নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেষের মাঝে শুরু আমার, শুরুর মাঝেই শেষ

সুষ্ময়

সুষ্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্যা পারফেক্ট ম্যান (একটি সায়েন্স ফিকশন গল্প)

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৮

১.
সতের তলা বিল্ডিংয়ের পনের তলা। একটা বড়সড় অফিস রুম। কিন্তু বিধ্বস্ত। ফুলদানি ও টেবিল ল্যাম্প মেঝেতে পরে আছে। চেয়ারগুলো উল্টানো। মেঝেতে একজন মানুষ পরে আছে। আর সে হল এই অফিসের, এই বিল্ডিংয়ের মালিক। জনাব হাসেম তালুকদার। তার চোখ দুটি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। কারণ, তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার মৃত্যুদূত।
পাপ বাপকেও ছাড়ে না। হাসেমকেও ছাড়বে না। হাসেম ভয়ার্ত দৃষ্টি মেলে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মৃত্যুদূতের বাজানো রেকর্ডিং শুনছে। সেই সংলাপ, সেই আদেশের রেকর্ডিং। যে আদেশে খুন করা হয় একজন তরুন সাংবাদিককে। যে আদেশে কেড়ে নেয়া হয় একজন সৎ ব্যাবসায়ীর প্রাণ। যে আদেশ ধ্বংস করে দিয়েছিল একজন সৎ পুলিশ অফিসারের পরিবার। আর এই সকল আদেশের আদেশদাতা হল হাসেম তালুকদার।
“এ-এতো আমার গলা” কাঁপা স্বরে বলল হাসেম।
“হ্যাঁ, তোমারই গলা। তোমারই কন্ঠস্বর। তুমিই এভাবে একের পর এক মানুষ হত্যার হুকুম দিয়ে গেছ। শুধু তোমার জন্যই পৃথিবী থেকে কিছু ভাল মানুষ চলে গেছে” মৃত্যুদূত বলল।
“কিন্তু এতো অসম্ভব। আমি যে ঘরে বসে এগুলো করেছি সে ঘরে পঞ্চম মাত্রার সিকিউরিটি ব্যাবস্থা ছিল। ওই ঘরে কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস কাজ করে না। কোন শব্দ ভেতরে ঢুকতে কিংবা বের হতে পারেনা। তাহলে এই রেকর্ডিং আপনি কিভাবে পেলেন?” হাসেমের মনে হচ্ছে যে স্বপ্ন দেখছে। এসব ঘটনা তার বিশ্বাস হচ্ছেনা। হাসেমের কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল মৃত্যুদূত। বীভৎস, লোমহর্ষক সেই হাসি। হাসি থামিয়ে হাসেমের পেটে একটা লাথি মারল সে। তারপর বলল,
“শক্তির নিত্যতা সূত্র হয়ত তুমি জান না, তাই না? শক্তির কোন সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই। শক্তি অবিনশ্বর। শব্দও এক প্রকারের শক্তি। সব ধরনের শব্দই পরিবেশে বিদ্যমান। আর আমার কাজ হল শব্দ পুনরুদ্ধার করা। তারপর তোমার মত নরপিশাচদের শাস্তি দেয়া। মরার আগে জেনে নাও, আমিই ঈশ্বর। আমি সর্বশক্তিমান”
ব্যাস, এই দুটি বাক্যই সব বদলে দিতে পারে। যেমন বদলাতে চলেছে হাসেমের ভাগ্য। মৃত্যুদূত তার কোমড় থেকে একটি ই.এম.পি. স্টান্ট গান বের করল।এই অস্ত্র কাউকে খুন করেনা। শুধু কিছুক্ষণের জন্য প্যারালাইজড করে দেয়। মৃত্যুদূত হাসেমের দিকে ই.এম.পি. স্টান্ট গান তাক করল। তাকে প্যারালাইজড করে দিল।
তারপর সে ঘুরে দাড়াল। সরাসরি আমার দিকে। আমার চোখের দিকে। আমি তার চোখে এক শয়তানকে দেখতে পাচ্ছিলাম। এক মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ শয়তান। যে ঈশ্বর হবার নেশায় মেতে উঠেছে। যে সকল নিয়ম পরিবর্তনের খেলায় মেতে উঠেছে। আর এ সব খেলার শুরু আজ থেকে দুই বছর আগে।
২.
