নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সংক্রান্তির সলতে। লেখক সম্পাদক ওয়েব প্রকাশক

শ্রীশুভ্র

ফ্রীল্যান্স লেখক

শ্রীশুভ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙালি সাহেব বাঙালি মেম

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:০৪





বাঙালির সত্যইই কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ মীর জাফারের কাছে। এই মানুষটি সেদিন সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র না করলে, ক্লাইভের পাশে না দাঁড়ালে বাঙালির আজকে কি অবস্থা হতো ভাবলে শিউরে উঠতে হয়। পলাশীর মাঠেই ব্রিটিশের সাম্রাজ্যবাদের কবর হয়ে যেত। বাংলার আর মহান ইংরেজদের কাছে পরাধীন হওয়ার সুযোগ ঘটতো না। মেকলের এ বি সি ডি মুখস্থ করে সভ্যভব্য হওয়ার এমন সুবর্ণ সুযোগও বাঙালি কোনদিন পেত না। মোঘলদোর হাতেই ঘোল খেয়ে যেতে হতো আজীবন। সেই প্রাচীন সংস্কৃত চর্চার টোল আর ফার্সী শিক্ষার মক্তোবেই বাঙালিকে ঘুরপাক খেতে হতো কলুর বলদের মতোন। অক্সফোর্ড কেম্ব্রীজ ডিকশনারী মুখস্ত করে সেকসপীয়র আর মিলটনের লাইন আউড়ে জাতে ওঠা হতো না কোনদিন। কি করে বাঙালি পরস্পরের কাছে জাহির করতো আপন শিক্ষা দীক্ষার বহর? গেঁয়ো সংস্কৃত মন্ত্র আর মধ্যযুগীয় ফার্সী আউড়ে আর যাই হোক ডিগ্রীধারীর তকমা তো আর পাওয়া যেত না। ইংল্যাণ্ড আর ইংরেজি বাঙালির কাছে জাপান আর জাপনীর মতোই বৈদেশিক হয়ে পড়ে থাকতো এক কোনে।

সবচেয়ে বেশি মুশকিল হতোই সদ্যজাত পিতামাতাদের। ছেলেমেয়ের জন্যে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সামনে ভোর রাত থেকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার মতো আধুনিকতার এহন আনন্দতৃপ্তিটুকুই তো জুটতো না। টলমল পায়ে কোনরকমে উঠে দাঁড়ানো শিশুরও আর জানার সুযোগ হতো না, বেলি কোথায় জানতে চাইলে কোথায় থাবড়াতে হয়। কচি কচি কণ্ঠে ইংরাজী রাইম শুনিয়ে অতিথি অভ্যাগতদের তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো অসাধারণ প্রতিভাধর সব সন্তানলাভের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হতে হতো আপমর বাঙালি অভিভাবকদের। বাংলার ঘরে ঘরে। সে যে কি দুর্দিনই না হতো আমাদের বাঙালিদের। ভাবা যায়? মাত্র একটি লোক। কি অসামান্য দুরন্ত উপকারটুকু তার দেশবাসীকে সেদিন করে গিয়েছিলেন। অথচ তাঁকেই কিনা কেউ চিনল না ঠিকমতো। এতবড় দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মনীষীর নামে না আছে কোন রাস্তাঘাট, না আছে কোন মর্মর মূর্তি! না আছে কোন পুরস্কার! কি আশ্চর্য্য। সাধে কি আর বলে, বাঙালি মাত্রেই অকৃজ্ঞ?

