![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আশুলিয়া টু সাভার সংযোগ সড়ক
ভায়া সিএন্ডবি স্টেশন
তৈয়ব খান
আব্দুল্লাহপুর থেকে নবীনগরগামী ম্যাক্সি কিংবা রিক্সায় জনপ্রতি পাঁচ টাকা ও দশ টাকা ভাড়ায় মাত্র তিনশ’ মিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে আসতে হয় সুইচগেট। আব্দুল্লাহপুর থেকেই যাত্রী তুলতে পারে সাভারগামী বাসগুলো কিন্তু কেন যে তা তুলে না; সে কারণটি অজ্ঞাত। পুরো টার্মিনাল জুড়েই কেবল নবীনগরগামী ম্যাক্সি আর বাস। সাভারের গাড়িগুলোর প্রবেশাধিকার নেই এখানে। ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ে; সময় নষ্ট হয় এবং পকেট থেকে টাকাও খসে। সুইচগেট থেকেই যেতে হয় সাভার কিংবা এর আশ-পাশের গন্তব্যে। আবার এখানকার বিভিন্ন পেশাজীবিরাও সাভার থেকে প্রতিদিন যাওয়া আসা করে ঢাকার উত্তরা, এয়ারপোর্ট অথবা টঙ্গী বা তার আশ-পাশের এলাকায়। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে এ পথে। এদের প্রায় সত্তরভাগই যাতায়াত করে একই রকম ভাবে, অর্থাৎ বাসে চেপে। বাসের নাম ‘আনন্দ সুপার।’ সাভার ছেড়ে যাওয়া যাত্রীরা সিএন্ডবি মোড় পর্যন্ত আর সুইচগেট থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীর আশুলিয়া বাজার স্টেশন পর্যন্ত ‘আনন্দ সুপার’র আনন্দ উপভোগ করতে পারে মাত্র দশ ভাগ। সেটা বাসে উঠতে পারার আনন্দ। বাকি নব্বুই ভাগের কুড়ি ভাগ আনন্দ আর আনন্দ থাকে না। সেটি নিরানন্দ হয়ে দেখা দেয় ঘামে আর বৃষ্টিতে ভেজা কিংবা রোদে ঝলসানো উপচে পড়া যাত্রীদের গাদাগাদি আর ঠাসাঠাসির যাঁতা খেয়ে। ‘চ’-এর অনুপ্রাস করলে দাঁড়াবে- ‘চাপে চিঁড়ে চ্যাপ্টা চেহারা-চরণ।’ দেহের বাকী অংশের কথা বলা বাহুল্য। সত্তুর ভাগের নিরানন্দকে শুধু নিরানন্দ বললে এ শব্দটাকেই বরং অপমান করা হবে; বলতে হবে মহানিরানন্দ। তবেই শব্দটা সম্ভবত খানিক খুশি হবে। পদের লোভ কার না আছে! অনুপ্রাসের পরে বাকিটুকুর অন্ত্যমিল হবে- ‘এভাবেই প্রতিদিই চলে জনগণ।’
যাত্রীতে টইটুম্বুর বাস। সুইচগেট থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার মসৃণ রাস্তাটুকুর বাসভাড়া দশ টাকা মাত্র। কিন্তু আশুলিয়া থেকে যে রাস্তাটুকু সাভারের সিএন্ডবি মোড় পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে; তাও প্রায় আট কিলোমিটার। এটুকু পথ গ্যাস চালিত বাসে পনের টাকা ভাড়া গুণে যে ভোগান্তি পোহাতে হয় তা অবর্ণনীয়। রাস্তাটুকুর পুরোটাই ভাঙা। ভাঙাটা শুধু ভাঙা নয়; যাচ্ছেতাই রকমের ভাঙা। জায়গায় জায়গায় এমন মারাত্মক গর্ত যা মুহূর্তের অসর্তকতায় জান-মালের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। গর্তগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে এমন অবস্থা তৈরি করেছে, দেখলে মনেই হয় না এটা রাস্তা- নাকি কোন জলাভূমি।
