি তর্ক বোধের গণ্ডীতে। তবুও খবরের কাগজের পাতায় পাতায় আত্মহননের কতরকম কাহিনী। কখনো সখনো আমাদের মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে সেই সব অকাল বিয়োগের বিয়োগান্ত গল্পে। অধিকাংশ সময়ই আমরা প্রাত্য়হিক ব্যস্ততায় সেই সব ঘটনাকে স্বাভাবিক জীবন বাস্তবতা ভেবেই পাশ কাটিয়ে চলে যাই। কিন্তু আমরা কি আদৌ ভেবে দেখি, একজন মানুষের মানসিক অবস্থার সেই মুহূর্ত্তটি ঠিক কেমন হতে পারে, যখন তিনি দৃঢ় পদক্ষেপে পা বাড়িয়ে দিলেন নিশ্চিত মৃত্যুর অভিমুখে? আত্মহননের সেই প্রাক মুহূর্ত্তেও তো তাঁর যুক্তি তর্ক বোধের দিগন্তে কোন না কোন ভাবনা চিন্তা চলতেই থাকে। নিজের পরিকল্পনার স্বপক্ষে তাঁর ধারালো যুক্তিই নিশ্চয় তাঁকে অবিচল চিত্তে এগিয়ে দেয় নিশ্চিৎ মৃত্য়ুর ভয়াবহ পরিণতির দিকেই। কিন্তু এ কেমন যুক্তি তর্ক বোধ, যা নিজের প্রবাহমান জীবনের ছন্দেই পরিপূর্ণ দাঁড়ি বসিয়ে ঘটিয়ে দেয় অমোঘ ছন্দপতন?
এই যে ছন্দপতন, যে ছন্দপতনকে একজন জেনে বুঝেই সুপরিকল্পনায় কার্যকর করে তোলেন; সেই ছন্দপতনোর পথে মানুষ যে সবসময়েই নিজের একান্ত তাগিদেই পা বাড়ায় তাও হয়তো নয়। অনেক সময়েই আমরা দেখতে পাই, পরিপার্শ্বের চাপের কাছে ভেঙ্গে পড়েই অনেকে এই ছন্দপতনের হাতেই সোঁপে দিতে চায় নিজেকে। বস্তুত জীবনযুদ্ধে কোন না কোন ভাবে হার স্বীকার করলেই মানুষ হয়তো বেছে নেয় আত্মহত্যার সহজ সমাধান। জীবন যে মূলত একটি যুদ্ধ, সেই কথাটি সম্যক বুঝতেই আমাদের বয়স বেড়ে যায় অনেকটাই। জীবনের আসল অর্থই হলো, সার্ভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট। সে কথা যে অল্পবিস্তর আমরা বুঝি না তাও নয়। তবু কিছু কিছু অবস্থা এমনও হয়, যখন আমরা ধরেই নিই আমাদের সার্ভাইব করার সকল পথই বন্ধ। একমাত্র মৃত্য়ুর বিশাল গেটটি ছাড়া। আর তখনই আমাদের যুক্তি তর্ক বোধ আমাদের পরিচালিত করে সেই উন্মুক্ত খোলা গেটের দিকেই। এইভাবে হেরে যাওয়াটাই হয়তো আত্মহত্যার মূল কারণ।
কিন্তু কেন হেরে যায় মানুষ। ঠিক কখনই বা হেরে যায়। কিভাবে ঘটে যায় এমন পরাজয়। জীবন যুদ্ধের ঘেরাটোপে। না এর কোন বিশেষ ফর্মুলা হয় না। হয় কি? বিচিত্র মানুষের মন। হাজার রকমের জীবনযুদ্ধ। কত বিভিন্ন সামাজিক সমীকরণ। তার ভিতর কখন কে কিভাবে হেরে যেতে শুরু করে তার নিজস্ব জীবনযুদ্ধের আঙিনায়, তার কোন একরৈখিক ফরমুলা থাকবেই বা কি করে। মানুষ তো আর রোবোট নয়। বিশেষ কোন একটি প্রেগ্রামে তৈরী করা। কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে প্রতিটি মানুষের মধ্যেই জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার একটি অদম্য তাগিদ আমাদের প্রত্যেকের ডিএনএতেই থাকে। সেই তাগিদেই শিশুও হামাগুড়ি দিতে দিতে উঠে বসে একসময় উঠে দাঁড়িয়ে হাঁঠতে শুরু করে। পরবর্তীর জীবনযুদ্ধের দৌড়ের একেবারে প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসাবেই। সেই অদম্য আবেগও যখন হঠাৎ দমে গিয়ে একজন ব্যক্তি মানুষের মনের গহনে আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগিয়ে তোলে, তখন বুঝতে হবে তিনি সেই মুহুর্ত্তে তার পরিপার্শ্বের বাকি সকলের থেকে কোন না কোনভাবে বিছিন্ন হয়ে পড়তে শুরু করেছেন। এই যে বিছিন্ন হয়ে পড়তে থাকা, আর সকলের মধ্যে থেকে; এটাই মানুষটিকে ক্রমাগত হারিয়ে দিতে থাকে তার নিজস্ব জীবনযুদ্ধের পরিসরে। জীবনযুদ্ধের সবচেয়ে বড়ো বিষয়টিই হলো নানান রকমের সমস্যার মোকাবিলা করা। কে কিভাবে কোন সমস্যা মোকাবিলা করবে, সেটা অনেক কিছু বিষয়ের উপরেই নির্ভরশীল। তবুও মোকাবিলা করার জন্যে সবার প্রথমেই যে বিষয়টি সবচাইতে বেশি জরুরী, সেটি হলো মানসিক বল। আর এই মানসিক বল এক একজন ব্যক্তি মানুষের এক এক রকমের। এবং সেটিই স্বাভাবিক। তবুও সাধারণত এই মানসিক বল প্রধাণত যে যে বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে, সেগুলি হলো- মানসিক সংগঠন, শারীরিক বল, শারীরীক সুস্থতা, অর্থবল ও জনবল।
এবং এই বিষয়গুলি এক একজন মানুষের জীবনে এক এক রকমের হয়। তাই দেখা যায় একই ধরণের সমস্যা হলেও বিভিন্ন মানুষের সেই এক ধরণের সমস্য়া মোকাবিলা করার পন্থাও বিভিন্ন! সেই কারণেই জীবনযুদ্ধের নানান সমস্য়া মোকাবিলা করতে করতে কখনো সখনো এক একজন কোন একটি বিশেষ বা একাধিক সমস্যা মোকাবিলায় ব্য়র্থ হতে হতে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ফেলেন, যখন তাঁর সামনে সমাধানের আর কোন পথই খোলা নাই বলে মনে হতে থাকে তার। আর ঠিক সেই সময়েই তিনি চারপাশের সকলের থেকে নিজেকে আলাদা ভাবতে শুরু করেন। গুটিয়ে নিতে থাকেন আত্মীয় পরিজন বন্ধবান্ধবদের কাছ থেকেই। ক্রমশ একাকীত্বের দূর্গে বন্দী করে ফেলেন নিজেকে। কারুর জীবনে দিনে দিনে ধীরে ধীরে ঘটতে থাকে এই জন বিছিন্নতা। কারুর জীবনে আবার এক মুহূর্ত্তেই ঘটে যায় এমন ঘোর ছন্দপতন। তাই বিচিত্র মানুষের বিচিত্র পরিস্থিতির মধ্যেও অন্তত এইবিষয়ে কিন্তু একটি ঘটনাই ঘটে এই ক্ষেত্রে। আর সেটিই হলো একাকীত্বের দূর্গে নিজেকে বন্দী করে ফেলা। সেই কারণেই আজ অব্দি কাউকে পাঁচজনের সাথে আলাপ আলোচনা করে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করতে দেখা যায়নি। অনেকেই বলতে পারেন তার আসল কারণ সেটি নয়, যিনি আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেন, তিনি খুব ভালো করেই জানেন সেটি পাঁচকান করলে কেউই তাঁকে সেই পরিকল্পনা কার্যকর করতে দেবেনা কখনোই। ঠিক সেই কারণেই কেউ এই বিষয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে এগোয় না। কথাটি অনেকাংশেই সত্য। কিন্তু একজন মানুষ তখনই আত্মহত্যার পথে এগোনোর কথা ভাবতে শুরু করেন, যখন তাঁর মনে এই বিশ্বাস জন্মায় যে তাঁর সমস্যাটি একান্তভাবেই তাঁর নিজস্ব। এবং সেই সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার মতো ক্ষমতা তাঁর পরিচিত কারুর কাছেই নাই। এই যে পরিচিত মানুষদের উপর ভরসা হারিয়ে ফেলা, এইখানেই ব্যক্তি মানুষের সামাজিক বা পারিবারিক বিছিন্নতার জন্ম। অর্থাৎ এই ভরসাহীনতাই তাঁকে বাকি আর সকলের থেকে বিছিন্ন করে