নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। ভাল লাগে প্রগতিশীল , যৌক্তিক লেখা ও কাজ।
|আমাদের ভবিষ্যত
তানিয়া আক্তার
আমরা আজ বড়। আর যারা ছোট, যারা শিশু, যাদের চোখের মাঝে অজস্র নিষ্পাপ কৌতুহল, তাদেরকে আমরাই জগতের জটিলতার মাঝে টেনে আনি। কখনও তা সচেতনভাবে, আবার কখনও তা অসচেতনভাবে। জগতে শিশুরা আসে এবং মানবিক অথবা কোথাও কোথাও অমানবিক জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে তারা বড় হয়। তারপর সমাজে, রাষ্ট্রে কিছু দায়িত্ব পালন করে অথবা অথর্ব হয়ে জীবন কাটিয়ে এক পর্যায়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। এভাবেই চলছে অজস্র বছরের কাহিনী।
আমরা সভ্য মানুষেরা বিবাহ এবং সংসার ধর্মকে সম্মান করি। কোন সংসারে শিশুর জন্ম না হলে সে সংসার জীবনের সব রস হারিয়ে প্রায় অচল হয়ে পড়ে। নিঃসন্তান পিতামাতার মুখে যে কালো ছায়া দেখা যায় তা অনেকের কাছেই দুঃসহ ব্যাপার। অনেক নিঃসন্তান জ্ঞানী গুণীরাও সন্তান লাভের জন্য অলৌকিক ঝাড়-ফুঁক , তাবিজ কবজে বিশ্বাসী হয়ে পড়ে। তার মানে শিশুরা প্রতিটি স্বাভাবিক সভ্য জীবনে অমূল্য রত্নস্বরূপ।
আজ বিশ্ব অনেক সচেতন-শিক্ষায়, বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে। আজ আমরা শিশুদের নিয়ে অনেক ভাবছি। তাদের জীবনের সর্বাঙ্গীন বিকাশের প্রশ্নে কত শত সনদ পাশ হচ্ছে, কত অর্থ ব্যয় হচ্ছে, কত আয়োজন চলছে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তাদের জন্য যে ভালবাসা তা আজও আমাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত স্বার্থের মাঝে বন্দী। সামগ্রিক সমাজের সম্পদ হিসেবে তাদেরকে গড়ে তোলার চেষ্টা আমাদের মাঝে কম। ছেলেময়ে বড় হয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, বৈজ্ঞানিক, নায়ক, গায়ক, গবেষক যাই হোকনা কেন তাতে পারিবারিক খ্যাতি ও আয় বৃদ্ধির প্রশ্নটাই মুখ্য থাকে।
এছাড়াও শিশুদেরকে যখন আমরা বড় করে তুলছি তখনও তাদের মাঝে সামাজিক, মানবিক গুণাবলী বিকাশের বিষয়টি গৌন করে রাখছি। ফলে শিশুরা যখন ছোট থাকে তখন কেবল নিজের বাবা, মা , ভাই, বোন , আত্মীয়স্বজনের মঙ্গল কামনাটিকেই আসল চিন্তা বলে ধরে নেয়। অন্যদের মঙ্গল অমঙ্গলে তাদের তেমন কিছু যায় আসেনা। আবার এই শিশুরাই যখন বড় হয়ে সমাজে, রাষ্ট্রে, বিশ্বে একাধারে মেম্বার, চেয়ারম্যান, মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার , গবেষক , লেখক, বৈজ্ঞানিক ইত্যাদি পদবী ধারণ করে তখন তা বাইরের দিক থেকে দেখে ভাল লাগলেও ভিতরে ভিতরে তার রূপ ভয়াবহ। আর এ কারণেই আমরা এই পৃথিবীতে জ্ঞানে, বিজ্ঞানে অনেক আধুনিক হওয়ার পরও আমাদের রাষ্ট্র অনেক, সমাজ অনেক, ধর্ম অনেক এবং সর্বোপরি পরস্পর পরস্পরের প্রতি হিংসা বিদ্বেষে পরিপূর্ণ অনেক মতবাদ বিদ্যমান।
