সেই দিনগুলো সুন্দর, যখন মিরপুরে থাকতাম

৩০ শে মার্চ, ২০১২ ভোর ৫:০০

আমার দোস্ত, হাফিজুর। আমাদের বন্ধুত্বকে অনেক হেফাজতে রেখেছে। পাঁচ বছর আগে ওর সাথে আমার দেখা হয়। সদ্য কলেজ হোস্টেলে উঠেছি। ঢাকার মিরপুরে। কলেজের পাশেই হোস্টেল। রোজা ঈদের কয়েকদিন আগে উঠেছিলাম। ঈদের পর এক রাতে খাবার টেবিলে ওকে প্রথম দেখতে পাই, টিভিতে কিসের যেন খেলা চলছিল, ক্রিকেট না হয় ফুটবল। আর ও নিজ মনে টেবিল চাঁপড়ে চলছে। আমার এত বিরক্ত লাগছিল যে মনে হচ্ছিল ভাতের গামলা আর গরম ডাল ওর মাথায় ঢেলে ওকে ঠান্ডা করে দেই। হাফিজুর জামালপুরের ছেলে, নিজেকে আশি টাকা তোলা বলে দাবি করত। ওর ছিল অত্যধিক ওভার কনফিডেন্স, এখনো আছে!! সব সময় ঝগড়া বাঁধানোর মুডে থাকত, বিশেষত ক্যারাম বোর্ড খেলায়, মাসুদের সাথে! কিন্তু হাফিজুরের মনটা ছিল বিশাল, মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মত বড় ওর স্টেডিয়াম মার্কা মনের কারনে কত সকাল আর বিকেল বেলার নাস্তার টাকা যে ওর পকেট থেকে খসিয়েছি তার কোন হিসেব নেই। রোজগারী মা বাবার একমাত্র ছেলে, ওর মানিব্যাগ বড় থাকবে না তো কি আমার থাকবে?



নোয়াখালির ছেলে মাসুদ। নিজের নামটা ঠিক করে উচ্চারন করে বলতে পারত না। বলত, মাশুদ! হাহাহাহাহাহা...। ক্লাসে নাম জিজ্ঞেস করলে বলত, মাশুদ আলম। আর সঙ্গে সঙ্গে সবার সে কি হাসি। আমার ই হাসি পেত বেশি। এই মাশুদ আর সেই হাফিজুরের ছিল দা কুমড়ো সম্পর্ক। আমি ছিলাম তাদের মধ্যখানে। আমার পাশে জাহিদ। জাহিদের পাশে মানিক। মানিকের পাশে সুজন। সুচিত্রা বসত সুজন আর গোপালের মধ্যখানের চেয়ারটায়। কিন্তু যতটুকু মনে পড়ে দুজনের কেউ ই দেখতে উত্তম কুমার ছিল না। হাহাহাহাহা...

উপরে যাদের নাম বললাম তাদের সবার মধ্যে খুব সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। আর ছিল ফয়ছল। সব সময় আমাদের আশে পাশেই থাকত কিন্তু শিউলী ফুলের গন্ধ পেলে আর ওকে খুজে পাওয়া যেত না ওর জায়গা হত তখন ক্লাসের শেষ সারিতে। শেষ সারিতে বসার মজা কখনো বুঝিনি। ক্লাসের প্রথম সারিতে বসার অভ্যাসটা ছিল প্রাইমারী থেকেই। একদিন গিয়ে বসলাম শেষ সারিতে। ভাগ্যক্রমে ফয়ছল সেদিন আমার সামনের সারিতে বসে বসে শিউলী ফুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে। হেহেহেহে... সেদিন না বুঝলাম শেষের সারিতে বসার সে কি মজা



কি মধুর ছিল দিনগুলো। আর কোনদিন ই ফিরে আসবে না। চার বছর ছিলাম মিরপুরে। মিরপুরের সেই দিনগুলোকে খুব মিস করছি। বন্ধুদের নিয়ে অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছে করে। স্মৃতিশক্তি দূর্বল, লেখনী কমজোর। তবে তাদের মুখগুলো দিবালোকের মত স্পষ্ট, ভুলতে গেলে আরো কয়েক যুগ লাগবে। আরো কয়েক যুগ কি বেঁচে থাকব???

২২ টি +৬/-০