![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
** ১৯৫৮ ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় ১৭ বছর বয়সী পেলে ১৯৬২ সালের বিশ্বকাপে দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিয়ে ব্রাজিলকে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন। ১৯৬৬ সালে পর্তুগালের সাথে এক ম্যাচে প্রতিপক্ষের ট্যাকেলে গুরুতর আহত হন। তখনই সবাই বলেছিল পেলের ক্যারিয়ার শেষ। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ১৯৭০ বিশ্বকাপে খেলে ব্রাজিলকে আরও একটি শিরোপা এনে দেন।
** আমেরিকার সাবেক রাগবি খেলোয়াড় কার্সন পালমার একবার একসাথে তিনটি মর্মান্তিক ইঞ্জুরিতে পড়েন। ইঞ্জুরি এতোটাই ভয়ানক ছিলো যে সবার ধারণা ছিল এটি পালমারের "ক্যারিয়ার এন্ডিং" ইঞ্জুরি। কিন্তু, সবার ভবিষ্যৎবাণীকে মিথ্যা করে দিয়ে হাঁটুর অপারেশনের পর পরের সেশনে কামব্যাক করেন এবং সেখানে তার কিউবি রেটিং ছিলো ৯৩.৯।
** ৬ বার এন বি এ চ্যাম্পিয়ন, পাঁচবার "মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার" এবং দুইবার অলেম্পিকের গোল্ড মেডেলিস্ট ক্যারিয়ারে অনেক ধাক্কা খেয়েছেন। সেই সাথে ইঞ্জুরি। ক্যারিয়ারে অবসর নিয়েছিলেন তিনবার। প্রথমবারের অবসর কাটিয়ে এন বি এ তে ১৯৯৫ সালে ফিরেন। সেবারের এন বি এ তে ভালোই উজ্জ্বল ছিলেন জর্ডান। প্রতিবারের কামব্যাকেই তার মুখে বিখ্যাত উক্তিটি শোনা যেত, "আই এম ব্যাক। "
** বিখ্যাত বেসবল খেলোয়াড় জিম মরিস আমেচার বেসবল ড্রাফট থেকে সুযোগ পেয়েছিলেন। ইঞ্জুরি বাধা হয়ে দাড়ায়। সেই ইঞ্জুরি নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়। এই ইঞ্জুরি সারাতে হাতে অনেক সুক্ষ্ম অপারেশন করাতে হয় জিমকে। সেই অপারেশনের দরুন বেসবলে ক্যারিয়ার শুরুর আগেই শেষ হয়ে যায় মরিসের। স্কুল বেসবল কোচ হিসেবে বেশ কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। এরপর দশ বছর পরে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝেও অবশেষে ৩৫ বছর বয়সে দলে সুযোগ পান।
এছাড়া, ইঞ্জুরি থেকে ফিরে এসে উজ্জ্বল হয়েছিলেন আরেক বেসবলার টমি জন।
** রজার ফেদেরার, সুইজারল্যান্ডের এই টেনিস বরপুত্র ২০১৭ সালের উইম্বলডনের আগে সবাইকে অবাক করে ছয় মাসের জন্য টেনিস থেকে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যান। লক্ষ্য ছিল, নিজের মন ও শরীরকে বিশ্রাম দিয়ে ফের পুরনো উদ্যমে কোর্টে ফেরো। অনেকের মত ৩৫ বছর বয়সী ফেদেরারও সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল না কিনা এ নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। ‘যদি ব্যাকফায়ার করে?,’ এই চিন্তা টেনিস গ্রেট ফেদেরারকেও ভাবিয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর উইম্বলডনে ছুটি কাটিয়ে সেন্টার কোর্টে ফেরা নতুন এক ফেদেরারকে দেখতে পায় পুরো বিশ্ব। ৩৫ বছর বয়সে এসে ক্রোয়েশিয়ার মারিন চিলিচকে হারিয়ে রেকর্ড ৮ম শিরোপা জিতে নেন এই সুইস টেনিস তারকা।
শেষবার উইম্বলডন জিতেছিলেন সেই ২০১২ সালে। তারপর দুনিয়ে কাঁপিয়ে জিতলেন ২০১৭ উইম্বলডন। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় এসে সাফল্যের চূড়ায় থাকা ফেদেরার বছরের শুরুতে নেয়া ছয় মাসের ছুটির গুরুত্ব টের পেয়েছেন
