নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে নাহি কিছু মহীয়ান ।

মন্ডল তপু

আমি এক ছোট্ট ছেলে। দুষ্টু বলে লোকে আমায়। লিখি মানুষ ও মানবতার পক্ষে..।।

মন্ডল তপু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসে অম্লান একটি নামঃ শহীদ শামসুজ্জোহা স্যার

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:০০



“আমি বলছি গুলিবর্ষণ হবেনা,যদি গুলি বর্ষন হয় তবে কোন ছেলের গায়ে লাগার পূর্বে আমার গায়ে লাগবে”......ড. শামসুজ্জোহা।

১৯৬৯ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারী ড. জোহা স্যারের মৃত্যু দিবস। এদিন পাকবাহিনী তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। সেদিন নিজের জীবন উৎসর্গ করে হাজার হাজার স্বাধীনতাকামী ছাত্রছাত্রীর জীবনবাঁচিয়েছিলেন তিনি। উনসত্তরের ২০ শে জানুয়ারী আসাদ হত্যাকান্ডকে ঘিড়ে যে গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল। ২৪ শে জানুয়ারী কিশোরমতিউর রহমান সহ অপর তিনজনের হত্যাকান্ড অভ্যুত্থ্যানের মাত্রাকে আরো বেগবান করে। ১৫ফেব্রুয়ারী সার্জেন্ট জহুরের হত্যাকান্ড গণআন্দোলনের তাপমাত্রাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। ১৮ফেব্রুয়ারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের রিডার ড. শামসুজ্জোহাকে বেয়নেটচার্জে পাকিস্থানী সামরীক বাহিনী বর্বরোচিত ভাবে হত্যা করে।

প্রথম শহীদ হলেন ড. জোহা তাঁকে অনুসরণ করে মুক্তিকামী মানুষের জন্য বীরের মত জীবন দিলেন নূরুল ইসলাম ও আবদুস ছাত্তার। এ খবর রাতে রেডিওতে প্রচারিত হওয়ার পর কারফিউ ভঙ্গ করে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে আসে। প্রকৃতপক্ষে ঐ রাতেই গনঅভ্যূত্থ্যান চূড়ান্ত রুপ নেয়। সে রাতে রাস্তায় নেমে আসা নাম না জানা সাধারণ মানুষদের অনেকেই শহীদ হয়েছিলেন। যাঁদের বলিদানের ইতিহাস আমরা ভুলে গেছি। ড. জোহার মৃত্যু সৈরাচারী আইয়ুব সরকারেরমৃত্যুঘন্টা বাজিয়ে দিয়েছিল। ড. জোহা সহ তাঁদের রক্ত আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনকে যেমন বেগবান করেছিল তেমনি প্রসারিত হয়েছিল আমাদের মুক্তির পথযাত্রা। সেদিনও পাকিস্তানীদেরপদলেহী একটি চক্র পাকিস্তান সরকারের সাথে সুর মিলিয়ে বলেছিলেন, ড. জোহা গুলিবিদ্ধ হয়েনিহত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ সরকারের সঙ্গে একমত হয়েছিলেন ভয়,লাভ ও লোভের জন্য। অথচ তখনস্বাধীন দেশ বলে খ্যাত পাকিস্তানে এত বড় অন্যায় ও বর্বরোচিত পৈশাচিক হত্যাকান্ডে বিচার পাওয়া যায়নি। ভিয়েতনামে নিরাপরাধ বেসামরীক নাগরিকদের হত্যার দায়ে আমেরিকার সেনাবাহিনীর লোকদের আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো গেলেওপাকিস্থানী সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করানো যায়নি।

সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষকারী বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষকএবং ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ত্বদানকারীদের মধ্যে অনেকই আজও জীবিত আছেন। তাঁদেরইএকজন উনসত্তরের গনঅভ্যুত্থ্যানকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ(রাকসু)’র জি,এস এম,সি,এ আবদুর রহমানের ভাষ্য মতে, ড. জোহার মৃত্যুর আগেরদিন ১৭ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তি,আগরতলা ষঢ়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সার্জেন্ট জহুরুল হত্যা, নির্যাতনের প্রতিবাদ, মনি সিং সহ সকল রাজবন্দীর মুক্তিরদাবীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট আহবান করা হয়েছিল। ধর্মঘট চলাকালীন দুপুরে বিনা প্ররোচনায় ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ওপর পুলিশ লাটিচার্জ ওকাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। প্রায় ১৩ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। আহত রক্তাক্ত ১২/১৪ ছাত্রকে একটি ছোট গাড়ীতে ঠাসাঠাসি করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ সময়ে প্রক্টর হিসেবে ড. জোহা সবসময় বিপদাগ্রস্থ ছাত্রদের পাশে ছিলেন। ঐ দিনসন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাজ্ঞনে ছাত্রশিক্ষকদের প্রতিবাদ সভায় ড. জোহার আবেকময় বক্তব্য ছাত্র শিক্ষকদের যেমন ব্যাথিত করেছিল, তেমনি স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জনের দৃঢ় অঙ্গীকারের শপথ নেয়ার ক্ষেত্রেও উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল।

