![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি কাঠখোট্টা অসামাজিক একটা মানুষ। কথা বলার মতো বিরক্তিকর কাজ দ্বিতীয়টা নেই, তাই লেখালেখি বেছে নিয়েছি। বর্তমানে পড়াশোনা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে।
ধরুন, আপনি সঙ্গত কারণেই 'বিশেষ' কাউকে ভুলে থাকার বা ভুলবার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, কিন্তু কিছুতেই পারছেননা। হয়ত 'তার' সাথে আপনার প্রায়ই দেখা হয়, হয়ত হয়না। কিন্তু যে কারণেই হোক, উঠতে-বসতে তাকে আপনি প্রচণ্ড মিস করছেন। কোনো কিছুতে মন দিতে পারছেননা, ঘুরে ফিরে তার কথাই কেবল মনে হয়, বুকের ভেতর একটা অদৃশ্য গহ্বর, অদ্ভুত একটা শূন্যতা বোধ হয়...
আপনার হয়ত তখন মনে হবে, What if I can't ever get over him/her?
একজনকে সম্পূর্ণ রূপে ভুলে যাওয়াটা আসলে বাস্তবিক অর্থে অসম্ভব। তাহলে getting over someone বলতে আসলে আমরা যেটা বুঝাতে চাচ্ছি সেটা হচ্ছে, এমন একটা পর্যায়ে আপনার পৌছাতে হবে- যখন সে আপনাকে আর define করছেনা, যখন তার কথা মনে আসলে বা চিন্তা করলেই আপনার বুকের ভেতর অসম্ভব সেই কষ্টটা কিংবা শূন্যতাটা তৈরি হবেনা।
Bereavement counselling এ এই ব্যাপারটা ঠিকমত বুঝানোর জন্য একটা চমৎকার উদাহরণ দেয়া হয়ে থাকে, যা "Yellow-ball-in-a-glass" এনালজি হিসেবে পরিচিত। এনালজিটা এরকম যে, ধরুন- হলুদ বলটি grief বা তীব্র শোক, বিষাদ, মনোস্তাপ বা দুঃখকে রিপ্রেজেন্ট করছে, আর গ্লাসটি দ্বারা প্রতীকী অর্থে জীবন বুঝানো হচ্ছে। ধরুন, হলুদ বলটা এতই বড়, যে গ্লাসটিতে তা কোনোভাবে আঁটল, কিন্তু গ্লাসে আর খুব বেশি জায়গা বাকি নেই। আপনার শোকের মাত্রাটা এখন এতই প্রকট যে আপনার পৃথিবীতে এখন দম ফেলবার, একটু নিজের দিকে তাকাবার কিংবা অন্য কিছু চিন্তা করারও উপায়/ফুরসৎ নেই। এখন কিছুটা সময় পার হবার পর, হয়ত মাস ছয়েক বা এক বছর পার হবার পরে আপনার শোকের প্রকটতা কিছুটা কমল। হলুদ বলটাও সাইজে একটু সঙ্কুচিত হল, তার মানে বলটা এখন অন্তত এমন একটা সাইজে এসেছে যে গ্লাসটার ভেতরে কিছুটা হলেও বাড়তি স্থান ফাঁকা হয়েছে। এর মানে হল, আপনার কষ্টটা একটু হলেও কমেছে, এবং এই এট্টুখানি কমার ফলেই এখন আপনার অন্তত অন্যকিছু করবার মতো পথটা তৈরি হয়েছে। আরো কিছুটা সময় পর, হয়ত ২-৩ বছর পরে বলটা এখন এমন একটা সাইজে এসেছে, যে গ্লাসের ভেতর সেটাকে দিব্যি রাখা যাচ্ছে, এবং বলটা গ্লাসে আঁটবার পরেও বেশ অনেক খানি জায়গা এখন ফাঁকা থাকছে! তার মানে কি দাঁড়াল?