শুধু কি তাই? হ্যাট কোট টাই? কি হতো আজ অবস্থা! সেদিন মীরজাফর না থাকলে? সেই ধুতি পাঞ্জাবী নয়তো চাপকান পড়েই দিন কাটতো কাছারীতে পড়ে থাকা বাবুদের। বিবিদেরও কি কম অসুবিধা হতো? বিলেত ফেরত সাহেবদের অর্দ্ধাঙ্গিনী হওয়ার সুযোগ থেকে কি নিদারুণ ভাবেই না বঞ্চিত হয়ে পড়ে থাকতে হতো পাড়াগাঁয়ের মেয়েদর মতো। আজকের গ্লোবাল ভিলেজ থকে ব্রাত্য হয়ে বিশ্বের কোন কোনায় পড়ে থাকত আজকের বাঙালি? প্রায় আদিবাসীদের মতো প্রাগৈতিহাসিক যুগের বাসিন্দা হয়ে। গবেষণা সন্দর্ভের লাইনে লাইনে বিলেতী কোটেশানে বিদ্যা জাহির করার এমন বাঁধানো রাস্তাই তো থাকতো না। আধুনিক হয়ে ওঠার। পণ্ডিত হয়ে ওঠার। কি করতাম আমরা? ভাবা যায় না। কত বড়ো উপকার করে গিয়েছিলেন মহামতী মিরজাফর। সেদিন কোন পক্ষ ছাড়তে হবে আর কোন পক্ষ ধরতে হবে সেই সূক্ষ্ম বিষয়টি সময়মতো অনুধাবন করতে পেরে। বিশ্বে প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের এমন অসাধারণ দৃষ্টান্ত আর দুটি নাই।

আজকের বাঙালির সব কিছু অর্জনের মূলেই তো সেই তিনি। ফড়ফড় করে কথায় কথায় এ বি সি ডি ঝেড়ে দিলেই কেল্লাফতে। যে কোন কাজ হাসিল করতে এ বি সি ডি মুখস্থ ঝাড়ার মতো এমন সর্বশক্তিমান অস্ত্র বাঙালির হাতে আসতো কি করে? আজকের ডাক্তার বলুন, ব্যরিস্টর বলুন, ইঞ্জিনিয়র থেকে ইঞ্জিন চালক কি হতো তাদের অবস্থা? সেই হেকিম হাকিম ঘড়ামী আর গাড়োয়ান হওয়ার জন্যেই তো ছুটোছুটি করতে হতো এখনো? আর নয়তো নায়েব গোমাস্তার সাথেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে কন্যাদায় মেটাতে হতো বঙ্গললনাদের অভিভাবকদেরকে। হ্যাঁ যেদিকেই তাকান না কেন দেখতে পাবেন ইংরেজ আর ইংরেজি না আসলে আজ আমাদের কি রকম দুরবস্থা হতো। যত ভাববেন ততই শিউরে উঠবেন।

সাধে কি আর অভিজ্ঞ মানুষরা বলেন, ভালো করে বাংলা শিখতে হলে আগে ইংরেজিতে ভালো দখল থাকা চাই। আমাদের ঘরে ঘরে তাইতো আমরা শিশুর মুখে বোল ফোটার আগেই বেলি থেকে হেড, হ্যাণ্ড থেকে লেগ, আইজ থকে নোজের ডোজ দিয়ে বিশ্বায়নের উপযুক্ত করে ফেলি একেবারে গোড়াতেই। এই যে সভ্য হয়ে ওঠার পথ, এই পথটুকু কোথায় পেতাম আমরা খাল কেটে ক্লাইভদের কলকাতায় না নিয়ে আসলে? সেই খাল দিয়ে শুধুই কি ক্লাইভরাই এসেছিল? শিল্প বিপ্লবের রেলগাড়ি থেকে আজকের মিসাইল টেকনোলজি আসতো কোন পথে? সেদিনের সময় মতো ঐ কাটা খালটুকু না থাকলে? তীর ধনুক আর বর্শা হাতে নিদেন পক্ষে তরবারি চালিয়ে তালপাতার সোপাইদের মতোই দিন কাটাতে হতো। তড়বড় করে ইংরেজি টেক্স বুঝে উঠতে না পারলে বাঙালি কি করে রাতারাতি নকল করে ফেলতে পারতো বিদেশী টেকনোলজি? কি হতো তখন আমাদের?

