![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেই কবে ... সভ্যতার আদিলগ্নে সূচিত হয়েছিল নিজেকে জানার অদম্য বাসনা। গ্রিক দর্শনের ‘know thyself’ কিংবা ভারতবর্ষের প্রাচীন দার্শনিকদের, “আত্মনাং বিধি”–র উত্তর আজো মেলেনি লাখো লাখো বছরের মানব ইতিহাসে। এই আত্মঅন্বেষণই তাজাকলমের জীবন তপস্যা। তবে নিজেকে জানার সাধনা বৈরাগ্যের পথে নয় বরং মানুষের সাথে থেকে, মানুষকে ভালোবেসে, মানুষের মাঝেই তাজা কলম খুজেঁ পেতে চায় আপন অস্তিত্বের ভূভাগ। তবুও তাজা কলম পৃথিবীতে এক গৃহী সন্নাসী কারন সে নিয়ত খুজেঁ ফিরছে শূণ্য খেকে আসা এবং শূণ্যতেই বিলীন হওয়া মানব জীবনের গুঢ় রহস্য। বিশেষ অনুরোধ: এ ব্লগে প্রকাশিত লেখাগুলো কপিরাইটের আওতাভূক্ত । লেখকের অনুমতি ছাড়া এখানে প্রকাশিত কোন লেখা কিংবা লেখার অংশ বিশেষ কেহ অন্য কোথাও প্রকাশ করলে বেআইনি কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রয়োজনে লেখকের সাথে যোগাযোগ করুন।
বছর সাতেক পর দেশে বেড়াতে এসে দেখি ঢাকার অনেক পরিবর্তন। নতুন নতুন বিল্ডিং, খোলা জায়গা যেটুকু ছিল সেটুকুও হাওয়া। সবচে বেড়েছে গাড়ি এবং মানুষের সংখ্যা। মিরপুর রোডে আগে তো এমন জ্যাম হতো না ! লাইন দিয়ে গাড়ি স্ট্যাচু হয়ে দাড়িঁয়ে আছে। বিকেল বেলা। হাঁটছি বাসার সামনে কলাবাগান পার্কের ফুটপাথ ঘেষে। হঠাৎ একটি গাড়িতে ঘণ ঘণ হর্ণ বেজে উঠলো। তাকিয়ে দেখি নীল রঙের হোন্ডা সিভিক। উইন্ডো নামিয়ে আমাকেই ডাকছে মাঝবয়েসি এক ভদ্রলোক। সহসা চিনতে পারলাম না। কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই, ভদ্রলোক গালি দিয়ে উঠে, "চুতমারানি, চিনতে পারোস নাই এহনো!' এবার আর দেরি হলো না, ভার্সিটি জীবনে আমার রুমমেট আশিক। আমি চেঁচিয়ে উঠি, "আশিক, তুই! কতোদিন পরে রে .."
আশিক গাড়ি থেকে নেমে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
-চল্, আমার সাথে চল্, আমার অফিসে।
- আজ না, এখনই যেতে হবে আপার বাসায়। তুই না হয় কাল সকালে আমার এখানে আয়।
- ওকে দোস্ত, তুই আমার কার্ডটা রাখ্। মোবাইল নম্বর আছে, রাতে ফোন দিস।
- এখন কি করিস?
- হাঃ হাঃ হাঃ, এবার আমিই প্রমোটার।
ইতোমধ্যে জ্যাম ক্লিয়ার হয়ে গেছে। আশিক গাড়িতে উঠে বসে, স্টার্ট দিয়েই 'বাই, বাই' উড়ায়ে চলে যায়।
এবার হাতে ধরা বিজনেস কার্ডটা চোখের সামনে মেলে ধরি। আশিক হোসেন, সম্পাদক, দৈনিক আশার আলো। ভড়কে গেলাম। এ যে দেশের প্রথম সারির দৈনিক! মনটা আমার আনন্দে দোল খেতে লাগলো। আশিক শেষটায় সাকসেসফুল!
কিন্তু ও নিজেকে প্রমোটার বললো কেন ! বেশী সময় ভাবতে হলো না, মনে পড়লো ভার্সিটি জীবনের কথা। লেখার হাত ওর বেশ ভালো। দেশের নানা লিটল ম্যাগে তখন ওর গল্প-কবিতা ছাপা হতো। স্বপ্ন দ্যাখতো জাতীয় দৈনিকে লেখা ছাপা হওয়ার। পত্রিকা অফিসে ঘোরাঘুরি করে লেখা দিয়ে আসতো। কিন্তু কল্কে পেতো না। একদিন সে দেশের নম্বর ওয়ান পত্রিকার সম্পাদকের সাথে দেখা করার মওকা পেয়ে বললো, "আমি লেখালেখি করি এবং ভালোই লেখি। কিন্তু পত্রিকাগুলোতে লেখা জমা দিলেও ছাপা হয় না।" সম্পাদক সাহেব হেসে বলেন, "আপনার কোন প্রমোটার আছে?" ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় আশিক।
-প্রমোটার?
- বুঝলেন না? পত্রিকা অফিসে আপনাকে ব্যাক করার কেউ কি আছে?
- ভালো লেখা হলে ব্যাক করার প্রশ্ন উঠবে কেন?
- আপনি এখনো ইয়াংম্যান, তাই বুঝেন না। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে মার্কেটিংই সব। পিআর বুঝেন? পাবলিক রিলেশনস, নেটওয়ার্ক? যে কোন নেটওয়ার্কে ঢুকে যান। আপনি যতোই ভালো লেখেন না কেনো, আপনাকে প্রমোট না করলে কোনই লাভ হবে না। লেখক তো আমরাই বানাই।
রাতে হলে ফিরে ক্ষোভভরে আশিক শুনিয়েছিলো এ ফিরিস্তি।
©somewhere in net ltd.