নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Islam

Islam

নিও তনয়

Islamic rule lover

নিও তনয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ)

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের জানুয়ারিতে রাষ্ট্রীয় এক সফরে ভারতে অবস্থানকালে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেখানে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সঞ্চালনের একটি প্রস্তাবনা ছিল। ওই প্রস্তাবনার ভিত্তিতেই ২০১২ সালে বাংলাদেশের সুন্দরবনের নিকটবর্তী রামপালে মোট ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর সঙ্গে ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার করপোরেশন (এনটিপিসি)-র চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে এর আগেই ২০১০ সালের ডিসেম্বরে পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা না করেই ওই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের আদেশ জারি করা হয়। তবে দেশের সচেতন মহলের তীব্র আপত্তি এবং হাইকোর্টের একটি রুলের প্রেক্ষাপটে পরিবেশ অধিদপ্তর দ্রুততার সঙ্গে ‘এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ)’ শীর্ষক রিপোর্টে ওই প্রকল্পকে ‘পরিবেশবান্ধব’ বলে উল্লেখ করে। এরপর সেই রিপোর্ট অনলাইনে আপলোড করে জনগণের মতামত চাওয়া হয়। অথচ নিয়মানুযায়ী, কোনো প্রকল্প শুরুর আগেই ইআইএ রিপোর্ট তৈরি করে মতামতের ভিত্তিতে হয় প্রকল্প এগুবে, না হয় বাতিল হবে। কিন্তু রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের ক্ষেত্রে দেখা গেল, ঘোড়ার আগে জুড়ে দেয়া হয়েছে গাড়ি! আর ওই রিপোর্টকে সঠিক ধরে নিয়ে গত ২০ এপ্রিল ঢাকায় ভারতের সঙ্গে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য নজিরবিহীন তৎপরতা চালানো হয়েছে, হচ্ছে। কেন? আপাতদৃষ্টিতে উত্তরটা অদৃশ্য মনে হলেও অনুমান করে নিতে কষ্ট হয় না! দেশের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর এবং বিশেষ করে সুন্দরবন বিধ্বংসী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি যে কোনো মূল্যেই বাস্তবায়নের তোড়জোড় চলছে। সে জন্য অনেক অসঙ্গতির জন্ম দিয়েই সংশ্লিষ্টরা এ প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর।

১. রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২০১ কোটি ডলার। এর ৭০ শতাংশ ব্যাংক ঋণ নেয়া হবে। ১৫ শতাংশ অর্থ দেবে পিডিবি এবং বাকি ১৫ শতাংশ দেবে ভারতের এনটিপিসি। ওই প্রকল্পের জন্য পুরো জমি, অবকাঠামোগত বিভিন্ন কিছু, সব সরবরাহ করবে বাংলাদেশ। অথচ একসময় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মালিকানা চলে যাবে ভারতের হাতে! মাত্র ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ করে তারা বনে যাবে হর্তাকর্তা! তাছাড়া এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনতে হবে পিডিবিকে! আর যে নিট লাভ হবে, তার অর্ধেক নিয়ে নেবে ভারত!

২. আমাদের দেশীয় কোম্পানি ওরিয়ন গ্রুপের সঙ্গে পিডিবির যে ক্রয় চুক্তি হয়েছে, তাতে এই দেশীয় কোম্পানির অধীনে মাওয়ায় প্রতিষ্ঠিতব্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এবং খুলনার লবণচরা ও চট্টগ্রামের আনোয়ারায় প্রতিষ্ঠিতব্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে খরচ পড়বে ৪ টাকা। অথচ পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি করে, জমি দিয়ে, ৮৫ শতাংশ বিনিয়োগ করে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উল্টো ৬.০০ টাকা দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে হবে!