এই যে যারা একুশে ফেব্রুয়ারিটারি করে মাঝে মধ্যেই। থেকে থেকেই বদহজমের ঢেঁকুরের মতো আ মরি বাংলাভাষা বলে বুক চাপড়ায়, তাদের এই সহজ সত্যটুকু বোঝাবে কে? যে শিশু মুখের বুলি ফোটার আগেই এ বি সি ডি-তে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে, কি তার মাতৃভাষা? ইংরেজিই তো! নয়তো ডেকেয়ার কিংবা লোয়ার নার্সারি থেকে সেই শিশু ইংলিশ মিডিয়ামের ইংরেজিতেই হামাগুড়ি দিতে দিতে হাঁটাচলা করতে শিখে যায় কোন জাদুতে? তাই বাংলা ভাষা বাঙালির আশা ইত্যাদি বলে যারা থেকে থেকে শোরগোল তোলে, বাংলার ইতিহাসটুকুই তাদের আগে ভালো করে জেনে নেওয়ার দরকার আছে। তাই আজকের কিন্টারগর্টেন থেকে ইউনিভার্সিটি, শপিংমল থেকে রেস্তোঁরা, মাল্টিপ্লেক্স থেকে এয়ারপোর্ট, সুপারস্পেশালিটি হসপিট্যাল থেকে করপোরেট, সর্বত্রই বাঙালি সাহেব বাঙালি মেমদের অবাধ গতি! হ্যাঁ ভাঙা ভাঙা বাংলাটা একটু জানতে হয় শুধু বড়ো বড়ো জননেতাদের। ইভিএমের বোতামে পঞ্চবার্ষিকী রাজত্ব লাভের জরুরী ঠেকায়; মেঠো বক্তৃতার ধারেই শুধু বাংলাটা দরকারি যা এখনো। ঐ কয়টি দিন একটু বেশি এ বি সি ডি ঝারতে গেলেই নক্ষত্রপতনের সম্ভাবনা ষোলাআনা এখনো।

তাছাড়া যে যত বড়ো বাঙালি সাহেব, যে যত বেশি বাঙালি মেম, তার জন্যেই বীরভোগ্যা বাংলা আজ। ঘরে ঘরে বাঙালি অভিভাবক অভিভাবিকাদের থেকে এই সারসত্যটি আর কেউ বেশি বোঝে নি আজও। তাই কাকু কাকীমা জেঠু জেঠিমাদের মেঠো যুগ পেড়িয়ে বাঙালির সন্তানরা আজ আঙ্কেল আন্টির ইউনিভার্সাল জেটযুগে ঢুকে পড়েছে। কবি বেঁচে থাকলে স্বচক্ষে দেখে যেতে পারলে হয়তো লিখে যেতেন রেখেছো সাহেব করে মানুষ করো নি। কিন্তু কবির সেই বাণী আমরাই বা মেনে নিতাম নাকি? কবি বললেই সব অম্লান বদনে মেনে নিতে হবে না কি? কবিই তো বলেছিলেন মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ। সেকথায় কোন বাঙালি কান দিয়েছে? দিলে মীরজাফরের এত বড়ো অবদান ব্যর্থ হয় যেত না? আমরা কে না বুঝি, ভাগ্গিস সাহেব মেম হতে পারা গেছে, নয়তো গেঁয়ো ভুত হয়েই না দিন কাটাতে হতো মাটে ঘাটে। চাষাভুষোদের মতো। ওদেরই সাথে।

শ্রীশুভ্র

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৪২

লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস বলেছেন: মীর জাফর ষড়যন্ত্র না করলে আজ আমাদের ইংরেজি শিখা লাগতো না। ইংরেজ, আমেরিকানরাই বাংলা শিখত।

২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৫৮

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: স্যাটায়ারটা জমেনি। কারণ, ইংরেজি না শিখে বর্তমানে টিকে থাকা কঠিন। আমরা চীন, জাপান, রাশিয়া নই। ইংরেজি শেখা মানেই বাংলা ভুলে যাওয়া নয়...

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৯

শ্রীশুভ্র বলেছেন: একদম ঠিক, আমরা গোলাম তো। প্রভুর ভাষা না শিখতে পারলে ভিক্ষে করবো কি করে?

৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:০২

সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: কিছু কিছু সময় খারাপটাও ভালো হয়ে যায়। অাবার ভালোটা খারাপ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.