কিছু সময় পরে আপনার কষ্টটা এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাবে, যখন আপনার সমস্ত পৃথিবী জুড়ে শুধু সেটাই একমাত্র বিষয় হয়ে দাঁড়াবেনা, বরঞ্চ আপনার ছোট্ট জগতটার অনেক কিছুর সাথে সেটাও একদিন চাপা পড়ে যাবে, পড়ে থাকবে গ্লাসের তলায় তলানির মতো হয়ে। ওই পর্যায়টাতে আপনি যখন পৌছাতে পারবেন, আপনি তখন অনেক কিছুই করতে পারবেন, বুকের ভেতরে আগে যে অদ্ভুত দম আটকে যাবার মতো অনুভূতিটা হতো, সেটা তখন আর থাকবেনা। নিজেকে যখন ব্যস্ত রাখবেন, অনেক কিছুর সাথে হলুদ বলটাও তখন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হতে হতে একসময় ছোট্ট একটা কিছুতে পরিণত হবে, আগে যেটাকে আপনার দুনিয়ার সিংহ ভাগ জুড়ে ছিল বলে মনে হত। তবে এখানে এটা মনে রাখা বাঞ্ছনীয়, আপনার অত্যন্ত আপনজনের মৃত্যুর পরের যে শোক- সেই শোকের সাথে এটাকে মিলিয়ে ফেলা যাবেনা। এইটা শুধুমাত্র রিলেশনশিপের ব্যপারে এপ্লিকেবল।
সাইকোলজিস্টরা বলেন, আমরা যখন প্রেমে পড়ি, তখন আমাদের মস্তিষ্কের ভেতর উদ্ভট কিছু কর্মকাণ্ড ঘটে। এবং এইসব উদ্ভট কর্মকান্ডের কারণেই আমরা প্রেমে পড়লে অনেক উদ্ভট কাজকারবার করি! ভালবাসার কাউকে ভুলে থাকতে চাইলে তাই আগে এই বিষয়গুলো জানা থাকলে ভাল, তাহলে এট লিস্ট নিজেই বুঝবেন যে, আঙুলের তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়ার মতো তুচ্ছ বিষয় এটা না- যে এক মুহূর্তের ব্যবধানে আপনি তাকে ভুলে যেতে পারবেন। বন্ধুরা হয়ত হাসাহাসি করছে, বা আপনাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছেনা- স্পেশালি ছেলেদের ক্ষেত্রে যেটা হয়- বন্ধুরা পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল, "আরে প্যারা নিস না, দোস্ত। এইসব মেয়ের কথা আজ বাদে কালকেই ভুলে যাবি!" ব্যপারটা এতো সহজ নয়, কারণ বায়োলজিক্যাল এবং নিউরোলজিক্যাল অনেকগুলো ফ্যাক্টর এর সাথে জড়িত। বিজ্ঞান তাই-ই বলে।
মানুষের ব্রেনের একটা অংশ, যাকে বলা হয়- "ভেন্ট্রাল টেগমেন্টেড এরিয়া" বা সংক্ষেপে ভিটিএ (VTA)- মানুষ প্রেমে পড়লে ঠিক এই অংশটিই এফেক্টেড হয়। এই ভিটিএ-তেই ডোপামিন তৈরি হয়, যা কিনা আবার প্রাকৃতিক স্টিমুলেন্ট হিসেবে কাজ করে। তবে এই অংশটা মস্তিষ্কের চিন্তাটিন্তা করবার মত সিরিয়াস কাজ করেনা, জাস্ট আপনার চাহিদা, কামনা, আকর্ষণ- এইসব ব্যাপার স্যাপার এই ভিটিএ দেখেশুনে রাখে। মস্তিষ্কের যেই অংশটা আপনার চিন্তাভাবনা বা rational thinking এর কাজগুলো করে, এই ভিটিএ সেই অংশের বেশ নিচেই অবস্থিত।
বায়োলজিক্যাল এনথ্রোপলোজিস্ট, হেলেন ফিশার এবং নিউরোলজিস্ট লুসি ব্রাউন- এই দুই মহিলা ঠিক করলেন, ব্রেকাপের পরে মানুষের মস্তিষ্কে আসলে দৃশ্যমান কোনো পার্থক্য ঘটে কিনা সেটা পরীক্ষা করে দেখবেন। তাঁরা এমন কিছু লোককে নিয়ে একটি এক্সপেরিমেন্ট করলেন, যাদের সদ্য ব্রেকাপ হয়েছে। এদের ব্রেন ইমেজ স্ক্যানিং করা হল। ব্রেন স্ক্যান করবার আগে এদের প্রত্যেককে তাদের সবে ব্রেকাপ হওয়া, অর্থাৎ সদ্য প্রাক্তন হওয়া প্রেমিক/প্রেমিকার ছবি দেখানো হল।
স্ক্যান রেজাল্টে লুসি এবং হেলেন ইন্টারেস্টিং ফলাফল পেলেন!
