নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুদীপ মন্ডল

সুদীপ মন্ডল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার দেখা মালদার গৌড়

২০ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৭

মালদার গৌড়
কয় দিন আগে ঘুরে এলাম
গৌড় বাংলার এককালীন রাজধানী এবং অধুনা ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি নগর যার অবস্থান বর্তমান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে। এটি লক্ষনাবতী নামেও পরিচিত। প্রাচীন এই দুর্গনগরীর অধিকাংশ পড়েছে বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদা জেলায় এবং কিছু অংশ পড়েছে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। শহরটির অবস্থান ছিল গঙ্গানদীর পূর্ব পাড়ে, রাজমহল থেকে ৪০ কি:মি: ভাটিতে এবং মালদার ১২ কি:মি: দক্ষিণে। তবে গঙ্গানদীর বর্তমান প্রবাহ গৌড়ের ধ্বংসাবশেষ থেকে অনেক দূরে।

ইতিহাস
সেন শাসনামলে লক্ষনাবতী বা লখনাউতি উন্নতি লাভ করে। অনেকে ধারণা করেন লক্ষনাবতী নগরের নামকরণ করা হয়েছে সেন রাজা লক্ষন সেন - এর নামানুসারে। সেন সাম্রাজ্যের গোড়াপত্ত্বনের আগে গৌড় অঞ্চলটি পাল সাম্রাজ্যের অধীনের ছিল এবং সম্ভবতঃ রাজা শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ ছিল এর প্রশাসনিক কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গের মালদহ শহর থেকে দশ কিলোমিটার দক্ষিনে অবস্থিত প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড় ও পান্ডুয়া (প্রাচীন নাম গৌড়নগর ও পান্ডুনগর )। অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে বৌদ্ধ যুগে পাল বংশের রাজাদের সময় থেকে বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। ১১৯৮ সালে মুসলমান শাসকেরা গৌড় অধিকার করবার পরেও গৌড়েই বাংলার রাজধানী থেকে যায়। ১৩৫০ থেকে রাজধানী কিছুদিনের জন্য পান্ডুয়ায় স্থানান্তরিত হলেও ১৪৫৩ সালে আবার রাজধানী ফিরে আসে গৌড়ে, এবং গৌড়ের নামকরন হয় জান্নাতাবাদ।

বার মিনার

মালদার সরকারী সিম্বল ফিরুজ মিনার
ফিরুজ মিনার বাংলায় এ পর্যন্ত টিকে থাকা মিনারগুলির মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত মিনার। শিলালিপির সাক্ষ্য অনুযায়ী আবিসিনীয় দাস বংশের দ্বিতীয় শাসক সাইফুদ্দীন ফিরুজশাহ (১৪৮৮-৯০ খ্রি.) এটি নির্মাণ করেন। ছয় মিটার ব্যাসের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছাবিবশ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট ইট-নির্মিত মিনারটি গৌড় নগর-দুর্গের বাইরে অবস্থিত। সম্ভবত এটি একটি বড় ঢিবির উত্তর-পূর্ব প্রান্তের পূর্ব দিকে অবস্থিত মসজিদের সাথে সংযুক্ত ছিল। মিনারটি দিল্লির কুতুব মিনারের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। মাজানা বা আজান দেয়ার স্থান এবং একই সাথে বিজয় মিনার হিসেবে মিনারটি নির্মিত হয়েছিল। শহরের কেন্দ্রস্থলে মিনারটির অবস্থান হওয়ায় এ স্থানটিতে সর্বদা জনসমাগম হতো এবং মিনারটির চূড়া থেকে শহরের দৃশ্য সুন্দরভাবে উপভোগ করা যেত। প্রসঙ্গক্রমে এখানে উল্লেখ্য যে, মিনার মসজিদের অপরিহার্য অংশ বলে বিবেচিত নয় বা এ ধরনের এত উচ্চতার মিনার মুয়াজ্জিনের আজানের জন্য অত্যাবশ্যক ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, ইসলামের প্রাথমিক যুগ অতিক্রান্ত হওয়ার পর মাজানা হিসেবে নির্মিত মিনার অথবা এককভাবে নির্মিত মিনারগুলি দেশের এবং এর নির্মাতার গৌরব প্রকাশ করত। গৌড়ের ফিরুজ মিনারও ভারতে কিংবা ভারতের বাইরে বিশেষ করে ইরানে তার পূর্ববর্তীগুলির চেয়ে ভিন্নতর ছিল না।

