নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। ভাল লাগে প্রগতিশীল , যৌক্তিক লেখা ও কাজ।
স্বাধীনতা
এমন কোন জীব নেই - স্বাধীনতা শব্দটি যার কাছে প্রিয় নয়। কিন্তু এর মর্যাদা বুঝতে পারে এমন জীব বলতে আমরা মানুষেরাই আছি। আর মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই আমরা যথার্থ মানুষ হয়ে উঠতে পারছিনা; রোবটের মত মানব সমাজে বেঁচে থাকার জন্য কতগুলো কৌশল আয়ত্ব করছি মাত্র। তাই সমাজে আজও প্রায়শ:ই অমানবিক পৈশাচিক ঘটনা ঘটছে -যা আমাদের অনেককে শিউরে উঠতে বাধ্য করছে। গুলশানের হলি আর্টিসানে জঙ্গীদের হিংস্রতা, তনু হত্যা, মিতু হত্যা
এবং আরও অনেক অমানবিক ঘটনা আমাদের ধীক্কার দেয় এই বলে যে, আমাদের চেয়ে জন্তু জানোয়াররা তাদের সমাজে অনেক ভালো আছে। আমরা তাদের চেয়েও নিকৃষ্ট।
আমাদের দেশ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৫ বছর হল। কিন্তু আমরা কেবল পাকিস্তানীদের শাসন শোষণ থেকে মুক্ত হয়েছি। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত এমন এমন নির্মম ঘটনা আমরা ঘটতে দেখেছি যে তাতে বাংলাদেশীদের মাঝে পাকিস্তানীদের চেয়েও ভয়াবহ পিশাচ বাস করছে এমনটাই সত্যি । বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা, কর্নেল তাহেরকে হত্যা এবং আজও যেসব হত্যাকান্ড ঘটে চলেছে তা কি প্রমাণ করেনা যে, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তানী শোষকদের চেয়েও বড় পিশাচের বংশ দেশের মধ্যেই বাস করছে।
মানব সমাজে গর্ব করার মত একটি জিনিসই আছে-তা হল মানুষের মনুষ্যত্ববোধ। এই বোধ যদি জাগ্রত না হয় তবে সমাজ পাশবিক থাকবেই। আর মনুষ্যত্ববোধকে জাগানোর জন্য দরকার সুস্থ শিক্ষা ব্যবস্থা, সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা । কিন্তু' আমরা যারা এসব ক্ষেত্রে জড়িত এবং যাঁরা এই ক্ষেত্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছি তাঁরা কতটুকু মনুষ্যত্ব বোধ ধারণ করছি সেটি ভেবে দেখার মত। কেবল নিজের পেট পূজো , নিজের প্রতিষ্ঠা- এই আমাদের প্রায় সকলের ব্যক্তিগত জীবনের চর্চা। আমাদের হাতে নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট থাকার পরও অপরকে সাহায্য করার মত মানসিকতা লক্ষ্য করা যায়না; বরং অপরকে ধুঁকে ধুঁকে মরতে দেখে আনন্দ পাই। আমরা অন্যকে বড় হতে দেখলে হিংসায় জ্বলে যাই। আমরা একথা ভাবিনা যে, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর মত আরও অনেক বীর জ্ঞানে, ত্যাগে, রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় বড় হয়েছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ স্বাধীন দেশ, বেগম রোকেয়া বড় হয়েছিলেন বলেই আমরা নারী স্বাধীনতার যৌক্তিক দিকগুলো স্পষ্টভাবে দেখতে পাই। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র বড় হয়েছিলেন বলে আমরা ভিতরে ভিতরে শুদ্ধ নি:শ্বাস নিতে পারি।
আমরা যার মাঝে মনুষ্যত্বকে বেশি বিরাজ করতে দেখি তাকেই দুর্বল মনে করি, তুচ্ছ মনে করি। আর মনুষ্যত্ববোধ যাতে কারও মাঝে বেঁচে থাকতে না পারে সেজন্য নানা কৌশলে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে শিক্ষা, সংসকৃতিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করি। আর এভাবেই আমরা প্রকৃত স্বাধীনতাকে কখনও লাভ করিনা। কখনও সমাজে, রাষ্ট্রে তার অস্তিত্ব দেখতে পাইনা। কেবল দল পাল্টানোর মাঝেই স্বাধীনতাকে খুঁজে বেড়াই।
আজও অনেক মুক্তিযোদ্ধা এদেশে বেঁচে আছেন। কিন্তু' ক’জন মুক্তিযোদ্ধা পরস্পর হাতে হাত মিলিয়ে সমাজ গঠনে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে এগিয়ে আসছে, কিংবা ক’জন মুক্তিযোদ্ধা পরস্পরের সুখে দু:খে পাশাপাশি থেকে পরস্পরকে সহযোগিতা করছে ? একদিন পাকিস্তানীদের এদেশ থেকে তাড়ানোটা অনেক বড় যুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং সেই যুদ্ধে যাাঁরা অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা আমাদের কাছে অবশ্যই পূজনীয়। কিন্তু শুধুমাত্র পাকিস্তানীদের দেশ থেকে তাড়ানোটাকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা বলে যাঁরা ধরে নিয়েছিলেন- তাদের সঙ্কীর্ণ বোধই সমাজের মানুষকে সত্যিকার মুক্তির স্বাদ থেকে বঞ্চিত রাখছে এবং চিরদিন রাখবে।
পাকিস্তানীরা আমাদেরকে ভালবাসেনি। তাই তারা আমাদের দেশের অনেক জ্ঞানী, গুণী, সাধারণ লোককে হত্যা করেছিল, আমাদেরকে তারা চব্বিশ বছর ধরে নানাভাবে শোষণ করেছিল। আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি। কিন্তু' ১৯৭১ইং সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশীরা নিজেরা নিজেদেরকে কতটা ভালবাসতে পেরেছি? যদি আমরা নিজেরা নিজেদেরকে ভালবাসতে পারতাম তবে এদেশে আজও এত দরিদ্র পরিবার থাকতনা, কোন বয়স্ক লোককে রিক্সা বা ঠেলাগাড়ি চালাতে দেখা যেতনা, অসংখ্য বস্তিবাসীদের দেখা যেতনা কুকুর বিড়ালের মত জীবন যাপনে, অসংখ্য শিশুদের শ্রম বিক্রি করতে দেখা যেতনা, খুন-হাইজাক-নানা বিভৎস কৌশলে নারী নির্যাতনের মত নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনাগুলো ঘটতে দেখা যেতনা; থাকতনা হিসেববিহীন যান্ত্রিক কৃত্রিম জীবনপ্রবাহ- যা আমাদের সাধারণ চোখে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা ১৯৭১ ইং সালে স্বাধীন হয়েছি। স্বাধীনতা শব্দটি আজও আমাদের সঙ্কীর্ণ বোধের মাঝে বন্দী। সে আজও তার নির্মল টলমলে পবিত্র রূপ নিয়ে আমাদের মনের বিশাল আকাশে ডানা মেলতে পারেনি। যেদিন সে তার প্রবল শক্তি নিয়ে ডানা মেলতে পারবে সেদিন আমরা সত্যিকার স্বাধীনতা এবং সত্যিকার স্বাধীন বাংলাদেশকে লাভ করব।
২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৩১
Tania Farazee বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৪০
নোমান প্রধান বলেছেন: স্বাধীনতা এক আক্ষেপের নাম
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:০৯
বিজন রয় বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
আমার মতে স্বাধীনতা ব্যাপারটি সহজ নয়।
শুভকামনা।