![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভুমিকম্পঃ ভূ মানে পৃথিবী, আর কম্পন মানে হচ্ছে কাঁপা। সোজাকথায় ভুমিকম্প মানে হচ্ছে পৃথিবীর কেপে উঠা। জন্ম হওয়ার পর, যবে থেকে একটু বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই ভুমিকম্প শব্দটা শুনলেই কেমন জানি আতকে যেতাম। পৃথিবীর কম্পন শুরু হওয়ার সাথে সাথেই মনের ভিতরে নিজের অজান্তেই কম্পন শুরু হয়ে যেত । কিন্তু কেনজানি বর্তমানে তীব্র ভুমিকম্প নিজে উপলব্ধি করতে পারলেও আতকে যাই না। মনের মধ্যে কোন ভয় কাজ করে না। হয়ত একটু বেশী বুঝে ফেলেছি, তাই এমনটা এখন আর হয় না। হুম, সেই কারণটাই যথেষ্ট আমার ভয় না হওয়ার, যেখানে ভুমিকম্প হওয়ার কারণ আমি জেনে গেছি। ছোটবেলায় ভুমিকম্প হলেই দেখতাম মা উলুধ্বনি দিত,,,পাশাপাশি গ্রামের অন্য সব মহিলারাও,,,, বাস্তভিটায় পানি ঢেলে দিত, ঠাকুরকে নাকি খুশি করতে, যেন মাথা ঠান্ডা করে পৃথিবীর কম্পন সৃষ্টি না করে, পাশের রুম থেকে দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে দাদু বলত " ভগবান , কি যে হবে দুনিয়ায় " পৃথিবী ধ্বংস হতে আর বেশিদিন লাগবে না মনে হয় । এই কথাগুলো ছোটবেলায় শুনে, নিজে ভয়ে শিহরীত হয়ে যেতাম। দিদিমা যখন ছিল, দিদিমার কাছে শুনেছি, হিন্দু ধর্ম শিক্ষা বইয়েও পড়েছি দশটি অবতারের কথা, তার মধ্যে একটি হচ্ছে বরাহ অবতার। এই অবতার নাকি, মুখ দিয়ে পৃথিবীকে তুলে রাখছে, যখন পৃথিবীতে পাপাচার, অনাচার, অধর্ম বেশি হয় তখন এই অবতার নাকি মুখ দিয়ে পৃথিবীটাকে নড়াচড়া করে, ফলে পৃথিবী কেপে উঠে। এগুলো আমার নিজের পরিবার থেকে শুনা কল্পকাহিনী । এখন কিছু পৌরাণিক কল্পকাহিনী শুনা যাক।
পৌরাণিক কাহিনীতে
ভূমিকম্প নিয়ে নানা ধরনের লোককাহিনী প্রচলিত রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে...
→গ্রিক জাতির ধারণা অনুযায়ী তাবৎ ভূমিকম্পের জন্য দায়ী ভূমিকম্পের দেবতা পোসাইডন। পোসাইডন যখন খারাপ মেজাজে থাকেন, তখন ভূমিতে ত্রিশূল দিয়ে প্রচণ্ড শক্তিতে আঘাত করেন। ফলে ভূমিকম্প হয়। মানুষের পাপকাজে রাগন্বিত হয়েও তিনি এরকম করেন বলে প্রচলিত আছে।
→পশ্চিম আফ্রিকান সংস্কৃতির কিছু মানুষ মনে করত, জীবন টিকে আছে এক দৈত্যের মাথার মধ্যে। গাছপালা সেই দৈত্যের চুল। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী হচ্ছে পরজীবীর মতো, যারা দৈত্যের ত্বকজুড়ে ঘুরে বেড়ায়। মাঝে মধ্যে দৈত্যটি মাথা এদিক-ওদিক ঘোরায়। তখনই ভূমিকম্প হয়।
→জাপানের লোকজন আবার ভূমিকম্পের সঙ্গে নামাজু নামের মাগুর জাতীয় মাছের সম্পর্ক খুঁজে পায়। তাদের মতে নামাজু কাদার মধ্যে বাস করে। কাশিমা নামের এক দেবতা জাপানকে ভূমিকম্প থেকে রক্ষা করার জন্য স্বর্গীয় শক্তির মাধ্যমে শক্ত পাথর দিয়ে নামাজুকে চেপে ধরে রাখেন। ফলে নামাজু নড়াচড়ার সুযোগ পায় না। যখন কাশিমা তার পাহারা সরিয়ে নেন তখনই নড়ে ওঠে নামাজু। ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
→ভারত উপমহাদেশে প্রচলিত আছে, পৃথিবী দাঁড়িয়ে আছে চারটি বিশালাকৃতির হাতির ওপর। তারা আবার দাড়িয়ে আছে একটি কচ্ছপের ওপর দাঁড়িয়ে। কচ্ছপটি দাড়িয়ে আছে একটি মহিষের দুই শিংয়ের ওপর। এদের মধ্যে যে কোনো একটি প্রাণীর গা চুলকালে তারা নড়াচড়া করে, ফলে পৃথিবীতে ভূমিকম্প হয়।
→নর্স পুরাণে আছে সৌন্দর্যের দেবতা বলডারকে হত্যা করার কারণে দেবতা লকিকে একটি বিষধর সাপ মাথার ওপর দিয়ে শিকল দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। সেই সাপ তার মাথায় ক্রমাগত বিষ ঢেলে চলেছে। তার স্ত্রী সেজিন তাকে বাচানোর জন্য একটি পাত্রে বিষ ভরে রাখছে। পাত্রটি পুর্ণ হয়ে গেলে সে যখন তা খালি করতে যায় তখন ক্রমাগত পড়তে থাকা বিষ থেকে নিজেকে বাচানোর জন্য লকি নাড়াচাড়া করে ফলে ভুমিকম্প হয়।
