![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উপমহাদেশের হিন্দুদের মুসলিম বিদ্বেষের ইতিহাস বহু পুরনো। যুগ যুগ ধরেই তারা মুসলিম বিদ্বেষ লালন করে আসছে। সুলতানী আমলে মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকলেও ব্রিটিশরা আসতেই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ব্রিটিশদের সাথে হাত মিলিয়ে শুরু করে ভয়াবহ মুসলিম নির্যাতন। ব্রিটিশরা ক্ষমতায় থাকাকালীন সাধারনত হিন্দুদেরকেই রাজত্ব ও জমিদারী দান করতো। কিন্তু তারা একে প্রজাদের সেবা করার সুযোগ মনে না করে মুসলিমদের উপর নির্যাতনের হাতিয়ার বানাতো। এমন কোন নির্যাতন ছিলোনা যা তারা মুসলিমদের উপর করতোনা। তারা নির্যাতনের এমন এমন পদ্ধতি আবিস্কার করেছিল যা কল্পনাকেও হার মানায়।
.
ইসলামী নাম রাখার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, এই ধরণের নাম রাখলে তাদের কর দিতে হতো, দাঁড়ির জন্য কর দিতে হতো, মুসলিমদের রীতি নীতি পালনে নিষেধাজ্ঞা ছিল। গরু জবাই ছিল নিষিদ্ধ। হিন্দুদের পূজা পার্বণ এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল। এছাড়াও ইসলামবিরোধী ও মানবতাবিরোধী আরো অনেক নিয়মনীতি ছিল, যা পালনে সবাই বাধ্য থাকতো। একটু এদিক সেদিক হলেই শুরু হতো ভয়াবহ নির্যাতন। সেসব নির্যাতনের কথা ভাবলে আজও ভয়ে বুক কেঁপে ওঠে।
হিন্দুদের এসকল নির্যাতন থেকে মুসলিমদের মুক্তি দেয়ার জন্যই শহীদ তিতুমীর ও হাজী শরীয়তুল্লাহর মত বীরেরা (রহিমাহুমুল্লাহ) সেসময় ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
.
এভাবে প্রায় শতাব্দীকালেরও বেশি সময় ধরে মুসলিমদের উপর নির্যাতন চালায় হিন্দুরা। এরপর ১৯৪৭ সালে যখন দেশভাগ হয় তখন নির্যাতনের সুযোগ হাতছাড়া হতে দেখে রাগে ক্ষোভে বিভিন্নস্থানে পরিকল্পিতভাবে দাঙ্গা লাগায়। এসব দাঙ্গায় সেসময় হাজার হাজার মুসলিম প্রাণ হারান। আজও থামেনি তাদের সেই হিংস্রতা। ভারতে গত পঁচাত্তর বছরে কয়েক হাজার দাঙ্গা বাঁধিয়েছে তারা। যার মাধ্যমে কয়েক লাখ মুসলিমকে হত্যা করেছে।
.
এসব দাঙ্গার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো...
(১) ১৯৬৪ সালের কলকাতা দাঙ্গা, এই দাঙ্গায় অন্তত ৮শ মুসলমান নিহত হন
(২) নেলী গণহত্যা, ১৯৮৩ সালে আসামে সংঘটিত এই গণহত্যায় অন্তত দশ হাজার মুসলিম প্রাণ হারিয়েছেন।
(৩) মুরাদাবাদ গণহত্যা, ১৯৮০ সালে উত্তরপ্রদেশের মুরাদাবাদে সংঘটিত এই গণহত্যায় পুলিশের গুলিতে এবং দাঙ্গায় কয়েকশো মুসলিম নিহত হয়।
.
(৪) হাশিমপুরা গণহত্যা, ১৯৮৭ সালে উত্তর প্রদেশের মিরাট শহরে স্রেফ মুসলিম হওয়ার অপরাধে পুলিশ গুলি চালিয়ে অন্তত ৩৮ জন মুসলিমকে হত্যা করে এবং উগ্র হিন্দুদের আগুনে পুড়ে ও তরবারীর আঘাতে আরো অসংখ্য মুসলিমকে নিহত হয়।
(৫) ভাগলপুর দাঙ্গা, ১৯৮৯ সালে বিহারে সংঘটিত এই দাঙ্গায় অন্তত ১ হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয় এবং ৫০ হাজার মুসলমানকে ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হয়।
(৬) বাবরী মসজিদ ধ্বংস পরবর্তী দাঙ্গা, ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদ ধ্বংস এবং একে কেন্দ্র করে সংঘটিত দাঙ্গায় অন্তত দুই হাজার মুসলিমকে হত্যা করা হয়।
.
(৭) গুজরাট দাঙ্গা, ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ২০০২ সালে গুজরাটে সংঘটিত ওই দাঙ্গায় অন্তত ১০ হাজার মুসলিম নিহত হন।
(৮) দিল্লি দাঙ্গা, ২০২০ সালে রাজধানী দিল্লিতে সংঘটিত এই দাঙ্গায় অন্তত পঞ্চাশজন মুসলিমকে হত্যা করা হয় এবং বিচারের নামে ভুক্তভোগী মুসলিম যুবকদের জেলে ভরে আরেকদফা নির্যাতন করা হয়।
.