আরেক টেনিস তারকা আন্দ্রে অগাসির কথাও বলা যায়। ১৯৯৫ সালের এক নম্বর টেনিস খেলোয়াড় আন্দ্রে অগাসি ইঞ্জুরি এবং খারাপ পারফরমেন্সের দরুন ডিপ্রেশনে ছিলেন। পরবর্তীতে অবসরে গিয়ে মানসিক ভাবে নিজেকে শক্ত করে আরো ধারালো ভাবে ফিরে আসেন। এক নম্বর জায়গাটি পুনরুদ্ধার না করতে পারলেও অগাসি বিশ্বের প্রবীণতম দুই নম্বর র্্যাংকড খেলোয়াড়।
** সাড়ে তিন বছর ক্যারিয়ারে মুটামুটি ভালো একটা সময়। ক্যারিয়ারের এই দীর্ঘ বিরতি যে কারও ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলবে। কিন্তু, তিনি যে মুহাম্মদ আলি। ইউ এস মিলিটারি কতৃক ড্রাফটড হয়ে ভিয়েতনামে খেলতে যাওয়ার পর সাড়ে তিন বছর নিষিদ্ধ হোন। ১৯৭০ সালে রিং এ ফেরার পর জো ফ্রেজার এবং জর্জ ফেরামেনের কাছে হেরে গেলেও একই বছর রি ম্যাচে দুইজনকেই পরাজিত করেন। পরে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত খেলে ক্যারিয়ারকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন।
আরেক বক্সার জেমস ব্র্যাডক। ক্যারিয়ারের শুরুতে সম্ভাবনা জাগালেও একটা সময় পারফরমেন্স খারাপ হতে থাকে। ক্যারিয়ারের অধঃপতন নিয়ে ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকার পর হঠাৎ করেই ক্যারিয়ারে ব্রেক থ্র আনেন। একজন বক্সিং প্রমোটার ফাইটার খুজছিলেন ফাইট বাচানোর জন্য। সেখানে অংশ নিয়ে ফাইট জিতে এরপরে ব্র্যাডককে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। এরপর আরেক প্রমোটার তৎকালীন হিংস্র হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন ম্যাক্স বেয়ারের বিপক্ষে খেলার জন্য হায়ার করেন। ১৫ রাউন্ড পর ম্যাক্স বেয়ারাকে হারিয়ে হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হয়ে বক্সিং ইতিহাসের সবচেয়ে করুন ইতিহাস রচনা করেন ব্র্যাডক।
কামব্যাকের পর ব্যাকফেয়ারের ভয় সাধারণত ভক্তদের মনে থাকে। সাকিবকে নিয়ে ভক্তসমাজে এই ভয়টা ছাড়াও আরেকটা ভয় আছে সেটা হলো এই খন্ডকালীন অবসর শেষে না আবার পরিপূর্ণ অবসর হয়ে যায়।
আর যদি প্রশ্ন করা হয়, সাকিবের কি আসলেই বিশ্রাম প্রয়োজন?
সাকিবের সমসাময়িক অলরাউন্ডারদের মধ্যে মইন আলী, বেন স্টোকস, ম্যাথিউসের ওয়ার্কলোডের পরিমাণ সাকিবের চেয়ে ঢের বেশি। তাছাড়া সমসাময়িক সকল প্লেয়ারদের মধ্যে ভিরাট কোহলি, জো রুট, ডিভিলিয়ার্স, ডেভিড ওয়ার্নার দের ম্যাচ সংখ্যা সাকিবের চেয়ে অনেক বেশি! এক পরিসংখানে দেখা যায় গত দুই বছরে ভিরাট কোহলির ম্যাচের সংখ্যা সাকিবের চাইতে প্রায় ২০ ম্যাচ বেশি, জো রুটের প্রায় ১৩ ম্যাচ বেশি, বেন স্টোকসের প্রায় ৭ ম্যাচ বেশি যার মধ্যে আবার তুলনামূলকভাবে তাদের টেস্ট ম্যাচের সংখ্যাই বেশি যেখানে সাকিবের ওডিয়াই আর টি টুয়েন্টির সংখ্যাই বেশি।
প্রশ্ন হতে পারে, যেসব প্লেয়ারের নাম উল্লেখ করা হলো সাকিবের কি তাদের চাইতে ওয়ার্কলোড বেশি?
