![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই তো কিছুদিন আগে প্রথমে এশিয়া কাপ হলো। এশিয়াকাপ শেষ হতে না হতেই নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা সিরিজ খেলার জন্য বাংলাদেশে উপস্থিত। তার কিছুদিন পর থেকেই শুরু হলো ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এভাবে একের পর এক খেলার শিডিউল চলছেই। খেলা চলাকালীন দেশবাসীর আবেগ-উচ্ছ্বাস উদ্বেগজনক। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পর্দা লাগানো হয়৷ প্রতিটি পর্দার সামনে জড়ো হয় শতশত আবেগি দর্শক। সম্মিলিতভাবে মেতে ওঠে খেলা দেখায়। থেকে থেকে ভেসে আসে সমবেত কণ্ঠের গগনবিদারী উল্লাসধ্বনি। মসজিদে নামাজরত মুসল্লীদের নামাজে ব্যাঘাত ঘটছে, কিন্তু তাতে কার কী আসে যায়? খেলার বিপরীতে ধর্ম-নামাজ-ইবাদাত যেন চূড়ান্ত এক গৌণকর্ম।
.
অনেক নিয়মিত নামাজিও এ সময় দেদারসে নামাজ ছেড়ে দেয় বা কোনোমতে পড়ে নেয়। পরকালের কোনও ভয় নেই। এক বসাতেই কেটে যাচ্ছে দুই-তিন-চার-পাঁচ ঘণ্টা সময়ও। কী এক অদ্ভুত অবস্থা! যেন দুনিয়াতে খেলা-ই সব! খেলা-ই প্রধান, বাকি সব প্রয়োজন মাত্র!! সামান্য এক খেলার সামনে আমাদের দীন-ধর্ম কতটা অসহায়, খেলা চলাকালীন আমাদেরকে চরম হতাশায় নিমজ্জিত করে এ সত্য তার দাপুটে জানান দিয়ে যাচ্ছে৷
.
বদলে গেছে জয়-পরাজয়ের সংজ্ঞা
একেবারেই তুচ্ছ ও অনালোচ্য এই খেলার জয়-পরাজয় এখন উপস্থাপিত হচ্ছে একটি দেশের জয়-পরাজয়ের ভূমিকায়। আকর্ষণীয় শিরোনাম দিয়ে দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলো যেন এই দৃষ্টিভঙ্গিই মানুষের অন্তরে বদ্ধমূল করানোর দায়িত্বে নিয়োজিত। “নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয় টাইগারদের”, “নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টাইগারদের দাপুটে জয়”, জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বড় জয়” ইত্যাদি আরও বহু শিরোনাম পাবেন দৈনিক পত্রিকাগুলোতে। ইসলামকে বিশ্বের বুকে উঁচু করার মহৎ উদ্দেশ্যে কাফেরদের পরাজিত করে কোনও দেশ জয় করার পূর্ববর্তী সেই আনন্দ এখন আমরা নিছক খেলার জয় থেকে নিচ্ছি! কত বোকা আমরা!! মুসলিমদের মন-মস্তিষ্ক থেকে এভাবেই জয়-পরাজয়ের সংজ্ঞাকে আমূল বদলে দিয়েছে কাফেররা। তাই তো মুসলিম যুবকরা এখন আর অস্ত্রচালনা শেখে না; শেখে ব্যাট চালনা। তাদের অবচেতন মন এটা বিশ্বাস করেই নিয়েছে যে, বল খেলেই আমি আমার দেশকে বিজয়ী করতে পারব।
.
বস্তুত, আন্তর্জাতিক বিশ্বে এই বিজয়ের স্বার্থকতা কতটুকু? এরকম হাজারও বিজয়ে কি কাফেরদের ঔদ্ধত্যে বিন্দুমাত্রও হ্রাস আসবে? বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের উপর চলমান জুলুম-নির্যাতন কি এক তিল পরিমাণও কমবে? পরাজিত দেশের উপর কি আমাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে?—ইত্যাদি প্রশ্নগুলো নিয়ে তারা ভাবছে না; ভাববার সুযোগ পাচ্ছে না।
.
