![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন শিক্ষক...শিক্ষকতার পাশাপাশি পড়তে লিখতে ভালোবাসি..
আমরাই পৃথিবীর একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য লড়াই করেছি, প্রাণ দিয়েছি। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন আমাদের সকল প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। আমাদেরেক মুক্তির পথ প্রদর্শন করেছে। তাই মাতৃভাষা বাংলা আমাদের কাছে এক অন্যতম আবেগীয় সত্ত্বার নাম, এক অন্যরকম ভালোবাসার আশ্রয়। আমরা গর্ব করে বলি আমরা বাঙালি, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, এই মাতৃভাষার সাথে জড়িয়ে আছে আবেগ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, গর্ব। কিন্তু আমাদের অতি গর্বের ধন বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ কতটুকু!!!!! আমাদের দেশে এখন নানামুখি শিক্ষাব্যবস্থা। উচ্চবিত্ত এবং উচ্চমধ্যবিত্তদের ছেলে-মেয়েরা এখন আর বাংলা মাধ্যমে লেখাপড়া করে না। তারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা করে। ইংরেজি মাধ্যমের দাপট এখন ঢাকা শহর থেকে ছড়িয়ে পড়েছে জেলা শহর এমন কি উপজেলা পর্যন্ত। উঠতি মধ্যবিত্তরা এখন ছেলে-মেয়েদের বাংলা মাধ্যমে পড়ালেও তাদের মন আনচান করে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর জন্য। অপরদিকেে একেবারে নিম্নবিত্তদের অধিকাংশের ছেলে-মেয়েদের ঠাঁই হয় মাদ্রাসায়। তারা সেখানে আরবীতেই বেশিরভাগ অংশ পড়ে। এই দুই অংশের মধ্যবর্তী অংশ বাংলা মাধ্যমে লেখাপড়া করে। এটা গেল একটা দিক। এবার আসি উচ্চ শিক্ষা প্রসঙ্গে। উচ্চ শিক্ষায় আগে থেকে ডাক্তার এবং ইঞ্জিনিয়ার এই দুই জায়গায় ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হতো। এখন মোটামুটি সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হয়ে গেছে এবং সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হওয়ার সাথে সাথে ইংরেজি মাধ্যমও চালু হয়ে গেছে। এরপর দেখা যাবে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র বাংলা বিষয়ে অনার্স পড়বে তারাই শুধু বাংলা পড়বে এবং বাংলা চর্চা করবে। এভাবে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলা ভাষা বিতাড়িত হয়ে শুধুমাত্র মানুষের মুখের ভাষায় পরিণত হবে। বাংলা ভাষা হয়ে পড়বে নিজভূমেই পরবাসী। পশ্চিমবঙ্গে ইংরেজি ও হিন্দীর দাপটে বাংলা ভাষা নিঃশেষ হওয়ার পথে। আর তাই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে ঢাকা হবে বাংলা ভাষার প্রাণ কেন্দ্র।’ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই আশাবাদও আজকে দুরাশায় পরিণত হওয়ার পথে। হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও ঢাকা শহরের অধিকাংশ বিলবোর্ড, হোর্ডিং ইংরেজিতে লেখা। একটা দেশ কত উন্নত সেটা বোঝা যায় তাদের ভাষার অবস্থান দেখে। যেমন আমরা সারা বিশ্বেই ইংরেজির দাপট দেখতে পাই কিন্তু ইংল্যান্ড বাদে ইউরোপের আর কোনো দেশে ইংরেজির দৃশ্যমান ব্যবহার নেই। ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি ইত্যাদি দেশ তাদের ভাষার মাধ্যমে জাত্যভিমানকে বজায় রেখেছে। আমাদের এশিয়ার দেশগুলি বিশেষ করে জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, চীন আজ অর্থনৈতিক ভাবে উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে কিন্তু সেসব দেশে তারা ইংরেজিকে ঢুকতে দেয়নি। তারা তাদের মতো করে তাদের নিজের ভাষায় জ্ঞান চর্চা করে। আর বিদেশী ভাষা যেটুকু দরকার সেটুকু তারা আত্মস্থ করছে এবং বিদেশীদের সাথে কাজ চালানোর জন্য প্রশিক্ষিত বাহিনী তৈরি করছে। তারা উন্নতি করছে কিন্তু নিজস্ব ঐতিহ্য আর স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিয়ে। আর আমরা উন্নতি করতে চাচ্ছি কিন্তু নিজেদের ঐতিহ্য আর স্বকীয়তাকে পদদলিত করে! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার ব্যাপারটিকে অস্বীকার করেন নি কিন্তু তিনি বলেছিলেন, ‘আগে মাতৃভাষার গাঁথুনিটা শক্ত হওয়া চাই, তারপর অন্যভাষা।’ কিন্তু আমরা উল্টো মাতৃভাষার গাঁথুনিটাকে অস্বীকার করেে ইংরেজি ভাষায় সৌধ নির্মান করতে চাচ্ছি। অনেকে বলে থাকেন, বাংলা ভাষায় ভালো বই নেই কিংবা অনুবাদ করলে সঠিক ভাবটি প্রকাশ করা যায়না একথা কতটুকু ঠিক কিনা জানি না, তবে অনুবাদ ঠিকমতো করতে পারলে সেটি যে হৃদয়ঙ্গম করা অনেক সহজ হয়ে ওঠে সেটি বুঝেছি রবি ঠাকুরের শেষের কবিতা পড়তে গিয়ে,
For we are bound where mariner has
not yet dare to go,
And we will risk the ship, ourselves and all.
