![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আপনি কার আদর্শের অনুসারী?
.
আজ আমরা যাদের অনুসরণ করছি, যাদের আদর্শকে উন্নতি, অগ্রগতি এবং আধুনিকতা ও সভ্যতার মাপকাঠি মনে করছি-তারা কি আমাদের জন্য সত্যিই অনুসরণীয় নাকি তাদের অনুসরণ আমাকে জাহান্নামের অতল গহবরে নিক্ষেপ করবে, এই প্রশ্ন নিয়ে কি কখনো ভেবেছি?
.
আমার মনে কি কখনো এই প্রশ্ন জেগেছে যে, প্রকৃতপক্ষে আমার জন্য অনুসরণীয় ব্যাক্তি কে? কার অনুসরণের মাধ্যমে আমি দুনিয়া ও আখিরাতে প্রকৃত সফলতা লাভ করতে পারবো?
.
এই প্রশ্নের উত্তরে বিভিন্নজন হয়তো বিভিন্ন কথা বলবে। কেউ বলবে পশ্চিমাদের কথা। কেউ বলবে নায়ক নায়িকা বা খেলোয়াড়দের অনুসরণের কথা। কেউ বলবে অমুক ব্যক্তির অনুসরণের কথা, কেউ বলবে অমুক দলের অনুসরণের কথা। সবাই নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী উত্তর দেবে। কিন্তু সঠিক উত্তর পেতে হলে আমাদেরকে আমাদের মালিকের পক্ষ হতে প্রেরিত কিতাব কুরআনুল কারীমের কাছে ফিরতে হবে। কারণ কুরআনুল কারীমই আমাদেরকে সব ব্যাপারে সঠিক দিশা দিতে পারে। কার অনুসরন আমাকে সফলতার পথ দেখাবে আর কার অনুসরণ আমাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে এই ব্যাপারে কুরআনুল কারীম আমাদেরকে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়েছে।
.
যাদের অনুসরণ করবো আমরা-
সর্বপ্রথম আমরা যার অনুসরণ করবো তিনি হলেন সাইয়িদুল মুরসালিন খাতামুন নাবিয়্যিন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন।
لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا
নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে যারা আল্লাহ ও পরকালে প্রত্যাশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে। সূরা আহজাব-২১
.
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করবে সে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করবে এবং দুনিয়া আখিরাতে সফলকাম হবে।
আল্লাহ তাআলা সূরা আলে ইমরানে ইরশাদ করেন-
قُلۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُحِبُّوۡنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوۡنِیۡ یُحۡبِبۡکُمُ اللّٰهُ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
হে নবী আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন, বস্তুতঃ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সুরা আলে ইমরান-৩১
.
সকল নবীর আদর্শ একই ছিল। তা হল সীরাতে মুস্তাকিম। সকল রাসুলের পথ একই ছিল-তা হল একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার ইবাদত এবং তাগুতকে বর্জন। এই পথ আমাদের কে অনুসরণ করতে হবে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন- وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
আমি সকল জাতির মাঝে রাসুল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো। (সুরা নাহলঃ৩৬)
.
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কুরআনে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামকে অনুসরণ করতে। নবীদেরকে অনুসরণ করার ব্যপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন- أُولَٰئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ ۖ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ ۗ قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا ۖ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرَىٰ لِلْعَالَمِينَ
তারাই হলেন এমন যাদেরকে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা পথপ্রদর্শন করেছেন, সুতরাং তাদের পথের দিশা আপনি অনুসরণ করুন, আপনি বলে দিন আমি এর বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাইনা। এটা তো উপদেশ সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য। (সুরা আনয়ামঃ৯০)
.
মিল্লাতে ইব্রাহীমের অনুসারী হিসেবে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আদর্শের অনুসরণ করা আমাদের সবার কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা সুরা মুমতাহিনায় ইরশাদ করেন-
قَدۡ کَانَتۡ لَکُمۡ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ فِیۡۤ اِبۡرٰهِیۡمَ وَ الَّذِیۡنَ مَعَهٗ ۚ اِذۡ قَالُوۡا لِقَوۡمِهِمۡ اِنَّا بُرَءٰٓؤُا مِنۡکُمۡ وَ مِمَّا تَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ ۫ کَفَرۡنَا بِکُمۡ وَ بَدَا بَیۡنَنَا وَ بَیۡنَکُمُ الۡعَدَاوَۃُ وَ الۡبَغۡضَآءُ اَبَدًا حَتّٰی تُؤۡمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَحۡدَهٗۤ اِلَّا قَوۡلَ اِبۡرٰهِیۡمَ لِاَبِیۡهِ لَاَسۡتَغۡفِرَنَّ لَکَ وَ مَاۤ اَمۡلِکُ لَکَ مِنَ اللّٰهِ مِنۡ شَیۡءٍ ؕ رَبَّنَا عَلَیۡکَ تَوَکَّلۡنَا وَ اِلَیۡکَ اَنَبۡنَا وَ اِلَیۡکَ الۡمَصِیۡرُ
অবশ্যই তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার সাথে যারা ছিল তাদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, “আমরা তোমাদের থেকে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত কর তা হতে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষনা দিচ্ছি। আমরা তোমাদেরকে অস্বীকার করি। আমাদের ও তোমাদের মাঝে চিরকালের জন্য শক্ৰতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হল; যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন। তবে ব্যতিক্রম তাঁর পিতার প্রতি ইবরাহীমের উক্তিঃ আমি অবশ্যই আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব; আর আপনার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আমি কোন কিছুর অধিকার রাখি না। (ইবরাহীম ও তাঁর অনুসারীগণ আরো বলেছিলেন) হে আমাদের রব! আমরা আপনারই উপর তাওয়াক্কুল করেছি, আপনারই অভিমুখী হয়েছি, আর আপনার কাছেই তো ফিরে যেতে হবে। সুরা মুমতাহিনা-৪
.
