নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আত্মনাং বিধিই হোক যাপিত জীবনের প্রেরণার উৎস।

তাজা কলম

সেই কবে ... সভ্যতার আদিলগ্নে সূচিত হয়েছিল নিজেকে জানার অদম্য বাসনা। গ্রিক দর্শনের ‘know thyself’ কিংবা ভারতবর্ষের প্রাচীন দার্শনিকদের, “আত্মনাং বিধি”–র উত্তর আজো মেলেনি লাখো লাখো বছরের মানব ইতিহাসে। এই আত্মঅন্বেষণই তাজাকলমের জীবন তপস্যা। তবে নিজেকে জানার সাধনা বৈরাগ্যের পথে নয় বরং মানুষের সাথে থেকে, মানুষকে ভালোবেসে, মানুষের মাঝেই তাজা কলম খুজেঁ পেতে চায় আপন অস্তিত্বের ভূভাগ। তবুও তাজা কলম পৃথিবীতে এক গৃহী সন্নাসী কারন সে নিয়ত খুজেঁ ফিরছে শূণ্য খেকে আসা এবং শূণ্যতেই বিলীন হওয়া মানব জীবনের গুঢ় রহস্য। বিশেষ অনুরোধ: এ ব্লগে প্রকাশিত লেখাগুলো কপিরাইটের আওতাভূক্ত । লেখকের অনুমতি ছাড়া এখানে প্রকাশিত কোন লেখা কিংবা লেখার অংশ বিশেষ কেহ অন্য কোথাও প্রকাশ করলে বেআইনি কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রয়োজনে লেখকের সাথে যোগাযোগ করুন।

তাজা কলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

শূন্যতায় আর্তি

২৩ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:০৫

আলফির সাথে আমার সম্পর্কটা অব্যাখ্যাত। ও আমার কলিগ, ইউসিবি ব্যাংকের এক শাথায় দুজনেরই পোষ্টিং। পরিচয়ের পর বেশ দ্রুতই আমরা দুজন দুজনের কাছাকাছি চলে এসেছি। নাহ, আমাদের সম্পর্ক ঠিক প্রেমেরও নয়। আবার যে শুধুমাত্র বন্ধুত্ব ঠিক তাও নয়।



আমরা দুজনেই বিবাহিত। প্রেম করেই বিয়ে করেছি সঙ্গীতাকে আজ প্রায় বছর দশেক হলো। যতোদূর বুঝতে পারি হাজব্যান্ডের সাথে আলফিরও আন্ডারস্টেন্ডিং ভালো। তাই আমাদের সম্পর্ককে পরকীয়াও আখ্যায়িত করা যায় না। আর পরকীয়া শব্দটি তো দেহজ-কামজ গন্ধ ছড়ায়। বিপরীত লিঙ্গের হলেও আলফির প্রতি দেহজ টান অনুভব করি না, আমার বিশ্বাস আলফিরও করে না। বস্তুতঃ আমাদের মাঝে পারস্পরিক যে টান তা আত্মিক এবং বন্ধুত্বেরও অধিক।



বলা সঙ্গতঃ আমাদের দুজনের সম্পর্কের ভিত শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ঘিরে। আমরা দুজনেই কবিতা ভালোবাসি, ভালোবাসি গান শুনতে এবং উৎসাহ আছে নাটক ও চিত্রকলায়। আমরা পরস্পর এ সব বিষয়ে মতামত শেয়ার করে থাকি।



শিল্প-সাহিত্যে আমার বউ সঙ্গীতারও ঝোঁক কম নয় এবং বলাবাহুল্য এ কারণেই আমরা প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছি এবং এখনো খাই। আমাদের একমাত্র ছেলে অর্ণবও কম নয়। ক্লাস থ্রিতে পড়ে, শুধু পড়াশুনাতেই চৌকশ নয়, সাহিত্য-সংস্কৃতি, সঙ্গীতেও ওর উৎসাহও কম নয়। উইকএন্ডে আমি ফ্যামিলিতে সময় দেই। কোন কোন উইকএন্ডে বউ-বাচ্চা সহ লং-ড্রাইভে যাই। আমরা সত্যিসত্যিই মূর্তমান এক হ্যাপি ফ্যামিলি।



