নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্টেনটোরিয়ান

আমি রাজনীতি করি না। দেশচিন্তা করি।

স্টেনটোরিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

পঁচাত্তর টাকার গল্প

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:০৮

ফুটপাত ধরে হাঁটছে ছবিরউদ্দিন। প্রচন্ড রোদে মাথা মনে হয় ফেটে যাবার দশা। পিপাসাও লেগেছে খুব। পকেটে ৭৫ টাকা। ভাগ্য পরিবর্তন করতে ঢাকা এসেছে সে।
"পানি লাগবে, পানি!" ডাক শুনে তাকিয়ে দেখে ১৫/১৬ বছরের ছেলেটি পানির বোতলগুলো মাথায় করে এগাড়ী সে গাড়ী করে বিক্রী করছে। "কত টাকা?" ২০। না দশ দেই? দশ টাকায় তো কেনা, লাভ না থাকলে খামু কি! আচ্ছা পনের নেন। কই থেকে কেন? ওইযে, ওই খানে দোকান আছে। পানির বোতল হাতে ছবির উদ্দিন হাঁটতে থাকে। পকেটের ৬০ টাকা আর কতক্ষণ চলবে!
ভাই পানি কত দাম? ১০ টাকা। ৫ বোতল ৪০ টাকা দেই? একদিন ৪৫। ৫ বোতল পানি হাতে ছবিরউদ্দিন এগিয়ে যায় সিগনালের দিকে। দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাড়ীর মধ্যে থেকে ডাক আসে " এই পানিওয়ালা, এক বোতল পানি দাও।" কত? ২০ টাকা। শুরু হয়ে গেল ছবিরউদ্দিনের পানির ব্যবসা।
শুরুর দিকে ২০-৩০ বোতল বিক্রী হত। দিনে ২২০-৩৩০ টাকা লাভ। আস্তে আস্তে বেড়ে ৫০-৭০ বোতল, আর লাভ ৭৭০ টাকা। এখন ছবির পকেটে কত টাকা আছে চিন্তা করে না। ফুটপাতের ৫ টাকার ভাত, ২ টাকার ডাল, ৩ টাকার সব্জি দিয়ে আর ভাত খেতে হয় না। ছবির এখন হোটেলে বসে মুরগী ভূনা দিয়ে ভাত খায়। পাকা বাড়ীতে মেস করে থাকে। মাস শেষে বেশ ভাল টাকা জমায়। সেজন্য একটা একাউন্ট ও খুলেছে ব্যাংকে। সকালে কাজে যাবার সময় পাশের মহল্লার জরিনা মুখ টিপে হাসে ছবিরকে দেখে।
ছবির এখন নিজে পানি বেচে না। ১০ টা বেতনভুক্ত ছেলে তার জন্য কাজ করে। পানির সাথে এখন কোকাকোলাও বিক্রী করে তার দল। সবার বেতন দেয়ার পরও দিনে তার ১২০০-১৪০০ টাকা থাকে। জরিনা আর ১ বছরের হাবিলকে নিয়ে তার সুখের সংসার। পরীরগলিতে ১৮০০ টাকায় ১ কক্ষের বাড়ী ভাড়া নিয়ে থাকে তারা।
ছবির এখন দোতলা বাড়ীর মালিক। বাগানে ১০ বছরের হাবিল দৌড়াদৌড়ি করে। জরিনা কাজের মেয়েটাকে ধমক দিয়ে নিচতলার ভাবীর সাথে গল্প করতে যায়। ছবির চা খেয়ে বাড়ীর পেছনের দিকে ঝোপের পাশে নবনির্মিত ১রুমের পানির কারখানায় যায়। ১ বছর হল কারখানাটি দিয়েছে ছবির। আগের নদীর পাশেই ছিল ফ্যাক্টরী। এলাকার লোকজনের কুনজরে পড়ে এখন বাসার পেছনেই স্থাপন করেছে। পানি খেয়ে ফেলে দেয়া বোতলগুলো কুড়িয়ে আনে টোকাইরা। দুইটা বোতল ১ টাকায় কেনে ছবির। নদীর পানি ছেঁকে বোতলে ভরাতে আরও দুই টাকা খরচ। টোকাইদের দিতে হয় ২ টাকা প্রতি বোতল বিক্রীর জন্য। প্রতি বোতলে লাভ পাক্কা ১৫ টাকা লাভ। আর সবচেয়ে লাভ কোক নকল করে। ১৫ টাকার ক্যামিকেল আর ৫ টাকার গ্যাস ভরলেই ১০ লিটার কোক বানানো যায়। ৫ টা ২ লিটারের বোতল ২০ টাকায় কেনা হয়। ১০ টাকা দোকানে পৌঁছানোর খরচ, সাকুল্যে ৫০ টাকা খরচ, বিক্রী হয় ৫০০ টাকায়। ৪৫০ টাকা লাভ মাত্র কয়েক মিনিটে। ছবিরউদ্দিন এখন ছবির মহাজন।
হাবিলের বয়স ১৫ হবে কাল। বেশ ঘটা করে পালিত হবে। কিন্তু সকাল থেকেই হাবিল অসুস্থ বোধ করছে। হাবিলকে নিয়ে ছবির গেল হাসপাতালে।
বস্তির ঝুপড়ি ঘরের চালের ফুটা দিয়ে পানি পড়ছে। বালতিতে সেই পানি জমা করছে জরিনা। হাবিলকে কবর দিয়ে কিছুক্ষন হল ফিরেছে ছবির। ১ বছর কিডনীর রোগে ভোগার পর গতকাল হাবিল মারা গেছে। ছেলেটার কোক খাবার বড় শখ ছিল। ছবির পইপই করে বলে দিয়েছিল বড় দোকান থেকেই যেন কোক কিনে খায়। সেজন্য টাকাও দিত। কিন্তু কারখানার বজ্জাত ছোকরাটাকে ১০ টাকা করে দিয়ে প্রতিদিন ১ লিটার ছবিরের তৈরী কোক নিত হাবলু। নিজের তৈরী বিষেই ছেলের কিডনী নষ্ট করেছে ছবির। চিকিৎসার খরচ যোগাতে বাড়ী বিক্রী করতে হল। নকল পানি বিক্রীর দায়ে পুলিশ ধরল। বাড়ী বিক্রীর অর্ধেক টাকা ঘুষ দিয়ে ছাড়া পেল, কিন্তু বাকী অর্ধেক দিয়ে ছেলের চিকিৎসা করানো গেল না। বকেয়া বিল দিতেই সব শেষ। কসাই ডাক্তারটাকে অনেক অনুরোধের পর বিনা পয়সায় অপারেশনের জন্য রাজী করানো গেলেওঅপারেশনের আগের দিন হাবলু সবাইকে ছেড়ে চলে গেল।
ঝুপড়ীর ভাড়া ৭০০ টাকা নিতে এসেছে। পকেট থেকে শেষ টাকাটা বের করল ছবিরউদ্দিন। ভাড়া মিটিয়ে ৭৫ টাকা পকেটে রাখতে গিয়ে থমকে গেল। ৭৫ টাকা!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:২৭

সুমন কর বলেছেন: ছোট গল্প হিসেবে ভালো লেগেছে। কর্মই ফল।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৩২

স্টেনটোরিয়ান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৪২

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: লেখকের উদ্দেশ্য সফল। কর্মফলই এই গল্পের উপজীব্য। লেখক কর্মফলকে ভালভাবেই হাইলাইট করতে পেরেছেন ।

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৩৩

স্টেনটোরিয়ান বলেছেন: অনুপ্রেরণার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.