![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেই কবে ... সভ্যতার আদিলগ্নে সূচিত হয়েছিল নিজেকে জানার অদম্য বাসনা। গ্রিক দর্শনের ‘know thyself’ কিংবা ভারতবর্ষের প্রাচীন দার্শনিকদের, “আত্মনাং বিধি”–র উত্তর আজো মেলেনি লাখো লাখো বছরের মানব ইতিহাসে। এই আত্মঅন্বেষণই তাজাকলমের জীবন তপস্যা। তবে নিজেকে জানার সাধনা বৈরাগ্যের পথে নয় বরং মানুষের সাথে থেকে, মানুষকে ভালোবেসে, মানুষের মাঝেই তাজা কলম খুজেঁ পেতে চায় আপন অস্তিত্বের ভূভাগ। তবুও তাজা কলম পৃথিবীতে এক গৃহী সন্নাসী কারন সে নিয়ত খুজেঁ ফিরছে শূণ্য খেকে আসা এবং শূণ্যতেই বিলীন হওয়া মানব জীবনের গুঢ় রহস্য। বিশেষ অনুরোধ: এ ব্লগে প্রকাশিত লেখাগুলো কপিরাইটের আওতাভূক্ত । লেখকের অনুমতি ছাড়া এখানে প্রকাশিত কোন লেখা কিংবা লেখার অংশ বিশেষ কেহ অন্য কোথাও প্রকাশ করলে বেআইনি কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রয়োজনে লেখকের সাথে যোগাযোগ করুন।
আমার পরিচিত এক দম্পতি তাদের ১২-তম বিবাহ বার্ষিকী মহাধুমধামে উদযাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে। তারা করতে যাচ্ছে বারো বৎসর আগে অনুষ্ঠিত হওয়া তাদের বিয়ের প্রতিটি পর্বের পুনরাবৃত্তি, যেমন হলুদ, বিয়ে, বউভাত ইত্যাদি। এ জন্য তারা সম্ভবতঃ কয়েক লাখ টাকার বাজেট করেছে পর্বগুলো বর্ণাঢ্যভাবে পালনের জন্য। দু' সন্তানের জনক-জননী এই দম্পতির উদ্যোগকে আপাত দৃষ্টিতে রোমান্টিকতায় ভরপুর মনে হলেও তাদের এ ধরণের অনুষ্ঠান পালনের বিলাসিতা নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কতোটুকু সঙ্গত সে বিষয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।
তাদের এ বিবাহবার্ষিকী উৎযাপন যদি নেহায়েৎ-ই পারিবারিক গন্ডির মাঝে সীমায়িত হতো তাহলে এটাকে তাদের ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে গণ্য করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার কোন সুযোগ ছিল না। কিন্তু যেহেতু তারা বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী, আত্মীয়স্বজন সবাইকে জানান দিয়ে পুনঃবিবাহ কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে তখন বিষয়টি সামাজিক এবং একজন সমাজ সচেতন নাগরিক হিসেবে বিষয়টি মূল্যায়ন করার দায়বদ্ধতা বোধ করছি।
প্রথমেই আসা যাক আলোচ্য দম্পতির আর্থসামাজিক অবস্থান বিষয়ে। এ দম্পতির স্বামী ব্যবসা করেন এবং স্ত্রী কাজ করেন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষা এবং সামাজিক মর্যাদা বিবেচনায় এ দম্পতি মধ্যবিত্ত সমাজেরই অন্তর্ভূক্ত। তবে স্বামীর ব্যবসায় উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ঘটায় তাদের অর্থনৈতিক অবস্থান উচ্চমধ্যবিত্তের দিকে ধাববান এ দাবি হয়তো করা যায়।
বাঙালী সমাজে বিয়ের রজত, সুবর্ণ, কিংবা হীরক জয়ন্তিতে পুনঃবিবাহ আয়োজন করে সামাজিকভাবে উৎসব পালন করার এই প্রবণতা অতি সাম্প্রতিক এবং এখনো এর ব্যপ্তি লাভ না করলেও উঠতি ধনিক শ্রেণীর মাঝে সহসাই যে এর বিস্তার পাবে তার আলামত দেখা যাচ্ছে।মনোঃস্তাত্বিক দিক থেকে সমাজে শ্রেণী উত্তরণকারী ব্যক্তিবর্গরা তাদের পরিবর্তিত সামাজিক অবস্থান জানান দিয়ে এক ধরণের আত্মপ্রসাদ পেয়ে থাকে এবং সাম্প্রতিককালে বিবাহ জয়ন্তি পালনে পুনঃবিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজনের কার্যকারণ এটিই।
বিবাহজয়ন্তি পালনে পুনঃবিবাহের আয়োজন করা বাঙালি হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান কিংবা বৌদ্ধ কোন সমাজেরই সংস্কৃতির অঙ্গ নয়। এমনকী বৃহত্তর ভারতের কোন জাতি/উপজাতিতেও এমন অনুষ্ঠানের প্রচলন আছে বলে জানা যায়নি। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে তাহলে এ সংস্কৃতি উৎস কোথায়? এর উৎস সন্ধানে মেধাবী সমাজ বিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই। আকাশ প্রযুক্তির কল্যাণে প্রচারিত ভারতীয় টিভি চ্যানেলের বিভিন্ন সমাজ বিচ্ছিন্ন সিরিয়াল এবং বলিউডি ফিল্মের বর্জ্য হিসেবেই এ সংস্কৃতি কিংবা অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটতে চলেছে আমাদের দেশেও এ দাবি নিঃসন্দেহে করা যায়।