এখানে আমরা বড় বড় কয়েকটি দাঙ্গার ঘটনা উল্লেখ করেছি। এগুলো ছাড়াও ভারতে অসংখ্য দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে, যাতে কয়েক লাখ মুসলিম প্রাণ হারিয়েছেন। ইদানিং আবার মুসলিম নিধনের নতুন পদ্ধতি আবিস্কার করা হয়েছে, অন্যায় অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে বা পুড়িয়ে হত্যা করা। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে এমন ঘটনা। গত কয়েক বছরে এসব ঘটনায় কয়েকশো মুসলিম হতাহত হয়েছেন।
.
কয়েক বছর ধরে উপমহাদেশের হিন্দুদের মাঝে বাংলাদেশ,ভারত,পাকিস্তান নিয়ে অখন্ড হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবী জোরালো হয়েছে। জনমত গঠনের জন্য ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতা নেত্রী এবং মন্দিরের সাধু সন্তরা জায়গায় জায়গায় নিয়মিত সভা সেমিনারের আয়োজন করছে। এসব সভায় প্রকাশ্যে মুসলিম গণহত্যার কথা বলা হচ্ছে। হিন্দু রাষ্ট্রের কাঠামো সম্পর্কে হিন্দু নেতারা বলছেনঃ এই রাষ্ট্রে মুসলিমদের কোন স্থান দেয়া হবেনা, কেউ থাকতে চাইলে তাকে অবশ্যই ঘর ওয়াপসি করতে হবে অর্থাৎ হিন্দু হয়ে থাকতে হবে। এরপরও যদি কেউ রয়ে যায় তাহলে তাদের সাথে আরাকানী মুসলিমদের মত আচরণ করা হবে অর্থাৎ গণহত্যা করা হবে। এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে মসজিদ মাদ্রাসা সহ কোন ধরণের ইসলামী নিদর্শন বাকি রাখবেনা তারা।
.
ভারত ধীরে ধীরে ভয়াবহ মুসলিম গণহত্যার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, এর জন্য যত ধরণের প্রস্তুতি নেয়া দরকার তার সবই নেয়া হচ্ছে। জায়গায় জায়গায় হিন্দু সাধু সন্তরা ধর্মসভার আয়োজন করছে। এসব সভায় কিভাবে নিজেকে হেফাজত করে মুসলিমদের হত্যা করতে হবে সেই সবক শেখানো হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরাও জনসভাগুলোতে মুসলিম বিরোধী বক্তব্য দিয়ে জনগনকে ক্ষেপিয়ে তুলছে।
ফেসবুক হোয়াটস্যাপ গ্রুপগুলোতে আরএসএসের সদস্যরা বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য দিয়ে হিন্দুদের মাঝে উগ্রতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। জায়গায় জায়গায় আরএসএস বজরংদল বিশ্বহিন্দু পরিষদ সহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে। এসব আয়োজনে ছোট ছোট বাচ্চাদের থেকে শুরু করে নারী পুরুষ সবাইকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। যেন সবাই মিলে পরিকল্পিতভাবে খুব সহজে মুসলিমদের হত্যা করতে পারে। জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর গ্রেগরি স্ট্যানটনের মতে ভারতে গণহত্যার ১০টি ধাপের নয়টি ধাপই পুর্ণ করা হয়েছে। এখন শুধু গণহত্যা করার ধাপটি বাকি আছে।
.
শুধু সীমান্তের ওপারে নয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতেও এই বিষাক্ত হাওয়া এসে লেগেছে, আরএসএসের অধীনে এদেশে অনেকগুলো সংগঠন এই লক্ষ্যে কাজ করছে। সাম্প্রতিককালে দেশজুড়ে হিন্দুদের ব্যাপক বাড়াবাড়ি, মুসলিম মেয়েদের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরিত করা (সুযোগ পেলে ভারতে পাচার করা) এবং ফরিদপুরে দুই নির্মাণ শ্রমিককে হত্যা করা এর সামান্য কিছু উদাহরণ। আওয়ামী সরকারের পতন হলেও তাদের ষড়যন্ত্র থামেনি।
.
ভারতের মিডিয়াগুলোতে ফেইক নিউজ ও ভিডিও পাঠিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টায় আছে তারা। আমরা যদি এখনই সচেতন না হই এবং সাধ্যমত প্রস্তুতি না নেই তাহলে হয়তো পরবর্তীতে অনেক বেশি আফসোস করতে হবে। কিন্তু সেই আফসোস আমাদের কোন কাজে আসবেনা। তাই আমাদের সবাইকে চোখ কান খোলা রাখতে হবে এবং সাধ্যমত প্রস্তুতি নিতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের হেফাজত করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
©somewhere in net ltd.