আরও দুঃখজনক ব্যাপারটা কী, জানেন? স্টেডিয়াম নামক চার দেয়ালের এক বাউন্ডারির ভেতর কয়েক ঘণ্টার দৌড়ঝাঁপ আর আত্মঘাতী লম্ফঝম্পের বিনিময়ে অর্জিত যে ‘পদার্থ’টিকে আমরা নিজেদের বিজয় বলে অভিহিত করছি, এমন মূল্যহীন, অতি গৌণ কোনও ‘পদার্থ’কে বিশ্বমোড়লরা কিন্তু দেশজয় ভাবছে না। তারা বিজয় বলতে সেটাই বুঝে, যেটা বুঝত তাদের পূর্বপুরুষ ক্রুসেডাররা। তাদের কাছে বিজয়ের সংজ্ঞা এখনও অপরিবর্তিত-ই আছে।
.
এ সত্য তারা ভালোভাবেই জানে যে, খেলার জয়-পরাজয়ের কোনও বাস্তবতা নেই। বাচ্চাদের মতো, বোকা মুসলিমদের কিছু একটা দিয়ে ব্যস্ত রেখে মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতে রাজদণ্ড পরিচালনা করাই তাদের মূল লক্ষ্য। আমরা যখন ব্যাট দিয়ে বল পিটিয়ে বাউন্ডারি পার করার নিরর্থক আনন্দে উল্লাস করছি, ঠিক তখন আমেরিকা ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলো ইয়েমেন, সিরিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া আর মালিতে মুসলিমদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে তাদের বাস্তুহারা করার আনন্দে উল্লাস করছে। আন্তর্জাতিক জারজ রাষ্ট্র ইসরায়েলের বর্বর জায়নিষ্টরা ফিলিস্তিনিদের বন্দী, হত্যা ও স্বদেশ থেক বিতাড়িত করে সেখানে ইহুদিদের পুনর্বাসন দেওয়ার আনন্দে উল্লাস করছে। কমিউনিস্ট রাশিয়াও মেতে আছে রাজ্যজয়ের নেশায়। চীনও ব্যস্ত আছে সারাবিশ্বে নিজস্ব ব্যবসার বিস্তার ঘটিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কাজে। কিন্তু একমাত্র আমরাই সেই হতভাগা জাতি, যারা জয়-পরাজয় সংজ্ঞা পরিবর্তন করে ফেলেছি।
.
আরও দুঃখজনক হলো, নিজের দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আমরা আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, স্পেন আর জার্মানের সমর্থক হয়ে আনন্দ করছি ফুটবল বিশ্বকাপে। অথচ তাদের জয়-পরাজয়ে আমাদের কী আসে যায়? কতটুকু লাভ-ক্ষতি আমাদের হয়? এভাবে ভেবে দেখার সুযোগ হয়নি কখনও। আমাদের নির্বুদ্ধিতার পূর্ণ সুযোগ লুটে নিচ্ছে ক্রুসেডাররা। মনে রাখবেন, আমরা যতদিন পর্যন্ত এসব অহেতুক খেল-তামাশা বর্জন করে নিজেদের দীন-ধর্ম এবং মুসলিম উম্মাহকে নিয়ে ব্যস্ত না হব ততদিন আমাদের গর্দান থেকে গোলামির জিঞ্জির নামবে না৷
.
আচ্ছা, আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন, অ্যামেরিকা, ইসরায়েলে, চীন, রাশিয়া এই দেশগুলোর বেশিরভাগের বিশ্বকাপ ফুটবল কিংবা ক্রিকেট টিমই নেই। কারো থাকলেও নামমাত্র। এসব দেশ চাইলে পৃথিবীর সেরা ফুটবল ও ক্রিকেট টিম তৈরি করতে পারে নিঃসন্দেহে। কিন্তু তারা এসবে তেমন একটা মনোযোগ দিচ্ছে না। রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব খেলা নিয়ে তেমন একটা মাতামাতিও করে না।
.
