নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গল্প, কবিতা ও গবেষণা

শেখ তানভীর হোছাইন

ছোটগল্প, প্রবন্ধ ও ভ্রমণসাহিত্য পড়তে ভাল লাগে।

শেখ তানভীর হোছাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবুল মনসুর আহমদঃ জীবনী ও কর্ম

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৩৬

আবুল মনসুর আহমদ (১৮৯৮-১৯৭৯) ময়মনসিংহ জেলায় ১৮৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯১৭ সালে মেট্রিক, '১৯ সালে আই.এ, '২১ সালে বি.এ, এবং '২৬-২৯ সাল পর্যন্ত কলকাতা রিপন ল' কলেজ থেকে ল' পাশ করেন। লেখাপড়ার ধারা শেষ হবার পর থেকে ১৯৭৯ সালে মৃত্যু পর্যন্ত তার জীবন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধারায় অতিবাহিত হয়।

আবুল মনসুর আহমদে'র জীবনধারাকে প্রধানত তিনটি ধারায় বিভক্ত করা যেতে পারে। (তিনি একজন বিখ্যাত এবং শক্তিমান বাংলাদেশি) ১. সাংবাদিক ২. রাজনীতিবিদ ও ৩. সাহিত্যিক। আর আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু এ তিনটি বিষয় নিয়ে। সাংবাদিকতা ও রাজনীতি নিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাত করলেও সাহিত্য নিয়ে কিছুটা বিস্তারিত আলোকপাত করার ইচ্ছা রাখছি। কারণ যদি সম্ভব হয় ভবিষ্যতে এব্যাপারে ব্যাপক ভাবে আলোচনা করার আশা আছে।

১. সাংবাদিকতা-
আবুল মনসুর আহমদ একজন-সৎ,নির্ভীক এবং পেশাদার সাংবাদিক ছিলেন।সমসাময়িক কালের প্রায় সবকটি পত্রিকায় আর অবদান আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে। তিনি-সোলতান,মোহাম্মদী(১৯২৩-২৬),দি মুসলিম (১৯২৬-২৯),দৈনিক কৃষক (১৯৩৮), নবযুগ (১৯৪১), দৈনিক ইত্তেহাদ (১৯৪৬-৪৮) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রিকায়-সাংবাদিকতা, সম্পাদক, সহকারী-সম্পাদক হিসাবে পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করেন।

২. রাজনীতি-
খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই রাজনীতিতে তাঁর প্রকাশ। যদিও তিনি তখন কিছুটা সন্দিহান ছিলে। তবে পরবর্তীকালে তিনি '৩৭ এর নির্বাচন, মুসলীগ লীগে যোগ দেয়া,'৪০ সাল থেকে পাকিস্তান আন্দোলন,'৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রাদেশিক শিক্ষা মন্ত্রী('৫৪'র নির্বাচনে ২১ দফার অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি)। এছাড়াও আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) এর প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক ছিলেন তিনি। সামরিক শাসনের সময় বিশেষত আয়ুব খানের সময়ে তিনি বেশ কয়েকবার কারাবরণ করেছিলেন। এতটুকুন পর্যন্ত তিনি প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও- আমৃত্যু তিনি পরোক্ষভাবে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। '৪৭ এর দেশ বিভাগের পর তিনি বাংলাদেশকে (তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানকে) দারিদ্রমুক্ত, শিক্ষিত,অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অসাম্প্রদায়িক ও ক্ষুধামুক্ত একটা দেশে পরিণত করার জন্য আজীবন চেষ্টা করে গেছেন।

৩.
আবুল মনসুর আহমদ বাংলা তথা বাংলাদেশি সাহিত্যের একজন শক্তিমান সাহিত্যিক ছিলেন। গল্প,ছোটগল্প, উপন্যাস, বাংলা ভাষা(ভাষার সঠিক ব্যাবহার, পরিভাষা ব্যাবহার, ভাষার ঐতিহ্য ইত্যাদি) বিষয়ক প্রবন্ধ, সভ্যতা বিষয়ক প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা('৪৭ এর দেশবিভাগ, বিভিন্ন সময়ের-সরকার-স্বৈরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন) , আত্মজীবনী, ১৯৭১ সালের স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা বিষয়ক প্রবন্ধ ইত্যাদি বিষয়ে তিনি-নিরপেক্ষ, সত্যনিষ্ঠ, পক্ষে-বিপক্ষের যুক্তিতর্ক তুলে ধরে, তাঁর কাছে যেটা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে তা-ই তিনি তাঁর লেখনিতে তুলে ধরেছেন।

