![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা যাদের অনুসারী
.
যে জাতি তার সালাফ তথা পূর্ববর্তীদের আদর্শ ও কর্মপন্থার আলোকে নিজ কর্মকৌশল নির্ধারণ করেনা, সে জাতি কখনো সফলতার দেখা পায়না। কারণ যেই পথ পুর্ববর্তীদের ব্যার্থতার কারণ হয়েছিল সেই পথ কোনভাবেই পরবর্তীদের সফলতার সন্ধান দিতে পারেনা।
এই ব্যাপারে ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহর চমৎকার একটি উক্তি রয়েছে। তিনি বলেছেন- এই উম্মতের শেষভাগের সফলতা সেই পথেই যেই পথে প্রথমভাগ সফলতা লাভ করেছিল। (আশ শিফা)
.
এবার দেখি এই উম্মতের প্রথমভাগ কারা, যাদের অনুসরণ করে আমরা সফলতার দেখা পাবো?
এই প্রশ্নের উত্তর ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু অত্যন্ত চমৎকারভাবে দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ
مَن كانَ مُستنًّا ؛ فليستَنَّ بمَن قَد ماتَ فإنَّ الحيَّ لا تُؤمَنُ علَيهِ الفِتنةُ أولئِكَ أصحابُ محمَّدٍ صلَّى اللَّهُ علَيهِ وسلَّمَ كانوا أفضلَ هذِهِ الأمَّةِ أبرَّها قلوبًا وأعمقَها عِلمًا وأقلَّها تَكَلُّفًا اختارَهُمُ اللَّهُ لِصُحبةِ نبيِّهِ ولإقامةِ دينِهِ فاعرِفوا لَهُم فضلَهُم واتَّبعوا علَى آثارِهِم وتمسَّكوا بما استطعتُمْ مِن أخلاقِهِم وسِيَرِهِم ، فإنَّهم كانوا علَى الهُدى المستقيمِ
যে ব্যাক্তি কারো অনুসরণ করতে চায় সে যেন ঐ সকল লোকদের অনুসরণ করে যারা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। কারণ জীবিতরা ফিতনার আশঙ্কা মুক্ত নয়। তারা হলেন (অনুসৃত ব্যাক্তিরা হলেন) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ, তারা ছিলেন এই উম্মতের সর্বশ্রেষ্ঠ, তাদের হৃদয় ছিল সবচেয়ে স্বচ্ছ, জ্ঞানের গভীরতা ছিল সবচেয়ে বেশি, তাদের লৌকিকতা ছিল সবচেয়ে কম। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তাঁর নবীর সাহচর্য এবং দ্বীন কায়েমের জন্য নির্বাচন করেছিলেন। অতএব তাদের মর্যাদার ব্যাপারে সজাগ থেকো, তাদের অনুসৃত পথে নিজেদেরকে পরিচালিত করো এবং তাদের আখলাক এবং পথ ও পন্থা যথাসম্ভব আঁকড়ে ধরো। কারণ তারা ছিলেন পরিপূর্ণ সিরাতে মুস্তাকিমের উপর প্রতিষ্ঠিত। (ইমাম আবনু আব্দিল বার লিখিত 'জামিউ বয়ানিল ইলমি ওয়া ফাদ্বলিহি'
শুধু ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বক্তব্য নয়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও অনেকগুলো হাদীসে আমাদেরকে সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন।
যেমন এক হাদীসে তিনি বলেছেন-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ حَتَّى إِنْ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلاَنِيَةً لَكَانَ فِي أُمَّتِي مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ وَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي "
আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বনী ইসরাঈল যে সকল ফেতনার সম্মুখীন হয়েছিল, নিঃসন্দেহে আমার উম্মাতও সে সকল ফেতনার সম্মুখীন হবে। (ফেতনার সাদৃশ্য বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন) যেমন একজোড়া জুতার একটি আরেকটির সাদৃশ্য হয়ে থাকে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচার করে থাকে, তবে আমার উন্মাতের মধ্যেও কেউ এমনটা করবে। আর বনী ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ছাড়া বাকি সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেই দল কোনটি? তিনি বললেনঃ আমি ও আমার সাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত। তিরিমিজি- ২৬৪১
.