দরজার নিম্নস্থ ফলকের নিচে মিনারের নিম্নাংশ এক সময় মর্মর পাথর দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা মাটির তৈরি ফলক দ্বারা পূর্ণ করা হয়েছে। এখন দর্শনার্থীরা যে পথ দিয়ে মিনারে প্রবেশ করে, নির্মাণ কালে সেখানে একটি শাল কাঠের দরজা ছিল। মিনারটি উচ্চতায় পাঁচ তলা বিশিষ্ট। নিচের দিক থেকে তিনটি তলায় বারোটি পার্শ্বদেশ রয়েছে। বাকি ঊর্ধ্বাংশ প্রস্তরনলের মাধ্যমে ক্রমে সরু হয়ে উপরে উঠে গিয়েছে। উপরের দিকের শেষ তলাটি, যার অস্তিত্ব বর্তমানে নেই, আদিতে ছিল একটি উন্মুক্ত প্যাভিলিয়ন এবং এ প্যাভিলিয়ন একটি গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। নিচের দিক থেকে মিনারটির বৃত্তাকার অংশে প্রস্তরনল যুক্ত করা হয়েছে এবং প্রতি তলার বারোটি পার্শ্বদেশের একটির সঙ্গে অন্যটিকে পৃথক করা হয়েছে অনুভূমিক পাথর দিয়ে। মিনারের ভেতরের দিকে সর্পিল সিঁড়ি উপরে উঠে গিয়েছে। সিঁড়িতে রয়েছে মোট তিয়াত্তরটি ধাপ। এ ধাপ পেরিয়ে মিনারের চূড়ায় উঠা যেত। কিন্তু বর্তমানে সমতল ছাদ দিয়ে চূড়াটি ঢেকে দেওয়া হয়েছে। প্রবেশ দরজার সঙ্গে সাদৃশ্য রক্ষা করে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে প্রতি তলার জানালা।

মিনারটির নিচের তলাটিতেই শুধু অলঙ্করণ করা হয়েছে। দেওয়ালগুলি খোপকৃত এবং এ খোপগুলি খাজ বিশিষ্ট খিলান নকশায় অলঙ্কৃত এবং এর সাথে রয়েছে ঝুলন্ত শিকল ও ঘন্টার অলঙ্করণ। পাথরের দড়ি নকশার বন্ধনীতে আছে জাফরি নকশা, পাতা, গোলাপ নকশা এবং দন্ত নকশা। প্রবেশ দরজার স্প্যান্ড্রিলে আছে তিনটি বড় আকারের গোলাপ এবং এ দরজার উপরে রয়েছে পাথর। উপরে দরজার ফ্রেমে দুটি অনুভূমিক দড়ি নকশার বন্ধনী আছে। এগুলির শীর্ষে রয়েছে সচ্ছিদ্র নকশা। দরজার নিচের পাথর খন্ডটি সম্ভবত কোন মন্দির থেকে আনা হয়েছিল। কারণ পাথরটিতে রয়েছে বন্যশূকর শিকারের ছবি।

নীল টালির কাজ করা বলে মিনারটিকে মাঝে-মধ্যে ফিরুজা মিনারও বলা হয়। এ মিনার ছোট পান্ডুয়ার মিনারের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। ছোট পান্ডুয়ার মিনারটিও একটি মাজানা ও বিজয় মিনার। এর তলাগুলিও ক্রমশ হ্রাস পেয়ে উপরে উঠেছে এবং টালি দ্বারা সজ্জিত। স্বতন্ত্রভাবে নির্মিত বলে অনেক সময়ই ধারণা করা হয় যে, ফিরুজ মিনারটি মাজানা ছিল না। কিন্তু মিনারের দক্ষিণ-পশ্চিম ঢিবির মধ্যে একটি দেয়াল পাওয়ার পর স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় যে, এখানে এক সময় একটি মসজিদ ছিল। মিনারের দরজাটি দক্ষিণ-পশ্চিমে থাকায় এবং মিনারটি ঢিবির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত হওয়ায় দরজাটিকে মসজিদের কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথ হিসেবে মনে করা হয়। মসজিদের যে অবস্থানে বায়ানা ও বিজয়মন্দরগড়ের মিনার ছিল, ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদটির ঠিক তেমন অবস্থানেই ফিরুজ মিনারটির অবস্থান ছিল। এ ছাড়াও, গোলাম হোসেন সলিমের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, সুলতান ফিরুজশাহ একটি মসজিদ, একটি বুরুজ ও একটি জলাধার নির্মাণ করেছিলেন। এ বর্ণনা থেকেও নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, ফিরুজ মিনার ছিল একটি মাজানা বা আজানের জন্য নির্মিত মিনার। এ বর্ণনাই ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদ, টিকে থাকা মিনার এবং এর পূর্ব প্রান্তের পুকুরটির যথার্থ বর্ণনা।

সম্ভবত পরবর্তী কোন এক সময় মিনারটির চূড়ায় কোন পীর (সুফি) ইতিকাফ বা ধ্যান করেছিলেন। এ জন্য এটি কখনও কখনও পিরাসা মিনার বলেও পরিচিত। স্থানীয় ভাবে এটি চিরাগ মিনার নামেও পরিচিত। নামাযের সময় নির্দেশ করার জন্য কিংবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে মাজানায় বাতি টানানো থাকত। সম্ভবত এ কারণে মিনারটির নামকরণ করা হয়েছে চিরাগ মিনার। [এ.বি.এম হোসাইন]
কিন্তু বর্তমানে কিছু বিহারি হিন্দু এই স্থাপত্যে পূজা করছে। এটা দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
ভারতের মাহদীপুর বিএসএফ চেক পোষ্টএর কাছে এই প্রাচীন গৌড় নগর দুর্গ অবস্থিত। চেক পোষ্ট রাস্তা পার হয়ে দুপাশে প্রাচীন গৌড় নগর দুর্গের স্তম্ভ ও দেওয়াল । আর বাংলাদেশ সীমান্ত পারে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বর্ডার দিয়ে আশা যায়।
বিঃ দ্রঃ- এই তথ্য গুলি উইকিপিডিয়া ও বিকাশপিডিয়া

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.