মৃত্যুদূতের আসল নাম ড. আতিফ রায়হান। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পদার্থবিদ। দুই বছর আগে, ২০৩৫ সালে এক মারাত্মক আবিষ্কার করে সে। সেটা হল, প্রকৃতি থেকে শব্দ শক্তিকে পুনরুদ্ধার করা। শক্তির কোন ধ্বংস নেই। তাই শব্দেরও কোন ধ্বংস নেই। সকল সংলাপ, বাক্য প্রকৃতিতেই আছে। আর ড. আতিফ সেই সংলাপ, বাক্য পুনরুদ্ধারে সক্ষম হল।
সব ঠিকই ছিল। এই আবিষ্কারের মাধ্যমে ড. আতিফ আইনস্টাইনকেও পিছনে ফেলতে পারত। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত নিল যে, এই আবিষ্কার সে নিজের কাছেই রাখবে। এই নতুন ক্ষমতা দিয়ে সে একে একে ধ্বংস করবে সমাজের সেই সব কীটগুলো, যাদের জন্য সমাজ আজ কলুষিত।
তারপর হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল ড. আতিফ রায়হান। সবাই ভাবল সে মারা গেছে। কিন্তু না। লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে নিজের পরিচয় গোপন করে সে তার সমাজসেবা শুরু করল। একের পর এক অসৎ ব্যাক্তিকে খুজে বের করে তাদের পাপের সাজা দিতে লাগল। নিজেকে ঈশ্বরের জায়গায় ভাবতে লাগল। কিন্তু সে হয়ত জানে না যে ধীরে ধীরে তার পাপের ঘড়াও পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তাকেও তার পাপের শাস্তি একদিন পেতে হবে।
৩.
ড. আতিফ রায়হান হাসেমের দিকে ই.এম.পি. স্টান্ট গান তাক করল। তাকে প্যারালাইজড করে দিল। তারপর সে ঘুরে দাড়াল। সরাসরি আমার দিকে। আমার চোখের দিকে। আমি তার চোখে এক শয়তানকে দেখতে পাচ্ছিলাম। কিন্তু সে আমাকে দেখল না। কারণ আমাকে কেউ দেখতে পারে না।
আমার চারপাশে একটি ক্লোকিং শীল্ড রয়েছে যা আমাকে অদৃশ্য করে রাখে। আমার পেছনে এ ঘর থেকে বের হবার দরজা। ড. আতিফ রায়হান আমার দিকে এগিয়ে এল। তারপর আমার শরীরের মধ্য দিয়ে চলে গেল। ক্লোকিং শীল্ড আমার শরীরকে বাতাসের মত করে দিয়েছে। আমি যে কোন কিছু ভেদ করে চলে যেতে পারি। যে কেউ আমাকে ভেদ করে যেতে পারে।
দরজা খুলে নিচে নামার সময় নিজের হাতঘড়িতে থাকা একটি বাটনে চাপ দিল। এটা আসলে একটি রিমোট। বাটনে চাপ দেয়ার সাথে সাথে কিছু ছোট ভাইব্রেটর মেশিন চালু হয়ে গেল। মেশিনগুলো পুরো বিল্ডিংয়ের অনুনাদ পয়েন্ট গুলোতে লাগানো। কিছুক্ষণ পর পুরো বিল্ডিং কাঁপতে কাঁপতে ভেঙে পড়বে। মধ্যরাতে কিভাবে এই ভবন ধ্বসে পড়ল তা কেউ জানবে না।
আমার ক্লোকিং ডিভাইস আমাকে অদৃশ্য করে রেখেছে। ড. আতিফের সাধ্যও নেই যে আমাকে দেখবে। আমিই আতিফের জীবনের ইতি টানব। এমনভাবে করব যা কেউ কখনো কল্পনাই করতে পারবে না। আর আতিফ হয়ত কোনদিন ভাবেই নি যে এভাবে তার মৃত্যু হবে। আর এটাই হল আমার মাস্টার প্ল্যান।
৪.
রাত সাড়ে তিনটা। বৃষ্টি পড়ছে। সেই সাথে দমকা হাওয়া। ২০৩৭ সালের এই রাত আজ অন্যরকম রুপ ধারণ করেছে। আমার প্ল্যান মোতাবেক সব সেট করা শেষ। এখন শুধু ড. আতিফের আসা বাকি। ডাউনটাউনের শেষ সীমানায় নদী পার হয়ে একটু গেলেই আতিফের বাসা। এই নদীর উপরে ব্রীজে আমি দাঁড়িয়ে আছি।
ওইতো আতিফ। আগাগোড়া ওভারকোটে মোড়া। বৃষ্টিতে ভিজে ওভারকোটটা ভারি হয়ে গেছে। আতিফ নির্বিকার চিত্তে হাটছে। ওকে থামাতে হবে। নইলে প্ল্যান কার্যকর হবে না।
রাত সাড়ে তিনটায় এই ব্রিজের উপর দিয়ে কোন গাড়ী যায় না। কিন্তু আজ যাবে। কারণ আমি যাওয়াব। আমি নিউরাল রিমোট দিয়ে সংকেত পাঠালাম। গাড়ি আসছে। আমি আমার মস্তিষ্ক দিয়ে গাড়ীটা কন্ট্রোল করতে লাগলাম।
গাড়ীটা আতিফকে পাশ কাটিয়ে যাবার সময় তার গায়ে কাদা ছিটিয়ে গেল। “আবে ঐ, থাম। চোক্ষে দেখস না” আতিফ দাঁড়িয়ে চেচাতে লাগল। আতিফের চেচানো শুনে গাড়ীটা থেমে গেল। আসলে আমি থামিয়ে দিলাম।
গাড়ীটা থামতে দেখে আতিফ রাগে গজগজ করতে করতে গাড়ীর দিকে যেতে লাগল। ঠিক তখন গাড়ীটা পুরো ১৮০ ডিগ্রী কোণে ঘুরে গেল। তারপর গাড়ীটা প্রচন্ড স্পীডে আতিফের দিকে আসতে লাগল। আতিফ দাঁড়িয়ে গেল। বুঝতে পারল না যে গাড়ীটার উদ্দেশ্য কি?
