![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেই কবে ... সভ্যতার আদিলগ্নে সূচিত হয়েছিল নিজেকে জানার অদম্য বাসনা। গ্রিক দর্শনের ‘know thyself’ কিংবা ভারতবর্ষের প্রাচীন দার্শনিকদের, “আত্মনাং বিধি”–র উত্তর আজো মেলেনি লাখো লাখো বছরের মানব ইতিহাসে। এই আত্মঅন্বেষণই তাজাকলমের জীবন তপস্যা। তবে নিজেকে জানার সাধনা বৈরাগ্যের পথে নয় বরং মানুষের সাথে থেকে, মানুষকে ভালোবেসে, মানুষের মাঝেই তাজা কলম খুজেঁ পেতে চায় আপন অস্তিত্বের ভূভাগ। তবুও তাজা কলম পৃথিবীতে এক গৃহী সন্নাসী কারন সে নিয়ত খুজেঁ ফিরছে শূণ্য খেকে আসা এবং শূণ্যতেই বিলীন হওয়া মানব জীবনের গুঢ় রহস্য। বিশেষ অনুরোধ: এ ব্লগে প্রকাশিত লেখাগুলো কপিরাইটের আওতাভূক্ত । লেখকের অনুমতি ছাড়া এখানে প্রকাশিত কোন লেখা কিংবা লেখার অংশ বিশেষ কেহ অন্য কোথাও প্রকাশ করলে বেআইনি কাজ হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রয়োজনে লেখকের সাথে যোগাযোগ করুন।
আমি নাস্তিক। ভূত তো দূরঅস্ত, আত্মাতাত্মায়ও বিশ্বাস নেই। ডাক্তারী শাস্ত্রের আলোকে আমি সিদ্ধান্তে এসেছি, দেহাতীত আত্মা বলে কিছু নেই। বস্তুতঃ মানুষের চেতনা পুরোটাই দেহনির্ভর এবং হৃদক্রিয়া বন্ধ হলেই সব শেষ। ধর্মে যে পুনর্জনমের কথা বলা হয় তা মানুষের অমর হয়ে থাকার রোমান্টিক ভাবনার প্রতিফলন।
তবে সেদিনের ঘটনা নাস্তিক আমাকেও ধন্ধে ফেলে দিয়েছে। হঠাৎ করেই মোবাইল পেলাম আমার ছেলেবেলার বান্ধবী আলেয়ার। প্রথমে কন্ঠস্বর চিনতে পারিনি । শেষ দেখা তো কম করে হলেও ত্রিশ বছর আগে। ও নিজে থেকেই পরিচয় দিয়ে বললো, 'আমি আলেয়া ... বাবু, তুমি আমারে চিনতে পারলে না! আমি সেই যে তোমার ভালোবাসা ... তুমি তো এখন ডাক্তার, শুনেছি অনেক বড় ডাক্তার ...'
ওয়ার্ড ভিজিটে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। কথা সংক্ষিপ্ত করতে হলো। আলাপচারিতার সারসংক্ষেপ হলো আলেয়া ক্যান্সারে ভূগছে, ডাক্তাররা জবাব দিয়ে দিয়েছে। ওর নাকি আমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। মনটা খারাপ হয়ে গেল। হাজার হোক ছেলেবেলার বান্ধবী। আর ওই তো আমার জীবনের প্রথম। ঠিকানা চেয়ে নিলাম। বরিশালের বাকেরগঞ্জে শ্বশুর বাড়িতেই আছে এখন।
ওকে সারপ্রাইজ দেব ভেবেই না জানিয়েই শুক্রবারে লঞ্চে উঠে বসি। কেবিনে ঢুকতে না ঢুকতেই ওর ফোন, 'কি রওয়ানা দিলে তবে? আমি খুব খুশী হলাম।' টুকটাক কথাবার্তা বলে ফোন রেখে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। এক ঘুমে রাত কাবার। বেশ ভোরেই বাকেরগঞ্জে এসে পৌঁছি।
এর আগে কোনদিন আসিনি। শুনেছি ছোট্ট শহর। আলেয়াকে ফোন দিতেই খুব খুশী হয়ে বলে উঠে, 'চলে এসেছো? একটি রিক্সা নিয়ে স্ট্রেইট চলে এসো গোরস্তান গেটে। ওখানেই আমি থাকি।'
লঞ্চঘাট থেকে বের হয়েই রিক্সা নেই। গোরস্তানের গেটে পৌঁছতেই আবারো ফোন দেই। বলে, 'গেট দিয়ে ঢুকে দ্বিতীয় সারির ১৬ নম্বর কবরটির কাছে চলে এসো, আমি ওখানেই আছি।' কী জানি, হয়তো বা ও মর্নিং ওয়াকে বের হয়েছে, ভেবেই গোরস্তানে ঢুকি। গোরস্তানের ভেতরেই মসজিদ, ফজরের নামাজ শেষে মুসল্লিরা ফেরা শুরু করেছে।
ওর কথা মতোন ১৬ নম্বর কবরের কাছে যাই। কই কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না! পকেট থেকে মোবাইল বের করি ওকে ফোন করব বলে। কিন্তু একি মোবাইলে ওর নম্বর নেই কেন ! প্রথমদিন কথা বলার পরপরই তো ওর নম্বর সেভ করেছি। এ ছাড়া একটু আগেই তো ওর সাথে কথা বললাম ... ওর নম্বর তো ডিলিট করার প্রশ্নই উঠে না। কল রেকর্ড চেক করেও কোন ট্রেস করা গেল না। স্মৃতিও প্রতারণা করছে, আশ্চর্য কয়েকবার ফোন করার পরও মনে আসছে না ওর নম্বরটি গ্রামীন, রবি, টেলিটক কিংবা অন্য কোন অপারেটরের! এমন বেভুলো তো আমি কখনও ছিলাম না!! তবে?
হঠাৎ চোখ পড়ে শ্যাওলাধরা কবর ফলকে -
মোছাম্মত আলেয়া বেগম
জন্ম -১৯৭০, মৃত্য- ২০১০
তার মানে পাঁচ বছর আগে ও মারা গেছে। মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করতে শুরু করলো, ভাবতে পারছিলাম না কিছুই।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:৩৬
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: দারুণ গপ্প।