এর একটা নমুনা আমরা তাঁর লেখা "শেরে বাংলা হইতে বঙ্গবন্ধু" বইয়ের "দ্বিতীয় সংস্করণ"এ('৮১ সন) মহবুব আনামের কথায় পাওয়া যায়।
মহবুব আনাম যখন তার পিতা আবুল মনসুর আহমেদের পক্ষ থেকে এ বইট "বঙ্গবন্ধু"কে একটা কপি দিতে যান।কথা বলতে বলতে "বঙ্গবন্ধু" বইয়ের অনেক পাতা পড়েছিলেন। পড়তে পড়তে হঠাৎ তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন-(বইয়ের ভাষায়) " হ্যাঃ মনসুর ভাই জিন্না ব্যাটাকে কায়েদে আযম লিখেছে? তিনি কি জানেন না যে বাঙালীদের যাবতীয় সর্বনাশের মূল ঐ জিন্না শয়তানটা?"
"বঙ্গবন্ধু" এমন কথা বা প্রশ্ন তুলতে পারে লেখক আগেই বুঝতে পাড়েছিলান- তাই তিনি তাঁর ছেলের কাছে উত্তরটা আগেই দিয়ে দিয়েছিলেন। তখন মহবুব আনাম বললেন-( বইয়ের ভাষায়)" তিনি (আবুল মনসুর আহমদ) বলেছেন মুজিব যদি একান্তই বইটা পড়ে সে নির্ঘাৎ জিজ্ঞাসা করবে এটা। তুমি আমার হয়ে বলবে, আবুল মনসুর একজন ঐতিহাসিক। ঐতিহাসিকের কির্তব্য ঘটনার সত্যনিষ্ঠ বর্ণনা। তাঁর দেশবাসী ভালবেসে কায়েদে আযম পদবী দিয়েছে। সেটা আবুল মনসুরের মতো ঐতিহাসিকের কলমের এক খোঁচায় শেষ হতে পারে না।এছাড়া আরও বলেছেন' মুজিবকে মনে করিয়ে দিও যে পাকিস্তানী আমলে সুদীর্ঘ ২৫ বৎসর ভারতীয় নেতা গান্ধীকে চিরকাল আমি মহাত্মাজী বলে আভিহিত করে এসেছি পাকিস্তানী ভ্রুকুটি অগ্রাহ্য করে।সম্মানী লোকের সম্মান দিতে জানাতাও গৌরবের, যে দেয় তার জন্যই যে পায় তার জন্য নয়।

তা ছাড়া খোদা না খাস্তা এমন দিন যদি বাংলাদেশে কোনদিন আসে যেদিন শেখ মুজিবকে বংগবন্ধু বলার কেউ থাকবে না ঐতিহাসিক আবুল মনসুর একা হলেও সে দিনও তাঁকে বংগবন্ধু বলেই সম্বোধন করবে তার বইয়ে, এটা তাকে বলে দিও।"

খুব বেশি সংখ্যক বই তিনি না লিখলেও যতখানি লিখে গেছেন বাংলা সাহিত্যে তা তাকে অমর করে রেখেছে এবং বাংলা সাহিত্য তাঁর কাছে এতটাই ঋণী যে ঋণ কখনো মিটানো সম্ভব হবে না বললে অত্যুক্তি হবে না।

আবুল মনসুর আহমদ বেশ কয়েক ধারায় তাঁর গ্রন্থ রচনা করেছেন। যেমন- ব্যঙ্গাত্মক, আত্মজীবনী, রাজনৈতিক, উপন্যাস, প্রবন্ধ, সভ্যতা বিষয়ক, অনুবাদ, উপদেশমূলক ইত্যাদি বিষয়ক গ্রন্থ তিনি রচনা করেন। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি খ্যাতি লাভ করেন ব্যঙ্গরচনাবলী। তাঁর ব্যঙ্গরচনাবলীর হলো-আয়না (১৯৩৬-১৯৩৭),ফুড কনফারেন্স (১৯৪৪),গালিভারের সফরনামা। এছাড়াও তাঁর সবয়েচে বিখ্যাত রাজনৈতিক আলোচনা বিষয়ক গ্রন্থ হচ্ছে-আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর (১৯৬৯)।আবুল মনসুর আহমদের আত্মকথা (১৯৭৮) গ্রন্থটি বেশ খ্যাতিলাভ করে, এটি তাঁর আত্মজীবনীগ্রন্থ।

আর বাংলা সাহিত্যের এ উজ্জ্বল নক্ষত্র বাংলা সাহিত্যে অমর ও উজ্জ্বল স্বাক্ষর ও বিশেষ অবদান রাখার জন্য, সাহিত্যের বিশেষ কয়েকটি পুরষ্কারে ভূষিত হন- বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬০),স্বাধীনতা দিবস পদক (১৯৭৯),নাসিরুদ্দীন স্বর্ণপদক।

উপর্যুক্ত জবাবে পর্যালোচনায় কিছুটা অনুমিত হয় যে আবুল মনসুর আহমদ- তার লেখনিতে বিশেষত ঐতিহাসিক ও প্রবন্ধে কতখানি নিরপেক্ষ, শ্রদ্ধাশীল, শক্তিশালী, বাস্তববাদী, নিষ্ঠাবান,নির্ভীক, সত্যনিষ্ঠ ঐতিহাসিক ছিলেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.