আতিফ ব্রীজের একপাশে দাঁড়ানো। কি করবে বুঝতে পারছে না সে। গাড়ীটা সরাসরি আতিফের গায়ে উঠে এল। আর আতিফও জীবন বাঁচানোর জন্য রেলিঙের দিকে লাফ দিল। উদ্দেশ্য, রেলিঙের সাথে পিঠ ঠেকে দাঁড়াবে।
কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। আমি আগেই রেলিঙের ওই অংশে আমার ক্লোকিং ডিভাইস লাগিয়ে রেখেছিলাম। ড. আতিফ যখন রেলিঙের সাথে পিঠ ঠেকে দাঁড়াবে ঠিক টখনই ক্লোকিং শীল্ড চালু হয়ে গেল। ড. আতিফ গাড়ীর নিচে চাপা পড়ার হাত থেকে বাঁচল ঠিকই কিন্তু রেলিঙের দেয়াল ভেদ করে সে নদীতে পড়ে গেল। একেবারে পারফেক্ট টাইমিং।
দ্যা গ্রেট ড. আতিফ রায়হান মারা যাচ্ছে। গত দুই বছর ধরে আমি ওকে দেখেছি, ওকে স্টাডি করেছি। আমি জানতাম যে আতিফ সাঁতার জানে না। তাই আমি ওকে পানিতে ডুবিয়েই মারব। আতিফ বেঁচে থাকার তুমুল চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে ওর ওভারকোট ভারী হয়ে যাওয়ায়, গেসে থাকার বদলে আতিফ আরও বেশি ডুবে যাচ্ছে। কিছুক্ষন বৃথা চেষ্টার পর ড. আতিফ মারা গেল।
কথায় আছে অস্তাদের মার শেষ রাতে। আমিও শেষ রাতেই আমার মার দিলাম। ঈশ্বর একজনই। যদি কেউ তার জায়গা দখল করতে চার তবে এভাবেই তার মৃত্যু হয়। এট লাস্ট, আমার মিশন সফল হল।
৫.
পরদিন সকাল,
পারফেক্ট টাইম। সব কিছুরই একটা পারফেক্ট টাইম থাকে। যেমন গতরাত ছিল আতিফ রায়হানকে মারার পারফেক্ট টাইম। ঠিক তেমনই এখন একটা প্রশ্ন করার পারফেক্ট টাইম। আর প্রশ্নটা হচ্ছে, আমি কে?
আমি কোন সাধারণ মানুষ নই। আমি এক রোবট। আর আমাকে তৈরী করেছে ড. আতিফ রায়হান। অবাক লাগছে তাই না? হ্যাঁ, আতিফ রায়হানই আমাকে তৈরী করেছেন। তিনি আগে থেকেই জানতেন যে একদিন তিনি শয়তানে পরিণত হবেন। নিজেকে ঈশ্বর ভাববেন। তাই তিনি আমাকে তৈরী করেছিলেন যাতে আমি তাকে থামাতে পারি।
ক্ষমাতা মানুষকে বদলে দেয়। এবসলিউট পাওয়ার করাপ্টস এবসলিউটলি। ড. আতিফ এটা আগেই বুঝেছিলেন। তাই তিনি আমাকে বানালেন। আমার জন্য ক্লোকিং ডিভাইস বানালেন। আমাকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করলেন যেন আমি তাকে বুঝতে পারি, সময়মত তাকে থামাতে পারি। তারপর একদিন তিনি নিজেই নিজের স্মৃতি থেকে সব মুছে ফেললেন। আমাকে বানানোর স্মৃতি, আমার সাথে সময় কাটানোর স্মৃতি, সব মুছে ফেললেন। তারপর থেকে আমি তার সাথে ছায়ার মত থেকেছি। অদৃশ্য হয়ে তার পাশে থেকেছি। তাকে স্টাডি করেছি।
“আমিই ঈশ্বর। আমি সর্বশক্তিমান” ব্যাস, এই দুটি বাক্যই সব বদলে দিতে পারে। যেমন বদলে গিয়েছে ড. আতিফের ভাগ্য। ড. আতিফ এখন নেই। তাই আমার প্রোগ্রাম অনুযায়ী আমিও আর থাকবনা।
আমি নিজের সেলফ ডিস্ট্রাক্ট মোড অন করে দিলাম। কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। ১৫...১৪...১৩...। ড. আতিফ রায়হান একজন পারফেক্ট ম্যান। একজন জিনিয়াস। ৯...৮...৭...। এই পারফেক্ট ম্যান সবকিছু পারফেক্ট টাইমেই করেছেন। আমিও করেছি। আর এখন পারফেক্ট টাইম। ৩...২...১...।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.