উপরের আলোচনা থেকে আশা করি এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, আমাদের প্রকৃত সালাফ ও আকাবীর হলেন সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম। তাঁরা ছিলেন আল্লাহ তাআলার প্রিয়জন, আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে তাঁর প্রিয় রাসূলের সুহবতের জন্য নির্বাচন করেছিলেন। তাঁরা তাঁদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে আল্লাহ তাআলার এই বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করেছেন। ফলে আল্লাহ তাআলা খুশি হয়ে তাঁদের ব্যপারে চির সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন।
এই মহান মানুষেরাই আমাদের আদর্শ, তাঁরাই আমাদের জন্য অনুসরণীয়। তাঁদের পথ ও পন্থার অনুসরণের মাঝেই আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা ও মুক্তি।
.
এবার আসুন তাঁরা কোন পথ ও পন্থা অবলম্বন করে দুনিয়া আখিরাতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলেন সেই সম্পর্কে জেনে নেই-
১। জীবনের সর্বক্ষেত্রে নিখাঁদ তাওহীদের বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা ও কুরআনকে পরিপূর্ণভাবে আঁকড়ে ধরা। তাঁদের কাছে জ্ঞান আহরণ, বিচার ফায়সালা, রাষ্ট্র পরিচালনা সহ সকল কাজের একমাত্র মাধ্যম ছিল কুরআন ও সুন্নাহ। তাঁরা দুনিয়ার সমস্ত কিছুকে কুরয়ান-সুন্নাহর নীতিমালার আলোকে বুঝতেন।
২। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই রূপে দ্বীনকে রেখে গেছেন ঠিক সেই রূপে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত রাখা এবং কেউ বিকৃতি সাধনের চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যাবস্থা নেয়া, প্রয়োজনে যুদ্ধ করা।
যাকাত অস্বীকারকারীরা যখন অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জানাল। তখন কতক সাহাবী তাদেরকে কালিমায় বিশ্বাসী মুসলিম হিসেবে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করার আহবান জানান। উত্তরে আবু বকর রাদিয়ল্লাহু আনহু বলেছিলেনঃ আমি অবশ্যই এমন লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো যারা সালাত এবং যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে। বস্তুতঃ তিনি যদি সেদিন এই কঠোর পদক্ষেপ না নিতেন তাহলে হয়তো আমাদের পর্যন্ত সঠিক ইসলাম পৌঁছতে পারতোনা।
৩। সর্বক্ষেত্রে সবকিছুর উপর আল্লাহর দেয়া বিধি বিধানকে প্রাধান্য দেয়া
৪। দ্বীন কায়েমের জন্য আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।
৫। দুনিয়ার প্রতি প্রবল ঘৃণা, দ্বীনের প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা এবং শাহাদাত লাভের তীব্র আকাঙ্খা।
এখানে আমি সাহাবায়ে কেরামের পাঁচটি কর্মপন্থা উল্লেখ করেছি। এগুলো ছাড়াও আরো অনেক বিষয় ছিল যার মাধ্যমে তাঁরা শ্রেষ্ঠ মানুষ হয়ে ওঠেছিলেন।
পরবর্তীতে যারা সফল হয়েছেন তাঁরা সাহাবায়ে কেরামের পথ ধরেই সফল হয়েছেন। সাহাবায়ে কেরামের মত এই মহান মানুষেরাও আমাদের আদর্শ। তাঁদের থেকেও আমাদের পাথেয় গ্রহণ করতে হবে। তাঁদের দ্বারা কোন ভুল হয়ে থাকলে কুরআন সুন্নাহ ও সাহাবীদের নিক্তিতে মেপে তা হতে বিরত থাকতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সালাফদের প্রকৃত অনুসারী হিসেবে কবুল করুন। আমীন সুম্মা আমীন
©somewhere in net ltd.