√√এখন ইসলাম ধর্মের কল্পকাহিনী শুনা যাকঃ আবু হুরাইরা (রা.) কতৃক বর্ণিত, আল্লাহর নবি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে কিন্তু তার খিয়ানত করা হবে (অর্থাৎ যার সম্পদ সে আর ফেরত পাবে না), জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসেবে, ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতীত বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে কিন্তু তার মায়ের সাথে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে নিবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দিবে, মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল (কথাবার্ত) হবে, জাতির সবচেয়ে দূর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসক রুপে আবির্ভূত হবে, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি জনগণের নেতা হবে, একজন মানুষ যে খারাপ কাজ করে খ্যাতি অর্জন করবে তাকে তার খারাপ কাজের ভয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হবে, বাদ্যযন্ত্র এবং নারী শিল্পীর ব্যাপক প্রচলন হয়ে যাবে, মদ পান করা হবে (বিভিন্ন নামে মদ ছড়িয়ে পড়বে), শেষ বংশের লোকজন তাদের পূর্ববর্তী মানুষগুলোকে অভিশাপ দিবে, এমন সময় আসবে যখন তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে তখন একটি ভূমিকম্প সেই ভূমিকে তলিয়ে দিবে (ধ্বংস স্তুপে পরিণত হবে বা পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঢুকে যাবে)। [তিরমিযি কতৃক বর্ণিত, হাদিস নং – ১৪৪৭] এই হাদিসের মাঝে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে যে আল্লাহ মহানের পক্ষ থেকে জমিনে কখন ভুমিকম্পের আজাব প্রদান করা হয় এবং কেন প্রদান করা হয়।
আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম (রহ.) বলেন, মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে উঠার অনুমতি দেন, যার ফলে তখন বড় ধরণের ভূমিকম্প অনুষ্ঠিত হয়। তখন এই ভূমিকম্প মানুষকে ভীত করে। তারা মহান আল্লাহর নিকট তাওবা করে, পাপ কর্ম ছেড়ে দেয়, আল্লাহর প্রতি ধাবিত হয় এবং তাদের কৃত পাপ কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মুনাজাত করে। আগেকার যুগে যখন ভূমিকম্প হত, তখন সঠিক পথে পরিচালিত সৎকর্মশীল লোকেরা বলত, ‘মহান আল্লাহ আমাদেরকে সতর্ক করেছেন।’
★★★সর্বশেষে আসি আধুনিক বিঙ্গান কি বলে ভুমিকম্প সম্পর্কে। বিঙ্গানের মতে ভুমিকম্পের কারণ নিচে তুলে ধরা হলঃ
সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভুমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে ।
★ভূপৃষ্ঠজনিতঃ ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানের আলোকে ভূপৃষ্ঠের নীচে একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় রয়েছে কঠিন ভূত্বক। ভূত্বকের নীচে প্রায় ১০০ কি.মি. পূরু একটি শীতল কঠিন পদার্থের স্তর রয়েছে। একে লিথোস্ফেয়ার (Lithosphere) বা কঠিন শিলাত্বক নামে অভিহিত করা হয়। আমাদের পৃথিবী নামের এই গ্রহের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, কঠিন শিলাত্বক (লিথোস্ফেয়ার)সহ এর ভূপৃষ্ঠ বেশ কিছু সংখ্যক শক্ত শিলাত্বকের প্লেট (Plate) এর মধ্যে খন্ড খন্ড অবস্থায় অবস্থান করছে। ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানের আলোকে এই প্লেটের চ্যুতি বা নড়া-চড়ার দরুণ ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
★ আগ্নেয়গিরিজনিতঃ
কখনো কখনো আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ও গলিত লাভা উৎক্ষিপ্ত হবার কারণে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে পারে।