দেখা গেল, মানব মস্তিষ্কের যেই অংশটুকু প্রেমে পড়লে অত্যন্ত সক্রিয়/ সংবেদনশীল হয়, সেই অংশটুকু- ভেন্ট্রিকুলার টেগ্মেন্টাল এরিয়া (VTA) এখনো সেরকম কাজকারবারই সমান তালে করে চলছে- যদিও তাঁরা কেউই এখন আর রিলেশনশিপে নেই! ব্যাপারটা যেন এরকম দাঁড়িয়েছে যে, তাদের ব্রেনকে বুঝি কেউ বলে দেয়নি যে, "এই, তুমি তো আর প্রেম করছোনা, তোমার ব্রেকাপ হয়ে গেছে, স্টপ ইট!"
ফিশার পরে বিষয়টা এভাবে ব্যখা করেন যে, “That brain system – the reward system for wanting, for motivation, for craving, for focus – becomes more active when you can’t get what you want. In this case, life’s greatest prize: an appropriate mating partner.” অর্থাৎ, যা চেয়েছি- তা না পাওয়ার পরেও আমার ব্রেনের ভিটিএ যেন আরো এক্টিভ হয়ে উঠেছে, এক্ষেত্রে জীবনের সবচে বড় প্রাইজ- একজন উপযুক্ত সঙ্গী পাওয়ার প্রত্যাশায়।
কাজেই আপনি যখন ভালবাসার সেই মানুষটাকে ভুলবার চেষ্টা চালাচ্ছেন, ভেতরে ভেতরে আসলে জটিল কিছু বায়োলজিক্যাল এবং নিউরোলজিক্যাল কাজকারবার চলছে। তুচ্ছ করে দেখবার মতো বিষয় এটি নয়, আজ বাদে কালকেই এটা ভুলে যাওয়াও সম্ভব নয়।
ফিশার আরো মনে করতেন, "রোম্যান্টিক লাভ" পৃথিবীর সবচে' addictive substance গুলোর একটি। কাজেই একে একটি ড্রাগের মতো করে ডিল করতে হবে। ড্রাগের মতই সম্পূর্ণরূপে বর্জন করে চলতে হবে। তার মানে, পুরনো প্রেমপত্রগুলো ছিড়ে ফেলতে হবে কিংবা নাগালের বাইরে ও চোখের আড়ালে কোথাও সরিয়ে রাখতে হবে, টেক্সট মেসেজগুলো ডিলিট করে দিতে হবে এবং "কিছুদিন বন্ধুত্বটা অন্তত থাকুক" এরকম মনোভাব কিছুদিনের জন্য হলেও শিকেয় তুলে রাখতে হবে। মাঝরাতে 'তাকে' কল করবেন না। যে জায়গাগুলোতে আগে দুজনে একসাথে ঘুরে বেড়াতেন, সে জায়গাগুলো ততদিন পর্যন্ত পারতপক্ষে এভয়েড করে চলতে হবে- যতদিন পর্যন্ত না সেগুলো জাস্ট আপনার আগে এসেছিলেন, ঘুরে দেখা হয়েছে- এরকম কিছু জায়গার মতো মনে হয়। শুক্রবার বা ছুটির দিনগুলোতে পারতপক্ষে একলা না থাকার চেষ্টা করতে হবে, কেননা নিঃসঙ্গতা এক্ষেত্রে ট্রিগার হিসেবে কাজ করে।
আপনার মস্তিস্ককে সেরে উঠবার সময়টুকু দিন, হৃদয়টাও অনুসরণ করবে।
(সুত্রঃ দ্যা গার্ডিয়ানে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ হতে সম্পাদিত)
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৩৫
দ্যা গার্ল ইন ব্লু গ্লাসেস বলেছেন: পড়বার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৫৪
কালীদাস বলেছেন: ছ্যাঁকা খাওয়ার এরকম বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ!
চমৎকার পোস্ট
৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৩৫
দ্যা গার্ল ইন ব্লু গ্লাসেস বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৪১
মঞ্জুর আলম রুবেল বলেছেন: অসাধারণ বিশ্লেষন
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:২২
জেন রসি বলেছেন: ব্রেক আপের পর অনেককেই দেখি বেশ হতাশ হয়ে যেতে। এবং নতুন কারো সাথে সম্পর্ক করতেই হবে এমন একটা মনোভাবও অনেকের মধ্যে কাজ করে। কেন কিভাবে মানুষ এসবে অ্যাডিক্ট হয়ে যায় তার কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ডোপামিনের ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। যদিও ফ্যাক্ট। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।