তোলে। সেই বিছিন্নতার বেড়াজালে আটকিয়ে পড়েই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষের মধ্যে এই বোধটি দৃঢ়মূল হয়ে ওঠে যে, তার সত্যই কেউই নাই। আর তখনই নিজের একান্ত পরিজনদেরকেও ছেড়ে যেতে কোন বাধাই তাঁর কাছে আর বাধা বলে মনে হয় না। পরিচিত মানুষজনদের উপর সবরকম ভরসা হারিয়ে ফেলার মধ্যেই কিন্তু আত্মহত্যার অন্যতম প্ররোচনা লুকিয়ে থাকে। কেননা, ভরসা অটুট থাকলে তো আর নিজের একান্ত সমস্যাটি খোলাখুলি আলোচনা করার আর কোন অসুবিধা থাকার কথা নয়। তাই নয় কি? এবং দেখা যায়, আমাদের মধ্যে যতদিন এই ভরসাটুকু থাকে ততদিন সমস্যা যত বড়ো প্রবলই হোক না কেন, আত্মহত্যার কোন সম্ভাবনা থাকে না।
কিন্তু কখনো কখনো কেন হারিয়ে যায় আমাদের পরিজন পরিচিতজনদের উপর সবরকম ভরসা? হারিয়ে যাওয়ার এই কারণটিই হলো সংযোগের অভাবজনতি এক দূরত্বের পরিস্থিতি। মানুষের পক্ষে জীবনের কোন পর্যায়েই একা চলা সম্ভব নয়। আমরা সবসময়েই অনেকের মধ্যে দিয়েই আপন অস্তিত্বের বাস্তবতাকে প্রত্যক্ষ করি। এবং করতে চাই। করতে ভালোবাসি। এবং ঠিক সেই কারণেই আমরা সবসময়েই অনেকের সাথে সংযুক্ত থাকতে চেষ্টা করি। কারণ মনে মনে সবাইই জানি, সকলের সাথে এই সংযোগটই আমার টিকে থাকার অন্যতম আয়ুধ। তাই জীবনে কতবার কতরকম কম্প্রমাইজ করেও কতভাবে আমরা টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করি এই সংযোগের বিভিন্ন রকমের সূত্রগুলিকে। এইভাবেই আমরা গড়ে তুলি আমাদের জনবলের ভিত্তি। আমাদের মানসিক বলের অন্যতম মূল ভিত্তিই হলো এই জনবল। সংযোগের মাধ্যমে যা গড়ে ওঠে। কিন্তু সকলের জীবনেই যে এই জনবল একরকম তাও যেমন নয়, জীবনের সকল পর্যায়ই যে এই জনবল একই রকম শক্তিশালী থাকবে, সেরকম নিশ্চয়তাও কেউ দিতে পারে না। তাই সেই জনবলের ভিত্তিই যখন টলমল করে ওঠে, আমাদের জীবনের বিভিন্ন রকম সংযোগসূত্রগুলিই যখন দূর্বল হতে শুরু করে, তখনই আমরা আমাদের একান্ত সমস্যগুলিকে নিয়ে বড়ো বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ি। হাতের কাছে খুঁজে পাই না কাউকে। যার কাছে গেলে সমস্যা সমাধানের কোনরকম একটি রাস্তা বেড়োতে পারে। তাই সংযোগের এই অভাব থেকেই মানুষ তার মানসিক বল হারাতে শুরু করে। যে কোন আত্মহত্যার মানসিকতার জন্মের যা পূর্বশর্ত!।
জীবনযুদ্ধে তখনই একজন মানুষ হার স্বীকার করে নেন, যখন তিনি হারিয়ে ফেলেন তার নিজস্ব জীবনের এই সংযোগসূত্রের প্রয়োজনীয় গ্রন্থিগুলিকেই। সেখানেই একজন মানুষ দূর্বিষহ ভাবে একলা হয়ে পড়েন। তাঁর সেই একাকীত্বের গুরুভারই তখন শান দিতে থাকে তাঁর যুক্তি তর্ক বোধকে। আলোচনার প্রারম্ভেই যে প্রসঙ্গটি তুলেছিলাম আমরা। সেটাই তখন তাঁর কাছে সঠিক ও একমাত্র পথ বলে মনে হতে শুরু করে। যে পথে ছন্দপতন ঘটে যায় মহার্ঘ্য জীবনের। সংঘটিত হয় সুপরিকল্পিত আত্মহত্যার আরও একটি নতুন ঘটনা।
শ্রীশুভ্র
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫০
চাঁদগাজী বলেছেন:
যে বিষয় নিয়ে লিখলেন, সেই বিষয়ে আপনার ধারণা পরিস্কার নয়