★শিলাচ্যুতিজনিতঃ
কখনো কখনো পাহাড় কিংবা উচু স্থান থেকে বৃহৎ পরিসরে শিলাচ্যুতিজনিত কারনে ভূমিকম্প হতে পারে।
এখানে আমি ভুমিকম্পের ধর্মিয় এবং বৈঙ্গানিক কারন তুলে ধরেছি, আর কিছু পৌরাণিক কল্পকাহিনী। ভালভাবে একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখবেন যে, ধর্মিয় কারণগুলো বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই । 2007 সালে জাতিসংঘের বুলেটিনে বলা হয় ইরানের রাজধানী তেহরান এবং বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ভুমিকম্পের ঝুকিতে শীর্ষ শহর। এখন আমাদের দেশের রাজধানীর কথাই ভাবেন, ঢাকা হল মসজিদের শহর, নিশ্চই 99% ধর্মিয় অনুভুতিপ্রবণ মানুষের দেশে ভুমিকম্পের ঝুকি অন্যান্য কাফের রাষ্ট্রের চেয়ে কম হওয়ার কথা ছিল ভুমিকম্পের ধর্মিয়কারণবশত কারণে। নেপালের কথাই বলেন, সেটাও একটা ধর্মিয়প্রবণ মানুষের রাষ্ট্র। সেখানে ভুমিকম্প না হওয়ারই কথা ছিল। অন্যদিকে বিঙ্গান যা কিছু বলছে, সেটার একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই এসব হচ্ছে । বিঙ্গান ভুমিকম্প হওয়ার যেসব কারণ উল্লেখ করেছেন, সেসব কারণ অনুযায়ি যেখানে ভুমিকম্প হওয়ার কথা, সেখানেই ভুমিকম্প হচ্ছে। মানুষ পুরোপুরি প্রকৃতির উপর এখনও আধিপত্য বিস্তার করতে পারে নি বলে, এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মাথা পেতে মেনে নিতে হচ্ছে । কিন্তু আমরা প্রতিরোধমুলক ব্যাবস্থা গ্রহণ করে অনেকাংশেই সফল হতে পেরেছি। এমনও একদিন আসবে সেদিন হয়ত মানুষ প্রকৃতির উপর আধিপত্য স্থাপন করতে পারবে, সেই চেষ্টা অব্যাহত চলছে । বিঙ্গানের এই অব্যাহত অগ্রযাত্রায়, আপনারা যারা ধর্মকে টেনে এনে নিজের ধর্মকে মহাম্বীত করার চেষ্টার জন্য অলীক কল্পকাহিনী আশ্রয় নেন, যেমন কিছুদিন আগে নেপালে ভুমিকম্পে রেডিও মুন্না মারফত জানতে পাইলাম, পাহাড়ের উপর উলঙ্গ পিকচার উঠায় ঠাকুর নাকি রাগাম্বিত হয়ে ভুমিকম্প সৃষ্টি করেছে।আজ তো আবারো ভুমিকম্প উৎপত্তি হয়েছিল, সময় তো অনেকটাই পেরিয়ে গেছে , দেখেন কোন এইরকম ধর্মিয় কারণ বের করতে পারেন কিনা ? আপনাদের এই পিছনের যুগে ফেরার অগ্রযাত্রি আমি নই বলে, মোটেও ভুমিকম্পে এখন ভয় না। এমন একদিন বিঙ্গান হয়ত, আপনারা যেটা কল্পনা করেন সেটা বাস্তবে রুপদান করবে, সেদিন হয়ত আপনাদের অলীক কল্পকাহিনী তৈরী করার জন্য মাথা ঘামাতে হবে না, যেমন চাদের দেশে বুড়া বুড়ির চাল সিদ্ধ করার কথা আর কেউ গল্প হিসেবে বলে না। গল্প বলে নীল আর্মষ্ট্রং এর ।
২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৫৭
এস বি সুমন বলেছেন: ইসলাম অনুযায়ী তো ভূমিকম্প কাফের রাষ্ট্রে হওয়া বেশি উচিত ছিল । আপনি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখবেন এ পর্যন্ত ভয়াভহ ভূমিকম্প
অনেক মুসলিম কান্ট্রি তেই হয়েছে এবং সেখানে হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি । তাহলে নির্ভরযোগ্য বিধান কেমনে হয় ?
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৩০
নয়ন্ বলেছেন: বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পের আভাস দিতে পারে নাই, তাই বিজ্ঞানের উপর ভরসা করা যায় না। তাই বলে বিজ্ঞানকে অবহেলাওঁ করা যায় না। কারন বিজ্ঞান আসলেই উপকারি।
অন্যান্য ধর্মে যা দেখলাম তা আসলেই হাস্যকর।
কিন্তু ইসলাম ধর্মে যেই ব্যাখ্যাটা আপনি দিলেন তা
১। অন্তত হাস্যকর না।
২। মিথ্যা হোক আর সত্য, ভূমিকম্পের ভয়াল কারণ দেখিয়ে মানুষকে মানুষ বানানোর চেষ্টা।
৩। শয়ং বিজ্ঞানই ইসলাম ধর্মের অনেক ব্যাখ্যার সত্যতা প্রমাণিত করেছে এবং এখনও নির্ভর করে।
সুতরাং ইসলামই একমাত্র নির্ভরযোগ্য বিধান।