![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেই কবে ... সভ্যতার আদিলগ্নে সূচিত হয়েছিল নিজেকে জানার অদম্য বাসনা। গ্রিক দর্শনের ‘know thyself’ কিংবা ভারতবর্ষের প্রাচীন দার্শনিকদের, “আত্মনাং বিধি”–র উত্তর আজো মেলেনি লাখো লাখো বছরের মানব ইতিহাসে। এই আত্মঅন্বেষণই তাজাকলমের জীবন তপস্যা। তবে নিজেকে জানার সাধনা বৈরাগ্যের পথে নয় বরং মানুষের সাথে থেকে, মানুষকে ভালোবেসে, মানুষের মাঝেই তাজা কলম খুজেঁ পেতে চায় আপন অস্তিত্বের ভূভাগ। তবুও তাজা কলম পৃথিবীতে এক গৃহী সন্নাসী কারন সে নিয়ত খুজেঁ ফিরছে শূণ্য খেকে আসা এবং শূণ্যতেই বিলীন হওয়া মানব জীবনের গুঢ় রহস্য। বিশেষ অনুরোধ: এ ব্লগে প্রকাশিত লেখাগুলো কপিরাইটের আওতাভূক্ত । লেখকের অনুমতি ছাড়া এখানে প্রকাশিত কোন লেখা কিংবা লেখার অংশ বিশেষ কেহ অন্য কোথাও প্রকাশ করলে বেআইনি কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রয়োজনে লেখকের সাথে যোগাযোগ করুন।
বুদ্ধিজীবি দিবসে একটি ব্যক্তিগত ভাবনা
পাকিস্তান আমলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর মননে বাঙালি জাতিয়তাবাদে উজ্জ্বীবিত করতে দেশের বুদ্ধিজীবিদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য । ভাষাআন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকার আন্দোলন পর্যন্ত প্রকাশ্যে রাজনীতিবিদরা কাজ করে গেছেন বটে কিন্তু অন্তরালে বুদ্ধিজীবিদের ভূমিকাই বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। আটচল্লিশের দেশ বিভাগের পূর্ব থেকেই বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা স্বীকৃতি প্রদানের দাবি তোলেন প্রখ্যাত ভাষাবিদ ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তমুদ্দন মজলিশ সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাকে পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দাবিতে তৎপড় হয় পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকেই। বলা যায় ৫২-র ভাষা আন্দোলনের বড় নিয়ামক ছিল দেশের বুদ্ধিজীবিরা।
ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কাজ করেছে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন। বিশেষ করে, আমরা যে বাঙালী এবং আবহমান কাল থেকে আমাদের মাঝে যে আছে অসাম্প্রদায়িক চেতনা পূর্ববাংলার অধিবাসীদের মাঝে এ বোধটুকু জাগ্রত করতে পেরেছিলেন বুদ্ধিজীবিরাই। বিশেষ করে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মূল দর্শন ধর্মভিত্তিক দ্বিজাতিত্ত্বের অসারতার কথা জনগণের কাছে সুস্পষ্ট হযে যাওয়াতেই পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশের জন্ম অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। পাকিস্তানী অপশক্তির বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে ইতিহাসে বাঙালি জন্ম দিয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধজয়ী বাঙালী অর্জন করেছিল স্বাধীনতা।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধিজীবিদের বড় ভূমিকা ছিল বুঝতে পেরেই পাকিস্তানি সামরিক শক্তি আর এ দেশের দোসর রাজাকার-আলবদর আলশামস বুদ্ধিজীবিদের হত্যার নীল নকশা করে এবং তা বাস্তবায়নে হত্যা করে দেশের প্রথম সারি বুদ্ধিজীবিদের। এ হত্যাযজ্ঞের কার্যকারণ ছিল দ্বিবিধ। প্রথমতঃ তাদের প্রতিশোধ স্পৃহা চরিতার্থ করা এবং দ্বিতীয়তঃ সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশটাকে মেধাশূন্য করে ফেলা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বৎসর পরেও রাষ্ট্রীয় দর্শনের বিষয়ে জাতিআজো কেন দ্বিধাবিভক্ত। এ বিষয়ে বুদ্ধিজীবিদের ভূমিকা কি?
দুঃখের সাথে বলতে হয়, বিগত বিয়াল্লিশ বৎসরেও সত্যিকার অর্থে দেশে বুদ্ধিজীবি শ্রেণী তৈরী হয়নি। দু/একজন ব্যক্তিগতভাবে আত্মপ্রকাশ করলেও সত্যিকার অর্থে বুদ্ধিজীবির বিকাশ ঘটেনি দেশে।
উচ্চশিক্ষিত হলেই বুদ্ধিজীবি তা ভাবা বাতুলতা। শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিক, ডা্ক্তার এবং পেশাজীবি মাত্রেই বুদ্ধিজীবি এ ভাবনাও সঙ্গত নয়। টেলিভিশনে রোজকার টক শোতে আসা মুখগুলো কি বুদ্ধিজীবি? পত্র-পত্রিকার কলাম লেখকরা কি বুদ্ধিজীবি? নিশ্চয়ই তাদের সবাই নন।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে বুদ্ধিজীবি কে?
বুদ্ধিজীবি সেই যে যৌক্তিকআলোকে বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করে উপসংহারে আসার ক্ষমতা রাখেন, যিনি সমাজ প্রগতির জন্য নিমোর্হভাবে কাজ করে যান, এবং যার মেধা-মনন ব্যক্তিস্বার্থে কোন গোষ্ঠীর কাছে বন্ধক দেওয়া নেই। একজন বুদ্ধিজীবি হবেন নির্ভীক এবং তার দায়বদ্ধতা শুধু বিবেকের কাছেই।
উপরোক্ত সংগার আলোকে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশে এ মূহূর্তে কজন বুদ্ধিজীবি আছেন? সম্ভবতঃ সংখ্যাটি হাতের আঙুলেই গোণা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা মোটাদাগে বলা যায় হয় আওয়ামি ঘরানা কিংবা বিএনপি ঘরানায় বিভক্ত। । ডাক্তার, প্রকোশলী, সাংবাদিক, আইনজীবি সহ সব পেশাজীবিদের অবস্থা একই হাল। একজন সত্যিকার বুদ্ধিজীবি নিঃসন্দেহে বিবেক হত্যা করে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করতে পারে না।
যাহোক, ঠিক এ মূহূর্তে দেশে যে অপশক্তির উত্থান হয়েছে তাকে মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজন বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলা। যে আন্দোলন হতে হবে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, দূর্নীতির বিরুদ্ধে এবং সর্বোপরি যা হতে হবে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারক।
আক্ষেপের বিষয়, জাতির এ ক্রান্তিলগ্নেও আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা ব্যক্তিস্বার্থে দলীয় লেজুড়বৃত্তি ছেড়ে বিবেকের তাড়নায় দেশের এবং আমজনতার কথা ভাবছেন না।
©somewhere in net ltd.