৩. নিয়মানুযায়ী ‘এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (ইআইএ),’ রিপোর্ট পাওয়ার পরেই কোনো প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা যায়। কিন্তু পিডিবি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইআইএ রিপোর্ট পাওয়ার আগেই রামপালে প্রায় ১৯০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে! এমনকি সেখানকার কৃষকদের উচ্ছেদ করে জমিতে মাটি ভরাটের কাজটিও সেরে ফেলা হয়! অথচ পরিবেশ অধিদপ্তর ইআইএ রিপোর্ট দেয়ার আগে পিডিবিকে শুধু অবস্থানগত ছাড়পত্র দিয়েছিল; যার শর্ত ছিল পিডিবি সেখানে কোনো প্রকার নির্মাণ কাজ করতে পারবে না। কিন্তু সেই শর্তের কোনো তোয়াক্কা করেনি পিডিবি!

৪. সবুজ সংকেত পাওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ হতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ওপর নজিরবিহীন চাপ ছিল। সে কারণে পরপর সাতবার প্রত্যাখ্যান করলেও, চাপের কাছে নতি স্বীকার করে বাধ্য হয়ে আটবারের সময় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।

৫. রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের জন্য জমি প্রয়োজন সর্বোচ্চ ৭০০ একর। কিন্তু অধিগ্রহণ করা হয়েছে ১৮৪৭ একর! রামপালে প্রতিদিন কয়লা পুড়বে ১৩ হাজার টনেরও বেশি। গবেষণার তথ্যানুসারে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এক মেগাওয়াটের জন্য প্রয়োজন দশমিক ৪২ একর জমি। এ হিসাবে রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াটের জন্য প্রয়োজন ৫৫৫ একর জমি। এর সঙ্গে এমজিআর ও কুলিং টাওয়ারের জায়গা হিসাবে করলে জমি প্রয়োজন সর্বোচ্চ ৭০০ একর। অথচ প্রয়োজনের দ্বিগুণেরও বেশি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে! কেন? উত্তর নাই! ব্যাখ্যা নাই!!

৬. এনটিপিসি তার নিজ দেশ ভারতের মধ্যপ্রদেশে ১৩২০ মেগাওয়াটের একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল ('NTCP's cox-based project in MP turned down', দ্য হিন্দু, ৮ অক্টোবর ২০১০)। কৃষি ও পরিবেশগত সমস্যা হবে, সে কারণেই ভারত সরকার এনটিপিসির প্রস্তাব বাতিল করে দেয়। অথচ সুন্দরবনের মতো বৃহৎ সংরক্ষিত বনাঞ্চল, কৃষিজমি, স্থানীয় মানুষের জীবন-জীবিকা, প্রাণ পরিবেশ প্রভৃতির ওপর সম্ভাব্য ভয়াবহ ক্ষতিকর প্রভাবের কথা চিন্তা না করেই সেই এনটিপিসির সঙ্গেই চুক্তি করেছে পিডিবি!

৭. এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বড়পুকুরিয়ার ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি ১৪টি পাম্পিং মেশিনের সাহায্যে তোলা হয়। ফলে আশপাশের এলাকার মানুষ দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সঙ্কটের মধ্যে আছেন। তাছাড়া ওই কেন্দ্রে প্রতিদিন ২৪০০ টন কয়লা জ্বলে ছাই উৎপন্ন হয় প্রায় ৩০০ মেট্রিক টন। ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার ৬১৩ টন আদ্র ছাই পার্শ্বস্থ পুকুরে জমা করে রাখা হয়েছে। এসব পুকুরের চার ভাগের তিন ভাগ ইতোমধ্যেই ভরাট হয়ে আছে। তাছাড়া এসব ছাইয়ের পানি চুইয়ে গিয়ে বিভিন্ন জলাশয়ে মিশছে, যা পরিবেশ দূষণ করছে। যেখানে মাত্র ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই এবং অন্য সমস্যার সমাধান হয় না, সেখানে ১৩২০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির ছাই এবং অন্য সমস্যার সমাধান কী করে হবে?