তিনি বলেছিলেন,“ সিরাজদ্দৌলাকে অন্ধকুপ হত্যার মিথ্যা দূর্নাম দেয়া হয়েছিল। আজঅন্ধকূপ দেখে এসেছি। ছোট্ট একটা গাড়ীতে বারচোদ্দজন রক্তাক্তদেহী ছাত্রকে ঠাসাঠাসি করে তোলা হয়েছিল। আমার ছেলের রক্তের দাগ আমারগায়ে লেগেছে সেজন্য আমি গর্বিত…”।

পরের দিন ১৮ ফেব্রুয়ারী সরকারী প্রশাসনের ১৪৪ধারা জারি। ছাত্রদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচী। রাত থেকেই থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সামনের সকল গেটে ও কাজলা বিনোদপুর রাস্তায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও মিলিটারীর উপস্থিতি ছিল। রাতেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা নানা স্থানে সেনা বেষ্টনী তৈরী করে। সকাল থেকেই পাক মিলিটারীদের ‘হট যাও’‘ভাগ যাও’ বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,কর্মচারীও ছাত্রদের স্বাভাবিক চলাচলে বাঁধা প্রদান করতে দেখা যায়। ছাত্রদের মধ্যেও উত্তেজনা। যে কোন ছুঁতোয় পুলিশ ও মিলিটারী বিশ্ববিদ্যালয়েরভীতরে ঢুকলে,গুলি চালালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনেরবাইরে চলে যাবে বলে সবাই আশংকা করছিলেন। এপরিস্থিতিতে সকাল সাতটার দিকে ড.জোহা ছাত্রদের মাঝে এসে বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশমিলিটারী ঢুকবেনা এবং কোন গুলিও চলবেনা কতৃপক্ষের সাথে এমন একটা আলোচনা হয়েছে বলে আভাস দিলেন। তিনি অত্যান্ত আত্মপ্রত্যয়ের সাথে বললেন,“আমি বলছি গুলি বর্ষণ হবেনা,যদি গুলি বর্ষণ হয় তবে কোন ছেলের গায়ে লাগারপূর্বে সেটা আমার গায়ে লাগবে”। এর ৫ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে বেয়নেট চার্জে ক্ষতবিক্ষত ড. জোহাকে আহত অবস্থায় কাজলা গেটের সামনে থেকে উদ্ধার করা হলো। নেয়া হল রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল বেডেই তাঁর মৃত্যু হয়। বাংলাদেশেরস্বাধীনতা আন্দোলনে প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান। এর পরের ইতিহাস তো সকলের জানা। ড. শামসুজ্জোহার রক্তস্নাত পথধরে গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়।

ড. জোহার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরকেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এর পক্ষ থেকে প্রকাশিত ও আনিসুর রহমান সম্পাদিত “তিমির হনন” নামক শহীদ ড. শামসুজ্জোহা স্মৃতিতর্পণ নামক বইতে সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদেরলিখিত বর্ননা রয়েছে।
২০০৮ সালে ড. জোহা স্যারকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দিয়ে সম্মাননা জানানোয় জাতি খুশী হয়েছিল। আমরা আশা করি বর্তমান সরকারও ১৮ই ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় শিক্ষকদিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়ে ড. জোহার স্মৃতি ও আদর্শকে জাতির কাছে চির অম্লান করে রাখবে।

অত্যাচারী পাকিস্তানী শাষক ও শোষকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম করতে গিয়ে নিজ দেহের তাঁজা রক্ত ঢেলে দিয়ে শহীদ হয়ে যারা আমাদের মুক্তির পথযাত্রায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলেন দেশের ইতিহাস রক্ষার স্বার্থেই তাদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহন করবে। ইতিহাসের শিক্ষা থেকেই মুক্তির জন্য লড়াইয়ে শামিল হতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করবে আগামি প্রজন্ম। ইতিহাস বন্ধা হলে আগামি দিনে জাতি বন্ধাত্ত্বতা ছিন্ন করে সামনে পথ চলতেও ভুলে যাবে।
শহীদ শামসুজ্জোহা স্যারের প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.