এ রাস্তার বাস চালকেরা খুব সন্তপর্ণে গাড়ি চালায়। তাতে সময় লাগে প্রচুর। সময় বেশি লাগার আরেকটি কারণ স্টেশনে স্টেশনে থেমে যাত্রী উঠানো নামানো। আট কিলো রাস্তা পাড়ি দিতে হয় কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা গচ্চা দিয়ে। এতে কর্মজীবী মানুষের কর্মঘণ্টা ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়। কিন্তু চালকেরা নাছোড়- ডেকে ডেকে যাত্রী তাদের তোলা চাই-ই চাই। যাত্রীদের বিস্তর বিরক্তি প্রকাশ, কটূক্তি ওদের গায়ে তেমন একটা জুত করতে পারে না। চালকদের পূর্বপুরুষ এককালে গণ্ডার ছিলো এমন কথাও বাসের ভেতর ভেসে বেড়াতে থাকে। যাত্রীদের বিরক্তির কারণ বিস্তর। গাদাগাদি ঠাসাঠাসি অবস্থায় গায়ের সাথে গা লাগিয়ে মহিলা পুরুষের দাঁড়িয়ে থাকা, খাপড়া উঠা রাস্তার গর্তে পড়ে এমন নাকানি চুবানি খেতে হয় যেন ‘ঝাল-মুড়ি মাখা’ ডাব্বার ভেতর ঢুকে পড়েছে।
রাস্তাটার সংস্কার হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে বিশ ছুঁই ছুঁই বয়সের বাস চালক আবু হানিফ জানালো- এ পর্যন্ত নাকি পনের বার রাস্তা সংস্কারের টেন্ডার হয়েছে কিন্তু সংস্কার হয়নি। চালকের কথা শুনে এক যাত্রী ফোড়ন কাটে- ‘আরে ভাই- সংস্কারের দায়িত্ব যাদের কাছে তারাই যদি ঠিক মত নজর না দেয়, তো সংস্কার হবে কেমন করে?’ অন্য এক যাত্রী মন্তব্য করে, সাবেক এমপি’র সময়ে সাভারের রাস্তাঘাটের কোন উন্নয়নই হয়নি। এবারের এমপি সাহেবেরও এদিকে তেমন একটা নজর লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অথচ প্রতিদিনই এ পথে শত শত গাড়ি চলাচল করে। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তার অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। এক যাত্রী জানালেন, ঠিক এ রাস্তাটির মতো সাভার থেকে বিরুলিয়া রোড নাম ধারণ করে মিরপুর বেড়িবাঁধ পর্যন্ত চলে গেছে, তার অবস্থাও করুণ। এ রুটে ট্যাম্পু বা ভটভটি চলে। ভাঙাচুরা রাস্তায় ঝাঁকি খেতে খেতে যাত্রী নাজেহাল হয় প্রতিদিন।
রাস্তার দু’পাশে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবন, শিল্প কারখানাও চোখে পড়ে। এসব কারখানার কাঁচামাল জোগান এবং উৎপাদিত পণ্য আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ভারি যানও চলাচল লক্ষ্য করার মতো। এক দুই মিটার পর পর পানি ভরা গর্তগুলোর উপর দিয়ে বাস চলার ফাঁকে ফাঁকে চালকের পাশে ইঞ্জিন কভারের উপর বসে সামনের কাচের উপর দিয়েই বেশ কিছু ছবি তোলা গেল। কারখানার মালবোঝাই একটি ট্রাক পানি ভর্তি গর্তে পড়ে খাবি খাচ্ছে। কোনক্রমেই উঠতে পারছে না। তার পাশ দিয়ে দু’জন কিশোরকে রাস্তা পার হতে দেখে বুকের ভেতর স্যাৎ করে উঠলো। কেননা, যে কোন সময় ট্রাকটি কাত হয়ে প্রাণ সংহার করে নিতে পারে এই দু’ কিশোরের। অগণিত যান চলাচলরত ভাঙাচুরা রাস্তাটি দিয়ে পার হচ্ছে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও; তবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে।