আলফির সাথে আমার বউয়েরও ঘনিষ্টতা হয়েছে। আমার ছেলেও 'আলফি আন্টি', আলফি আন্টি করে ব্যস্ত হয়ে যায়। বলা যায়, আলফি ইতোমধ্যেই আমাদের পারিবারিক বন্ধু হয়ে উঠেছে।



আলফির হাজবেন্ড আজমল বিজনেসম্যান। রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা। ব্যবসায় বেশ সময় দিতে হয় তাকে। তবুও সময় সুযোগ পেলে তিনি আমাদের বাসায় আসেন আলফিকে নিয়ে। বিয়ের বয়স বছর দশেকের হলেও ওদের কোন ছেলেপিলে নেই। এটাই হয় তো এদের একমাত্র শূন্যতা।



এর মাঝে আমাদের দুজনের মফস্বলে ট্যুর পড়লো একসাথে। যেতে হবে খুলনার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ব্যাংকের নতুন ব্রাঞ্চ খোলার ফিজিবিলিটি স্টাডি করতে হবে সরেজমিনে তদন্ত করে। যাব অফিসের গাড়িতে, খুলনায় আমাদের অফিসের গেস্ট হাউজে রাতে থাকার ব্যবস্থা। বউকে বললাম আলফিও আমার সাথে যাবে। বউ বিষয়টাকে স্বাভাবিকভাবেই নিলো। আজমল সাহেবও মোবাইলে বললেন, "ভাই, ট্যুরে আপনি যাচ্ছেন জেনে আমি নিশ্চিত। আলফির কোন প্রব্লেম হবে না নতুন জায়গায় যেয়ে।"



লাঞ্চ করেই আমরা রওয়ানা দিলাম। খুলনা পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় পাঁচটা। গেস্টহাউসটি বেশ ছিমছাম। আমি পড়ার জন্য বেশ কিছু কবিতার বই নিয়ে এসেছি। ওকেও দিলাম কয়েকটি। পাশাপাশি আমাদের রুম। ফ্রেশ হওয়ার জন্য যে যার রুমে চলে গেলাম।



ফ্রেস হয়ে এসে আলফি দরজা নক করলো। বললো কালকে তো সময় পাবো না। চলো হাঁটতে হাঁটতে শহরাটা ঘুরে আসি।



বের হয়ে এলাম। নদী আ্মায় বেশ টানে। মানুষজনকে জিজ্ঞেস করতে করতে রূপসার তীরে এসে গেলাম দুজনে। নিরিবিরি জায়গা বের করে আমরা দুজন বসলাম নদীর তীর ঘেষে। তিরতির শব্দে স্রোত বইছে, ঠান্ডা হাওয়া বেশ। সন্ধ্যা নেমে আসছে, নদীতে প্রতিবিম্ব হয়ে দোল খাচ্ছে লাল সূর্য। একধরণের রোমান্টিক আবহ।আলফির চোখও নদীতে, ডুবন্ত সূর্য কি ওকেও মুগ্ধ করছে! হঠাৎ করেই ও বলে উঠলো-



- অনেকদিন হলো ভাবছি .. সময় এবং সুযোগ না হওয়ায় বলা হয়ে উঠেনি .. আজ তোমার কাছে চাইবো

- কি চাইবে?

- ... ভালোবাসার দাবিতেই চাইবো। তুমিই পারবে শূন্যতা পূরণ করতে... যে হবে আমার ভবিষ্যৎ, যে হবে তোমার মতোনই মননশীল ....

- এতো হেয়ালী করছো কেন? কি চাও স্পষ্ট করেই বলো না !



ও আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বলে, নাহ, এখন নয়। আজ রাতে, গভীর রাতে .. ফিরাবে না তো আমায়?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:১৫

ফ্রাঙ্কেস্টাইন বলেছেন: স্যার লিখা ভালো লাগলো

২| ২৪ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:২০

ডি মুন বলেছেন: আলফির সাথে আমার সম্পর্কটা অব্যাখ্যাত।

গল্পের শেষে এসে বোধহয় আর অব্যাখ্যাত থাকলো না।

গল্পে ভালোলাগা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.