এমনই ছিলেন আমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। কাফেরদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষনা দিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি, সাথে শত্রুতা এবং বিদ্বেষের ঘোষনাও দিয়েছেন তিনি।
.
দ্বিতীয়ত আমরা সাহাবায়ে কেরাম ও খাইরুল কুরুনের ইত্তিবা করবো।
আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে সাহাবায়ে কেরামের ইত্তিবার নির্দেশ দিয়ে বলেন-
فَاِنۡ اٰمَنُوۡا بِمِثۡلِ مَاۤ اٰمَنۡتُمۡ بِهٖ فَقَدِ اهۡتَدَوۡا
সুতরাং তারা যদি তেমন ঈমান আনে, যেমন তোমরা ঈমান এনেছো, তাহলে তারা সঠিক পথ পাবে। সুরা বাকারা ১৩৭
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
خَيْرُكُمْ قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ قَالَ عِمْرَانُ لاَ أَدْرِي ذَكَرَ ثِنْتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا بَعْدَ قَرْنِهِ ثُمَّ يَجِيءُ قَوْمٌ يَنْذِرُونَ وَلاَ يَفُونَ وَيَخُونُونَ وَلاَ يُؤْتَمَنُونَ وَيَشْهَدُونَ وَلاَ يُسْتَشْهَدُونَ وَيَظْهَرُ فِيهِمْ السِّمَنُ
তোমাদের মধ্যে আমার যুগ সর্বোত্তম, এরপর তাদের পরবর্তী যুগ অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগ। .......এরপর এমন লোকেরা আসবে যারা মানত করবে কিন্তু তা পূর্ণ করবে না। তারা খিয়ানাত করবে, আমানতদার হবে না। তারা সাক্ষ্য দেবে অথচ তাদের কাছে সাক্ষ্য চাওয়া হবে না। আর তাদের মাঝে স্থুলতা প্রকাশ পাবে। বুখারী ৬৬৯৫
.
এই হাদীস থেকে বোঝা যায় যে, উম্মতের জন্য অনুসরণীয় হল প্রথম তিন যুগের মুসলিমরা। অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন এবং আতবায়ে তাবেয়ীন। কারণ তারা নবুয়তের যুগের কাছাকাছি ছিলেন এবং তাদের সময়কালে ফিসক ফুজুর এবং নফসের অনুসরণ ছিল খুবই স্বল্প পরিমাণে।
.
সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুসরণযোগ্য হলেন খোলাফায়ে রাশেদীন রাদিয়াল্লাহু আনহুম। এক হাদীসে রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের ইত্তিবার আদেশ দিয়ে বলেছেন-
فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাত এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাগণের সুন্নাতের অনুসরণ করবে, তা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনের মধ্যে নব আবিষ্কার হতে দূরে থাকবে! কারণ প্রতিটি নব আবিষ্কার হলো বিদআত এবং সব ধরণের বিদআতই হল ভ্রষ্টতা। আবু দাউদ- ৪৬০৭
.
খাইরুল কুরুনের পর যুগে যুগে যেসকল নেককার এবং আল্লাহভীরু মুত্তাকীদের আগমণ হয়েছে তাদেরও অনুসরন করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে জামাতে সাহাবা এবং খোলাফায়ে রাশেদীন ছাড়া অন্যদের যেন অন্ধ অনুকরণ না করা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা কুরআন সুন্নাহ এবং সাহাবায়ে কেরামের পথে অটল থাকবেন ততক্ষন তাদের অনুসরণ করা হবে। কোনো ক্ষেত্রে এর ব্যাতিক্রম দেখা গেলে ওই ক্ষেত্রে তার অনুসরণ বর্জন করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে কুরআন সুন্নাহ এবং সাহাবায়ে কেরামের প্রকৃত অনুসারী হওয়ার তাওফিক দান করুন।
.
লেখার তারিখ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
©somewhere in net ltd.