![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুরআন আজ আমাদের কাছে এতটাই গুরুত্বহীন যে, খেল তামাশা, গল্প গুজব ও অহেতুক কাজের জন্য সময় বের করতে পারলেও কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত ও অনুধাবনের জন্য একটুখানি সময় বের করতে পারিনা। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস যায় অথচ কুরআনুল কারীম ধরেও দেখা হয়না। কুরআনের উপর ধুলার আস্তরণ জমে যায় অন্তরটাও নিফাকের আঁধারে ঢেকে যায় তবু বোধোদয় হয়না, গাফলতের ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠার প্রয়োজন অনুভব করিনা।
.
আল্লাহ তাআলা তো এই কিতাবকে আমাদের হেদায়াতের জন্য পাঠিয়েছেন, মানুষের দাসত্ব থেকে বের হয়ে রবের গোলামীর দিকে ফেরার জন্য পাঠিয়েছেন। এই কিতাবের মাধ্যমে আমাদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মতের সম্মান দান করেছেন। এই কিতাব ধারণের মাধ্যমেই সাহাবায়ে কেরাম দুনিয়া আখিরাতে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন হয়েছেন।
এই কিতাবের সাথে আমাদের সম্পর্ক হৃদয়ের, এই কিতাব আমাদের দিলের খোরাক। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হল আজ আমরা এই কিতাব থেকে বহু দূরে। তেলাওয়াত, তাদাব্বুর, আমল কোনটার সাথেই সম্পর্ক নেই আমাদের।
.
অথচ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম দাওয়াত জি'হ।দ তালিম রাষ্ট্রপরিচালনা ইত্যাদি ব্যাস্ততা স্বত্তেও নিয়মিত তেলাওয়াত তাদাব্বুরে সময় দিতেন। তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করতেন। নামাযে, নামাযের বাইরে, রাতের আঁধারে, দিনের আলোতে সর্বাবস্থায় তিনি তিলাওয়াত করতেন। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا صَلَّى قَامَ حَتَّى تَفَطَّرَ رِجْلاَهُ قَالَتْ عَائِشَةُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتَصْنَعُ هَذَا وَقَدْ غُفِرَ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ فَقَالَ " يَا عَائِشَةُ أَفَلاَ أَكُونُ عَبْدًا شَكُورًا "
নামাযে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নবীজী এত দীর্ঘ সময় তিলাওয়াত করতেন যে, তাঁর পা মুবারক ফুলে যেত।....... - মুসলিম ২৮২০
.
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তিলাওয়াত করার পাশাপাশি মাঝে মাঝে সাহাবীদের থেকেও তিলাওয়াত শুনতেন। এক হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم اقْرَأْ عَلَيَّ قَالَ قُلْتُ أَقْرَأُ عَلَيْكَ وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ قَالَ إِنِّيْ أَشْتَهِيْ أَنْ أَسْمَعَهُ مِنْ غَيْرِيْ قَالَ فَقَرَأْتُ النِّسَاءَ حَتَّى إِذَا بَلَغْتُ (فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيْدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰؤُلَآءِ شَهِيْدًا)قَالَ لِيْ كُفَّ أَوْ أَمْسِكْ فَرَأَيْتُ عَيْنَيْهِ تَذْرِفَانِ
একবার নবীজী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, তুমি আমাকে একটু তিলাওয়াত করে শোনাও তো। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনাকে তিলাওয়াত করে শোনাব, আপনার উপরই তো কুরআন নাযিল হয়েছে! নবীজী বললেন, আমার মনে চাচ্ছে, কারো থেকে তিলাওয়াত শুনি। এই কথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু সূরা নিসা তিলাওয়াত করতে শুরু করলেন। পড়তে পড়তে যখন এ আয়াতে পৌঁছলেন-
فَكَیْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍۭ بِشَهِیْدٍ وَّ جِئْنَا بِكَ عَلٰی هٰۤؤُلَآءِ شَهِیْدًا
.
সুতরাং (তারা ভেবে দেখুক) সেদিন তাদের কি অবস্থা হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজনকে সাক্ষী উপস্থিত করব আর আপনাকে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করব? -সূরা নিসা ৪১
.
এতটুকু তিলাওয়াত করার পর নবীজী বললেন, থামো। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবীজী থামতে বলার পর আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখি, তাঁর দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে। - বুখারী ৫০৫৫
.
রাসুলের সাহাবী এবং পরবর্তী সালাফে সালেহীনরাও কুরআনুল কারীমের সাথে গভীর সম্পর্ক রাখতেন। কুরআনুল কারীমকেই তারা ব্যক্তি সমাজ রাষ্ট্রের জন্য আলোর বাতিঘর মনে করতেন। তাঁদের দিনের বড় একটা অংশ বরাদ্দ থাকতো নামাযে ও নামাযের বাইরে তিলাওয়াত ও তাদাব্বুরের জন্য। এভাবে প্রতি মাসে অন্তত কয়েকটি খতম করতেন তাঁরা।
.
এবার একটু নিজেদের অবস্থার দিকে তাকাই, আমাদের অবস্থা হল অন্য সব কাজের জন্য সময় বের করতে পারলেও কুরআনের জন্য একটু সময় বের করতে পারিনা। যারা নিজেদেরকে দ্বীনদার বলে মনে করি তাদের অবস্থাও খুব বেশি ভাল নয়। যদি জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে দেখা যাবে অধিকাংশই বলতে পারবেনা শেষ কবে তাদাব্বুরের জন্য কুরআন নিয়ে বসেছিলেন। শুধু তাদাব্বুর নয় তেলাওয়াতেও আমাদের উদাসীনতা চোখে পড়ার মত। সারা বছরেও দুই তিন খতম তেলাওয়াত করতে পারিনা। এই উদাসীনতার কারণে আমাদের অন্তর থেকে সাকীনাহ, দ্বীনের ব্যাপারে দৃঢ়তা ও হেদায়াত ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছে। এখন আর সহজে অন্তর নরম হয়না, মোনাজাতে কান্না আসেনা। এর থেকে মুক্তির জন্য তাদাব্বুরের সাথে তিলাওয়াত এবং খুশু খুযূর সাথে নামায আদায়ে মনোযোগী হওয়া জরুরী। আল্লাহ তাআলা সহজ করুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন
©somewhere in net ltd.