![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুরআনুল কারীম হল আমাদের হৃদয়ের খোরাক, অন্ধকারের আলো এবং আখিরাতের কঠিন সময়ের বিশ্বস্ত সাথী। এই কারণে কুরআনুল কারীমের সাথে আমাদের সবচেয়ে গভীর সম্পর্ক হওয়া উচিত। কিন্তু দুঃখের ব্যপার হল কুরআনুল কারীমের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভাল নয়। কুরআনের উপদেশ ও নির্দেশ সম্বলিত আয়াতাবলি আমাদের জীবনে কোন পরিবর্তন আনতে পারেনা। ভীতির আয়াতসমূহ তিলাওয়াতে আমরা ভীত হইনা, খুশি এবং সুসংবাদের আয়াত তিলাওয়াতে আনন্দিত হইনা।
.
অথচ সাহাবায়ে কেরামের অবস্থা ছিল পুরোপুরি ভিন্ন। তাঁরা ছিলেন কুরআনুল কারীমের জীবন্ত নমুনা। কুরআনুল কারীম তাদের জীবনকে পুরো পালটে দিয়েছিল। কুরআনের উপদেশ ও নির্দেশনার আলোকে তাঁরা পুরো জীবনকে সাজিয়েছিলেন। কুরআনের একেকটি আয়াত তাদের জীবনে যে প্রভাব ফেলতো তা আমাদের জন্য অকল্পনীয়।
বুখারী এবং মুসলিমে সাবিত ইবনে কায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহুর ব্যাপারে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّهُ قَالَ لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ ( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ) إِلَى آخِرِ الآيَةِ جَلَسَ ثَابِتُ بْنُ قَيْسٍ فِي بَيْتِهِ وَقَالَ أَنَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ . وَاحْتَبَسَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَسَأَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم سَعْدَ بْنَ مُعَاذٍ فَقَالَ " يَا أَبَا عَمْرٍو مَا شَأْنُ ثَابِتٍ أَشْتَكَى " . قَالَ سَعْدٌ إِنَّهُ لَجَارِي وَمَا عَلِمْتُ لَهُ بِشَكْوَى . قَالَ فَأَتَاهُ سَعْدٌ فَذَكَرَ لَهُ قَوْلَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ثَابِتٌ أُنْزِلَتْ هَذِهِ الآيَةُ وَلَقَدْ عَلِمْتُمْ أَنِّي مِنْ أَرْفَعِكُمْ صَوْتًا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَأَنَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ . فَذَكَرَ ذَلِكَ سَعْدٌ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " بَلْ هُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ
আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন এই আয়াত নাযিল হলো,
( يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ) إِلَى آخِرِ الآيَةِ
অর্থাৎ হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর আওয়াজের উপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু করোনা। তোমরা নিজেরা পরস্পরে যেমন উচ্চ আওয়াজে কথা বল, তাঁর সঙ্গে সে রকম উচ্চ আওয়াজে কথা বলো না। এমনটা করলে তোমাদের নেক আমল নষ্ট হয়ে যাবে, কিন্তু তোমরা একটু টেরও পাবে না। - সূরা হুজুরাত ২
.
তখন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের ঘরে বসে গেলেন এবং বলতে লাগলেন, আমি তো জাহান্নামী। এরপর থেকে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদ ইবনু মুয়ায রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। বললেন, হে আবূ আমর! সাবিতের কি অবস্থা, সে কি অসুস্থ? সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তিনি আমার প্রতিবেশী, তার কোন অসুখ হয়েছে বলে তো জানিনা।
.
বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন, পরে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে গেলেন এবং তার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোঁজ নিয়েছেন বলে জানালেন। শুনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ এ আয়াত নাযিল হয়েছে, আর আপনারা তো জানেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর আমার কণ্ঠস্বরই সবচেয়ে উঁচু হয়ে যায়, সুতরাং আমি তো জাহান্নামী। তখন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে এই কথা বললেন। শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ না, বরং সে তো জান্নাতী। মুসলিম – ১১৯
.
আল্লাহু আকবার! এই ছিল সাহাবায়ে কেরামের কুরআনুল কারীমের আয়াত শুনে ভীত হওয়ার নমুনা। আয়াত নাযিল হওয়ার পর উঁচু আওয়াজের কারণে তিনি এত বেশি ভয় পেয়েছিলেন যে, ঘর থেকেই বের হতে পারছিলেন না। এই ভয়টা ছিল প্রকৃত ভয়। এর ফলে আল্লাহ তাআলা খুশি হয়ে দুনিয়াতেই তাকে এই ভয় থেকে মুক্তি দেয়ার ঘোষনা শুনিয়ে দিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরো দুনিয়াবাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, সাবিত জান্নাতী।
.
এবার একটু আমরা নিজেদের দিকে দৃষ্টি দেই, আমরা কি কখনো কোন আয়াত পড়ার পর নিজের ভুলের দিকে তাকিয়ে এভাবে ভীত হয়েছি? স্পষ্ট ভুলের উপর থাকার পরও কেউ সেই সম্পর্কিত আয়াত স্মরণ করিয়ে দিলে ভীত হয়ে কাজটি ছেড়ে দিয়েছি নাকি নিজেকে বড় মনে করে ঔদ্ধত্ব প্রকাশ করেছি?
©somewhere in net ltd.