![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইতিহাস পড়ি না, জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশকে প্রতিদিন যেভাবে দেখেছি, সেটাই বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস।
এই সেলফোন, ট্যাবলেট আর ল্যাপটপের যুগে আমি যদি জানাই আমরা তিনভাই শৈশব পাড়ি দিয়েছি কিসব প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে, আজকের জেনারেশন হেসে গড়াগড়ি যাবে।
রংপুর সুগার মিলের আবাসিক এলাকা থেকে মহিমাগঞ্জ বাজার ছিল এক মাইলের পথ। আর মহিমাগঞ্জে তখনো রিক্সা নামেনি। মঙ্গল আর শনিবার ছিল হাটের দিন। আব্বার সাথে বাজারে যাওয়ার জন্য তিনজনই তৈরি, না নিয়ে গেলে মুখভার, কান্নাকাটি, রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া। যেতে আসতে দুমাইল পথ হাঁটার কষ্টের চেয়ে আব্বার লেজে লেজে ঘুরে মুরগি, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস আর তরতরকারি কেনাকাটা ছিল অনেক উত্তেজনাপূর্ণ ব্যাপার। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে তিনজনকে সামলে রাখা যাবেনা বলে আব্বা নিয়ে যেতেন শুধু একজনকে। ফলে ভাইদের মনে মনে থাকত অপরিবর্তনযোগ্য সেই তালিকা, কোন জনের কোনদিন বাজারে যাওয়া পাওনা। সেদিনটা ছিল তার বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত দিন।
বাসায় মুরগি রান্না হলে, সেটার বিশেষ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খাওয়া নিয়েও চলত ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা। কলজেটা কার ভাগে, গিলাটা কে খাবে, হৃৎপিণ্ডটা আজ কার পাতে, আগে থেকেই নিশ্চিত করা থাকত ভাইদের মধ্যে। এমনকি বড় মোরগ জবাই হলে ওটার মাথার ফুলটা খাওয়া নিয়েও ছিল কম্পিটিশন।
মুরগির গিলাটার প্রতি ছিল সব ভাইয়ের বিশেষ নজর, ওটা বেশী মজাদার ছিল বলে। অনুসন্ধিৎসু হয়ে আব্বাকে একদিন জিগ্যেসই করে ফেললাম, মুরগির গিলা দুইটা কেন হয়না?
সউদিতে গিয়ে বাসায় জবাই করা মুরগি নিয়ে এলে, ওটার স্পেয়ার পার্টসগুলো কলিজা, গিলা, হৃৎপিণ্ড, ইত্যাদি সংগে দেয় না। প্যাকেটে করে ওগুলো আলাদাভাবে কিনতে পাওয়া যায়।
একদিন সুপারমার্কেট থেকে ঘরে ফিরলাম এক প্যাকেট গিলা নিয়ে। সুন্দর তকতকে, পরিষ্কৃত, ৩০-৪০ টা গিলা। শৈশবের অতৃপ্ত রসনার কথা ওয়াকেবহাল ছিলেন আমার নব পরিণীতা স্ত্রী। অতি যত্নের সাথে, প্রথমে গ্যাসের আগুনে ছেঁকা দিয়ে পুড়ে, তারপর মনের মাধুরি মিশিয়ে রান্না হল গিলা। আমাদের গ্রামে প্রয়োজনের বেশী কোন কাজ করলে বলা হয়, দাদার নাম জাগিয়ে করা। সে রাতে দাদার নাম জাগিয়ে ১০-১২ টা গিলা উদরস্থ করলাম!
পরদিন খাবার টেবিলে এল আবার এক পেয়ালা গিলা। অন্য কিছু দিয়ে খাওয়া সম্পূর্ণ হল। গিলা খাবার প্রবৃত্তি ছিল না।
আস্তে আস্তে পুরো সপ্তাহ ধরে খেয়ে শেষ করলাম গিলা। কিছু হয়ত ফেলেও দিলাম। ততদিনে আমার শৈশবের জিজ্ঞাসার জবাব পেয়ে গেছি নিজে নিজে, কেন মুরগির গিলা দুইটা হয়না!
০২ রা জুন, ২০১৬ সকাল ১০:১৬
খন্দকার আলমগীর হোসেন বলেছেন: পিঠাপিঠি ছিলাম আমরা তিনভাই। তাই প্রতিযোগিতা চলত সমানে সমান। আপনারও গিলা ভাল লাগত শুনে আনন্দিত হলাম।
২| ০২ রা জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:১২
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: ভাল লিখেছেন।শৈশবের দিন গুলোই মনে হয় মানুষের জীবনে সবচেয়ে সুন্দর দিন হয়
০২ রা জুন, ২০১৬ রাত ৯:৩৮
খন্দকার আলমগীর হোসেন বলেছেন: শৈশবের দিন গুলোই মানুষের জীবনে সবচেয়ে সুন্দর, সত্যিই তাই। ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ০২ রা জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৪
সুমন কর বলেছেন: চমৎকার স্মৃতিচারণ !!
০২ রা জুন, ২০১৬ রাত ৯:৩৮
খন্দকার আলমগীর হোসেন বলেছেন: আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
৪| ০৩ রা জুন, ২০১৬ সকাল ১১:৫৮
রোষানল বলেছেন: স্মৃতিচারণ ভালো লাগলো। অনেক কথা আবার ভেসে উঠলো..
০৩ রা জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:২৪
খন্দকার আলমগীর হোসেন বলেছেন: পাঠকের ভাল লাগলে আর চাই কি! ভাল থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা জুন, ২০১৬ সকাল ১০:০২
বৈশাখের আমরণ নিদাঘ বলেছেন: স্মৃতিকাতর হলাম। কাড়াকাড়ির মাতা খুব বেশি ছিল না, কারণ আমি স্পেয়ার তেমন পছন্দ করতাম না। খাওয়ার মধ্যে কেবল গিলাটাই খেতাম। আর একদিন আমি আর অন্যদিন আমার ভাই, এভাবেই চলতো। অথবা টুকরা টূকরা করা থাকতো অন্য স্পেয়ারের সাথে মিশিয়ে। আর এখন তো স্পেয়ার চোখেই দেখিনা। বাজার থেকে মুরগী কেনার পর সম্ভবত সেগুলো নিয়েই আসে না অথবা দিয়ে দেয়। টানাটানির যেকোনো কিছুই ভালো।

পড়ে ভালোলাগলো। শুভকামনা রইলো।