৮ রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাই-অক্সাইড (বছরে ৫১ হাজার ৮৩০ টন) এবং ৮৫ টন বিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (বছরে ৩১ হাজার ২৫ টন) নির্গত হবে। এই বিশাল পরিমাণ বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে সালফার ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব তখনকার চেয়ে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেবে। ফলে ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে সুন্দরবনের প্রাণ ও পরিবেশ। ইআইএ রিপোর্টে এই জায়গাটাতে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে! নিয়মানুযায়ী সুন্দরবনের জন্য ‘পরিবেশগত স্পর্শকাতর’ মানদন্ড উল্লেখ করার কথা। অথচ ইআইএ রিপোর্টে সুন্দরবনের জন্য ‘আবাসিক ও গ্রাম’ এলাকার মানদন্ড ব্যবহার করা হয়েছে! সুন্দরবন কবে থেকে ‘আবাসিক ও গ্রাম এলাকা’ হলো? পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৭ অনুসারে ‘পরিবেশগত স্পর্শকাতর’ এলাকায় বাতাসে সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব ৩০ মাইক্রোগ্রামের বেশি হতে পারবে না। অথচ ইআইএ রিপোর্ট অনুযায়ী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় বাতাসে সালফার ও নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব হবে ৫৪ মাইক্রোগ্রাম, এই অতিরিক্ত মাত্রাকে বৈধতা দেয়ার জন্যই ইআইএ রিপোর্টে সুন্দরবনকে ‘আবাসিক ও গ্রাম’ এলাকা উল্লেখ করা হয়েছে!

৯. রামপালের ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে, ইআইএ রিপোর্ট অনুযায়ী, পশুর নদী থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৯১৫০ ঘনমিটার পানি প্রত্যাহার করা হবে এবং ব্যবহারের পর অবশিষ্ট পানি পরিশোধন করে ঘণ্টায় ৫১৫০ ঘনমিটার হারে আবার নদীতে ফেরত পাঠানো হবে। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় কার্যকর পানি প্রত্যাহারের হার ৪ হাজার ঘনমিটার। এ বিপুল পরিমাণ পানি প্রত্যাহারের ফলে নদীর নিম্নপ্রবাহে সুন্দরবন এলাকায় পানির লবণাক্ততা, নদীর পলি প্রবাহ, জোয়ার-ভাটা, প্লাবন, নদীর উদ্ভিদ ও প্রাণী জগত এবং বাস্তুসংস্থানের ওপর কেমন প্রভাব হবে, তা বিশ্লেষণ করা হয়নি। এর পেছনে যুক্তি দেখানো হয়েছে, ‘৪ হাজার ঘনমিটার পানি পশুর নদীর শুকনো মওসুমের মোট পানি প্রবাহের ১ শতাংশেরও কম’। এখানে যে ফাঁকটা রয়েছে, ২০০৫ সালের পানি প্রবাহের ডাটা ব্যবহার করা হয়েছে! অথচ বর্তমান সময়ে পশুর নদীর পানি প্রবাহ অনেক কমেছে; সেইসঙ্গে শিল্প ও অন্যান্য কাজে পানির ব্যবহারও বেড়েছে। প্রকল্প চলাকালীন সময়ে সামনের বছরগুলোতে এ চাহিদা আরও বাড়বে।

১০. বাগেরহাটের মংলা, চাঁদপাই ও শরণখোলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পশুর নদী ও পশুর নদী চ্যানেলের শ্যাওলা নদীতে বিরল প্রজাতির ডলফিন গাঙ্গেয় ও ইরাবতীর বাস। গত ২৯ জানুয়ারি, পরিবেশ অধিদপ্তর ডলফিনের সংরক্ষণ ও বংশবৃদ্ধির সঙ্গে ওই অঞ্চলকে বন্যপ্রাণী ‘অভয়ারণ্য’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। ঘোষিত ‘অভয়ারণ্য’ এলাকায় সাপমারি এলাকাও রয়েছে; যে এলাকায় প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রয়েছে। আইনানুসারে অভয়ারণ্যের মধ্যে কোনো এলাকায় পানি দূষণ, যাতে জলজ প্রাণী ও ডলফিনের আবাস নষ্ট করে, এমন কিছু করা যাবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে শুধু জলজ উদ্ভিদই নয়, ডলফিনের খাদ্য ও আবাসস্থল সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হবে।