আমরা যাব যেখানে কোনো
যায় নি নেয়ে সাহস করি,
ডুবি যদি তো ডুবি না কেন
ডুবুক সবই, ডুবুক তরী।
মাতৃভাষা যদি আমরা ঠিক ভাবে চর্চা না করি, আমাদের শিক্ষার বাহন না করি তাহলে ভবিষ্যতে একটা শেকড়বিহীন প্রজন্ম গড়ে উঠবে। তাই আজ সময় এসেছে, আমাদের মাতৃভাষাকে নিয়ে ভাববার, মাতৃভাষার ভবিষ্যতকে সুদৃঢ় করার। আমরা যদি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই তাহলে আমাদের মাতৃভাষাকে পদদলিত করে আমরা সেই অবস্থানে যেতে পারব না বরং আমাদের মাতৃভাষাকে ঠিকভাবে লালন-পালন করলেই বরং সেখানে সহজে পৌঁছাতে পারব । আবারও মুনীর চৌধুরীর সুরে সুর মিলিয়ে বলি, “ ভাষার স্বভাবই হলো অস্পষ্ট থাকা, অন্তরাল সৃষ্টি করা, হরবোলার কৌতুকে মেতে ওঠা। ভাষা খেলা করে জিবের ডোগায়, ঘোষিত হয় গলার মধ্য দিয়ে, প্রাণ লাভ করে ফুসফুস থেকে, এ ও বাইরের সত্য। আসলে ওর জন্ম বুকের মধ্যে, উৎস মানুষের মন। মন কি কখনো নিয়মের বশ হতে চায়? একই ভাষা একজনের কাছে মধু, অন্যজনের মুখে বিষ। সকাল বেলায় কলহের হাতিয়ার, দুপুরে কর্মের বাহন, অপরাহ্নে শ্রান্তির, সনধ্যায় স্বপ্নের।
আমরা ভাষার জন্য লড়াই করেছি, প্রাণ দিয়েছি, আমরা গর্ব করে বলি আমরা বাঙালি, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, এই মাতৃভাষার সাথে জড়িয়ে আছে আবেগ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, গর্ব। কিন্তু আমাদের অতি গর্বের ধন বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ কতটুকু!!!!! আমাদের দেশে এখন নানামুখি শিক্ষাব্যবস্থা। উচ্চবিত্ত এবং উচ্চমধ্যবিত্তদের ছেলে-মেয়েরা এখন আর বাংলা মাধ্যমে লেখাপড়া করে না। তারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা করে। ইংরেজি মাধ্যমের দাপট এখন ঢাকা শহর থেকে ছড়িয়ে পড়েছে জেলা শহর এমন কি উপজেলা পর্যন্ত। উঠতি মধ্যবিত্তরা এখন ছেলে-মেয়েদের বাংলা মাধ্যমে পড়ালেও তাদের মন আনচান করে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর জন্য। অপরদিকেে একেবারে নিম্নবিত্তদের অধিকাংশের ছেলে-মেয়েদের ঠাঁই হয় মাদ্রাসায়। তারা সেখানে আরবীতেই বেশিরভাগ অংশ পড়ে। এই দুই অংশের মধ্যবর্তী অংশ বাংলা মাধ্যমে লেখাপড়া করে। এটা গেল একটা দিক। এবার আসি উচ্চ শিক্ষা প্রসঙ্গে। উচ্চ শিক্ষায় আগে থেকে ডাক্তার এবং ইঞ্জিনিয়ার এই দুই জায়গায় ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হতো। এখন মোটামুটি সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হয়ে গেছে এবং সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হওয়ার সাথে সাথে ইংরেজি মাধ্যমও চালু হয়ে গেছে। এরপর দেখা যাবে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র বাংলা বিষয়ে অনার্স পড়বে তারাই শুধু বাংলা পড়বে এবং বাংলা চর্চা করবে। এভাবে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলা ভাষা বিতাড়িত হয়ে শুধুমাত্র মানুষের মুখের ভাষায় পরিণত হবে। বাংলা ভাষা হয়ে পড়বে নিজভূমেই পরবাসী। পশ্চিমবঙ্গে ইংরেজি ও হিন্দীর দাপটে বাংলা ভাষা নিঃশেষ হওয়ার পথে। আর তাই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে ঢাকা হবে বাংলা ভাষার প্রাণ কেন্দ্র।’ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই আশাবাদও আজকে দুরাশায় পরিণত হওয়ার পথে। হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও ঢাকা শহরের অধিকাংশ বিলবোর্ড, হোর্ডিং ইংরেজিতে লেখা। একটা দেশ কত উন্নত সেটা বোঝা যায় তাদের ভাষার অবস্থান দেখে। যেমন আমরা সারা বিশ্বেই ইংরেজির দাপট দেখতে পাই কিন্তু ইংল্যান্ড বাদে ইউরোপের আর কোনো দেশে ইংরেজির দৃশ্যমান ব্যবহার নেই। ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি ইত্যাদি দেশ তাদের ভাষার মাধ্যমে জাত্যভিমানকে বজায় রেখেছে। আমাদের এশিয়ার দেশগুলি বিশেষ করে জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, চীন আজ অর্থনৈতিক ভাবে উন্নতির শিখরে অবস্থান করছে কিন্তু সেসব দেশে তারা ইংরেজিকে ঢুকতে দেয়নি। তারা তাদের মতো করে তাদের নিজের ভাষায় জ্ঞান চর্চা করে। আর বিদেশী ভাষা যেটুকু দরকার সেটুকু তারা আত্মস্থ করছে এবং বিদেশীদের সাথে কাজ চালানোর জন্য প্রশিক্ষিত বাহিনী তৈরি করছে। তারা উন্নতি করছে কিন্তু নিজস্ব ঐতিহ্য আর স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিয়ে। আর আমরা উন্নতি করতে চাচ্ছি কিন্তু নিজেদের ঐতিহ্য আর স্বকীয়তাকে পদদলিত করে! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার ব্যাপারটিকে অস্বীকার করেন নি কিন্তু তিনি বলেছিলেন, ‘আগে মাতৃভাষার গাঁথুনিটা শক্ত হওয়া চাই, তারপর অন্যভাষা।’ কিন্তু আমরা উল্টো মাতৃভাষার গাঁথুনিটাকে অস্বীকার করেে ইংরেজি ভাষায় সৌধ নির্মান করতে চাচ্ছি। অনেকে বলে থাকেন, বাংলা ভাষায় ভালো বই নেই কিংবা অনুবাদ করলে সঠিক ভাবটি প্রকাশ করা যায়না একথা কতটুকু ঠিক কিনা জানি না, তবে অনুবাদ ঠিকমতো করতে পারলে সেটি যে হৃদয়ঙ্গম করা অনেক সহজ হয়ে ওঠে সেটি বুঝেছি রবি ঠাকুরের শেষের কবিতা পড়তে গিয়ে,
For we are bound where mariner has
not yet dare to go,
And we will risk the ship, ourselves and all.
আমরা যাব যেখানে কোনো
যায় নি নেয়ে সাহস করি,
ডুবি যদি তো ডুবি না কেন
ডুবুক সবই, ডুবুক তরী।
মাতৃভাষা যদি আমরা ঠিক ভাবে চর্চা না করি, আমাদের শিক্ষার বাহন না করি তাহলে ভবিষ্যতে একটা শেকড়বিহীন প্রজন্ম গড়ে উঠবে। তাই আজ সময় এসেছে, আমাদের মাতৃভাষাকে নিয়ে ভাববার, মাতৃভাষার ভবিষ্যতকে সুদৃঢ় করার। আমরা যদি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই তাহলে আমাদের মাতৃভাষাকে পদদলিত করে আমরা সেই অবস্থানে যেতে পারব না বরং আমাদের মাতৃভাষাকে ঠিকভাবে লালন-পালন করলেই বরং সেখানে সহজে পৌঁছাতে পারব । আবারও মুনীর চৌধুরীর সুরে সুর মিলিয়ে বলি, “ ভাষার স্বভাবই হলো অস্পষ্ট থাকা, অন্তরাল সৃষ্টি করা, হরবোলার কৌতুকে মেতে ওঠা। ভাষা খেলা করে জিবের ডোগায়, ঘোষিত হয় গলার মধ্য দিয়ে, প্রাণ লাভ করে ফুসফুস থেকে, এ ও বাইরের সত্য। আসলে ওর জন্ম বুকের মধ্যে, উৎস মানুষের মন। মন কি কখনো নিয়মের বশ হতে চায়? একই ভাষা একজনের কাছে মধু, অন্যজনের মুখে বিষ। সকাল বেলায় কলহের হাতিয়ার, দুপুরে কর্মের বাহন, অপরাহ্নে শ্রান্তির, সনধ্যায় স্বপ্নের।
©somewhere in net ltd.