আজও অনেক অনেক লোক অসুস্থ', অমানবিক জীবনযাপন করছে। নারীদের জীবন আজও অনেক নতুন কিংবা পুরাতন কুসংস্কারে বা অন্ধত্বে বন্দী। তারা আজও অনেক ক্ষেত্রে কেবল পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে সুখী করায় ব্যস্ত অথবা বাধ্য। জোর করেই হোক বা সহজভাবেই হোক- নারীদেরকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নিয়মগুলোর প্রতি সহনশীল করার জন্য অনেকরকম সামাজিক ষড়যন্ত্র আজও চলছে। তবে এই কথাটি নারীরাও অনেকক্ষেত্রে বুঝতে চায়না। আর তাই নারীরা প্রায় সময়েই কঠিন ব্যক্তিত্ববান, শিক্ষিত, রুচিশীল, উন্নত মূল্যবোধ, দৃষ্টিভঙ্গী ও মানবিক বোধসম্পন্ন মা হয়ে উঠতে পারেনা।
অন্যদিকে সমাজের পুরুষ যারা আছেন তারা সুস্থ' জীবনের জন্য নারী ও শিশুসহ একটি সংসার সবসময় কামনা করেন। কিন্তু সেই সংসারের সম্মান রক্ষার্থে স্ত্রী ও সন্তানদের প্রাপ্য মর্যাদা দিতে তারা অনেকসময়ই কার্পণ্যতা প্রকাশ করেন। একজন শিক্ষিত, সভ্য, প্রেমিক স্বামী প্রতিটি স্ত্রী’র কাম্য। কিন্তু' বেশীরভাগক্ষেত্রে স্বামী ব্যক্তিটি দায়সারা গোছের জীবন যাপনে নিজেও অভ্যস্ত থাকে এবং স্ত্রীকেও অভ্যস্ত করে তোলে। আবার একজন শিক্ষিত, মার্জিত, রুচিসম্পন্ন, প্রেমিকা স্ত্রী প্রতিটি পুরুষের আরাধ্য। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই এ ধরণের স্ত্রী’র বদলে তারা পায় আপাত শিক্ষিত, ব্যক্তিত্বহীন , রুচিহীন, পরনির্ভরশীল এক একজন স্ত্রী। আর সর্বশেষে এই ধরণের নারী পুরুষরাই ভবিষ্যত পৃথিবীর জন্য রেখে যায় তাদের একদল ব্যক্তিত্বহীন, অনুন্নত দৃষ্টিভঙ্গী ও মূল্যবোধসম্পন্ন সন্তানদের। যাঁরা সমাজকে, রাষ্ট্রকে কখনোই ব্যক্তি স্বার্থপরতার উর্ধ্বে নিয়ে, কুসংস্কার, অলৌকিক মন্দভাগ্যের হাত থেকে রক্ষা করে মানবিক করে তুলতে পারেনা। তাই ঘটতে থাকে অসংখ্য অমানবিক ঘটনা। কখনও অলক্ষ্যে, কখনও প্রকাশ্যে। কখনও এই অমানবিকতার শিকার হচ্ছে শিশুরা, কখনও পুরুষরা, কখনও নারীরা। যেই হোক, একথা বলতে পারি যে, আমাদের মানবিক চোখ আজও প্রকৃতরূপে খুলছেনা। যদিও জগতে, মানব সমাজে গর্ব করার মত বিষয় এই একটিই। তা হল তার মানবিক চোখ। শিক্ষিত কেউ কেউ সমাজের অমানবিক কান্ড দেখে আতঙ্কিত হয়, কাঁদে। আবার কেউ কেউ আতঙ্কিত হতে, কাঁদতে ভুলে গেছে।
পরিবার প্রথা একটি সুস্থ' সামাজিক প্রথা। দু’জন সুস্থ, শিক্ষিত নারী পুরুষের হাতে যদি বেশীরভাগক্ষেত্রে এর সূচনা ঘটে তবেই আমরা সুস্থ শিশুদের পেতে পারি যারা আমাদের সুস্থ' ভবিষ্যত হবে। আমাদের সকলের এটিই কাম্য হওয়া উচিত যেন প্রতিটি শিশুর জন্ম হয় প্রেমের মাধ্যমে, প্রতিটি শিশুর বিকাশ যেন ঘটে ভালবাসার মাঝে, প্রতিটি শিশু যেন ভবিষ্যতে প্রেমময় সুস্থ পৃথিবী গড়ে তেলার ক্ষেত্রে মানবিক শক্তির ধারক হয়।
©somewhere in net ltd.