![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারক শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক পরিচিত একটি নাম। বিচারের নামে অবিচার এবং সময়ে সময়ে করা দম্ভোক্তির কারণে বিশেষভাবে কুখ্যাত ছিল সে। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে চোরের মতো পালানোর সময় ধরা পড়েছে। অথচ এই কিছুদিন পূর্বেও—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ও তার উদ্ধত আচরণ, যুদ্ধংদেহি মনোভাব এবং অন্যায় হুমকি দেশের মানুষকে অবাক করেছে, আহত করেছে। সেদিনকার সেই দাম্ভিক-গর্বোদ্ধত মানিকের আজ এই অবস্থা কেন? কারণ, এখন আর ক্ষমতা নেই। ক্ষমতা মানুষকে এমনই দাম্ভিক আর অহংকারী বানিয়ে রাখে। ক্ষমতার চেয়ার সরে গেলেই সে বুঝতে পারে, এই সমাজে মূলত তার এক পয়সারও মূল্য নেই।
.
শুধু এক মানিক না; আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানও পলায়নরত অবস্থায় গ্রে-প্তা/র হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ওবায়দুল কাদের, আইনের লেবাসধারী জু/লু-মে'র আরেক মূর্ত প্রতীক ডিবি হারুনসহ অসংখ্য নেতাকর্মী পলাতক। শুধু কি তাই, জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররামের খতীব রুহুল আমিনও লাপাত্তা। । সাধারণ জনতা এসকল জালিমদের শাস্তি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। দিনে দিনে জু/লু-মে'র খাতায় যে দেনা-পাওনার যে বিপুল হিসাব জমেছে দীর্ঘ এই ১৫ বছরে, সাধারণ জনতা গড়ায়-গণ্ডায় তা শোধ করতে চায়।
.
আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, দিপু মনি, বিচারপতি মানিক, হাসানুল হক ইনু ও আরাফাতসহ যারা ইতোমধ্যে গ্রে-প্তা/র হয়েছে, তাদের প্রতি জনমানুষের দীর্ঘদিনের সঞ্চিত আ'ক্রো'শ আপনারা নিশ্চয় দেখেছেন। জু/লু-মে'র রাজ্য যারা তৈরি করে তাদের শেষ পরিণাম এমনই হয়।জনৈক লেখক উদ্ধৃত করেছেন: “রাজ্য চালনা হচ্ছে, সিংহের পিঠে বসে জীবন কাটানো। অর্থাৎ, সে-সিংহের পিঠ থেকে এক মুহূর্তের জন্য নামবার উপায় নেই। (যতক্ষণ তুমি উপরে আছো, ততক্ষণ তুমি নিরাপদ। একবার নামলেই শেষ। শুধু শুধু কি আর রাজার আসনকে “সিংহাসন” বলে!)
.
এর বিপরীত চিত্রটিও আপনারা দেখেছেন নিশ্চয়ই — কারারুদ্ধ মাজলুমদের কারাগার/আয়নাঘর থেকে বেরিয়ে আসার চিত্রটি। এতদিন যারা নি'র্যা'তনের শিকার ছিলেন, সাধারণ জনতা আজ তাদের কেমন বিপুল উচ্ছ্বাসে বরণ করে নিচ্ছে। দিনের পর দিন মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দী থাকা উলামায়ে কেরামের মুক্তির দৃশ্যও আপনারা দেখেছেন নিশ্চয়ই। লাখ লাখ জনতার এমন নির্মল-স্বচ্ছ আর অকৃত্রিম ভালোবাসাকে স্বৈরাচারী সরকার কারাগারে বন্দি করে রেখেছিল। প্রতিটি পাঁজরের হাড় নিঙরে আজ সে ভালোবাসা বয়ে যাচ্ছে বাঁধভাঙা স্রোতের ন্যায়। এরাই তো প্রকৃত বাদশাহ, যাঁরা মানুষের হৃদয়ে বসে বাদশাহী করেন। আজ দেলোয়ার হুসাইন সাঈদী রহিমাহুল্লাহ বেঁচে থাকলে সাধারণ জনতা তাঁকেও এভাবেই বরণ করে নিত। তিনি সসম্মানে বেরিয়ে আসতেন কারাগার থেকে।
.
বস্তুত এই দুনিয়ার প্রকৃত বাদশাহ আল্লাহ্ তাআলা। তিনি যাকে ইচ্ছা সামান্য কদিনের ক্ষমতা দান করেন। অথচ সামান্য কদিনের ক্ষমতা মানুষকে সাক্ষাৎ ফেরাউনে পরিণত করে দেয় যখন সে কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী সেই ক্ষমতাকে ব্যবহার না করে।। সে বেমালুম ভুলে যায় যে, তার উপরেও একজন বাদশার বাদশাহী চলছে। ফলে আল্লাহ্ তাআলা কখনো কখনো নিজ বাদশাহীর প্রকাশ ঘটান। কিয়ামতের দিন কারো বাদশাহী কোনো কাজে আসবে না। সেদিনের রাজত্ব একমাত্র আল্লাহ্ তাআলার। পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত মানুষ এসেছে, সকলকে একত্রিত করে সেদিন তিনি ঘোষণা করবেন: لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ (আজকের রাজত্ব কার?) মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলার ভয়ে যখন কেউ তাঁর এই প্রশ্নের উত্তর দেবে না, তখন তিনি নিজেই এই প্রশ্নের উত্তর দেবেন: لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ (এক (অদ্বিতীয়) প্রবল পরাক্রমশালী আল্লাহর। সুরা আল-মুমিন, আয়াত নং-১৬) এর পরের আয়াতে তিনি বলেন: الْيَوْمَ تُجْزَى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ لَا ظُلْمَ الْيَوْمَ (আজ প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের প্রতিদান দেওয়া হবে; আজ কোনো জু/লু-ম করা হবে না।)
.
সুতরাং এখনো যারা ক্ষমতায় আছেন তারা পূর্ববর্তীদের ইতিহাস স্মরণ রাখুন। ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে যাবেন না। নিজেদের অজ্ঞাতসারে জালিম হয়ে যাবেন না। সুদ-ঘুষের রাজত্ব কায়েম করবেন না। ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ করবেন না। আলেম-উলামা ও দীনদার শ্রেণীর সঙ্গে জু/লু-মে'র আচরণ করবেন না। রাসূলকে নিয়ে কটাক্ষকারীদের প্রশ্রয় দেবেন না। আল্লাহ্ তাআলা যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দান করেন আর যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন— এ বাস্তবতা এখন আপনাদের সামনেই। আপনারা ক্ষমতা থেকে নামার পর জনসাধারণ আপনাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করবে তা ঠিক করার দায়িত্ব স্বয়ং আপনাদের হাতেই ন্যস্ত।
©somewhere in net ltd.