বস্তুতঃ হিন্দি সিরিয়ালগুলো (এবং সেই সাথে বলিউডের বেশীরভাগ ফিল্মই) যে সমাজ বাস্তবতার সাথে মিল নেই তা যে কোন সচেতন নাগরিকমাত্রই জানেন। কিন্তু সমাজের উপর রয়েছে এই সব উদ্ভট সিরিয়াল/ ফিল্মের প্রতিক্রিয়া। আমাদের দেশের মধ্যবিত্ত এবং উচ্চমধ্যবিত্ত সমাজের ফ্যাশন থেকে শুরু করে সমাজে বিভিন্ন অনাচারের নেপথ্যেও এই সব সিরিয়াল এবং ফিল্মগুলোর যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে তা বলাই বাহুল্য।
বিবাহজয়ন্তি পালনে জাকজমকভাবে পুনঃবিবাহের অনুষ্ঠারের আয়োজন করা বস্তুতঃ আমাদের সমাজের প্রেক্ষিতে সংস্কৃতি নয় বরং একধরণের অপসংস্কৃতিই বলা চলে। সমাজে এ ধরণের অনুষ্ঠার পালনে সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে সে সম্পর্কে আলোকপাত করা যাক-
বাঙালী সমাজে দীর্ঘস্থায়ি দাম্পত্য জীবন অভূতপূর্ব কোন ঘটনা নয় যে এর জয়ন্তিকে ঘটা করে পালন করতে হবে। অবশ্যই পারিবারিকভাবে এটাকে পালন করা যায়। কিন্ত সামাজিকভাবে তা পালন করতে গেলে একসময় দেখা যাবে শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত কিংবা উচ্চ মধ্যবিত্ত দম্পতিদের মাঝেই না সাধারণ সমাজের মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত অংশেও এ ধরণের কুরুচিপূর্ণ অনুষ্ঠান করার প্রবণতা বাড়বে এবং যারা করতে না পারবে তাদের মাঝে এক ধরণের মনোঃস্তাত্বিক চাপ দেখা দিতে পারে।
সমাজের সুষ্ঠু বিবর্তনের প্রয়োজনে আত্নরতিতে ভোগা এ ধরণের অনুষ্ঠানকে আমরা যাতে প্রশ্রয় না দেই সে বিষয়ে এখন থেকেই সচেতন থাকা প্রয়োজন। সামাজিকভাবে এ ধরণের অনুষ্ঠান বর্জন করাই এই অপসংস্কৃতি রোধের বড় একটি হাতিয়ার। এ ছাড়া, ভারতীয় সিরিয়াল/ হিন্দি মুভির আগ্রাসন বন্ধ করতে ভারতীয় টি ভি চ্যানেলগুলো প্রচারের উপর সেনসরশীপ আরোপের দাবিতে আমাদেরকে সোচ্চার হতে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতে কিন্তু বাংলাদেশের কোন টি ভি চ্যানেল প্রচারিত হয় না। তবে আমরা কেন ভারতীয় মুভি-সিরিয়ালের অপসংস্কৃতিতে গা ভাসিয়ে দেব?
২| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:২২
বাংলার ঈগল বলেছেন: আমরা সবসময় হিন্দি সিরিয়ালের বিরুদ্ধে!!
ঘুরে আসতে পারেন -----
হিন্দি সিরিয়াল যেভাবে ধ্বংস করছে আপনার জীবন --
৩| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০৯
জোগ্যান বলেছেন: "প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতে কিন্তু বাংলাদেশের কোন টি ভি চ্যানেল প্রচারিত হয় না।" মোটেই না , আমার এখানে (কোচবিহারে) কেবলে 'এটিএন বাংলা' আর 'আর টিভি ' দেখায়, কিন্তু দর্শক খুবই কম।
৪| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৩৯
ময়নামতি বলেছেন: সামাজিকভাবে এ ধরণের অনুষ্ঠান বর্জন করাই এই অপসংস্কৃতি রোধের বড় একটি হাতিয়ার।
পোস্টে প্লাস। +++
ধন্যবাদ।
৫| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৪৫
অপ্রচলিত বলেছেন: যথোচিত বলেছেন।
সচেতনমূলক পোস্টে পূর্ণ সহমত এবং প্লাস। +++
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫৪
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভারতীয় টিভি চ্যানেলের বিভিন্ন সমাজ বিচ্ছিন্ন সিরিয়াল এবং বলিউডি ফিল্মের বর্জ্য হিসেবেই এ সংস্কৃতি কিংবা অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটতে চলেছে আমাদের দেশেও এ দাবি নিঃসন্দেহে করা যায়
আর আমাদের কথিত জাতে উঠার দল-অন্ধ ভাবে তা নকলে পাগল!!!
অথচ বোদ্ধারা বলেন ইন্ডিয়ানরা তাদের মূল সমাজের অভাব, রাজনৈতিক ব্যর্থতা সহ সমাজের নানা অপূর্ণতাকে ঢেকে রাখতেই এই যৌন উত্তেজক, সুরসুরি মার্কা, এবং উদ্ভট মেকি আভিজাত্যের শোডাউন অব্যহত রেখেছে।
যাতে ক্ষুধার্ত তার ক্ষুধা ভুলে থাকে, আফিমের নেশার চেয়ে কঠিন নেশা এই মিডিয়া প্রভাব। তাদেরকে এক স্বপ্নময় স্বপ্নে বুদ করে রেখে পূজিবাদ আর ক্ষমতাসিনরা শোষন শাসন করে যাচ্চে আরামসে!!!
এইসব অন্ধ অনুকরন ধর্ম, নিজের সমাজ, নৈতিকতা কোন ভাবেইতো এটাকে সমর্থন করা যায় না।
এই ধ্বস এখনো েঠকানো উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যত আরও কঠিন!