![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভুলু বাড়ি
তৈয়ব খান
২৯শে চৈত্র ১৪২০ এর বিকেলের ঘটনা। মানিকগঞ্জ শিবালয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শুভ নববর্ষের কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবেন। সে কার্ড ছাপানোর দায়িত্ব নিলাম আমরা। আমাদের প্রেস আছে। তো, কার্ড ছাপানোর পর ম্যাট লেমিনেশন করতে হবে যাতে কার্ডটি দৃষ্টিনন্দন হয়। মোখলেছ ভাই বিশেষ কাজে ঢাকায় গেছেন। ঢাকা থেকে তিনি অনুরোধ জানালেন যেন কার্ডটি লেমিনেটিং করানোর কাজে আমি ছাপাখানার কর্মচারী মিজানের সাথে আলমডাঙ্গা ’ব্ল-বেরি’ (সাভার এলাকার লেমিনেটিং কাজের একমাত্র প্রতিষ্ঠান) যাই। কেননা, ও বিষয়টি ভালো করে বোঝাতে পারবে না। কিন্তু মুশকিল হলো জায়গাটা আমি চিনি না; কখনো যাইনি। মোখলেছ ভাই’র সাথে আমার মোবাইলে কথা হচ্ছে, এমন সময় মিজান বললো যে সে জায়গাটা চেনে। আলমনগর যাওয়ার কোন বাস নেই তবে সাভারের জাতীয় অন্ধ কল্যাণ মার্কেটের সামনে থেকে ভটভটিতে যাওয়া যায়।
আমরা অন্ধ কল্যাণ মার্কেটের সামনে থেকে নির্দিষ্ট বাহনের চালককে আলমনগরের ব্লু বেরি’র কথা বলতেই বললো সে চেনে। আমাদের জায়গা মতো নামিয়ে দেবে এরকম আশ্বাস পেয়ে ভটভটিতে চড়ে ভাঙাচুরা রাস্তায় ঝাঁকি থেকে থেকে চলতে আরম্ভ করলাম। চালকের বয়স সর্বোচ্চ চৌদ্দ- বাচ্চা ছেলে। ভটভটির আর কোন কন্টাকটর কিংবা হেল্পার নেই। এতটুকুন একটা বাচ্চা ছেলে কেমন করে গাড়ির বাইশজন যাত্রী কন্ট্রোল করবে এটা ভেবে আমার কৌতুক বোধ হলো। শিশুশ্রম নিয়ে যারা চেঁচায় তারা এ চালক বাচ্চাটিকে দেখলে উহু-আহা করতো। কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন ছোটখাট যান-বাহন এদের বয়সী বাচ্চারাই সামাল দেয়; এটা ভেবে মুচকি একটু হাসলাম। দুপুরে ভাত খেয়েছি, ভাত রসালো খাবার। ভটভটির ঝাঁকুনিতে আমার ভাতঘুম পেয়ে গেল এবং ঘুমিয়েও পড়লাম। এদিকে আমাদের গন্তব্য ছেড়ে বাহনটি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পর আক্রাইন নামক একটি স্টেশনে থেমে যাত্রী নামাতে লাগলো। এক যাত্রীর ভাড়া নিয়ে বচসার কারণে আমার ঘুম টুটে গেলো।
আক্রাইন জায়গাটার নাম শুনেছি; আসা হয়নি, আজই প্রথম এলাম। কিন্তু এটা আমাদের গন্তব্য নয় বুঝতে পেরে মনে মনে দমে গেলাম। অগত্য ধরলাম ঐ বাচ্চা চালককে। আলমনগরে আমাদের কেন নামালো না এ কথা বলতেই বুঝলাম মহা ধুরন্ধর ছেলে। বেশি ভাড়ার পাবার আশায় ইচ্ছে করেই আমাদের নির্দিষ্ট জায়গায় না নামিয়ে ভুল জায়গায় নামিয়ে দিয়েছে এবং পঞ্চাশ টাকার নোট দিতেই দেখলাম ত্রিশ টাকা রেখে বিশ টাকা ফিরিয়ে দিলো। বিষয়টি অন্যায়; প্রতিবাদ করলাম এবং একটা বাচ্চা ছেলের শয়তানির কাছে হেরে গিয়ে ঝাল ঝাড়তে চাইলাম মিজানের উপর। মিজানকে কষে একটা ধমক দিলাম। এদিকে সময় কম। নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিকেল ছয়টার মধ্যেই কার্ডগুলো ডেলিভারি দিতে হবে। এখন বাজে সোয়া চারটা। উপায়! একে তো ভুল জায়গায় নেমেছি, পরন্তু মিজান গিয়ে স্থানীয় লোকজনকে বলছে যে আমরা ভুলুবাড়ি যাবো। আমি যতোই বলছি ব্লুবেরি, ও আগ বাড়িয়ে রিক্সাওলা থেকে শুরু করে সবাইকে বলছে- ভুলুবাড়ি। ওর উপর মেজাজটা খাপ্পা হয়ে গেলো। বললাম, তুমি না জায়গাটা চেনো? আর তোমার আগ বাড়িয়ে কথা বলার দরকারটাই বা কি? ও বললো- চিনি তো, তবে কিনা রাতে একবার মোটরসাইকেলে এসেছিলাম, তাই মনে করতে পারছি না। মহা মুশকিলে পড়ে গেলাম।
সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য মোখলেছ ভাইকে মোবাইলে কল দিলাম। উনি রিসিভ করতেই সমস্যাটার কথা বললাম। বললাম যে এখানে ব্লুবেরি বলে কোন জায়গা নেই। কিন্তু নেটওয়ার্কের জটিলতার জন্য উনার কথা ঠিকমতো বুঝতে পারছিলাম না। তাই উনি যেন স্থানীয় একজনের সাথে কথা বলে একটা সমাধান দেন এমনটা ভেবে স্থানীয় এক লোককে মোবাইল ধরিয়ে দিলাম। ঐ লোকটি আলমনগরের কথা শুনেই বুঝলো যে আমরা কমপক্ষে পাঁচ কিলোমিটার বেশি পূবে চলে এসেছি, আমাদের এখন পেছন ফিরে যেতে হবে।
আলমনগরে ফিরলাম তখন পৌঁনে পাঁচটা বাজে। এখানে এসেও ব্লুবেরি’র কোন হদিস পেলাম না। পাবো কি করে! আমি যতই বলছি ব্লুবেরি, মিজান ততোই বলছে ভুলুবাড়ি। স্থানীয় লোকজন একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে একবার মিজানের দিকে। আমি মিজানের উপর রেগে গেলাম এবং বারবার ওকে বললাম যে, এটা ভুলুবাড়ি নয় বরং ব্লুবেরি। ইংরেজিতে বানান করে বললাম- আমার সাথে সাথে বলো- বিএলইউই ব্লু; বিইআরআরওয়াই বেরি। কিন্তু না, ও আমার সাথে বানান করছে ঠিকই কিন্তু উচ্চারণ করছে ভুলুবাড়ি। লে হালুয়া!! কী করি? পরে একজন মুরুব্বি এসে জানতে চাইলেন, আমরা ওখানে কী কাজে গেছি। যখন বললাম, আমরা এ কার্ডগুলো লেমিনেটিং করবো। এখানে কোন লেমিনেটিং এর কাজ করানোর প্রতিষ্ঠান আছে কিনা জানতে চাইলাম। মুরুব্বি আমাদের কথা শুনে হেসে- নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির হদিস বাতলে দিলেন। তখন বুঝলাম এটি কোন স্থানের নাম নয় বরং প্রতিষ্ঠানের না।
সুপ্রিয় পাঠক, এবার বুঝুন, শিক্ষার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জীবনের জন্য কতো প্রয়োজন। মিজান মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। উচ্চারণও শুদ্ধ নয়। তাই এ ভোগান্তি। তবে আমিও কম বোকা নই....। জীবন চলার পথে এরকম ঘটনা সম্ভবত আরও কারো কারো জীবনে ঘটেছে এটা কল্পনা করে খানিকটা প্রবোধ পেলাম। কিন্তু কাজ শেষে ফেরার পথে সমস্ত রাগ ভুলে গেলাম আলমনগরের প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখে। জায়গাটা এতো সুন্দর যে ভাষা দিয়ে বর্ণনা করাটা একটা বিড়ম্বনাই বটে। ক্যামেরা সাথেই ছিল, গোটা তিনেক ছবি তুলে নিলাম পরবর্তীতে কাজে দেবে ভেবে।
অনেক কষ্টে ব্লুবেরি খুঁজে পেয়েছিলাম এবং সন্ধ্যা সাতটার দিকে ফিরে এসে নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধির কাছে কার্ড বুঝিয়ে দেবো; এমন সময় নির্বাহী কর্মকর্তা স্বয়ং এসে উপস্থিত। অগত্য তার কাছেই কার্ড হস্তান্তর করলাম।
পরিচিতি-
তৈয়ব খান
কবি, লেখক এবং প্রকাশক
অরুণালোক প্রকাশনী
বাজার রোড, সাভার, ঢাকা- ১৩৪০।
মোবাইল ঃ ০১৯৪২-৮৪৭২০৭
ই-মেইল: [email protected]
©somewhere in net ltd.