আর কোনো জাতিকে যদি আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাহলে সে জাতিকে এমন কোনো কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে, যেটাতে ব্যস্ত থেকে তাদের কোনো লাভ হবে না। কিন্তু সেটাতে ব্যস্ত থাকার কারণে আপনাকে নিয়ে তারা ভাববার সুযোগ পাবে না৷ বিশ্বমোড়লরা ঠিক এই কাজটাই করছে৷ আমাদেরকে খেলার নেশায় উন্মাদ রেখে আমাদের উপর দণ্ডমুণ্ডের কর্তা সেজে বসেছে। আমরা নিজেদের ভাগ্যকে ওদের হাতে তুলে দিয়ে নিজেরা মেতে আছি অনর্থক, অহেতুক ও ফালতু খেলতামাশায়।
.
কত শিক্ষার্থী যে এই খেলার নেশায় পড়ে নিজের সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার ধ্বংস করে ফেলেছে, এর কোনো হিসাব নেই। ফুটবল বিশ্বকাপের সময় আমরা দেখেছি, নিজের সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে মাগুরার কৃষক আমজাদকে সাড়ে সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্য জার্মানির পতাকা বানাতে
(Click This Link)
নিজের পছন্দের দল বিজয়ী হলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বিরিয়ানি খাওয়ানোর ঘটনা তো বাংলাদেশেই ঘটছে৷ অথচ হাজার হাজার বনী আদম এদের সামনে অভুক্ত থাকে। শীতের মৌসুমে বস্ত্রের অভাবে কষ্ট করে। কিন্তু ধর্ম ও মানবতার প্রতি তাদের বিন্দুমাত্রও দরদ নেই। আপনি অনেক মুসলিমকে এমন পাবেন যারা মেসি, নেইমার আর রোনালদোকে নিজেদের আদর্শ মনে করে। তাদের স্টাইলে চুল কেটে গর্ববোধ করে। জীবনে তাদের মতো খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন লালন করে। বুকে ও পিঠে তাদের নাম লেখা টি শার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়।
.
অথচ তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত বাণী সম্পর্কে সম্পূর্ণ বেখবর। তিনি স্বীয় পাক যবানে ইরশাদ করেন:
قِيلَ للنبيِّ ﷺ: الرَّجُلُ يُحِبُّ القَوْمَ ولَمّا يَلْحَقْ بهِمْ؟ قالَ: المَرْءُ مع مَن أحَبَّ.
নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, কেউ কোনো জাতিকে ভালোবাসলো কিন্তু তাদের সাথে মিলিত হতে পারল না, এমন ব্যক্তি সম্পর্কে কী বলুন? তিনি বললেন: কিয়ামতের দিন প্রত্যেক মানুষ তার সাথেই থাকবে, দুনিয়াতে সে যাকে ভালোবাসত।(সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬১৭০)
.
এজন্য কাকে ভালোবাসছি, জীবনকে কার মতো করে সাজাচ্ছি, আমার পোশাক-আশাক, চেহারা-সূরত কার মতো হচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখা আমাদের প্রত্যেকের ঈমানী কর্তব্য। মেসি, নেইমার, আর রোনালদোদের ঈমান নেই, অন্তরে ঈমান পোষণকারী কোনও মুমিন কী করে এদেরকে নিজের জীবনের আদর্শ বানাতে পারে? অথচ হাজারও মাজলুম মুমিনের প্রতি আমাদের কতজনের অন্তরে প্রকৃত দরদ আছে!!
.
ওয়াল্লাহি, অন্তরে মুমিনদের জন্য ভালোবাসা ও সহমর্মিতা না রেখে নিকৃষ্ট কাফের-মুশরিকদের ভালোবাসা লালন করা মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ও মারাত্মক অবক্ষয়৷ এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আমাদের বিজয়ের স্বপ্ন দেখা শুধুই কল্পনাবিলাস, শুধুই কল্পনাবিলাস। আল্লাহ তা'আলা আমাদের বোঝার তাওফীক দান করেন আমিন!
©somewhere in net ltd.