নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেষের মাঝে শুরু আমার, শুরুর মাঝেই শেষ

সুষ্ময়

সুষ্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্পঃ নিভৃত নীশিথ

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৯

রাত। অমাবস্যা। গ্রামের রাস্তা দিয়ে হাটছে দেবাশিষ। চারদিক শুনশান। নিরব। কয়েকটা ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছাড়া আর কিছু শোনা যাচ্ছে না। একা একা হাটছে দেবাশিষ। হঠাৎ একটা বিকট শব্দ। দেবাশিষ দাঁড়িয়ে পড়ল। বোঝার চেষ্টা করল যে শব্দটা কিসের। আবারো শব্দটা শোনা গেল। একটা নারীর আর্তচিৎকার। দেবাশিষ ভয় পেয়ে গেল। এত রাতে কার চিৎকারই বা শোনা যাচ্ছে।
কৌতুহল দমাতে না পেরে দেবাশিষ শব্দটার উৎসের দিকে এগিয়ে গেল। দুরুদুরু বুকে একটা বাড়ির সামনে গিয়ে দাড়াল সে। বাড়িটা তার বাড়ির কয়েকবাড়ি পরেই। মাঝখানে যে কয়টা বাড়ি আছে তার সব কয়টাই ফাঁকা। দেশের অবস্থা ভালো না। তাই সবাই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। বাড়িটা থেকেই শব্দটা আসছিল। চিৎকারটা এখন গোঙানিতে পরিণত হয়েছে।
পায়ের নিচে নরম কিছু একটার অস্তিত্ব অনুভব করল দেবাশিষ। নিচে তাকাতেই দেখল একটা লাশ। লাফ দিয়ে কয়েকপা পিছিয়ে গেল সে। তারপর ভাল করে দেখতেই লাশটা চিনতে পারল সে। লাশটা নিতাই বাবুর। তার সামনের বাড়িটির মালিক। নিতাই বাবুর বুকের উপর একটা গর্ত। রক্তে পুরো জামাটা ভিজে লাল হয়ে আছে।
একটা গাছের আড়াল হতে ঘরের ভেতরে তাকাল সে। ঘরের ভেতর একটা হারিকেন টিমটিম করে জ্বলছে। সেই আলোয় দেখা যাচ্ছে কয়েকটা ছায়ামূর্তি। ছায়ামূর্তিগুলো একটা মেয়ের উপর নৃশংস অত্যাচার চালাচ্ছে। মেয়েটাকে চিনতে ভুল হলনা দেবাশিষের। নিতাই বাবুর মেয়ে। সে কাঁদছে। তার কান্নাটা এখন গোঙানির মত শোনাচ্ছে।
আবার কয়েকটা চিৎকার শুনল দেবাশিষ। চিৎকারটা দেবাশিষের নিজের বাড়ি থেকে আসছে। দেবাশিষ সেদিকে তাকালো। অনেক আলো দেখা যাচ্ছে। দেবাশিষ দৌড়ে গেল। তার বাড়িটা দাউ দাউ করে জ্বলছে। ভেতর থেকে তার স্ত্রী-সন্তানদের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। আগুনে পুড়ছে তারা। জীবন্ত।
দেবাশিষ দৌড়ে গেল। চেষ্টা করল ভেতরে যাবার। কিন্তু সর্বনাশা আগুন তাকে যেতে দিল না। দেবাশিষ উঠোনে বসে পড়ল। কাঁদতে লাগল সে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। মনে মনে ধিক্কার দিতে লাগল সৃষ্টিকর্তাকে। এমন সময় তার পেছনে কয়েকটা লোক এসে দাড়াল। তাদের হাতে বন্দুক। বন্দুকের নল তাক করল দেবাশিষের দিকে। দেবাশিষকে উঠে দাড়াতে বলল। দেবাশিষ উঠে দাড়াল। তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
এই লোকগুলো মিলিটারি। এরাই নিতাই বাবুর মেয়ের উপর অত্যাচার করছিল। এরাই দেবাশিষের বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে।
“নাম ক্যায়া হ্যায়?”
দেবাশিষ ফোপাতে লাগল। কোন জবাব দিল না সে। “এ ধুত্তর (ধুতি) খুল। খুল!”
দেবাশিষ কাঁপতে কাঁপতে তার ধুতির গিট খুলে ফেলল। “হিন্দু হ্যায় তু। হিন্দু হ্যায়” একজন মিলিটারি বন্দুক উচিয়ে তার দিকে এগিয়ে এলো। দেবাশিষ আর চুপ করে থাকতে পারল না। ঝাপিয়ে পড়ল মিলিটারিটার উপর। এলোপাথারি ভাবে মারতে লাগল তাকে। অন্যান্য মিলিটারিরা দেবাশিষকে ধরে উঠালো। শক্ত করে ধরে রাখল তাকে। নিচে পড়ে থাকা মিলিটারিটা উঠে দেবাশিষের তলপেটে একটা লাথি দিল। ব্যাথায় কুচকে গেল দেবাশিষ। “বহুত তেজ হ্যায়? হাঁ? এ লে?” মিলিটারিটা তার হাতের বন্দুক দেবাশিষের দিকে তাক করল। তারপর কয়েকটা গুলি। দেবাশিষের দেহটা নিথর হয়ে পরে গেল। মিলিটারিরা তাকে মাটিতে ফেলে দিল। তারপর একটা লাথি দিয়ে বলল, “সালা বাঙ্গাল”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.