প্রায় এগারো বছর ধরেই সাকিব মিডেল অর্ডারের ব্যাকবোন এবং প্রধান স্ট্রাইক বোলার হিসেবে কাজ করেছেন। বেন স্টোক, মুইন আলি, জো রুট, কোহলী এদের কয়জন একসাথে দুইটা ডিপার্টমেন্ট দায়িত্ব নিয়ে সামলিয়েছেন? দলের ব্যার্থতার দায় নিয়েছেন মাথা পেতে। হুট করে দেয়া ক্যাপ্টেন্সির চাপ সামলে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ১২ মাস, ১৪ মাসের বিরতি দিয়ে টেস্ট খেলেছে। অন্য দেশের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশ এই ১০-১১ বছরে কয়টা টেস্ট আর ওডিয়াই খেলেছে।। এত সীমিত ম্যাচ খেলেই যদি ক্লান্ত হয়ে যায় তবে আমরা আরও বেশি ম্যাচ খেলতে চাই কি হিসাবে? প্রশ্ন আসতে পারে।অন্য দেশের বহু প্লেয়ারের উদাহরণ আছে সব ফরম্যাটেই দাপটের সাথে খেলে বেড়াচ্ছে ক্লান্তি ছাড়া এবং অবশ্যই সাকিবের চাইতে অনেক বেশি ম্যাচ খেলেই।
এবার আসি মূল কথায়। ম্যাচ খেলা মানেই স্ট্রেস নয়। ম্যাচ না খেলা মানে ঘরে বসে থাকা নয়। প্র্যাকটিস চলেই। সেই সাথে চলে ক্যাম্পিং। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির কয়েক মাস আগে থেকেই ক্যাম্প করছি। প্রতিটি সিরিজের আগেই চলে ক্যাম্পিং এবং এখানেও অবভিয়াসলি সাকিব অলরাউন্ডার। এটাও একটা লোড।
আর, যদি আসি জ্যাক ক্যালিসের প্রসঙ্গে।
অলরাউন্ডার মানেই জেনুইন অলরাউন্ডার না। জেনুইন অলরাউন্ডার ক্রিকেট বিশ্বে খুবই বিরল। ক্যালিস এবং স্যামি দুইজনই অলরাউন্ডার। জেনে রাখা ভালো ক্যালিস ব্যাটিং অলরাউন্ডার। ক্যালিসের বোলিং ছিলো বোনাস। বাট সাকিবের বোলিং দলের জন্য এসেনশিয়াল। সাকিব শুধুমাত্র বোলিং দিয়েও দলে চান্স পেতে পারে। ক্যালিসের ক্ষেত্রে সেটাও সম্ভব নয়। আর ক্যালিসের উইকেট ৫৭৭টা। সাকিবের ৪৮০টা। সাকিব যে ক্যালিসকে ছাড়াবে সেটা একপ্রকার নিশ্চিত।
পরিশেষে একটা কথাই বলার থাকে। সব মানুষেরই অবসর নেওয়ার অধিকার আছে। ওইটা আলাদা কথা এইটা ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের সময়ও নেওয়া যেতো বাট সাকিবের শারিরীক অবস্থা সাকিব ভালো বোঝে। আর, যদি ফ্র্যাঞ্চাইজ টুর্নামেন্টের দোহাই দেয়া হয়, তাহলে এটাতেও দোষের কিছু নাই। কারণ, ক্রিকেট নিছক একটা খেলাধূলা।একজন খেলোয়াড় জাতীয় দলের হয়ে খেলবে নাকি অন্য কোনো দলের, সেটা তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। সে যেখানেই খেলুক, তাকে সৎভাবে খেলে যেতে হবে।
©somewhere in net ltd.