এ রাস্তার এ দশায় পড়ে নিয়মিত যাতায়াতকারীদের বিরক্তি থাকলেও তারা তেমন একটা উচ্চবাচ্য করছিলো না, তবে নতুন যাত্রীদের কেউ কেউ রসালো মন্তব্য করতে শুরু করলো। বাসের সামনে বসা জনৈকা মহিলা যাত্রী (বেশভূষায় সাদামাটা হলেও বোঝা যাচ্ছিল তিনি একজন উচ্চশিক্ষিতা।) বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন। তার ভাষায়- স্থানীয় প্রশাসনের (যারা জনগণের সুখ দুঃখের কথা শোনেন কেবল নির্বাচন এলে) কর্তাকে এ রাস্তায় একদিন ‘আনন্দ সুপার’ বাসে বসিয়ে যাতায়াতে বাধ্য করা উচিত। তাহলে কর্তাব্যক্তিটি হয়তো সাধারণ মানুষের সত্যিকারের কষ্টটা অনুভব করতে পারবেন। কর্তারা হয়তো কালেভদ্রে এ রাস্তায় চলাচল করেন; তবে সেটা দামী গাড়িতে, যে গাড়িগুলোর বসার সিট থাকে নরম তুলতুলে গদি মোড়া। তাই তারা এ ভাঙাচুরা গর্তময় রাস্তার দুলুনিতে নাগরদোলার স্বাদ অনুভব করে মনে পুলক বোধ করেন। সাধারণ মানুষ তাদের ভাগ্যোন্নয়ানের চাবি যাদের হাতে তুলে দেয়, নির্বাচিত সেসব ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষের পরিবর্তে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন; এমন মন্তব্যও ভেসে এলো। কেউ কেউ বললো, এসব ট্যাম্পু বা ‘আনন্দ সুপার’ বাসে উঠলে গর্তময় বন্ধুর রাস্তার সত্যিকারের অনুভূতি টের পাবেন। অবশ্য এ রাস্তায় একবার যোগাযোগ মন্ত্রিরও ভ্রমণ করা উচিত। কেননা, তাহলে তিনি হয়তো বুঝতে পারতেন, যারা এ রাস্তাটি নিয়মিত পার হন, তাদের বেশিরভাগই সাধারণ মজুর-শ্রমিক। যাদের কর্মঘণ্টার উপরই নির্ভর করে জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি। সামান্য আট কিলোমিটার রাস্তায় যদি তাদের প্রতিদিন যাতায়াতে তিন-সাড়ে তিন ঘণ্টা ব্যয় করতে হয়; তবে জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি লাটে উঠতে বাধ্য। এমনিতেই বাংলাদেশের অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে নিত্যব্যবহার্য পণ্য মূল্য আকাশ ছুঁতে বসেছে।
বাংলাদেশ এখনও যান-বাহন আমদানি নির্ভর দেশ। একটি বাস বা ট্রাক কেনার পর সেটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করে ‘মেইনটেনেন্স কস্ট’ কমাতে পারলে যে অর্থ সাশ্রয় হবে, সেটি দেশের জন্যই মঙ্গল। এসব ভাঙাচুরা রাস্তায় চলাচল করলে যান-বাহনের যে পরিমাণ ক্ষতি হয় সেটা সংশ্লিষ্টগণ নিশ্চয় অনুমান করতে পারেন। মানুষের কষ্ট লাঘব, কর্মজীবী মানুষের কর্মঘণ্টাকে সঠিক ব্যবহার করার স্বার্থে এ রাস্তাগুলো জরুরী ভিত্তিতে সংস্কারের দাবী নাগরিক হিসেবে চাওয়াটা নিশ্চয়ই অযৌক্তিক নয়।
বাসের সামনে ইঞ্জিন কভারের উপর বসে ভাঙাচুরা রাস্তার ছবি সংগ্রহ করছিলাম (গাড়িতে যাত্রীদের এত ভীড় ছিলো যে বসার অন্য কোন স্থান জুটানো সম্ভব ছিলো না। পরন্তু, ছবি সংগ্রহের বিষয়টি তো মূখ্য ছিলোই। ইঞ্জিন কভারের উপর না বসতে পারলে; আট কিলোমিটার রাস্তা পার হতে প্রায় পৌণে দুই ঘণ্টা খরচ করে পঁচাত্তরটি ছবি সংগ্রহ করা সম্ভব হতো না। অত্যাধিক যাত্রীর চাপ, ইঞ্জিন কভারে উপর বসে থাকায় প্রচ- তাপে সেদ্ধ হয়ে যাবার অবস্থা হলেও মনে হয়েছে, প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীর দুর্ভোগ লাঘবে, যান-বাহনের দীর্ঘস্থায়ীত্বের প্রয়োজনে এ ছবিগুলো আর এ লেখা হয়তো কাজে লাগলে লাগতেও পারে। কেননা, প্রতিটি যান-বাহনই আমাদের জাতীয় সম্পদ এবং প্রতিটি যাত্রীই বাংলাদেশের জনশক্তি। যে দু’টোই উন্নয়ন ও অগ্রগতির অগ্রপথিক।) ভদ্রমহিলার মন্তব্য শুনে মনটা সত্যি সত্যি খারাপ হয়ে গেলো। মনে হলো, আসলেই তো; উনি তো মিথ্যে বলেননি! ঢাকাসহ প্রায় সিংহভাগ জেলা শহর ও প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ঘোরতে পারার সুযোগে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, বাংলাদেশে আরও উন্নয়ন ও অগ্রগতি আশা করা যেত; যদি যাতায়াত ব্যবস্থাকে আরও আধুনিকায়ন করা সম্ভব হতো।
একটি দেশের উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হচ্ছে, সে দেশটির যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়া। অথচ আমাদের দেশে সড়ক, নদীপথ কিংবা রেলপথ, কোনটির অবস্থা তেমন সন্তোষজনক নয়। উন্নয়নশীল এ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যতটুকু আছে, তারও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটে। নদী, রেলপথ আর সড়কের দু’পাশে অবৈধ দখল করে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করা, আবার কখনও কখনও বিভিন্ন দন্দ্ব-সংঘাতের কারণে রেলপথ উপড়ানো, যান ভাঙচুর যেন অতি উৎসাহী দেশপ্রেমিকের বিদ্রোহ প্রকাশের, দাওয়া-দাবী আদায়ের কিংবা রাজনৈতিক স্বার্থ আদায়ের অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাগরিক হিসেবে ন্যূনতম সাধারণ জ্ঞানটুকুও আমাদের হারিয়ে যেতে বসেছে। নাগরিকের অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য কি? এ শিক্ষা আমরা ভুলে যেতে বসেছি কিংবা তা চর্চা করারও কোন প্রয়োজনও আমরা অনুভব করছি না। যে যেভাবে পারছি শুধু নিজের স্বার্থকেই বড় করে দেখছি। আমরা সামষ্ঠিক হতে পারিনি, হয়েছি ব্যক্তিকেন্দ্রিক। ফলে স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছর পরও আমরা যোগ্য নাগরিক হতে ব্যর্থ হয়েছি। রবীন্দ্রনাথের যুগে তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন- ‘সাত কোটি সন্তানের হে মুদ্ধ জননী/রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি।’ এ আক্ষেপ যেন কোন যুগেই ফেলনা নয়। অন্তত মন তাই বলে।
তারিখ ঃ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪
পরিচিতিঃ
কবি, লেখক ও প্রকাশক
অরুণালোক প্রকাশনী
৪০/১/বি, পাঠানটোলা, ধামরাই, ঢাকা- ১৩৫০।
মোবাইল ঃ +৮৮০১৯৪২ ৮৪৭ ২০৭
E-mail: [email protected]
২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৬
ৈতয়ব খান বলেছেন: সম্ভবত কোন বাণিজ্য হয় না ভেবেই কাজের লোকদের কাজ দেওয়া হয় না। এখন তো সব বাণিজ্যের যুগ
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫৮
খেলাঘর বলেছেন:
সব সমস্যার সমাধান আছে, সমাধান করার লোকও আছে; কিন্তু ওদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয় না।