১১. ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তারের নেতৃত্বে পরিবেশবিদদের একটি দল প্রস্তাবিত রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ওপর গবেষণা করে। ২০১১ সালের ৫ মে, তারা বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে ন্যূনতম ২৩ ধরনের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তুলে ধরেন। যার উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সুন্দরবনের স্বাভাবিক চরিত্র নষ্ট হবে, শুরু হবে অবাধে গাছ কাটা, লাগানো হবে বনে আগুন, ধরা পড়বে বাঘ-হরিণ-কুমিরসহ অন্যান্য প্রাণী, কয়লা পোড়া সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন প্রভৃতি সুন্দরবনের জৈবিক পরিবেশ ও বায়ুমন্ডলকে বিঘ্নিত করবে। বায়ুমন্ডলের সালফার ডাই-অক্সাইড ও কার্বন যৌগগুলো থেকে সৃষ্ট গ্রিনহাউজ গ্যাস বনের জন্য অতি মারাত্মক ক্ষতিকর, এসিড বৃষ্টি ঘটাবে এবং তা শুধু সময়ের ব্যাপার। ড. সাত্তার ওই গবেষণার শেষাংশে চূড়ান্ত সতর্ক বাণী উলেলখ করে বলেন, ‘কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সব কার্যক্রম শিগগিরই বন্ধ করা উচিত’।

১২. কানাডার ন্যাশনাল এনার্জি বোর্ড পরিচালিত গবেষণা থেকে জানা যায়, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবশ্যই কয়লাখনির কাছে হতে হবে। তা না হলে এটি হতে হবে গভীর সমুদ্রবন্দরের কাছে কিংবা রেল লাইলের পাশে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এ শর্তের কোনোটাকেই সমর্থন করে না।

১৩. বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন হবে প্রায় ১৩ হাজার টন কয়লা। আন্তর্জাতিকভাবে কয়লা পরিবহনের জাহাজের ধারণ ক্ষমতা সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টন হয়ে থাকে। এ ধরনের জাহাজ বন্দরে আসার জন্য যে ধরনের গভীরতা থাকা দরকার, চট্টগ্রাম কিংবা মংলা বন্দরের তা নেই। ফলে মূল জাহাজ বহির্নোঙরে রেখে লাইটারেজের মাধ্যমে কয়লা খালাস করতে হবে। এতে বন্দরে সৃষ্টি হবে দীর্ঘ জাহাজ জট; বেড়ে যাবে পরিবহন খরচ। তাছাড়া সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে জাহাজ চলাচলের ফলে জাহাজ থেকে কয়লার গুঁড়া, ভাঙা বা টুকরো কয়লা, তেল, কয়লা আবর্জনা, জাহাজের দূষিত পানিসহ বিপুল পরিমাণ দূষিত বর্জ্য পানিতে পড়ে গিয়ে গোটা সুন্দরবন দূষিত করবে। কয়লা পরিবহনকারী জাহাজের ঢেউয়ে পশুর নদীর দুই তীরের ক্ষয় হবে; শব্দদূষণ হবে। এবং রাতের বেলা জাহাজের সার্চ লাইটের আলো বনের নিশাচর প্রাণীসহ গোটা প্রাণ পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

১৪. আইনানুসারে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি ‘লাল ক্যাটাগরি’র (সবচেয়ে বেশি দূষণপ্রবণ) শিল্প। যা শুধু শিল্প এলাকা বা শিল্পসমৃদ্ধ এলাকা ছাড়া তৈরি করার সুযোগ নেই। অথচ কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি করা হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল সুন্দরবনের কাছে। হ্যাঁ, বিদ্যুৎ আমরা সবাই চাই। কিন্তু পরিবেশের এত ক্ষতি করে বিদ্যুৎ আমাদের দরকার নেই। দয়া করে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত পাল্টান।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.